রাত নয়টার পর আসে
মেয়েটা। সময়টার কথা শুনে যে কেউ মনে মনে খারাপই ভাববে মেয়েটাকে। কিন্তু
আদতে ব্যাপারটা তা নয়। আবার যে ছেলেটার কাছে সে আসে সে ছেলেটা তার প্রেমিকও
নয়। তার বন্ধু মাত্র। সে প্রেম করে বটে তবে তা অন্য একটা ছেলের সাথে।
তাহলে এই ছেলেটা যে শুধুমাত্র তার বন্ধু তার কাছে তার এতো কি প্রয়োজন যে
এতো রাতে আসতে হবে। তাও মাঝে মাঝে হলেও একটা কথা ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা
একদম নিয়মিত। জগৎ সংসার উল্টে গেলেও রূপার আসাটা মিস হয় না। রবিনও আশায়
থাকে রূপার। তবে তা অবচেতনে। সে জানে রূপা আসবেই। তারপর কবিতা নিয়ে কথা
হবে। মুড ভালো থাকলে গান।
রবিন কবিতা লেখে। রূপার দখল গানে। সে
বিভিন্ন চ্যানেলে গান করে। রবিনের কবিতা অবশ্য খুব বেশী তখনও প্রচার হয়নি।
তবে টুকটাক যেটুকু হয়েছে আর তার পাশাপাশি তার লেখার যে মান তাতে রূপা
আশাবাদী কালে কালে একদিন সে বড় কবি হবে।
দু’জনের দেখা হওয়াটা যেন
একটা অসুখে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য রূপার প্রেমিক আবিরের কোন মাথাব্যথা
নেই। সে রবিনকে যতটুকু জানে তাতে রূপার দিক থেকে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও
রবিনের দিক থেকে মোটেও ঝুঁকি নেই। এতোটা আত্মবিশ্বাসের কারণ? কারণ আর কিছুই
নাই। তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। রবিনের সাথে সে যতটুকু মিশেছে তাতে সে
এতোটুকু অন্ততঃ নিশ্চিত হয়েছে তার প্রেম করার কোন ইচ্ছে আপাততঃ নেই। তার
স্বপ্ন দুটো। প্রথমটা প্রতিষ্ঠা। তবে সেটা একাডেমিক। আর দ্বিতীয়টা কবিতায়
উন্নতি করা। সে এ নিয়ে এতোটাই ডুবে আছে যে পৃথিবীর আর কিছু তার মাথায় ঢুকবে
বলে মনে হয় না।
তারপরও এতোটা বিশ্বাস করাটা কি ঠিক? শত হলেও রূপা
তার প্রেম, তার ভালোবাসা। কিন্তু এটাই তার আর একটা শক্তির জায়গা। রূপা যদিও
অস্থিরমতি তাই যে কেউ তাকে নিয়ে কিছুটা হলেও সন্ধিগ্ধ থাকবে এমনটাই
স্বাভাবিক। আবিরের কিছুটা সন্দেহ থাকলেও একসময় তা পুরোপুরিই কেটে যায়। এর
পিছনে মূল কারণ যা তা হলো আবির বিভিন্নভাবে খেঁাঁজ নিয়ে জেনেছে এরা দু’জন
কখনও কোন গোপন জায়গায় বসে না। বসে খোলামেলা জায়গায়। আর সারাক্ষণ কবিতা আর
গান নিয়ে যত কথা। মাঝে চা, কফি চলে বটে তবে মনোযোগ সেদিকে খুব একটা থাকে
না।
কবিতার ছোটখাট একটা জাহাজ বলা যায় রবিনকে। তার লেখার মান ভালো
না মন্দ তা বোঝার সাধ্য নেই আবিরের। কবিতার বিন্দু বিসর্গও সে বোঝে না। তবে
কবিতা নিয়ে রূপার উচ্ছাস দেখে রাতারাতি মুগ্ধ হয় সে। এই মেয়েটার প্রাণ হলো
কবিতা। যদিও সে ভালোই গান করে।
আবিরের বন্ধু ফয়সাল বরাবরই একটু
শংকিত। তার মনে হয় যদি এভাবে আস্তে আস্তে দু’জনের প্রেম হয়ে যায়। কবিতা আর
গান যদি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রবিন শক্ত গলায় বলে, আমি জানি, হবে না।
রূপা যখন আমার কাছে আসে দেহ তো দূরে থাক ওর মনেও আমি আজ পর্যন্ত আমি ছাড়া
অন্য কোন পুরুষের গন্ধ পাইনি। সে আমাকেই ভালোবাসে। আজীবন ভালোবাসবে।
সত্যিই
তাই হয়। সময়ের স্রােতে রবিন ছোটে প্রতিষ্ঠার দিকে। মাস্টার্স পাস করার পর
তার ভালো একটা চাকরি হয়ে যায়। সে কবিতা নিয়ে নতুন উদ্যমে নেমে পড়ে। এতোদিন
সে বই বের করতে পারেনি পয়সার অভাবে। এখন সে তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ
করবে। পাশাপাশি কাব্যচর্চার জন্য অনেক বইও সে কিনতে পারবে।
রূপা আর আবির বিয়ে করে সংসার পাতে। আবির বড় লোকের ছেলে। সে তার পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রূপা পড়ে থাকে তার গান নিয়ে।
গান
করতে করতে একদিন রূপার কাছে একটা প্রস্তাব আসে একটা গানের স্কুলের
শিক্ষকতার। রূপা স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে ছিলো। তাই জীবনে কখনও চাকরি করার
কথা ভাবেনি বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্টে পড়ার পড়েও শুধু গান নিয়েই
পড়ে ছিলো। বিয়ে হয়েছে আবিরের সাথে। আবিরদের আর্থিক অবস্থাও ভালো। তাইতো
চাকরি করার প্রশ্নই আসেনি কখনও। তবুও কেন জানি হঠাৎ করে আসা প্রস্তাবটা
রূপাকে কিছু উৎসুক করে তোলে। তবে কি শুয়ে বসে কাটানো এই জীবন তার কাছে
একঘেয়ে হয়ে উঠেছে?
হয়তো এখনও পুরোপুরি একঘেয়ে হয়ে ওঠেনি। তবে ধীরে
ধীরে যে উঠবে রূপা তা বুঝতে পারছিলো অনেকদিন ধরে। কারণ আর কিছু নয়। তাদের
ভালোবাসায় কোন কমতি নেই কিন্তু আবির সারাদিন ব্যবসা নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত
থাকে যে রূপাকে দেওয়ার মতো সময়টাই শুধু তার হাতে থাকে না। রূপার প্রথম
দিকটায় খুব একটা সমস্যা হয়নি। সে এটা মেনেই নিয়েছিলো। আবিরের প্রতিও তার
কোন অভিযোগ ছিলো না। কারণ তার ব্যস্ততা আর বাস্তবতা- এ দুটো সম্পর্কেই সে
জানে? এসব জেনেশুনেই সে তাকে বিয়ে করেছে। এমনকি বিয়ের আগে বেশ কয়েকটা বছর
চুটিয়ে প্রেমও করেছে। তবে ইদানিং সমস্যা হচ্ছে। সে ঘরের বাইরে যেতে চায়।
বাইরের পৃথিবীটা কেন জানি আগের মতোই তাকে টানে।
সমস্যাটা শুরু হয়েছে
সুমন নামের একটা ছেলের সাথে তার পরিচয়ের পর থেকে। পরিচয়টা স্বাভাবিকই
ছিলো। কিন্তু পরিচয়ের পর থেকে অস্বাভাবিক সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে। রূপা অবাক
হয়ে লক্ষ্য করে এই সুমনের সব বৈশিষ্ট্যই যেন তার বন্ধু রবিনের মতো। একই
রকম কবিতার পাগল। প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একনিষ্ঠ। সুমন আর কেউ নয়। তার ননদ
রূপসীর গৃহ শিক্ষক। রূপসীকে পড়ানোর পর রূপাই তাকে নাস্তা দেয়। মাঝে মাঝে
তিনজন অথবা তারা দু’জন একসাথে বসে নাস্তাও খায়। রূপা ধীরে ধীরে উপলব্ধি
করতে পারে সুমনের ভেতরে তার বন্ধু রবিনের একটা ছায়া লুকানো আছে। আর এই
ব্যাপারটাই তার ভেতরটাকে এলোমেলো করে দেয়। সে কাউকে কিছু বলে না। এমনকি
রূপসীকেও না। তবে ভেতরে ভেতরে সে সুমনের সাথে একটা বন্ধুত্বে জড়িয়ে যায়।
আমি
জানি আপনারা ভাবছেন প্রেম। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। রূপা এরকম কোন মেয়েই
নয়। সে শক্ত মনের মানুষ। আবির বাদে যদি সে কারো প্রেমে পড়তো তবে সেই
মানুষটা হতো রবিন। কিন্তু রবিনের কাছ থেকেই সে শিখেছে জীবনে কিভাবে নিজস্ব
অনুভূতির প্রতি সৎ আর বিশ্বস্ত থাকতে হয়। এই মানুষটাকে সে তাই ভীষণ সম্মান
করে। রবিনকে এই সম্মানটুকু তার স্বামী আবিরও করে। কারণ রবিন প্রমাণ করে
দিয়েছে সে কতোটা সৎ আর নিরপেক্ষ। চাকরি পাওয়ার পর সে তারই গ্রামের একটা
সাধারণ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ঘরের সাদামাটা একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। তাদের
একটা সন্তানও হয়েছে ইতিমধ্যে। যেহেতু মেয়ে হয়েছে প্রিয় বন্ধু রূপার সম্মানে
মেয়ের নামও সে রূপাই রেখেছে। কতোটা ভদ্র হলে আর বন্ধুর প্রতি কতোটা
শ্রদ্ধাবোধ থাকলে মানুষ এরকমটা করে। রবিন যখন আবির আর রূপাকে বলেছে জানো
আমি আমার মেয়ের ভেতরে রূপাকে দেখতে পাই আর আমি চাই সে রূপার মতোই গুণবতী,
রূপবতী আর চমৎকার একটা মানুষ হোক আবির তখন এতোটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলো যে
চোখের কোণে চলে আসা পানি সামলাতে পাশের বারান্দায় চলে যায়। রূপা আর রবিনের
বন্ধুত্বকে সে ভীষণ সম্মান করে। এজন্যই সময় পেলে নিজেই রূপাকে নিয়ে রবিনের
বাসায় আসে। কিছুক্ষণ থেকে বিদায় নেয়। ওরা অবশ্য না খেয়ে কখনও যেতে দেয় না।
সুমনের
প্রেমে পড়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। রূপার সে রকম কোন অনুভূতি আবির ছাড়া
কারো প্রতি নেই। তবে সুমনের কথাগুলো তাকে দারুণ প্রভাবিত করে। মধ্যবিত্ত
ঘরের ছেলে। গ্রাম থেকে অনেক কষ্টে ঢাকায় পড়তে এসেছে। টিউশনি করে খরচ জোগাড়
করে। তবে ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি জ্ঞান আছে ছেলেটার। কবিতার উপরে দারুণ দখল।
কখনও কখনও রূপার তাকে রবিনের চেয়েও গভীর আর ধারালো চিন্তার অধিকারী মনে
হয়। ছেলেটা একটা বুলেট।
সত্যিই রূপার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায় যখন সে
জানতে পারে সে আর কোনদিন মা হতে পারবে না। সমস্যাটা তার না। সমস্যাটা
আবিরের। আর আবিরকে ছেড়ে যাওয়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে কি একটা জীবন
তাকে মাতৃত্বের স্বাদ না নিয়েই বাঁচতে হবে। একজন নারীর জন্যে এর চেয়ে
কষ্টের আর কি হতে পারে?
আবির বুঝে উঠতে পারে না রূপাকে সে কি বলবে?
রূপার চোখের দিকে তাকাতে পারে না সে। রূপাই পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করে নেয়।
আবিরের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, আমি তোমার ছিলাম, তোমার আছি, তোমরই থাকব।
আবির কিছুই বলতে পারে না। তার কন্ঠ যেন বন্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট
হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এরকম একটা খবর শোনার আগেই তার মরে যাওয়াও ভালো ছিলো।
এক জীবনে তার নিজের জন্যে কোন দুঃখ নেই। কিন্তু রূপার জন্যে সে যে এতো বড়
একটা পাথর হয়ে যাবে তা সে কখনও ভাবেনি।
অফিসের কাজে মন নেই আবিরের। এ
অবস্থায় মন দেওয়াটাও কঠিন। রূপা আবিরকে বলে দিয়েছে ব্যাপারটা যেন কেউ
জানতে না পারে। আবির কিছুই বলেনি। কিই-বা তার বলার আছে।
অফিসের
চেয়ারে বসে আবির ভাবছে, হয়তো রবিনই রূপার জন্যে সঠিক মানুষ ছিলো।
সৃষ্টিকর্তা হয়তো ওদের সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়েছিলেন। আবির ব্যবসায়ী মানুষ। কাঠ
খোট্টা নিরস তার জীবন। ওদিকে রবিন কবি। রূপা গায়িকা। ওদের জুটি হলে ভালোই
মানাত কিন্তু আবিরই সব কিছু পন্ড করে দিলো। আর এখন রূপার জন্যে সে একটা
কষ্টের পাহাড় ছাড়া আর কিছু নয়। রূপাই বা কতদিন এই দুঃখের বোঝা বয়ে বেড়াতে
পারবে। সেও তো একটা মানুষ। তাছাড়া আবির রূপাকে ভালোবাসে। রূপার সুখটাই তার
একমাত্র চাওয়া। আবিরের নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। অবশ্য সে নিজেকে এই ভেবে
সামান্য সান্ত¦না দেয় যে রূপাও তো তাকে ভালোবাসে। তাছাড়া সেও তো
বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করেছে রূপা আর রবিনের মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক
আছে কিনা। কিন্তু বরাবরই যে উত্তর এসেছে তা হলো না। তাহলে তারই বা কি করার
ছিলো। তেমন কিছু থাকলে তো তখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা যেত। প্রয়োজনে সে ওদের
জীবন থেকে সরে দাঁড়াত। কিন্তু দিনশেষে রূপা তো তার কাছেই ফিরে আসত। তাকেই
ভালোবাসত। কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই তাকে ভালোবাসত। শেষমেষ তাদের
বিয়েটাও হলো অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই। বিয়ের অনুষ্ঠানে যখন রবিন এসেছিলো
আবির বোঝার চেষ্টা করেছে রবিনের অনুভূতিটা কেমন? কিন্তু শত পর্যবেক্ষণ করেও
আবির সন্দেহজনক কিছুই পায়নি। বরং রবিন এতো স্বাভাবিক ছিলো আর এতোটাই আনন্দ
করেছে যে কারো সন্দেহ হওয়া তো দূরে থাক উল্টো সবাই বলেছে এরকম বন্ধু পাওয়া
তাদের দু’জনের জন্যেই ভাগ্যের ব্যাপার। রূপা আর রবিন তাদের পুরো জীবনটা
দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে তারা সবসময়ই ভালো বন্ধু ছিলো, আজও আছে, আজীবন
থাকবে।
সমস্যা তো তাহলে এখন আবিরের জন্যেই হলো। তার জন্যেই রূপার
জীবনটা মাটি হয়ে গেলো। শরতের যে শুভ্র আকাশের বুকে তারা তাদের স্বপ্নের
সাদা মেঘখন্ডগুলোকে ভেসে যেতে দেখত তা সরে গিয়ে কখন যে বর্ষার কালো মেঘের
ঘণঘটা চলে এসেছে বজ্র-বিদ্যুতের হুঙ্কার নিয়ে তা রূপা কিংবা আবির কেউই টের
পায়নি।
রূপা এবং আবির উভয়েই চাইছে স্বাভাবিক থাকতে। আবির অবশ্য মনে
মনে একটা কথা রূপাকে বলবে বলে ভাবছে। কিন্তু কিছুতেই সেই সাহসটুকু সঞ্চয়
করতে পারছে না। তারপর একসময় বুকের ভেতর নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে সমস্ত সাহস
সঞ্চয় করে রূপাকে সে বলেই ফেললো, এখন মনে হয় রবিনের সাথে তোমার বিয়ে হলেই
ভালো হতো। রবিন খুব ভালো ছেলে ছিলো। তোমাদের মানাতো বেশ।
হঠাৎ এ কথা
কেন? তোমার হঠাৎ এমনটা মনে হলো কেন? তাছাড়া আমরা তো কেউ কাউকে কখনও ভালোও
বাসিনি। তাহলে এ কথা আসছে কেন? তুমি নিজেও জানো সে বিয়ে করেছে তার পছন্দ
মতোই। আমাদেরও বিয়ে হয়েছে। এসব কিছু নিয়েই সে দারুণ খুশী। সে একটা অন্য রকম
মানুষ।
- সে অন্যরকম বলেই আমি তার জন্যে তোমাকে ভাবতে পারছি। অন্য কেউ হলে পারতাম না।
-
কিন্তু আমাদের এরকম কিছু ভাববার কোন কারণ নেই। তাছাড়া আমি তোমাকে ছাড়া এই
জীবনে অন্য কিছু কোনদিন ভাবিওনি। ভাবছিও না। ভবিষ্যতেও ভাববো না। কপালে
সন্তান না থাকলে হবে না। তাই বলে বিকল্প ভাবতে পারবো না।
কেন জানি
সবকিছু বিবর্ণ হয়ে যেতে থাকে দিন দিন। আবির-রূপা দু’জনেই চায় সবকিছু
স্বাভাবিক থাক। কিন্তু চাইলেও তো আর সবকিছু হয়ে যায় না। প্রতিটা মানুষের
ভেতরে আর একটা মানুষ লুকিয়ে থাকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সে বেরিয়ে আসে। তখন
সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ সেই অচেনা সত্তাটার হাতে চলে যায়। এই অচেনা সত্তাটা কখনও
ঈশ্বর কখনও দানব। যখন যার ভূমিকা প্রধান হয়ে ওঠে। মানুষের এই গোপন সত্তার
রহস্য কখনও মানুষ আদৌ জানতে পারবে কি-না জানা নেই।
এক সন্ধ্যায় রূপা আর আবির বসেছিলো। রূপা আবিরের ভীষণ কাছে এসে দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলে, একটা কথা বলবো, রাখবে।
-
তোমার কথা রাখবো না এমনটা ভাবলে কি করে? কখনও কি খুব বেশী শক্ত হয়েছি
তোমার প্রতি। হোক না তা যে কোন ব্যাপার। হোক না তা বর্তমান কিংবা অতীত।
তোমার কি মনে পড়ে? আমাকে নিয়ে তোমার কোন বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয়েছে কখনও।
-
না, না, আমি জানি। তুমি কতো ভালো? বলছিলাম কি সারাদিন তো শুয়ে বসেই কাটে।
আমি গান জানি শুনে সুমন বললো একটা ভালো গানের স্কুলে মাঝে মাঝে মন চাইলে
একটু আধটু ক্লাস নিতে পারি। টাকার কথা নয়। সময়টা ভালো কাটত শিক্ষার্থীদের
সাথে। ছোটদের গানের স্কুল।
- সুমন জানে স্কুলটা সম্পর্কে?
-
হ্যাঁ, জানে, ও আর একটা বাসায় পডায়। ও বাসায় ওর ছাত্রীর মায়ের স্কুল এটা। ঐ
ছাত্রীর সাথে সুমনের প্রেম আছে। ঐ মেয়ের মাধ্যমেই জেনেছে ওদের একজন টিচার
লাগবে।
- গিয়ে দেখ। যদি পরিবেশ ভালো হয় তাহলে করতে পারো। তারা আবার না ভেবে বসে যে তোমার টাকা পয়সার সমস্যা। তাই চাকরি করতে এসেছ।
- ওটা সুমন তাদের জানিয়ে দেবে
- আচ্ছা ঠিক আছে।
নতুন
কাজে রূপা যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছে। কখনও গানের শিক্ষক হবে এমনটা
সে ভাবেওনি। কিন্তু শেষমেষ তাই হলো যা ভাগ্যে ছিলো। মানুষ আসলে জীবনের
অনেক কিছুই জানে না।
রূপা যে চাকরিটা বেশ উপভোগ করছে তা তার মুখ
দেখলেই বোঝা যায়। এ ক’দিন না চাইলেও তার মুখ-চোখ জুড়ে রাজ্যের যে নীরবতা
অন্ধকার হয়ে নেমে এসেছিলো তা যে কোথায় মিলিয়ে গেছে সেটা বোঝারও উপায় নেই।
দিন যায়। মাস। বছর।
রূপা
এখন একজন পুরোদস্তুর গানের শিক্ষক। প্রথমটায় শখের বশে শুরু করলেও দিনে
দিনে সে সিরিয়াস হয়ে ওঠে। আবিরও চায় রূপা একটা কিছু নিয়ে মেতে থাকুক।
একটা
দৃশ্য হঠাৎ করে আবিরকে চমকে দেয়। অফিস থেকে অন্য একটা কাজে বাইরে যাচ্ছিল
আবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় সে একটা দৃশ্য দেখে ভীষণ চমকে
ওঠে। সুমন আর রূপা একটা দোকানের সামনে একসাথে দাঁড়িয়ে চটপটি খাচ্ছে। দু’জনে
ভীষণ হাসাহাসি করছে কোন একটা বিষয় নিয়ে। একসময় হাসতে হাসতে সুমন রূপার হাত
ধরে। রূপাও তাকে কিছু বলছে না। তারপর আবারও হাসিতে ভেঙ্গে পরে তারা। আবির
গাড়িটা যেখানে দাঁড় করিয়েছিলো সেখান থেকে ওরা আবিরকে লক্ষ্য না করলেও আবির
সবকিছু দেখতে এবং শুনতে পায়। আবির কিছুটা অবাক হয় বটে তবে কষ্ট পায় না।
রূপাকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। আবিরের কাছ থেকে তার প্রত্যাশার কোন কিছু
নেই।
বাসায় ফেরার পর রূপাই প্রশ্ন করে বসে।
- আজ কি তুমি কোন
কাজে ভার্সিটিতে গিয়েছিলে। তোমার গাড়িটা দেখলাম। আমাদের চটপটির দোকানটার
খুব কাছাকাছি দাঁড় করিয়েছিলে। তোমার উচিত ছিলো এসে আমাদের সাথে যোগ দেওয়া।
এক সাথে চটপটি খাওয়া যেত।
- তোমাদের বিব্রত করতে চাইনি।
- আমাদের মানে। তুমি কি এই আমাদের দ্বারা কোন কিছু মিন করতে চাইছ। সুমনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
- আমি কি এই নিয়ে কিছু বলেছি?
- বলোনি। তবে এটাই বোঝাতে চাইছ।
- তোমার তো ঐ সময় গানের স্কুলে থাকার কথা।
- আজ ক্লাস ছিল না। সুমনকে জানালাম। ও বলল, চলে আসুন, ভার্সিটিতে। দু’জনে গিয়ে আপনার প্রিয় চটপটি খাওয়া যাবে।
- আমাকে ফোন করলেই পারতে?
- তুমি তো তোমার ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকো।
-
আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই সব ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য সব সময়ই
তৈরী ছিলাম। শুধু এখন নয়। বিয়ের আগেও। তুমি যদি রবিনকে ভালোবাসতে আমি মেনে
নিতাম। আমি জোর করে কিছু চাই না। তুমি চাইলে নিজেকে মুক্ত করতে পারো।
- মুক্ত করে কার কাছে যাবো?
- সেই সিদ্ধান্ত তোমার। তবে মানুষটা আর যেই হোক সুমন হতে পারবে না।
- কেন?
-
তুমিই বলেছিলে সে তার ছাত্রীকে ভালোবাসে। যে শিক্ষক তার ছাত্রীকে ভালোবাসে
সে আর যাই হোক খুব একটা ভালো মানুষ নয়। ভালোবাসা, আবেগ প্রতিটি মানুষের
জীবনে থাকে। কিন্তু তাই বলে সেটা এতোটা অনৈতিক নয় যে আমরা মনুষ্যত্ব ভুলে
যাবো। বাবা-মা বিশ্বাস করে তার মেয়েটিকে একটা ছেলের কাছে পড়াতে দেয়। তার
উচিত নয় সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করা।
- কিন্তু এমনটা তো হর হামেশাই হচ্ছে?
- সে কি একসাথে দু’জনকেই সামলাচ্ছে?
- ব্যাপারটা ঠিক তা না। তার প্রেম তার ছাত্রীর সাথেই। তবে সে আমাকেও পছন্দ করে।
- তুমি এরকম একটা মানুষকে পছন্দ করো?
- হ্যাঁ করি।
- কারণ
-
সৃষ্টি জগতে ভালো মানুষগুলো অনেক নিদারুণ খুঁত বহন করে। আমি নিজেও জানি না
কেন এমনটা হয়। কি তাদের অপরাধ? তুমি নিজেও একটা দারুণ ভালো মানুষ। কিন্তু
তুমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছ। কিন্তু সুমনকে দেখো। আমি জানি সে একটা লুচ্চা,
লম্পট, চরিত্রহীন। তার কাছে আদর্শের কোন মূল্য নেই। সে বৈধ অবৈধ সব ধরনের
সুযোগগুলোই গ্রহণ করে। উপরে উপরে সে একটা ভালা মানুষ সেজে থাকে। কিন্তু
ভেতরে ভেতরে সে একটা আস্ত শয়তান, লোভী, কামুক আর স্বার্থপর। আমাকে গানের
শিক্ষক বানানোটা ছিলো তার একটা বাহানা মাত্র। এটা ছিলো তার একটা অন্য
পরিকল্পনার অংশ। সেটা আমি পড়ে বুঝতে পারি। এটা ছিলো আমাকে ঘর থেকে বের করার
একটা পদ্ধতি। সবকিছু জেনেশুনেই আমি একসময় সবকিছু মেনে নেই। আমি জানি সে
আমাকেও চায় না। তার ছাত্রীটিকেও সে চায় না। এ সবই তার হাতের তাস। সে তাস
খেলতে পছন্দ করে।
- তুমি কি তার সাথে বিছানায় যাও?
- নাহ।
- তাহলে?
- সে আশায় আছে। চেষ্টা করছে। তবে কাজ হবে বলে মনে হয় না
- কেন?
- আমার অন্য পরিকল্পনা আছে।
- যেমন?
- আমি এখনও পুরোপুরি সাজাতে পারিনি। যখন পারব তোমাকে বলব।
- আমার আজও মনে হয় এসবের চেয়ে আমি রবিনকে মেনে নিতে পারতাম। তাকে আমার সবচেয়ে ভালোমানুষ মনে হয়েছে।
- আমি দু’জন ভালোমানুষ দেখেছি। একজন বন্ধু, শুভাকাঙ্খী, অন্যজন বন্ধু, স্বামী। আমার আর দরকার আছে বলে মনে হয় না।
- এখন কি তাহলে নষ্ট জীবন বেছে নেবে?
-
কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেইনি। মানুষের সাথে মিশছি। দেখছি। ভাবছি। বোঝার
চেষ্টা করছি। তবে নিশ্চিত থাকো তোমার সাথে কোন বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।
- আমি এখন আর এসব নিয়ে ভাবি না। তুমি চাইলে আলাদা হতে পারো। তোমার জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নেই।
- তোমার প্রতি কোন অভিযোগ আমার কখনও ছিলো না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।
-
কিন্তু আমি মনে করি তোমার এভাবে কষ্ট পাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অথবা
অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটানোর চাইতে একটা কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াই
ভালো। যদি চাও আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে কারো কাছে গিয়ে থাকতে পারো। তবে
একটা ভালা মানুষ খুঁজে নিলে খুশী হবো। নষ্ট মানুষদের দেখলে আমার ঘৃণা হয়।
আমি আর যাই হোক আমার জীবনে কখনও নোংরা চিন্তা করিনি।
- আমি ভাবছি। দেখি কি করা যায়? তবে তোমার সাথে যতদিন আছি অন্য পুরুষের সাথে আর যাই হোক অন্ততঃ বিছানায় যাব না।
-
হাত ধরারও অনেক অর্থ থাকে। আমি জানি তুমি এটা পছন্দ করছো। করতেই পারো।
আমাকে কষ্ট দিয়ে কেন? তুমি তোমার স্বাধীন জীবনে সবকিছু করার অধিকার রাখো।
- ওটা আমি ইচ্ছে করেই করেছি।
- মানে।
-
তোমাকে দেখেই সুমনকে বলেছি হাতটা ধরতে। সে খারাপ তবে এখনও এতোটা সাহসি
হওয়ার সুযোগ তাকে দেইনি। সে আমার নিয়ন্ত্রনের ভেতরেই আছে। তাকে কিছুটা
ঘোলাজল খাওয়াচ্ছি। কারণ তার ছাত্রীটি আমাকে বলেছে তাকে একটা উচিৎ শিক্ষা
দিতে। সে জানে না যে সে একুল ওকুল দুকুলই হারাতে যাচ্ছে।
- এসবের মধ্যে জড়ানোর কি দরকার? বরং তুমি তোমার জন্যে কোন সুখের ঠিকানা খুঁজে নাও। আমার সম্মতি আছে।
- তোমাকে ছেড়ে যেতে আমার মন চায় না।
- রবিনের দ্বিতীয় স্ত্রী হলে কেমন হয়?
- বার বার রবিনের কথা আসছে কেন? তাছাড়া সে কি বলেছে যে সে আমাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বানাবে।
- আমি রবিনকে সবকিছু খুলে বলেছি।
- সর্বনাশ, এটা তুমি কি করেছো?
- মানে।
- আমি তার কাছে ছোট হয়ে যাব না।
- ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাওয়ার চাইতে তো ভালো।
- কেমন করে ভালো হলো। সে কি ভাববে? আমি না তোমাকে বললাম কাউকে কিছু না বলতে।
- কিন্তু রবিনেরও সবকিছু জানার অধিকার আছে। সে আমাদের ভালো বন্ধু। তাছাড়া তোমাকে তার হাতে ছেড়ে দিতে আমার তেমন কোন আপত্তি নেই।
- এটা হয় না। তার স্ত্রী এটা কোনদিনও মেনে নেবে না।
- তাকে আমি ম্যানেজ করেছি।
- কিভাবে?
- আমি তাকে বিয়ে করব।
- মানে।
- রবিন তাকে তালাক দেবে। আর আমি তোমাকে।
- এটা কেমন কথা?
-
হ্যাঁ। এটাই কথা। রবিনের এখন দুটো সন্তান। তার স্ত্রী এই দুটো নিয়েই
সন্তুষ্ট। তার আর সন্তান না হলেও চলবে। সে আমার ঘরে এলে আমিও সন্তানের বাবা
হতে পারব। আর তুমিও হতে পারবে সন্তানের মা। সময় ফুরিয়ে গেলে তোমার জন্যেই
ব্যাপারটা সবচেয়ে অর্থহীন হয়ে যাবে।
- কিন্তু তাই বলে এতোগুলো জীবন আর মন নিয়ে খেলা।
- কেন? রবিন কি তোমার জন্যে কোন খারাপ চয়েস?
- আমি তা বলিনি।
-
শোন। তোমার গর্ভে যদি কারও সন্তান আসেই সে যদি আমার নাই হয় তাহলে তা হবে
রবিনের। আমি এটা চাই কারণ আমি এটা মেনে নিতে পারবো। অন্য কাউকে নয়। আর তুমি
তো জানোই। আমার পিতা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই রবিনের সন্তানরাই পারবে
আমার সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে। আমি অনেক ভেবে দেখেছি। এর চেয়ে ভালো কোন
বিকল্প নেই।
- এটা কোন কথা হলো।
- কেন হবে না? এটাই ভালো কথা। এর চেয়ে ভালো কিছু আমি অন্ততঃ খুঁজে পাইনি।
- কিন্তু ! তাই বলে।
- কোন কিন্তু টিন্তু নয়। এটাই সমাধান। আমি তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই।
-
রবিনের স্ত্রীর প্রথম প্রথম একটু কেমন যেন লাগছিলো। যেহেতু পুরো ব্যাপারটা
তার জানাশোনা এবং সম্মতিতে তাই আগে ভাগেই সে মানসিকভাবেই তৈরী ছিলো। তবুও
প্রথম প্রথম একটু সংকোচ অনুভব করেছিলো। তবে তার বিশ্বাস ধীরে ধীরে সবকিছু
স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আবির মানুষটা ভীষণ ভালো।
রবিন আর রূপারও একই
অবস্থা। পুরো ব্যাপারটা এমন নয় যে হঠাৎ করে ঘটেছে। সবার জানাশোনা আর
সম্মতিতেই সবকিছু ঘটেছে। সবার ভালো চিন্তা করেই এমনটা সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছে। রবিনের একটাই শর্ত ছিলো তার সন্তানদের কাছ থেকে যেন তাকে একেবারেই
আলাদা করে দেওয়া না হয়। কিন্তু আবির তাকে কথা দিয়েছে এমনটা ভাববার কোন কারণ
নাই। আবিরের সংসার মানে রবীনের সংসার।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment