সেলিনা পালিয়েছে।
সাথে পালিয়েছে তার প্রেমিক ও মন্ত্রনাদাতা সুজন। এই দু’জন গ্রামের মানুষের
জন্যে রাতারাতি সমস্যায় পরিণত হয়েছিলো। সমস্যায় পরিণত হয়েছিলো নানা কারণে।
কারণগুলো বহুদিন ধরে চলে আসছিলো কিন্তু ইতোপূর্বে কারো কাছেই তা সমস্যা মনে
হয়নি। কিন্তু সেলিনা আর সুমন এ ব্যাপারে যখনি রুখে দাঁড়ালো তখনই তাদের
থামাতে তাদের গায়ে প্রেমের কলংক কালিমা লেপ্টে দেওয়া হলো। তাদের বুক-পিঠে
চরিত্রহীনতার পোস্টার লেপ্টে দেওয়া হলো। তাদের পথ চলা কঠিন হয়ে উঠলো।
প্রতিটি
মানুষের জন্যে তার পরিবারটাই হয়ে থাকে সবচেয়ে বড় আশ্রয়। তাদেরও প্রথমটায়
তাই ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেলো। যখন কৃষকের ছেলে সুজন দোকানদারের
মেয়ে সেলিনাকে মাসিক তিনশ টাকায় পড়াতে শুরু করলো। কানা ঘুষা তখন থেকেই
চলছিলো। দুটোতে মিলে অঘটন না ঘটায়। কিন্তু সুজন বা সেলিনা- এদের কেউই যে এ
ধরনের মন মানসিকতার নয় তা বিশ্বাস করার মতো লোকের সংখ্যা বড়ই কম ছিলো।
সুজনকে
সচেতন একজন মানুষই বলতে হবে। প্রতিবাদী হওয়ার কারণে তার শত্রæর অভাব আগে
থেকেই ছিলো না। সেলিনাকে পড়াতে শুরু করার পর সে তাকেও তার আদর্শে দিক্ষীত
করে। মেধাবী মেয়ে সেলিনা ইঙ্গিতেই বুঝে নেয় সুজন কিসের জন্যে লড়ছে। সেলিনা
মনে প্রাণে সুজনের আদর্শকে গ্রহণ করে। তার কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলায়। আর অমনি
কথা ওঠে দু’জনের অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের। কারণ এটাই সবচেয়ে সহজ ও মোক্ষম
আঘাত। লোকে তো বিশ্বাস করার জন্যে আগেই মুখিয়ে ছিলো। এবার একই সুরে কথা
বলায় অপবাদটা হালে পানি পেয়ে গেল।
কিন্তু সুজন বা সেলিনার এ নিয়ে
মাথা ব্যাথা নেই। তার ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়েই সামনে আগাতে লাগালো। লড়াইটা
কঠিন। তাছাড়া এই কারণে তাদের দু’জনের বাড়ীর সমর্থনের অবস্থাই যেখানে তথৈবচ
সেখানে বাইরে আর কোথায় কি আশা করা যায়। তবু তারা দুর্দমনীয়। এ লড়াই দিন
বদলের লড়াই।
তারা প্রথমেই সোচ্চার হয় মুয়াজ্জিন কর্তৃক কিশোরী
তানিয়াকে ধর্ষণের বিচারের প্রত্যাশায়। কিন্তু ব্যাপারটা বেশ শক্ত হয়ে যায়
যখন তানিয়ার পরিবারই পুরো ব্যাপারটা অস্বীকার করে। তাদেরকে কে কিভাবে হুমকি
দিয়েছে প্রথমটায় ওরা দু’জন বুঝে উঠতে না পারলেও শেষমেষ জানা যায় স্থানীয়
গুন্ডা ট্যারা লতিফ যে মুয়াজ্জিনের শ্বশুর বাড়ীর দিকের আত্মীয় সেই
ব্যাপারটা দেখভাল করেছে। তানিয়ার বাবা-মা তাই এনিয়ে একদমই মুখ খুলতে রাজী
নয়। তাছাড়া ট্যারা লতিফের উপস্থিতিতে এক রুদ্ধদ্বারা বৈঠকে উভয় পক্ষ পাঁচ
হাজার টাকায় দফারফা করেছে। এখন সুজন আর সেলিনার আর কিইবা করার আছে। তাছাড়া
এই উপলক্ষে ট্যারা লতিফ সুজন আর সেলিনার বাবা-মাকে খানিকটা পরোক্ষভাবে
শাসিয়েও গেছে। তারাও এ ব্যাপারে আর নাক গলাতে রাজী নয়। বেদনাবোধ আজকাল
রক্তচক্ষু আর সামান্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খুব সহজে।
গ্রামের সবার মুখে না হলেও অনেকের মুখেই একটা কথা শোনা যায় যে
সুজন আর সেলিনাকে চেয়ারম্যান-মেম্বার একটা কথা বলেছে যে, এতো বেশী বোঝা
ভালো না। বিপদ কখন কোন দিক দিয়ে আসবে বলা যায় না। এটা মূলত পরোক্ষভাবে এক
ধরনের হুমকিই। অবশ্য কতে অন্যরা তেমন গা করছে না। অথচ এই সব
নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষদের অনুভূতিটা হওয়া উচিত ছিলো একেবারেই অন্যরকম।
তাদের দাঁড়ানো উচিত ছিলো সুজন আর সেলিনার পাশে। কিন্তু চিত্রটা পুরো উল্টো।
এখনও
পর্যন্ত অবশ্য সুজন আর সেলিনার সামনে তেমন কেউ দাঁড়ায়নি। দাঁড়ায়নি কথাটাও
পুরোপুরি ঠিক নয়। সাহস পায়নি। দীর্ঘদেহী সুজনের পাশে যখন সবল সেলিনা শক্ত
মুখ করে দাঁড়ায় তখন তাদের শত্রæরাও তাদের সমীহ করে। মানুষের দেহাবয়বের আর
ব্যক্তিত্বের প্রতি মানুষের চিরকালই একটা সমীহ ভাব কাজ করে। এ কারণেই তো
মানুষ কালে কালে মানুষরূপী দেবতা হয়ে ওঠে। অমিতাভের কথাই ধরুন। এই মানুষটা
যখন দরাজ গলায় কিছু বলে তখন সে যেন একাই একশ। হোক না তা সিনেমায় তবু তা
দেখে মজা পায় কোটি কোটি দর্শক।
আবার বঙ্গবন্ধুর কথাই যদি বলি।
হিমালয় সদৃশ মানুষটা পুরো পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টি আর সমীহ কেড়েছিলো তার
দরাজ কন্ঠ আর অস্বীকার করার অযোগ্য ব্যক্তিত্বের কারণে। সুজন ঠিক ওরকম একজন
পুরুষ। আর সেলিনা যেন ইন্দিরা গান্ধী। এই বয়সেই মেয়েটা প্রিয়দর্শিনীর মতো
ব্যক্তিত্ব সম্পন্না হয়ে উঠেছে। তীব্র সমালোচনা থাকলেও কেউ কেউ মুখ ফস্কে
বলেও ফেলে, যাই বলুক লোকে, দু’জনকে মানায়ও বেশ।
মানায় এ কথা ঠিক।
তবে এ মানানো বলতে তারা যেটা ইঙ্গিত করতে চায় সে রকম কিছু সুজন আর সেলিনার
ভেতর নেই। তারা একতাবদ্ধ হয়েছে একটি যৌক্তিক কারণে। আর সেটা হলো গায়ে
প্রচলিত সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
তানিয়া ধর্ষণের ব্যাপারে
তারা অসহায় হয়ে পড়লেও বাজারের পাশের মোন্তাজের বাড়ীতে যে জুয়াখেলার আসর বসে
প্রতিরাতে তার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়ে ওঠে। কেরু মন্ডল আর খেরু মন্ডল
নামে যে তুমুল দুই জুয়াড়ী সবার সর্বশান্ত হওয়ার মূলে তার বিরুদ্ধে তারা উঠে
পড়ে লাগে। দুই মন্ডলও কম যায় না। জুয়া থেকে কামানো টাকার কিছু টাকা
গ্রামের তিন মাতব্বর অর্থাৎ মসজিদের ইমাম তোরাব আলী, প্রাইমারী স্কুলের
হেডমাস্টার ছিদাম শেখ আর কানা জব্বার এর পকেটে পুরে দেয় অন্য অজুহাতে। তারা
জানে কাকে কোন কথা বলে দিলে না করতে পারবে না।
তবে হ্যাঁ। একথাও
সত্য যে দুই মন্ডলও একটু আধটু ভয়ে ভয়ে ছিলো। কারণ আর যাই হোক ব্যাপারটা তো
অবৈধ। তাছাড়া এলাকার নিরীহ সাধারণ মানুষ যদি বেঁকে বসে তাদের এলাকা ছাড়া
হওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ হয়। ধূর্ত খলিল মোল্লা
তাদেরকে নিয়ে ত্রিরতেœর সাথে সাক্ষাত করে এর একটা দফা রফা করে দেয়।
সিদ্ধান্ত হয় যেহেতু কথা উঠেছে তাই আগের জায়গায় তো আসর বসানো যাবেই না বরং
জায়গা বদলাতে হবে বারবার। আর সময়ও ঐ এক সন্ধ্যার পর রাখা যাবে না। কখনও
সকালে, কখনও দুপুরে আবার কখনো রাতে বসবে। তবে খবরাখবর সব ভেতরে ভেতরে চালান
হয়ে যাবে। খবর দেওয়া নেওয়ার জন্যে ল্যাংড়া বছির আর লুচ্চা শফিককে কাজে
লাগানো হবে যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
এরা দু’জন সারা গ্রামে হেঁটে
হেঁটে ভিক্ষা করে। এটাই হবে মোক্ষম সুযোগ। কেউ তাদের সন্দেহ করবে না। দুজনে
পঞ্চাশ একশ টাকা পাবে। তারা রাজী হয়।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment