অনেকটা সময় পার হলো জীবনের। আমার
দুঃখগুলো যদি একত্র করা হয় তাহলে একটা সাগর হবে। কিন্তু আমার সুখগুলো যদি
জড়ো করা হয় একটা নয় পাঁচটা মহাসাগর হবে নির্ঘাত। আমি তাই একজন কৃতজ্ঞ
বান্দা। শৈশবে বাবা-মার ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য হয়েছিলো। বড় হয়েও অনেকটা
বয়স পর্যন্ত তাদের পেয়েছিলাম। কিন্তু হায়! আফসোস! তাদের যতোটা সেবা যতেœ
লালন-পালন করার কথা ছিলো তার কিছুই করতে পারিনি। আজ তারা আল্লাহ্র মেহমান
হয়ে গেছে। দোয়া করি হে আল্লাহ্ আপনি তাদের সেইভাবে লালন পালন করুন যেভাবে
তারা আমাদের লালন পালন করেছেন।
আমার বোনের সংখ্যা পাঁচ। তাদের
ভালোবাসা আর দোয়া বরাবরই আমার সাথে ছিলো। একটা জীবনে এতো পূর্ণতা সবার থাকে
না। আমার তিন ভাই আছে। এই দিক দিয়েও আমি ভাগ্যবান। আছে অজ¯্র
ভাগ্নেয়-ভাগ্নি, ভাই পো-ভাইঝি, চাচাত, মামাত, খালাত, ফুফাত ভাই বোনের
পাশাপাশি ফুফা ফুপু মামা মামি খালা খালু চাচা চাচি ইত্যাদি ইত্যাদি। আছে
অজ¯্র প্রতিবেশী। এতো মানুষের দোয়া এক জীবনে সবার ভাগ্যে হয় না। তবে
আশানুরূপ কিছুই করতে পারিনি এদের জন্যে। হতাশার কথা বটে। তবু আশাবাদী।
দেয়াপ্রার্থী। জানি একদিন সবকিছু সুন্দর হয়ে ধরা দেবে। আশা ছাড়তে নেই।
অনেক
সফল মানুষ আছে। তাদের সামর্থ্যও আছে। তারা শুধু আপনজন, আতœীয়-স্বজন বা
প্রতিবেশীদেরই নয় বরং এলাকাবাসীর হক আদায় করে থাকে। তাদেরকে ভাগ্যবানই
বলবো। জীবনে সবাই সবার মতো হবে না হয়তো তবে একথা সত্য ভালো কিছু করার জন্যে
একটা পবিত্র প্রত্যাশা বা ইচ্ছা সব সময় বুকের মধ্যে ধরে রাখাটাও এক ধরনের
ঐশ্বরিক সুখের উৎস।
জীবনের সময়গুলো খুব দ্রæত কেটে যায়। প্রয়োজন
যতোটা দ্রæতগতিতে বাড়ে প্রাপ্তি ততোটা দ্রæতগতিতে আসে না। ধৈর্য্য ধরে
অপেক্ষাই তাই একমাত্র পথ। তবে চেষ্টা করলেই না ধৈর্য্য অর্থপূর্ণ। অযথা
অপেক্ষার কোন মূল্য নেই। আজ পর্যন্ত কেউ কর্ম ছাড়া কিছু লাভ করেছে কি?
জীবনের
প্রতি পদে পদে উপলব্ধি করেছি মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া আর করুণা। মুসলমানের
ঘরে জন্মেছি এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের কিছু নেই। তবে সৃষ্টিকর্তার করুণা ধন্য
জীবনের যে শাশ্বত উপলব্ধি তা বিশ্বাসকে আরও মজবুত আর নির্ভেজাল করেছে। একটা
অন্যরকম ভালোলাগা তাই কাজ করে।
ইসলামকে জানা ও মানা জরুরী ছিলো।
ইসলামের জন্যে কোরবাণী হওয়া তাই ছিলো সবচেয়ে জরুরী। কিন্তু ভুলবশতঃ
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামকেই কোরবানী দিয়ে ফেলেছি জীবনের জন্যে। আল্লাহ্
ক্ষমা করুক এই কামনাই করি।
দেশপ্রেমের চাইতে মধুর কোন নেয়ামত আছে
কি? হয়তো নেই। যে মাটির বুকে জীবনের সব সুখ স্বাদ আহলাদ উপভোগ তার প্রতি
প্রেম তাই সবচেয়ে পবিত্র অনুভব। মনে রাখতে হবে স্বাধীন বাংলাদেশ আমার দেশ।
আমি এর গর্বিত নাগরিক। এর সুরক্ষা, উন্নয়ন, কল্যাণ-কামনা তাই আমার ইমানী
দায়িত্ব। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচুক। আমরা হই এর গর্বিত
নাগরিক।
শিক্ষা ভীষণ জরুরী একটা বিষয় ছিলো বটে। কিন্তু কিছু
সার্টিফিকেট জোগাড় করা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার সত্যিকারের উদ্দেশ্যকে
কতোটা পূরণ করতে পেরেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো আরও অনেক সমৃদ্ধ
একটা মানুষ হওয়া অতীব জরুরী ছিলো কিন্তু তা আর হলো কই।
বিশ্ব
পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ নয় আজকাল এরকম মানুষ পাওয়া ভার। তবু পৃথিবীর অবস্থা
নি¤œগামী এবং ধ্বংসোম্মুখ। কারণ আর কিছু নয়। এই সচেতনতা লোক দেখানো। নিজের
পান্ডিত্য জাহির করা। অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কিন্তু প্রয়োজন ছিলো
সত্যিকারের সচেতনতা। পৃথিবীর সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্যে সামান্য কিছু
হলেও করা। অথচ হলো তার বিপরীত। এমনকি পলিথিনের ব্যাগটা পর্যন্ত ছুড়ে ফেলে
দিয়ে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর কোমল শরীরকে বিষাক্ত করছি আমরা। দিনে দিনে পৃথিবীর
যে বন্ধ্যাত্ব দশা তৈরি হচ্ছে তার জন্যে আমরাই দায়ী। আমাদের অপরাধ কতোটা
ক্ষমার যোগ্য তা পরিমাপ করার মতো ধৃষ্টতা অন্ততঃ আমার নেই।
খুব বেশী
চালাক হতে নাই। পদে পদে ধরা খেতে হয়। একথা সবারই জানা। তবু তাই হচ্ছি
আমরা। কারণ আর কিছু নয়। একটু বেশী এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আশা আকাক্সক্ষা। শেষ
পর্যন্ত কিছুই আগায় না। হঠাৎ করে বা রাতারাতি কিছু লাভ বা অর্জন হয় না।
ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করে ফল লাভের অপেক্ষায় থাকতে হয়। তবেই হয় মূল লাভ। অতি
চালাকের গলায় দড়ি কথাটা শুধু শুধু আসেনি।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের
নিয়ে আমাদের ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে
নিয়ে বেশী ভাবতে গিয়ে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে
গিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটি। এতো বড় ভুল আর নেই। তাদেরকে আমাদের
ঐটুকু সাহায্য করা উচিত যাতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারে। মনে রাখতে
হবে, আমি যদি আমার জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করি তাদের জীবনে সেটারই প্রভাব
বেশী। অথর্ব সন্তানের জন্যে স্তপ করে রেখে যাওয় সম্পদ কোন কাজে আসবে বলে তো
মনে হয় না।
বড় হতে হতে দেখলাম একটা আজব বিষয়। ইতিহাস বিকৃতির
তাত্তি¡ক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঘৃণ্য চেষ্টাই শুধু নয় বরং এর
বাস্তবায়ন। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানের যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ
দিয়েছিলেন সেই জায়গাটায় একটা শিশু পার্ক নির্মাণ করা হলো। দেশে শিশুপার্ক
নির্মানের জন্যে ঐ জায়গাটা ছাড়া আর কোন জায়গা পাওয়া গেলো না। হতভাগ্য সেই
জাতি যার বীর সন্তান নেই। আবার হতভাগ্য সেই জাতিও যার বীর সন্তানের প্রয়োজন
হয়। আমরা পেয়েছিলাম বটে কিন্তু মূল্যায়ন করতে পারলাম কই?
এই লেখাটা
পড়া কিছুটা বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কারণ তেমন কিছু নয়। কিছু এমন কথা যা
শুনতে খুব একটা ভালো লাগতে নাও পারে। তবু কথা বলতে হয়। তবু সত্য লিখতে হয়।
এর প্রয়োজন আছে। নইলে কি করে জানবে আগামী প্রজন্ম যে এদেশে রাজনৈতিক
প্রতিযোগিতা চলে এমন দুটি দলের মধ্যে যার একটি এদেশকে পেয়ে বরং বিপদগ্রস্থ
আর অন্যটি এদেশকে স্বীকারই করে না। বিপদগ্রস্থ বললাম এজন্যে যে যারা
স্বাধীনতা এনেছিলো, যারা স্বাধীনতা চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত
হওয়ার পর তাদের দুঃখ দুর্দশা চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন। পরিস্থিতি এমন
ছিলো যে স্বাধীনতার জন্যে লড়াইটাই যেন একটা অবৈধ সন্তানের জন্মে আড়ষ্ট
কিশোরীর লজ্জার মতোই। এ অবমাননা, এ ঘৃণ্য অবস্থা কি করে মেনে নেবে একজন মহৎ
প্রাণ মানুষ। এই লেখাটা পড়া তাই একটু কঠিনই বটে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল
পর্যন্ত যারা মরে গেছে তারা অর্থাৎ সেই সব দেশপ্রেমিকদের কবরের কাছে গিয়ে
আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment