বাজারে অযথাই দেরী হয়ে যায় মাসুমের। সে
তো উঠেই পড়েছিলো। কিন্তু পাশের গ্রামের দবিরের সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়ে
যাওয়ায় দবিরই তাকে ধরে বসে। তারপর দু’জনে একসাথে চা খাওয়ার পালা। কত দিন পর
দেখা। একসময় প্রাইমারীতে একসাথে পড়ত দু’জন। ভালো বন্ধু ছিলো। লেখাপড়া ছেড়ে
দিয়ে এখন দুজন বিয়ে থা করে সংসারী। তাই দেখা হয় না বললেই চলে। হঠাৎ করেই
দেখা হয়ে যাওয়ায় ভালো লাগে দু’জনের। তারপর সেই চিরপরিচিত আঃ কাদেরের
দোকানের চা খাওয়ার নেশা। চা খেতে খেতে গল্প করতে করতে কখন যে দেরী হয়ে যায়
দু’জনের কেউই তা লক্ষ্য করেনি। হঠাৎই খেয়াল হয় বাজার প্রায় খালি হয়ে আসছে।
মাসুমই ওঠার তাড়া দেয়। দবিরও একমত হয়। তাদের ওঠা উচিত। একে তো শীতের রাত।
তার উপর যেতে হবে অনেকটা পথ। বাজার থেকে কম করে হলেও দু’জনের বাড়ীই মাইল
খানেকের দূরত্ব। তবে তা দুই দিকে। মাসুমের বাড়ীটা পূর্বের দিকে। আর দবিরের
বাড়ীটা পশ্চিম দিকে। সম্পূর্ণ উল্টো পথ। তাড়াতাড়ি উঠে দু’জনে যে যার বাড়ীর
পথ ধরে।
শীতের রাত। গ্রামের রাস্তা। তাই রাস্তাঘাট বলতে গেলে পুরোপুরি
নির্জন। শুনশান এই নীরবতার মধ্যে মাসুমের গাটা কেমন যেন ছমছম করে ওঠে। সে
যে ভীত নয় তা সে জানে। তাছাড়া গ্রামের ছেলে সে। গ্রামেই বেড়ে ওঠা। তাই রাত
বিরেতে চলার অভ্যেস তারও আছে। তবু আজ কেন জানি তার একটু অন্যরকম লাগছে।
তাছাড়া দেরী করবে এরকম কোন পরিকল্পনা তার ছিলো না। তাই টর্চ লাইটটাও সাথে
আনেনি। অন্ধকারে পথ চলতে একটু অসুবিধাই হচ্ছে তার।
বাজার থেকে যে বড়
রাস্তাটা ধরে ততক্ষণ সামনে এগিয়েছে এখন সেটাকে ফেলে আর একটা ছোট রাস্তায়
ঢুকতে হবে তাকে। রাস্তাঘাট যেভাবে অন্ধকার তাতে পথ চলাই মুশকিল। তাছাড়া আজ
কেন জানি একটু ভয় ভয়ও লাগছে। সাধারণত এরকম তার হয় না।
মাসুম মনে মনে
আয়াতুল কুরসী পড়ে নেয়। তারপর বুকে ফুঁক দেয়। কিছুটা সাহস আসে তার। সে দ্রæত
পায়ে সামনে আগাতে থাকে। এত অন্ধকারে পথ চলতে কেন জানি আজ তার অন্য সময়ের
চাইতে একটু অসুবিধাই হচ্ছে।
ছোট রাস্তাটা ধরে আধা মাইলের মতো আগানোর
পরেই একটা মাঠ। শীতকাল তাই মাঠ এখন শুক্নো। অন্য সময় ক্ষেতে ফসল থাকে।
বর্ষাকালে পানি থাকে। তাই রাস্তা ধরে দূরে যেতে হয়। এখন মাঠ শুক্নো থাকায়
সে মাঠের মাঝখান দিয়ে সোজা পাড়ি দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করে। কিন্তু তাতেও তার
মনে একটা ভাবনা পেয়ে বসে। মাঠের অপর প্রান্তে গ্রামে ওঠার আগেই পড়বে
তালগাছের ভিটা। প্রচুর তালগাছ আছে। তাই সবাই ওই জায়গাটাকে তালগাছের ভিটা
নামে চেনে। তাছাড়া তালগাছের ভিটায় অনেক ভৌতিক ঘটনা ঘটার কথা প্রচলিত যেমন
আছে তেমনি সে নিজেও দু’চারটা সরাসরি যাদের সাথে এরকমটা ঘটেছে তাদের কাছ
থেকেই শুনেছে। এই তো বছর দুই আগে তাদের পাশের বাড়ীর মন্টুটার সাথে কি
কান্ডটাই ন ঘটলো। সেই যে ভয় পেয়ে মন্টু অসুখে পড়ল তারপর আর উঠে দাঁড়াতে
পারেনি। ধীরে ধীরে শুধু রোগা হতে থাকলো। এখন তো মন্টুকে দেখলে মনে হয় ষাট
বছরের বুড়া। চোখের সামনে মন্টুটা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু
করতে পারছে না। ডাক্তার কবিরাজও কম দেখানো হয়নি। কিন্তু মন্টুর স্বাস্থ্যের
উন্নতি হওয়া তো দূরে থাক বরং দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। মন্টুটা শেষ পর্যন্ত
বাঁচবে তো।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে মাঠ পেরিয়ে তালগাছের ভিটার
কাছাকাছি চলে আসে তা টেরও পায় না মাসুম। অজ¯্র তালগাছ দিয়ে ঠাসা ভিটাটা
জুড়ে ঘণ অন্ধকার। এর ভেতর দিয়েই যেতে হবে। বিকল্প কোন পথও নেই। মাসুম সাহস
নিয়েই আগাতে থাকে।
চারিদিক থেকে বিচিত্র সব আওয়াজ আসছে। কান বন্ধ হয়ে
আসতে চায় মাসুমের। সে একসময় কান চেপে ধরেই সামনে আগাতে থাকে। দ্রæত পা
চালায় মাসুম। কোন মতে ভিটাটা পার হতে পারলেই বাঁচে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়
আর কখনও বাজারে টর্চলাইট ছাড়া যাবে না। আর গেলেও দেরী করবে না একদম।
সে
মূলত নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল। কারণ আর কিছু নয়। উপরের দিকে বা আশেপাশে
তাকানোর মত সাহস আর তখন তার বুকে অবশিষ্ট ছিলো না। এমন সময় বেশ জোরালো একটা
আওয়াজ আসতে শুরু করে। মাসুম মাথা তুলে না তাকিয়ে পারে না। সামনের
তালগাছটার মাথার দিকে তাকাতেই তার যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। কি
যেন একটা উল্টা হয়ে ঝুলে আছে। আর আওয়াজ করছে ভীষণ জোরে। তালগাছের সমস্ত
পাতাগুলো যেন ঝুমঝুমির মতো বাজছে। তার সমস্ত শরীরটা হিম হয়ে আসে। সে পা
বাড়াতে ভুলে যায়। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই দাঁড়িয়ে থাকাটাই তার জন্যে কাল হয়।
মুরব্বীরা বলেছে এসব দেখে দাঁড়াতে নেই। দ্রæত পায়ে চলে যেতে হয়। কিন্তু সে
সেই উপদেশ ভুলে যায়।
তার চোখের সামনেই বিশালাকৃতির কালো একটা প্রাণীসদৃশ
বস্তু বার বার আওয়াজ তুলে ক্রমশঃ নিচে নেমে আসতে থাকে। তার গলা শুকিয়ে
যায়। ভয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। মাসুম যেন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে
সম্বিৎ ফেরে তার। একটা শুক্নো তালপাতা গাছ থেকে ঝরে পড়ে। তার ভুল ভেঙ্গে
যায় মুহুর্তে। তাহলে সব কিছুই তার মনের ভ্রম। গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে তা তো
ঝরে পরবেই।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment