বিএনপি’র বর্তমান অবস্থা
নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া একটা দলের
ব্যাপারে মূলত কিছু বলার থাকে না। এটা এখন সমুদ্রের তীরে পড়ে থাকা মরা
তিমির শরীর। এ শরীরটাই এখন একটা বোঝা। কেন এমনটা হলো? বেগম খালেদা জিয়া
গৃহিণী ছিলেন ঠিকই কিন্তু রাজনীতিতে তিনি একদম যে কাঁচা ছিলেন তা বলার
অবকাশ নেই। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে খাটো করার সুযোগ থাকে না। তিনি
আপোষহীন ছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানোর ব্যাপারে শেখ
হাসিনার মতামতে তার সম্মতি তার উদারতা, বিজ্ঞতা এবং দূরদর্শীতা - সবটাই
প্রমাণ করে। পরীক্ষা পদ্ধতিকে নকল মুক্ত করার ব্যাপারে তার আন্তরিকতা ও
গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ প্রশংসার দাবী রাখে। দেশ বিরোধী কোন চুক্তিতে তিনি কখনও
রাজী হননি। তাই তার আমলেও তথাকথিত সা¤্রাজ্যবাদী সোফা ও হানা চুক্তিও
বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও তার
সাড়া ও সহযোগিতাকে খাটো করার সুযোগ নেই। এতো কিছুর পরও এদেশের সবচেয়ে বড়
ভোট ব্যাংকের অধিকারী দলটি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল কেন? কারণ তো আছেই। আমি মনে
করি দলটির পশ্চাৎপদ চিন্তা, উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া অর্থাৎ দিন বদলের কোন
মেনিফেস্টো বা সনদ না থাকা, এমন সব রাজনৈতিক দলের সাথে জোট বাঁধা যাদের
দেশপ্রেম বা বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস নিয়েই রয়েছে সংকট। এমন সব
লোককে উজ্জ্বল আলোতে নিয়ে আসা যাদের মূলত কোন রাজনৈতিক দর্শন, উদ্দেশ্য বা
অভিলাষ নেই। এমন সব লোককে দূরে সরিয়ে দেওয়া যারা দলটাকে বাঁচাতে পারত।
সর্বোপরি একচোখা দৈত্যের মতো একজন যুবরাজ দলটাকে ধ্বংসের চূড়ান্ত কিনারায়
নিয়ে এসেছে। সেখান থেকে এটি যে কোন সময় খাদে পড়ে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে
যেতে পারে।
দলটির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল ছিলো জামায়াতের সাথে
জোটবদ্ধ হওয়া। সত্যি কথা বলতে কি এতে জামায়াতও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা থাকলেও সংস্কারের মাধ্যমে দলটি তার ইমেজ
সংকট কাটিয়ে উঠতে পারত। কিন্তু তারা সে পথে হাঁটেনি। এর নেতারা যদি
বুদ্ধিমান হতো তাহলে তারা সরে গিয়ে নতুন জায়গা করে দিয়ে দলটাকে বাঁচাতে
পারত। কিন্তু তাদের ভুলই তাদের পায়ের রশি তাদের গলায় ফাঁসির দড়ি হয়ে
উঠেছিলো। এর সাথে গলা মিলিয়ে ছিলো কতিপয় তথাকথিত জাতীয়তাবাদী নেতা যাদের
কন্ঠে তখনও ছিলো পাকিস্তানীদের জিকির।
এই ফাঁকে একটু বলে রাখতে চাই
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। কারো ভালো লাগা না
লাগায় এর কিছু যায় আসে না। খোদ মুরুব্বী রাষ্ট্র আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রও
বাংলাদেশের জন্ম হোক এটা চায়নি। তবুও এর জন্ম হয়েছে। আর পাকিস্তানও বিশ্ব
মানচিত্র একটি রাষ্ট্র। অতএব বিশ্ব রাজনীতির আংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক
তো থাকবেই। এ নিয়ে হতাশ কিংবা উল্লসিত - কোনোটাই হওয়ার সুযোগ নেই।
সবচেয়ে
বড় কথা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও এমন কিছু নেই যা অন্যের সাথে
সম্পর্কের ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা দেয়। এটি জোট নিরপেক্ষ দেশ। তাই সবার সাথে এর
যাওয়ার সুযোগ আছে। আবার এর মূলনীতি সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা
নয় - এটাও প্রমাণ করে আমরা সবার সাথেই আছি। তবে তা অবশ্যই ন্যায়ের
ক্ষেত্রে, অন্যায়ের ক্ষেত্রে নয়। কারো দয়া বা করুণা নয়, অন্যের সাথে আমাদের
সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা।
যে কথায়
ছিলাম। নব্বইয়ের গণ আন্দোলনের পর কাঠখড় পোড়ানো স্বাধীনতার পক্ষের দলটি
ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়। ইসলাম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কিংবা এদেশ ভারত নিয়ে
যাবে - এসব প্রচারণা মূলত অনৈতিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিধর্মীদের ন্যায্য
অধিকার দেওয়ার যারা ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে তাদেরকেই দেখি ভারতের মুসলমানদের
দুর্দশায় হা-হুতাশ করতে। ভারতের মুসলমানদের দুর্দশায় আমাদেরও প্রাণ কাঁদে।
অথচ তারা একবারও ভাবে না তারা যা করছে তা যেন আমরা আমাদের দেশের সংখ্যালঘু
হিন্দু ভাইবোনদের প্রতি না করি।
আমি যা প্রত্যাশা করি আমাকেও তো তা
প্রয়োজনে দিতে হবে। শুধু প্রত্যাশায় যে কোনো সম্পর্ক তৈরী হয় না তা তো বলার
অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান সরকার সবার সহযোগিতা চাচ্ছে। পুরণো শত্রুতা
ভুলে, এমনকি যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো তাদের সাথেও সম্পর্ক তৈরিতে
সরকারের কোন অনীহা যে নেই তার প্রমাণ মডেল মসজিদ তৈরীতে সৌদি সরকারের
সাহায্য কামনা। তারা না করে দেওয়ায় মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী “দেশরত্ন”
“জননেত্রী” শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাভাজনেষু তার নিজ দায়িত্বে আমাদের সীমিত
সামর্থ্য দিয়েই তা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
নির্মীয়মান মডেল মসজিদগুলো এতোটাই দৃষ্টি নন্দন হয়েছে যে তা বলার অপেক্ষা
রাখে না।
দলটির আরও একটি ভুল ছিলো। আগাছা নিধন হওয়া উচিত ছিলো দলের
প্রথম ও প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য। কিন্তু দলটি তা না করে উল্টো তাদেরকে
বাড়তে দিয়েছিলো। বরং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিটিকে চিরতরে নির্মূল করার
জন্য তাদেরকে উর্বর ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছিলো। পনেরই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর
সপরিবারে নিহত হওয়া আমাদেরকে আজীবনের জন্য পশ্চাৎপদ করে দিয়েছে। আর ২১শে
আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নিহত হলে
আজ পৃথিবী যে নতুন বাংলাদেশকে দেখছে সে আশায় গুড়ে বালি পড়ত।
এ দেশকে
যারা বুনো শ্বাপদের চারণভূমি বানাতে চায় তাদের স্বপ্ন হয়তো কোনোদিন পূরণ
হবে না। এখনও অনুধাবন করার সময় ফুরিয়ে যায়নি যে, কোন একটা রাজনৈতিক দলের
বিরোধিতা করার জন্যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করা, সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করা
পায়ে কুড়াল মারার সমতুল্য। স্বাধীনতা কতোটা দামী, এটা কতোটা মহার্ঘ বস্তু
তা বুঝতে পারছে ফিলিস্তিনিরা। প্রতিদিন সেখানে অসহায় নারী আর শিশুর কান্নার
রোল ওঠে, শোনা যায় গগণ বিদারী আহাজারি।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment