Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

যে দেশে মানুষ ছোট - ওমর খালেদ রুমি

 

“অকারণে আমি তো মরেছি লক্ষ বার।” - মানিক বন্দোপাধ্যয়

কিভাবে এই লেখা শুরু করবো এটা নিয়ে অনেক দিন ভেবেছি। কারণ আর কিছু নয়। এটা না একটা গল্প না একটা উপন্যাস। এটা মূলতঃ এমন কিছু কথা যা আসলে অগোছালো এবং খানিকটা ব্যক্তিগত। এসব কথা বলা যেমন কঠিন এসব কথা শোনা এবং হজম করাও অনেক সময় বেশ শক্ত। বাস্তবটা এমনটা হওয়ার পেছনেও রয়েছে অনেক কারণ। যদি একটু আদিতে যাই জাতিগত দৈন্যের কথাই হয়তো সবার আগে চলে আসবে।
শারীরিক যোগ্যতা আর সৌন্দর্য্যও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এসব নিয়ে আমরা সবাই-ই একটা আশ্চর্য রকমের হীনমন্যতায় ভুগি। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করার মতো সাহস বা ধৃষ্টতা যাই বলি না কেন তা আমাদের অনেকেরই নেই। আমাদের চারপাশের অনেক লোক যেমন বাকপ্রতিবন্ধী তেমনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। আবার আমাদের অনেককেই পেয়ে বসেছে অকাল বার্ধ্যক। কিন্তু কখনও জানতে বা বুঝতে চাইনি এর কারণ কি? কি আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তা নিয়ে ভেতরে ভেতরে নিশেঃষ হলেও কখনও এর উৎসমূলে যেতে ইচ্ছা করেনি। হতে পারে এটাও এক ধরনের অযোগ্যতা। জীবনের অজ¯্র বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করার মতো সৎ সাহস খুব কম লোকেরই থাকে।
পৃথিবী জুড়ে পাঁচটি মহাদেশ। এগুলোর অধীন দেশগুলোর মধ্যে আজও কম বেশী সর্বত্রই একটা সচেতন জনগোষ্ঠী লক্ষ্য করা যায়। আমি মনে করি বর্তমান সভ্যতার এটাই হলো সবচেয়ে বড় অর্জন। মানুষ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে অনেকটাই আলোতে আসতে সক্ষম হয়েছে। অনেক বিষয় নিয়েই (অধর্ম, যৌনতা) আমাদের মধ্যে সে ট্যাবু (ঞধনড়ড়) ছিলো তা আস্তে আস্তে অনেকাংশেই দূর হয়েছে। এটাকে একটা বিরাট অর্জনই বলা যায়।
আমরা যারা উপমহাদেশের অতীত ইতিহাস ও সংস্কৃতিটা ভালোভাবে জানি তাদের নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে কী ভীষণ আর অদ্ভুত একটা আধার এর বুকের উপর চেপেছিলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। এর মূলে সবচেয়ে যা দায়ী ছিলো তা হলো অশিক্ষা। আর সেই অশিক্ষা অন্ধকার এনেছিলো। বিশেষ করে নারীর কথা যদি বলি তাহলে বলতে হবে তারাই ছিলো সবচেয়ে বেশী সংহিসতার শিকার। সেই সহিংসতা যে সব সময় শুধু যৌনতার তা-ও নয়। নারীর সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা, ইচ্ছার স্বাধীনতা সবকিছুই ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ।
একটু পিছনে যদি যাই এখানে আর্যদের আগমন ঘটেছিলো খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। আর এদের আগমন ঘটেছিলো পারস্য বা ইরান থেকে। তাদের আগমনই নিয়ে এলো বৈদিক ধর্ম। কিন্তু উপমহাদেশের জটিল আবর্তে পড়ে সেই ধর্মের এতোটা ডালপালা গজালো যা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এর মূলেই এক ও অদ্বিতীয় নিরাকার নিরাহার সৃষ্টিকর্তার ধারণা কিন্তু সিজনে সিজনে নতুন নতুন দেবতার আগমন ঘটতে লাগলো। আর শেষমেষ এই সংখ্যাও গিয়ে দাঁড়ালো তেত্রিশ কোটিতে। এই ভূ-ভারতের জনসংখ্যাও এতোটা ছিলো কি-না সন্দেহ। নাকি এই কোটির-ও ছিলো অন্য কোন মানে। আমার এতোটা জানা নাই।
পৃথিবী জুড়ে ধর্মের যে ইতিহাস তা কমবেশী সবারই জানা। আফ্রিকায় আমেন খোদা, এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সূর্যের পুজারীরা, গ্রীক দেবতাদের কাহিনী থেকে সন্ধান পাওয়া অজ¯্র দেব-দেবী যাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলো কথিত টাইটান ইত্যাদি ইত্যাদি ইতিহাস সময় আর কালের আবর্তে মানুষের নানা গোষ্ঠীর হাতে পড়ে এমনভাবে বিকৃত হয়েছে যে অতীতে এর মূল চেহারাটা আসলে কেমন ছিলো তা আর আন্দাজ করা যায় না। ঐতিহাসিক, দার্শনিক, বোদ্ধা, পুরাতাত্তি¡ক, ভাষাবিদ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানীদের নানামুখী ব্যাখ্যায় এর স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা চলে বটে তবে তার গভীরে নামার পর সব ধর্মেরই যে আদি ইতিহাস তার গল্পটা মূলত একই রকম। এক অদ্ভুত মিল। এর ব্যাখ্যা আমার মতো নস্যি লোকের ধারণার বাইরে।
পৃথিবীর ইতিহাস বড়ই বিচিত্র। সভ্যতা আজ অনেক দূর এগিয়েছে। মানুষ ছুটছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। এর মধ্যেও আবার খোঁজ চলছে সেই সুদূর অতীতের নিয়নডার্থাল মানুষের। কেউ কেউ ধারণা করছেন হিমালয়ের সেই কথিত ইয়েতিরাই মূলত নিয়নডার্থাল মানুষ। মূলতঃ এরকম কিছু আদৌ আছে কি-না না-কি এর পুরোটাই গুজব তা-ও বা কে নিশ্চিত করবে। কেউ কেউ আবার ধারণা করছেন ইয়েতিরা থাকে মূলতঃ কৈলাস পর্বতে। বিচিত্র বিষয়।
উপমহাদেশের ইতিহাস যেটুকু জানা যায় তা হয়তো মাত্র কয়েক হাজার বছরের। সেখানে খ্রীস্টের জন্মের নয় হাজার বছর পূর্বে যাদের কথা শোনা যায় তারা নাকি আর্লি নিওলিথিক পিরিয়ডের বাসিন্দা। তারপর যদি আমি ৭০০০ থেকে ৩৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাদ্ধ সময়কালটাতে যাই তাহলে পাবো মেহেরগড় সংস্কৃতির কথা। ৩০০০ থেকে ১৫০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়কালটাতে ইন্ডাস ভ্যালি সিভিলাইজেশন বা সিন্ধু সভ্যতা। ৩০০০ থেকে ২৬০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়কালটাতে আর্লি হরপ্পান পর্যায় ।
২৬০০ থেকে ১৭০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়কালটাতে ছিলো হরপ্পা সভ্যতার সমৃদ্ধির সময়কাল। ১৭০০ থেকে ১৫০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়কালটাতে ছিলো হরপ্পা সভ্যতার অন্তিম সময়কাল যা খ্রীস্ট পূর্ব চৌদ্দশ শতকের সময়কালটাতে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সময়কালটাকে চ্যালকোলিথিক সময়কালও বলা হয়।
এদের পরপরই যা আলোচিত তারা হলো মৌর্য সম্প্রদায়। এদের শুরুটা খ্রীস্ট পূর্বাব্দ ৩২১ সালে এবং এরা টিকে ছিলো খ্রীস্ট পূর্বাব্দ ১৮৫ পর্যন্ত। এরপর আগমন ঘটেছিলো গুপ্ত সা¤্রাজ্যের। এখানে বলে রাখা ভালো সভ্যতাকে বদলে দেওয়া আয়রন এজ বা লৌহ যুগের সূত্রপাত ঘটেছিলো ১৬০০ খ্রীস্ট পূর্বােেব্দ এবং তা চলেছিলো খ্রীস্ট পূর্ব ৩০০ অব্দ পর্যন্ত।
মধ্যযুগটা শুরু হয়েছিলো ৭০০ খ্রীস্টাব্দে যা চলেছিলো ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব পর্যন্ত। আর তারপরের সময়কালটা হলো আধুনিক যুগ। এই সময়টাতে এখানে মুসলমানদের আগমন ঘটে মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে।
অবশ্য উপমহাদেশের একটা বিরাট অংশ জুড়ে গুপ্তদের পাশাপাশি পাল ও সেন আমলের শাসন চলেছে। অবশ্য এখানে মৌর্য যুগের শেষের দিকে শুরু হওয়া পালদের রাজত্বও স্থায়ী হয়েছিলো ১১৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যেখানে তারা ক্ষমতা শুরু করেছিলো ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে।
উপমহাদেশের পরবর্তী সময়ের ঐতিহাসিক পরম্পরা নিয়ে তেমন কিছু লেখা জরুরী নয় এজন্যে যে, এই ইতিহাস অনেকেরই জানা। কিন্তু ইতিহাস থাকে ইতিহাসের জায়গায়। বাস্তবটাই হলো মূলত এই উপমহাদেশের হতভাগা মানুষের নিয়তি। আর এই বাস্তবতাটাই গড়ে দেয় এর সামাজিক নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ ইত্যাদি। অনেক সময় এটা প্রচলিত ধর্মীয় বিধানকেও অতিক্রম করে যেতে চেষ্টা করে।
মূলত উপমহাদেশের মানুষর জীবনের খাঁটি বাস্তবতার মূলে রয়েছে আর্থিক সংকট। এর পাশাপাশি অশিক্ষা। আর এদুটোই সবচেয়ে বড় নিয়ামক হয়ে দেখা দেয়। বিজ্ঞান মনস্কতার অভাব এর পিছিয়ে থাকার অন্যতম আধুনিক কারণ। পশ্চাৎপদতার এই যাতাকলে পিষ্ট হওয়া মানুষগুলোর কাছে জীবনের মানে কখনও কখনও অর্থহীন বেঁচে থেকে দিন অতিক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঘরের কোণে গৃহবন্দী গৃহবধুর অসহায়ত্ব, অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীর হতাশা, কর্মজীবি মানুষগুলোর স্বপ্ন আর আয়ের না মেলানো হিসাবের জীবনে সবসময়ই হিমসিম খাওয়া - আর এরকমই একটা অসুস্থ পরিবারে বার্ধক্যে উপনীত মানুষগুলোর চরম অবহেলার শিকার হওয়ার মধ্যেই এর নির্মম নিয়তি, বাস্তবতা আর পরিণতি খুঁজে পাওয়া যায়। এ যেন এক গোলকধাঁধা। একটা অদ্ভুত দুষ্টচক্রে আবদ্ধ মানুষগুলো শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু মুক্তির উপায় মিলছে না। আর এসবই একসময় তাদের মধ্যে সৃষ্টি করছে অপরাধ প্রবণতা।
একবিংশ শতাব্দীর আজকের যে সমৃদ্ধি তার শুরু হয়েছিলো মূলত বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী নানা চড়াই-উৎরাই পার করলেও শেষ পর্যন্ত ¯œায়ু যুদ্ধের অবসানের মধ্য দিয়ে একটা বিতর্কিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়। আর এরপরই সেই ১৯৯০ সালের পর থেকেই পৃথিবী প্রবেশ করে প্রযুক্তির জগতে। পুঁজিবাদী পৃথিবী বিজ্ঞানের এইসব কল্যাণের পুরো ফায়দা নিয়ে অর্থে বিত্তে ফুলে ফেঁপে ওঠে। জন্ম দেয় পৃথিবী জুড়ে অজ¯্র দানব কোম্পানীর। এর মালিকরা হল পৃথিবীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ধনী।
তাদেরকে বলে দাও
হয়তো কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি দৌঁড়ে
তাদের ইতিহাস হয়তো কিছুটা গেছে এগিয়ে
আমাদেরটা ছাড়িয়ে
কিন্তু ইতিহাসই তো বলেছে
ইতিহাস বদলাতে সময় লাগে না।
এভাবে সমাজতান্ত্রিক আর গণতান্ত্রিক - এই দুই ভাগে পৃথিবীর বিভক্তির একটা সাময়িক অবসান ঘটলেও সেটা আবার ধনী এবং গরীবের দুটো শ্রেণীতে সুষ্পষ্টভাবে বিভাজিত হয়ে যায়। এই সময়টায় আরও যেসব ঘটনা ঘটে তাহলো পুঁজিবাদীদের মিডিয়াগুলো হয়ে ওঠে এক একটা আগ্রাসী শক্তি। তাদের প্রচারণায়, তাদের গুণকীর্তনের কারণে, তাদের সাহিত্যিক, লেখক আর বুদ্ধিজীবিরা হয়ে ওঠে সর্বজনগ্রাহ্য। তাদের বইগুলো হয় বেস্ট সেলার। যাবতীয় পুরষ্কারগুলোও যায় তাদের ভাগ্যে। তাদের ফিল্মগুলোও দেখে পুরো পৃথিবীর মানুষ। অস্কার হয়ে ওঠে যোগ্যতা প্রমাণের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। নোবেল, বুকার, পুলিটজার - সবই জোটে তাদের ভাগ্যে। মাঝে মাঝে অবশ্য সান্ত¡না স্বরূপ দু’একটা পুরষ্কার বা স্বীকৃতি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় বটে আর তাতেই কেউ কেউ এতোটাই আত্মতৃপ্তিতে ভোগে যে পাশ্চাত্যের পদলেহন শুরু হয়ে যায়। এ এক চরম অবমাননা আর লজ্জাকর পরিস্থিতি।
সা¤্রাজ্যবাদীদের বোমারু বিমানের পাখার নিচে
তুলোর মতো উড়ছে আমার স্বপ্নগুলো
আমাদের শিশুদের চোখে ভীত বিহŸবল চাহনি
আমাদের বুদ্ধ বৃদ্ধারা শংকিত
আমাদের যুবকরা দিশেহারা
অসম বন্টনের এই পৃথিবীতে
আমাদের সহজ সরল উচ্চারণ
খুব বেশীদূর পৌঁছায় না
বিশাল জলরাশি ডিঙ্গিয়ে
আমাদের কেউ কেউ আফ্রিকার কিনারা থেকে
উদ্ভ্রান্তের মতো সাগর পাড়ি দেয়
উন্নত জীবনের আশায়
আমি তাদেরকে বলি
এসবের মধ্যে অনেক অপমান লুকিয়ে আছে
আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের ভূ-খন্ডেই ছিলো
মাথা উঁচু করে
সা¤্রাজ্যবাদীদের বোমারু বিমানের
ডানার নিচে
আমার স্বদেশকে বিপন্ন দেখে
আমার ভালো লাগে না।
অবশ্য এখানে বলে রাখা ভালো যে দু’একটা অনাকাক্সিক্ষত ধাক্কাও আসে মাঝে মাঝে। যেমন ১৯৯০ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়কালটা থেকে শুরু করে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে মুসলিম দেশগুলোতে হামলা চালানো দানব আমেরিকার সহযোগী ইউক্রেন সম্প্রতি রাশিয়ার হাতে ধোলাই খেয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখছে। আর এই কথাটা লেখার কারণেই আমার এই লেখাটাও হয়ত পাশ্চাত্যের তথাকথিত ঝলমলে দুনিয়ার কোন স্বীকৃতি পাবে না।
উপমহাদেশের বাসিন্দারাও হয়তো সামনে আগাতে পারতো কিন্তু এখানের সমস্যাগুলো বেশ অদ্ভুত। এর আদি বাসিন্দারা আজও গোঁ ধরে বসে আছে তারাই এ জনপদের পুরনো বাসিন্দা। তাদের সনাতন ধর্মই হচ্ছে সব। কিন্তু তারা একবারও ভাবে না তাদের এই ধর্মটাও এখানকার না। এটা নিয়ে এসেছিলো আর্যরা। যারা তাদের পুর্বপুরুষদের উপর আধিপত্য করেছিলো। আর তারা ছিলো কোল, মুন্ডা, দ্রাবিড় ইত্যাদি। সেই দ্রাবিড়রাও আবার এসেছিলো অন্য কোন জায়গা থেকে। তাহলে মুসলমানরা এসে কি দোষটা করলো। তারাও তো এসেছে প্রায় পনেরো শো বছর হতে চললো। বিবাদ না করে বরং মিলেমিশে থাকো, সমৃদ্ধ হও। যদি প্রতিযোগিতা করতেই হয় ইউরোপ, আমেরিকার সাথে করো।
আমি যে সমাজটায় বেড়ে উঠেছি সেখানে অদ্ভুত সব অসঙ্গতি দেখি। আমাদের কবি সাহিত্যিকদেরকে অবশ্য ধন্যবাদ দেবো এই জন্যে যে তারা তাদের রচনাবলীতে এসবের অনেক চিত্রই অংকন করেছেন। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যয়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যয় - যারা তিন বন্দ্যোপাধ্যয় হিসেবে খ্যাত তাদের প্রায় শ’ দেড়েক উপন্যাস আমাদের সমাজ ব্যবস্থার খুটিনাটি তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি অন্দর মহলের এবং অন্তর মহলের চিত্র আঁকায় শরৎচন্দ্র প্রবেশ করেছেন নারী হৃদয়ের অলি-গলিতে। আর যুগান্তকারী প্রতিভা রবীন্দ্র-নজরুলের হাতের যাদুর কাঠির স্পর্শে এই প্রচেষ্টা পেয়েছে নিদারুণ মাত্রা।
তবে রবীন্দ্রনাথের প্রতি যে অবিচারটা করা হয়েছে তা হলো তাকে তার যে সাহিত্যকর্মের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে তিনি হাজার গুণ আধুনিক, যোগ্য এবং বিস্ময়কর সাহিত্যিক। তার ছোটগল্পের জন্যেও এই মহান সাহিত্য ¯্রষ্টাকে বার বার নোবেল দেওয়া যায় (যদি তা সম্ভব হতো)। রবীন্দ্রনাথ এক অপার বিস্ময়ের নাম।
কিছু কিছু লোক অযথা বিতর্ক করার চেষ্টা করে। মানুষ হিসেবে কে-ই বা সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। আমরা এ কথা কেন ভুলে যাই রবীন্দ্রনাথ কোন ফেরেশতা নন। তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। তার সবকিছুই যদি সবার ভালোলাগে তাহলে তো মানুষ হিসেবে তার মৌলিকত্বটুকুও থাকে না। যদিও মানুষ হিসেবে আমি যতোটুকু জানি তেমন কোন বড় ত্রæটি আমার চোখে পড়েনি। জমিদার হয়েও সাধারণ প্রজাকুলের সাথে মিশে যাওয়া যেনতেন কথা নয়। তিনি শুধু কবি গুরুই নন। বাংলা সাহিত্যের রাজাধিরাজ। তিনি আমাদের এক প্রাতঃস্মরণীয় প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যের মেরুদন্ড তিনি। বাকীরা ডালপালা। রবীন্দ্রনাথকে না বোঝাই রবীন্দ্র সমালোচনার প্রধান কারণ। তাকে চিনুন, জানুন, ডুব দিন তার সাহিত্যের অতল তলে। মুক্তো কুড়িয়ে নিয়ে ফিরবেন সন্দেহ নাই।
আর একটা কথা। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যকার যে অযৌক্তিক তুলনা তা শুধু আমাদের হীনমন্যতাই প্রকাশ করে। এটা তাদের দুজনকেই হেয় প্রতিপন্ন করার নামান্তর এটা একটা দুর্বত্তমূলক অপচেষ্টা। এর থেকে দূরে থাকা উচিত। প্রত্যেকে তার নিজের মতো মহান।
আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বা এক কথায় বলতে গেলে গরীব পরিবারগুলোর সন্তানদের জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল হলো মেধাবী হওয়ার কারণে লোভ সামলাতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে জীবনের একটা বিরাট অংশই ব্যয় হয়ে যায়। এদের মধ্য থেকে গুটিকয়েক মাত্র ভালো চাকরি পায় বটে তবে বিয়ে না করে সংসার করতে করতে সন্তানের পিতা মাতা হতে গিয়ে জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকু শেষ হয়ে যায়। আমি মনে করি এদের সবারই এ ধরনের স্বপ্ন থাকা যৌক্তিক নয়। যারা ভীষণ মেধাবী, উচ্চতর গবেষণার কাজের জন্যে যোগ্য তাদেরই এইসব জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ শিক্ষার সাথে নিজেদের জড়ানো উচিত। যেহেতু এদের সামর্থ্য নেই তাই সরকারের উচিত এদেরকে সাহায্য করা। পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনগুলোও মেটানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত যাতে সে সঠিক সময়ে সে সঠিক জিনিসটা পেতে পারে। পনেরোতে যৌবনে পা রাখা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন যুবক যখন পয়ত্রিশেও স্ত্রীর মুখ দেখতে পারে না তখন তো বলতেই হবে সে তার যৌনতার স্বাদই বা কেমন করে মেটাবে আর বাপই বা হবে কখন?
একদিকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের দীর্ঘসূত্রিতা আবার অন্য দিকে এর পাশাপাশি শিক্ষার দৈন্যই জাতির সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমাদের জানাশোনার স্তর, জাতিগত ভাবেই, এতোটাই নিচে যে এর দ্বারা কিছু আশা করা যায় না। তাই সমষ্টিগতের এই পুত্তর পারফর্ম্যান্স (চড়ড়ৎ ঢ়বৎভড়ৎসধহপব) রাতারাতি একটা বড় সংকট যা জাতিগতভাবে আমাদেরকে সব সময় পেছনে ফেলে রাখছে। এসব নিয়ে ভাবা কিংবা এর বিকল্প সমাধান কি হতে পারে তা বের করার ব্যাপারে আমাদের আদৌ কোনো আন্তরিকতা আছে কি?

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak