Skip to main content

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com : The glittering city aroundLife is rich with red, blue light of neonWide sky over the headPieces of moonlight, scatteredAnd in that splashed pieces of meteorThose are taken by the scientists of NASASo height the civilization reachesThis city is the flow of happiness nowSome men like us pass the wayWith frustration

 অদৃশ্য (THE INVISIBLE)- ওমর খালেদ রুমি

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝরছে। সবাই যে যার মতো ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়েছে। এই বৃষ্টির মধ্যেও স্বপন ভিজছে ওর স্ত্রী লায়লাকে নিয়ে। গান গাইছে গলা খুলে। লায়লা হাসছে। বার বার লাজুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে স্বপনের দিকে। হঠাৎ করেই একটা গুলি এসে স্বপনের বুকটা এঁফোড় ওফোঁড় করে দিলো। লায়লা থ’ হয়ে গেল। স্বপনকে ধরে ফেলল দু’হাতে। স্বপনের রক্তে বৃষ্টির পানি রঙিন হয়ে যাচ্ছে। খুব বেশিক্ষণ লাগল না স্বপনের দেহটা নিথর হতে। প্রাথমিক বিস্ময় কাটতে না কাটতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল লায়লা। তার চোখের সামনে এ কি হয়ে গেলো।

স্বপন কোন ভালো মানুষ নয়। এই এলাকার সবচেয়ে বড় গুন্ডা সে। তার গুলিবিদ্ধ হওয়াটা আশ্চর্যেরও কিছু নয়। বরং না হওয়াটাই আশ্চর্যের। এ পর্যন্ত কতজনকে সে মেরেছে তার হিসাব থানার কাছেও নেই। তাই বলে লায়লার হাতে হাত রাখা অবস্থায়।

গুলিটা যেভাবে অব্যর্থভাবে লক্ষ্যভেদ করেছে তাতে বোঝাই যায় খুব কাছ থেকেই গুলিটা করা হয়েছে। কিন্তু লায়লা বুঝে উঠতে পারে না এই ঝুম বৃষ্টির সময় এত কাছ থেকে কে স্বপনকে অনুসরণ করতে পারে? তবে কি এটা মোহিত হতে পারে। কারণ লায়লা খেয়াল করেছে বেশ কিছুদিন ধরে মোহিত তাদের বাড়ীর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলো। আর এটা স্বপনের বাইরে থাকার সময়টাই বেশি হচ্ছিলো।

লায়লা বিশ্বাস করত স্বপনকে একদিন না একদিন গুলি খেয়েই মরতো হবে। কারণ এরকম একটা ভয়াবহ গুন্ডা মানুষের পরিণতি এর চেয়ে ভালো আর কিইবা হতে পারে। তবুও তাকে বিয়ে করেছিলো। বিয়ে করেছিলো খানিকটা ভয়ে বাকীটা ভালোবাসার কারণে। তবে স্বপনের পরিণতি নিয়ে সে কখনওই খুব একটা অস্থির ছিলো না। কারণ সে এটাকে মেনে নিয়েই সামনে এগিয়ে ছিলো। তবে তার আফসোস হচ্ছে একটা কথা ভেবে। একজন পুরোদস্তুর খুনীর মৃত্যুটা তার হাতে খুন হওয়া কোন প্রতিপক্ষের হাতে হয়নি। হয়েছে এমন একটি ছেলের হাতে যে তার স্ত্রীকে পছন্দ করে, তাকে পেতে চায় এবং এজন্যে সে এতোটাই ময়িয়া যে স্বপনের মতো একজন ডাকসাইটে খুনীকেও এতোটা কাছ থেকে গুলী করতে পারে। নিয়তির রহস্য বোঝা সত্যিই ভার।

লায়লা বুঝে উঠতে পারে না এতে তার কোন অপরাধ আছে কি-না। মোহিতের সাথে তার কখনও কোন কথা হয়নি। হওয়ার সুযোগও নেই। কারণ একটা কথা সে সবসময় মাথায় রেখেছে যে সে কসাই স্বপনের স্ত্রী যে হাসতে হাসতে মানুষ জবাই করতে পারে। লায়লার বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে তাকে মেরে কেটে টুকরো টুকরো করে পানিতে ফেলে দেওয়া স্বপনের জন্যে কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কারণ এই একটা কাজই সে ভালো পারে।

থানা পুলিশ স্বপনের হাতের মুঠোয় ছিলো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নয়নের মনি সে। কারণ যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে প্রয়োজন হয়। কেউ যা পারে না স্বপন তা পারে। তাই আজ পর্যন্ত স্বপনের হাতে কোন হাতকড়া পরেনি। হয়তো আগামীতেও পরতো না। এদেশে সবধরনের খুনীরা মোটামুটি নিরাপদই বলা যায়। কারণ যে সরকারই ক্ষমতায় বসুক ক্ষমতাধরদের এদের প্রয়োজন হয়। তাই সাধারণ জনগণ বিনা দোষে প্রাণ দিলেও কনম্যানরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের জন্যে থাকে জামাই আদরের ব্যবস্থা। বড় বিচিত্র এই দেশ।

স্বপনের কাছে নীতি নৈতিকতার কোন স্থান ছিলো না। তার কোন রাজনৈতিক মতাদর্শও ছিলো না। সে ছিলো ¯্রফে একটা যন্ত্রমানব। খুনের মেশিন। টাকা বুঝে পেলে যে কাউকে খুন করতে তার হাত কাঁপতো না।

লায়লা এর সব কিছুই জানতো। তবুও স্বপনকে তার ভালো লাগে। ভালো লাগে একটা বন্য কারণে। শক্ত সামর্থ্য মানুষটার ভেতরে একটা বুনো যৌনতা ছিলো যা সব নারীই মনে মনে কামনা করে। কিন্তু কাঁটার ভেতর থেকে ফুল সবাই তুলতে পারে না। লায়লা সেই ঝুঁকিটাই নিয়েছিলো। সে জানতো একজন পুরোদস্তুর খুনীর স্ত্রী হওয়ার কারণে তার জীবনটাও যখন তখন চলে যেতে পারে। কিন্তু তবুও সে ঝুঁকি নিয়েছিলো। এ যেন সাপের মাথা থেকে মনি তুলে আনতে যাওয়া যদিও সবাই জানে মাত্র একটা ছোবলে প্রাণ সংহার হতে পারে। লায়লা সেই ঝুঁকিটাই নিয়েছিলো।

লায়লার ভাবনাগুলো ক্রমশঃ এলোমেলো হয়ে আসছে। সে গুছিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে আসছে। সে ভাবছিলো স্বপনের মৃত্যুতে তার কোনো হাত আছে কি-না।

লায়লা মোহিতকে কখনও বলেনি স্বপনকে গুলি করো। তাকে মেরে ফেলো। আমাকে তার কাছ থেকে নিয়ে যাও। তার প্রয়োজনও ছিলো না। কারণ এটা হতো শুধু স্থান পরিবর্তন। এক গুন্ডার ঘর থেকে অণ্য এক গুন্ডার ঘরে যাওয়া। কিন্তু লায়লা এতোটা অস্থির ছিলো না। তাছাড়া স্বপনের ঘরে সে সুখীই ছিলো। গুন্ডা মানুষগুলো অবশ্য ভীষণ সংসারী হয়। হয় দারুণ স্ত্রীভক্ত। স্বপনও তাই ছিলো। বাইরে সে যাই হোক, যার কাছে যেরকম মানুষই হোক, লায়লাই ছিলো তার পৃথিবী। সেই যে একবার লায়লার লাজুক আর গভীর চোখের মায়ায় বাধা পড়েছিলো তারপর মানুষটা জীবনে আর কোন মেয়ে মানুষের দিকে তাকায়নি।

লায়লা এর সবই জানতো। শুধু জানতো বললে ভুল হবে। বুঝতে পারতো। পারতো অনুভব করতে। কিন্তু সবকিছুর পরও একটা কিন্তু সবখানেই থেকে যায়। কেবল এই একটা কিন্তু অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ঘটনা বদলে দেয়। পাশার দান উল্টে দেয়। লায়লার ক্ষেত্রেও কি তেমন কিছু ছিলো? লায়লা সঠিক বুঝে উঠতে পারে না।

পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে লায়লা তেমন কিছুই বলতে পারেনি। সে শুধু বলেছে, দারুণ বৃষ্টি হচ্ছিলো। তারা দু’জন হাত ধরাধরি করে ভিজছিলো। স্বপন গলা ছেড়ে তার প্রিয় গান গাইছিলো। হঠাৎ করেই একটা বুলেট এসে তার বুকের বাম পাশটাকে এফাঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যায়। সে স্বপনকে হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে। তার রক্তে বৃষ্টির পানি লাল হয়ে যাচ্ছিলো। সবাই ছুটে আসে। লায়লার হাতের উপরেই স্বপন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

এসব কথা লায়লাল না বললেও চলত। পুলিশ এসব কথা জানে। মোহিত এখন তাদেরই লোক। তাদের গ্রীণ সিগন্যাল নিয়েই তবে সে গুলি চালিয়েছে। পুলিশের আশীর্বাদ ছাড়া কেউ গুলি চালালে তাকে জেলে থাকতে হবে। পুলিশ এও জানে মোহিত এই গুলিটা চালিয়েছে স্বপনকে মারার জন্যে নয় বরং লায়লাকে পাওয়ার জন্যে। লায়লাকে পেতে হলে স্বপনকে সরে যেতে হতো। তাছাড়া স্বপন এতোগুলো ঘটনা ঘটিয়েছে যে তাকে বাঁচিয়ে রাখলে বরং বড়দেরই অসুবিধা। মোহিত উঠতি ক্যাডার। ভালো শ্যুটার। এখনও গায়ে দাগ লাগেনি। তাকে দিয়ে বেশ কিছুদিন চালিয়ে নেওয়া যাবে।

সে যখন বড়দের একজনকে জানালো যে সে লায়লাকে পছন্দ করে আর এ ব্যাপারে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে বাকীটা সে দেখবে তখনই তিনি যা বোঝার বুঝে নিলেন। তিনি থানা পুলিশকে বলে দিলেন। মোহিত অগ্রসর হলো। সেই বড় মানুষটি স্বপনের সাথে তার শেষ চায়ের কাপটা খেয়ে ফেললেন। স্বপন বিদায় নেওয়ার সময় মুখে হাসি ধরে রাখলেও অস্ফূট স্বরে বললেন, “গুড বাই, থ্যাংক ইউ ফর দ্য থিংস ইউ হ্যাভ ডান ফর মি।” বড় মানুষটি লেখাপড়ায় বরাবরই ভালো। আর এই ঘটনার মাত্র দু’দিন পরই এই দুর্ঘটনাটি ঘটলো।

লায়লার কি কোন দোষ ছিল? না। নাকি হ্যাঁ। লায়লা তো কোনদিন মোহিতের সাথে একটা কথাও বলেনি। তাহলে দোষ হবে কেমন করে? তার তো যে সুযোগ কিংবা ইচ্ছে কোনটাই ছিলো না। তবে একথা তো সত্য লায়লা মোহিতের অনুভূতিটা সম্পর্কে জানতো। লায়লা যে এই অনুভূতিটা সম্পর্কে জানে এটা আবার মোহিতও জানতো। আর তাদের মধ্যে যোগসূত্রটা ছিলো লাকি বুয়া। লাকি বুয়াই নীরবে নিভৃতে এসব খবরাখবর আদান প্রদান করতো। তবে একথা সত্য যে লায়লা এমনকি লাকি বুয়াকেও হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। তবে এসবের বাইরে তার একটা পাপ আছে। সেই পাপটুকুই বুলেট হয়ে স্বপনের বুকে এসে বিঁধেছে। তার প্রাণপাখিটিকে উড়িয়ে দিয়ে তাকে একটা নিথর দেহে পরিণত করেছে। একজন দোর্দন্ড প্রতাপ খুনীকে একটি বৃষ্টি ভেজা কর্তিত কচু পাতায় পরিণত করেছে।

নারীর চাহনিতে যে কতটা মধু কিংবা বিষ থাকতে পারে তা লায়লা জানে। তার যে চাহনি মোহিতের জন্যে মধু হয়েছিলো তাই স্বপনের জন্য বিষ হলো। সে কিন্তু এই একই চাহনি দিয়েই স্বপনকে ঘায়েল করেছিলো। মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়নি। বাকী যা করার স্বপনই করেছিলো। আর এর পরিণতিতেই এই ঘর সংসার। এবার মোহিত বড়শি বিদ্ধ হলো। তবে সংসারটা এখনই নয়। একটা মানুষ মারা গেছে। ব্যাপারটা নিয়ে থানা পুলিশ হচ্ছে। এই মুহুর্তে অন্য কিছু ভাববার অবকাশ নেই। সবুরে মেওয়া ফলে। মাত্র একুশ পা রাখা লায়লার যৌবনতো আর কালই ফুরিয়ে যাচ্ছে না। বরং তা দিনে দিনে বর্ষার নদীর মতো ফুলে ফেঁপে উঠছে। তাদের দু’জনকেই অপেক্ষা করতে হবে। পুলিশকে সন্দেহের সুযোগ দিতে চায় না। অবশ্য এই পুলিশ মানে স্থানীয় থানার পুলিশ নয়। তারা তো তাদেরই কারো না কারো কেনা গোলাম। কিন্তু সমস্যা হলো ডিবি পুলিশ নিয়ে। মামলাটা ডিবিতে গেছে।

স্থানীয় আর একজন বড় ভাই যিনি কুত্তা কাদের নামে পরিচিত সে বাতাসে গন্ধ শুঁকে টের পেয়ে গেছে যে তারই প্রতিপক্ষ সোহেলের ইশারায়ই সব হয়েছে। তাই সেও নড়ে চড়ে বসেছে যদি এই সুযোগে সোহেলকে ফাঁসানো যায় স্বপনের খুনের নেপথ্য পরিকল্পনাকারী হিসেবে। তাই সেও তার উপরের কানেকশন কাজে লাগিয়েছে মামলা ডিবিতে পাঠাতে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে মোহিত কিংবা সোহেল কারোরই রক্ষা নেই। তখন মাঠ ক্লিয়ার। সে আর তার পোষা কুত্তা মন্টু তখন এলাকা দাপিয়ে বেড়াবে। বাকী যেগুলো আছে এগুলোকে সে অতীতেও কখনোই গোনায় ধরেনি। এখনও ধরেনা।

মোহিত এসে কুত্তা কাদেরের বুকের উপর সরাসরি পিস্তল রাখে। বেশী কথা না বলে শুধু একটা কথাই বলে, কেন আপনি এসব করছেন জানি। আপনার ক্ষমতার উপরও আস্থা রাখি আমি। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন। মোহিতকে দরকার হবে আপনার। ঐসব মন্টুরা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। ভালো চাইলে মামলা হাল্কা করে ফেলেন। কি করতে হবে আমি জানি? সময় মতো প্রতিদান দিয়ে দেবো। সারাজীবন ফল ভোগ করতে পারবেন। প্রতিদ্বন্দ্বীহীন মাঠে খেলার মজাই আলাদা।

কুত্তা কাদের মোহিতের ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে ধরেই নেয় মোহিত সেয়ানা ছেলে। সোহেলের সাথে শেষ চা কাপটা খাওয়ার সময় এসে গেছে। সে মোহিতকে বলে, পিস্তল সরাও। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি। কথাটা যেন মনে থাকে।

খুব বেশী দিন হয়নি। এক ঘোর অমাবস্যার রাতে অনেকগুলো গুলির শব্দ পাওয়া যায়। সোহেলের লাশ যতক্ষণে গ্রামবাসী খুঁজে পায় ততক্ষণে তার প্রাণবায়ু উড়ে গেছে।

সোহেলের মৃত্যুর জন্যে তার অনুসারীরা কুত্তা কাদেরকেই দায়ী করে। তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরকম একটা ঘটনা যে ঘটবে তা কুত্তা কাদের আগেই জানতো। তাই সে আগে ভাগেই কেটে পড়েছিলো। এ ঘটনা যখন ঘটে ততক্ষণে কুত্তা কাদের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোয় ব্যস্ত। ব্যাপারটা মোহিতই সামলে নেয়। তার মাথার উপর এখন কুত্তা কাদেরের হাত।

পরিস্থিতি শেষমেষ শান্ত হয়। সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কুত্তা কাদের অবশেষে এলাকায় ফিরতে সক্ষম হয়। মোহিতের মামলাটা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। ডিবি পুলশ এখন আর কোন তৎপরতা দেখাচ্ছে না। সম্ভবতঃ এমনি অজ¯্র ফাইলের মতো এটাও রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবৃহৎ ডিপ ফ্রিজে চাপা পড়ে গেছে।

সময় গড়ায়। অবশেষে লাকি বুয়ার তত্ত্বাবধানে তারই আচলের নিচে প্রেমিক যুগলের সাক্ষাৎ হয়। কথা যতোটা হয় তার চেয়ে বেশী থাকে বিহ্বলতা। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই যায় পুরোটা সময়। এ যেন সত্যিই মহাকালের তুলনায় অনুমাত্র কালের রহস্যময় হোলিখেলা। সে খেলায় কেউই রঙ ছিটায় না তবুও সবারই দেহমন রঙিন, বর্ণিল। সমস্ত আকাশটাও তখন এরই রঙে রঙিন।

সবার অলক্ষ্যে সম্পর্ক আগায়। তবে তা শুধু চোখে চোখেই। চাহনির যাদু আর রহস্যময়তাই যেন কাটে না। মোহিতও চায় না এই আবেদন কখনও ফুরিয়ে যাক। এই আবেগ কখনও নষ্ট হোক। সে তাই ধীর স্থির শান্ত। তার ধৈর্য্য দেখে লায়লাও অবাক হয়। যে মানুষটা চাইলে লায়লার সবকিছু নিমেষে কেড়ে নিতে পারে তার এই উদারতায় অবাকই হয় সে।

সবকিছুর জন্যই একটা সময় নির্ধারিত থাকে। তা সে মিলন কিংবা যাইই হোক। লায়লা আর মোহিতও খুব বেশিদিন এভাবে থাকতে পারে না। যে কোন একজনের কিংবা হয়ত দু’জনের অস্থিরতাই তাদেরকে গোপন সুখের সন্ধানে উন্মুখ করে তোলে। তারা সংসার পাতে একই ছাদের নিচে। মোহিত এখন এলাকায় বেশ খানিকটা প্রতিষ্ঠিত।

হৃদয় নামক যন্ত্রের জটিল আচরণে বিদায় নেয় কুত্তা কাদের। মাঠ এখন একেবারেই পরিষ্কার। মোহিত তর তর করে সামনে আগাতে থাকে। সোহেল কিংবা কাদেরের মত উজান ঠেলে তাকে সামনে আগাতে হয় না। স্বপনের কথা মনে পড়ে। মনে মনে মোহিত বলে, সুন্দরী বউ থাকাও এক ধরণের অপরাধ। এর জন্যে কখনও কখনও কাউকে কাউকে কারণ ছাড়াও মারতে হয়। সরি স্বপন। তুমি আমার চৌদ্দ কুলের কারো কোনো ক্ষতি করোনি কিন্তু আমরা মূলত এরকমই। শুধু কাদের একাই কুত্তা কাদের নয়। আমরা প্রত্যেকেই এক একটা কুত্তা। কেন যে টাইটেলটা শুধু কাদেরের একার নামের সাথে দিলো এলাকাবাসী। অবশ্য এর অন্য একটা কারণ আছে। এটার সাথে মন্দের কোন সম্পর্ক নেই।

বরং কাদেরের লজ্জাজনক একটা ঘটনাই জড়িত। ছোট বেলায় একটা কুত্তা কাদেরের গায়ে লেগে থাকা মলমূত্র খেতে গিয়ে কাদেরের বিশেষ অঙ্গকে আহত করে ফেলেছিলো। সেই থেকে তার নাম হয়ে যায় কুত্তা কাদের। এতে তার কোন দোষ নেই। এটা এলাকাবাসীর তাকে দেওয়া এক চিরন্তন অভিশাপ। সমাজ এরকমই। বেশীরভাগ সময় এটা বিনা দোষেই অনেককেই শাস্তি দেয়। কাদের এই সব দুর্ভাগাদের একজন।

অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। লায়লা আর মোহিতের ঘরে এখন দু’দুটো সন্তান। কিন্তু লায়লা যেন এখনও আগুন। তার উত্তাপ যে কাউকে পোড়ানোর জন্যে যথেষ্ট। ব্যাপারটা মোহিতকেও ভাবায়। তার যেভাবে উত্থান হয়েছিলো লায়লার সেই চাহনি আবার তাকেও পোড়াবে না তো।

একদিন খুব বর্ষা নামে। লায়লা মোহিতকে বলে, চলো দু’জন মিলে বৃষ্টিতে ভিজি। মোহিত একটু ভেবে তারপর রাজী হয়ে যায়। আজ লায়লা একটা গান গাইছিলো। স্বপনের প্রিয় গান। আর তখনি কোথা থেকে যেন একটা বুলেট আসে।


Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

UCPDC - 600 Bangla

ইউসিপিডিসি-৬০০ ধারা-১ঃ ইউসিপিডিসি-এর প্রয়োগঃ ইউসিপিডিসি এর ২০০৭ সালের সংশোধনী আইসিসি পাবলিকেশন ৬০০ এর বিধি বা ধারাসমূহ (স্ট্যাণ্ড বাই লেটার অব ক্রেডিট সহ) সকল এলসিতে প্রয়োগ হবে। এলসিতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে উল্লেখ না করলে তা সকল পক্ষের উপরই কার্যকর হবে। ধারা-২ঃ সংজ্ঞা ঃ অন্য কোন অর্থে ব্যবহার না করলে এই বিধিতে এ্যাডাভাইজিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বোঝাবে যে ইস্যুইং ব্যাংক এর অনুরোধে ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে। গ্রাহক বলতে সেই পক্ষকে বোঝাবে যার অনুরোধে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। ব্যাংকিং কর্ম দিবস বলতে সেই দিনকেই বুঝাবে যেদিন ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত বিধি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে তার প্রত্যাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বেনিফিসিয়ারী বলতে সেই পক্ষকে বুঝাবে যার পক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশন বলতে সেই প্রেজেণ্টেশনকে বুঝাবে যা ঋণের সকল শর্তানুযায়ী করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদর্শ ব্যাংকিং চর্চার আওতাধীন। কনফার্মেশন বলতে কনফার্মিং ব্যাংক এর পাশাপাশি ইস্যুইং ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে একটি কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশনকে অনুমোদন ঝুঝায়। কনফার্মিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে ঝুঝা

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে