Skip to main content

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com : The glittering city aroundLife is rich with red, blue light of neonWide sky over the headPieces of moonlight, scatteredAnd in that splashed pieces of meteorThose are taken by the scientists of NASASo height the civilization reachesThis city is the flow of happiness nowSome men like us pass the wayWith frustration

বলা না বলা অনেক কথা - ওমর খালেদ রুমি

প্রতিটি মানুষই বেড়ে ওঠে চরম অতৃপ্তি নিয়ে। যাদের প্রাচুর্য আছে অর্থাৎ যাদের আমরা বড় লোক বলি সহজ কথায় তাদের সন্তানদেরও দেখেছি যার পর নাই হতাশার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে। ছাত্রজীবনে অনেক ধনী ঘরের ছেলেমেয়েদেরও সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলাম। তাদেরকেও হাত খরচের টাকা নিয়ে আফসোস করতে দেখেছি। বলেছে, আব্বুর টাকা আছে ঠিকই কিন্তু হাত খরচ দেয় হিসাব করে। অনেক ধনী ঘরের গৃহিনী স্ত্রীরাও হতাশায় ভোগে। স্বামী ব্যবসায়ী বা বড় চাকুরীজীবী কিন্তু টাকা পয়সার নিয়ন্ত্রণ স্বামীর হাতে। দু’চার আনার জন্যেও স্বামীর কাছে হাত পাততে হয়। এমনতিইে আমাদের সমাজে নারীরা বলতে গেলে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই পঙ্গু। এর কুফলও অনেক। এই আর্থিক দুর্বলতাই প্রকারান্তরে তাদের যৌনতা নিয়ে নানা ছলাকলার দিক ঠেলে দেয়। যে সুখ তারা হৃদয় উজাড় করে দিয়ে উপভোগ করতে পারতো সেই সুখটুকুই তারা ধীরে ধীরে নানা কৌশলে কখনো নোংরাভাবে কখনও ভদ্রতার মুখোশে বিক্রি করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। কারণ পুঁজি বলতে তাদের হাতে তো থাকে শুধু ঐটুকুই। আমরা কখনও এভাবে ভেবে দেখেছি কি-না জানি না কিন্তু নারীর আর্থিক সঙ্গতি আর মানসিক স্বস্তি স্বাস্থ্যসম্মত যৌন সম্পর্কের প্রাথমিক ভিত্তি হতে পারে। অবশ্য এসব শর্তের পূরণের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক জটিলতা যাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। যেমন স্বভাবগত বহুগামিতা, অতিরিক্ত যৌনচাহিদা, জন্মগত অস্থিরতা, নিজেকে প্রকাশের অদম্য বাসনা, কর্তৃত্ব পরায়ণতা কিংবা ¯্রফে মজা করার জন্যে পুরুষের নারীর প্রতি আজন্মের দুর্বলতা নিয়ে খেলা করা। বিষয়গুলোকে হালকাভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়টাতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও এর প্রতি আমাদের দুর্বার আকর্ষণ ব্যক্তি তথা পারিবারিক জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। আমাদের শৈশব কিশোর কিংবা যৌবনেও এরকম অনুসঙ্গ ছিলো। তবে তা ছিলো এতোটাই সাদামাটা যে এ নিয়ে খুব একটা পেরেশান হওয়ার সুযোগ ছিলো না। এই যেমন ধরুন একটা খেলার বল, এক জোড়া ব্যাডমিন্টন ব্যাট, দুটো সিনেমার টিকিটের পয়সা, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সামান্য হাত খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হালের ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। একটা ২২ ক্যারেট গোল্ড প্লেটেড আই ফোনের দাম প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। ব্যাপারটা ভাবনায় ফেলে দেয় বৈকি! এছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে। তাই যুবক যুবতীদের শুধু হাত খরচের বিষয়টাই নয় অন্যান্য চাহিদা মেটাতেও লেগে যায় অনেক টাকা। সহজভাবে সংস্থান না হলে তারা বিকল্প ভাবনায় জড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যাপারটা মাথায় রাখার মতো।
গ্লোবাইজেশন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। মানুষ পরিচিত হচ্ছে নিত্য নতুন পণ্য ও অন্যান্যের সাথে। কিম কার্দাসিয়ান, জনি সিন্স, মিয়া খলিফা, সানি লিওনির কথা না হয় বাদই দিলাম আরিয়ানা গ্রান্ডে, বিলি আইলিশ, অ্যান মেরি, রিহান্না, সেলেনা গোমেজ, এড সিরান, জাস্টিন বিবার, শার্লি পুথ, উইজ খলিফা, ডিজে ¯েœকরা তরুণ তরুণীদের হৃদয়ের অনেকটা জায়গা জুড়েই বিরাজ করছে। ইদানিং ভারতের দক্ষিণের ছবিগুলোও বেশ কাঁপাচ্ছে। আল্লু অর্জুনের পুষ্পা তো রাতারাতি একটা ঝাঁকি দিয়ে গেলো। পাশাপাশি বিজয়, এনটি জুনিয়র, মহেশ বাবু, প্রভাসরাও কম যাচ্ছে ন্।া কাজল আগারওয়াল, রেশমিকা মন্দানা, সামান্থা, তামান্না ভাটিয়া, ইলিনা ডি ক্রুজদের কথাই বা বাদ দেবো কেন?
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের সাহিত্য জগতটা বলতে গেলে নিমিষেই পড়েছিলো। তাতে প্রাণের সঞ্চার করলেন কাজী অনোয়ার হোসেন ও হুমায়ুন আহমেদ। দু’পয়সা কামানোর পাশাপাশি পাঠকদের টানলেন বইয়ের দিকে আর দর্শকদের টানলেন টিভির দিকে। আমরা পেলাম আসাদুজ্জামান নূর, চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ, জাহিদ হাসান, শাওনের মতো অনেক তারকা যারা দর্শক টানতে সক্ষম হলেন। বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন থাকলেও চলচ্চিত্রে শাকিব খান, ফেরদৌস, রিয়াজ, মান্না, পূর্ণিমা, শাবনূর, মৌসুমী, অপু বিশ্বাসরা বেশ লড়ে গেলেন। বিশেষ করে দু’জন নায়িকা শাবনূর ও মৌসুমী তো একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা সিনেমা প্রেমিকদের একটা ঘোরের মধ্যে রেখে গেলেন। বিশেষ করে শাবনূরের কথা বলবো। তার সেক্সি কন্ঠের আবেগের তরল আর গরম উষ্ণ সিসা ঢালা কন্ঠের কামাতুর আবেগের সংলাপগুলোর পাশাপাশি দুঃখ-কষ্টের, মান-অভিমানের কথাগুলোও অনেকের নিত্যদিনের ডায়ালগে পরিণত হয়েছিলো। শাবনূরকে অস্বীকার করা কঠিন।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে পাকিস্তান আমলে তো বলতে গেলে একেবারে খাদে পড়েছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ বা শিক্ষার মানোন্নয়ন হয়েছে একথা বলবো না তবে এটা সত্য অনেক সমালোচনা থাকলেও বেসরকারী খাতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে অজ¯্র ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে আশ্রয়স্থল হতে পেরেছে। মুখে অনেক কিছু বলা যায় কিন্তু করা যে কতটা কঠিন তা যারা কিছু একটা করে দেখায় তারাই শুধু জানে।
করদাতাদের বিষয়টা নজরে না আনলেই নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড় বড়সড় বাজেটই দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বিপুল সংখ্যক উপার্জনক্ষম মানুষের কর প্রদানের সদিচ্ছা হওয়ার কারণে। যদিও এখনও অনেক মানুষ এর আওতার বাইরে অথবা যারা দিচ্ছে তারাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে তবুও আমি বলবো এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
রাস্তাঘাট কল-কারখানা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। বিশেষ করে বিগত দেড় দশকে যে অসামান্য পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা উল্লেখ করার দাবী রাখে। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ধর্মীয় রাজনীতির নামে যে প্রতারণার খেলা চলছিলো তার থেকে একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর মোহভঙ্গ করতে সক্ষম হয়েছে। একটা বিষয় অত্যন্ত ভালো লেগেছে যে মানুষের ভেতরে কুসংস্কার অনেকটাই কমে এসেছে। আজকাল আর বৈদ্য, তান্ত্রিক, ওঝা, ঝাঁড়ফুক করা লোকজন খুব একটা দেখা যায় না।
উন্নত দেশে গিয়ে পড়াশুনার প্রতি যে একটা অলিখিত আতংক বা অনীহা কাজ করতো তার থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পেরেছে আমাদের তরুণ সমাজ। তারা আজ উন্নত শিক্ষার জন্য পৃথিবীর যে কোন দেশে যেতে প্রস্তুত। এটা ভীষণ ভালো একটা দিক।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার ক্ষেত্রে। এ সাফল্যের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে বাহবা না দিয়ে উপায় নেই।
বরাবরই মানুষের আতংকের একটা জায়গা ছিলো থানা পুলিশ। কিন্তু পুলিশ আজ অনেকটাই মানবিক। দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে ঘটছে না তা কিন্তু বলবো না। তবে এক্ষেত্রেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে বলতে হবে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটার পর একটা বিতর্কে জড়ানো হলো দেশটাকে। বোঝাই যায় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এসব করা হয়েছিলো। পাকিস্তান-আমেরিকা এরাই এসবে বড় ভূমিকা রেখেছিলো। সময় বদলেছে। আজ আমেরিকার মিত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া ভ্রমণ করেন পাশে আছি এই কথার জানান দিতে। পৃথিবী একটা আজব জায়গা। এখানে অপেক্ষা অনেক কিছুর সমাধান দেয়। সবকিছু জানা বোঝার জন্যে দার্শনিক হতে হয় না।
আমাদের একটা সময় ছিলো যখন আমাদের দেশের মানুষগুলোর আর্থিক অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো যে পুরুষরা নেংটির মতো এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে থাকতো আর আমাদের মা বোনদের অনেকেরই শুধুমাত্র শাড়িটাই ছিলো প্রধান অবলম্বন। শায়া ব্লাউজ, ব্রা-প্যান্টি, মাসিকের প্যাড - এসব তো ছিলো ধারণারও বাইরে। গোসলের জন্য বিউটি সোপ তো দূরে থাক মাঝে মাঝে কাপড় কাঁচা ৫৭০ সাবানও পাওয়া কঠিন হয়ে যেত। সময় বদলেছে। এখন অনেক কিছুই মিলছে। গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ আজ শীর্ষস্থানীয়।
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিলো জঘন্য রকমের অবস্থায়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে সামাজিকীকরণের যে নগ্ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তাতে দেশটি আর একটা আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া বা লিবিয়া হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিলো না। কিন্তু যথাসময়ে দেশপ্রেমিক একটা জনগোষ্ঠী ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে একটা বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে অন্ততঃ এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিলো যারা এদেশের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না তারাই বসে গিয়েছিলো ড্রাইভিং সিটে। অনেক কষ্টে সিন্দাবাদের ভূতকে নামানো সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ। জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। দুর্বল অর্থনীতির কারণে বিশ্ব দরবারে একসময়ের “তলাবিহীন” ঝুড়ি” তার ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতার কারণে আজ বিশ্বের দরবারে মোটামুটি একটা সম্মানের আসনে আসীন। এই অর্জনও অবশ্য অনেকের গাত্রদাহ সৃষ্টি করছে। করারই কথা। যাদের হৃদয় পড়ে থাকে অন্যত্র এ দেশের মুক্তি তথা উন্নয়নে তাদের গাত্রদাহ হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু অসাধারণ সাহসী মানুষ পেয়েছিলাম। সবার আগে যার নাম বলবো তিনি জহির রায়হান। ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর আমরা দেখি কাদের সিদ্দিকীকে। নব্বইয়ের গণ আন্দোলনের সময় সরকারের চাকরি করা সত্ত্বেও মহিউদ্দীন খান আলমগীর রেখেছিলেন অসাধারণ ভূমিকা। সচিবালয়ের বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে রাজপথে এসে তিনি যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা সত্যিই অসাধারণ ছিলো।
আমাদের হতাশা অনেক। না পাওয়ার তালিকাও বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে কিছু কিছু অর্জন মন ভরিয়ে দেয়। ক্রিকেট তেমন একটি জায়গা। বিশেষ করে মাশরাফি বিন মর্তুজা আর সাকিব আল হাসান। বলতে গেলে সমগ্র দেশবাসীর মন জয় করেছে। এদের সম্মান করতে হবে। এরা আমাদের জাতীয় বীর।
অর্থনীতির কথা বলতেই হবে। অতীতে মাথাপিছু আয় যা ছিলো তা উল্লেখ করার মতো নয়। এখন এটা মোটামুটি উল্লেখ করার মতো। ঋণ সক্ষমতা বাড়ার কারণে সম্ভব হচ্ছে বড় বড় সব প্রকল্প বাস্তবায়নের। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকার মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, ইত্যাদি ইত্যাদি বদলে দিয়েছে দেশের চেহারা।
পিছু টানার লোকের অভাব ছিলো না কখনোই। পরাজিত শক্তি শকুনের মতো বারবার খামচে ধরেছে জাতির পতাকা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির জনকের সপরিবারে হত্যার বিচার সহ অনেক বিতর্কিত হত্যাকান্ডের বিচার গ্লানিমুক্ত হতে সাহায্য করেছে। শান্তি আর স্বস্তি এসেছে অনেকের অন্তরে।
এমন একটা সময় এসেছিলো মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটাই যেন ছিলো একটা অপরাধ। কিন্তু আজ সে অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। তবে এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে অজ¯্র ভুয়া সনদধারী মুক্তিযোদ্ধার দৌরাত্মে পুরো জাতিরই অনেক সময় বিভ্রান্ত হতে হয়। এর সমাধান হওয়া জরুরী।
প্রচুর ভালো কাজ হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি এটাও প্রত্যাশিত যে দুদক আর এনবিআর আরও কার্যকর ও শক্তিশালী হবে। তাছাড়া শুধু কোন একটা অন্যায়ের ঘটনা জানাজানি হলেই যে শুধু সেটার ব্যবস্থা নিতে হবে তা নয়। প্রতিটি সেক্টর থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্যে বদ্ধ পরিকর হতে হবে।
বাঙালির বড় লজ্জা এর নিজের কোন ইতিহাস নেই। এর যা ইতিহাস তা অন্যের ইতিহাস। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, পাঠান, মোঘল - যাই বলি না কেন সবাই তো বহিরাগত। ভাষার বিকাশটাও শুরু হয়েছিলো ৭ম-৮ম শতকের দিকে। এর আগের সংস্কৃতি তো সংস্কৃত, হিন্দী, উর্দু, ফারসী ইত্যাদি ভাষার সংস্কৃতি। আমাদের রাজকীয় যে সংস্কৃতি তাতেও পারস্যের প্রভাব। কারণ পারস্য থেকে এটা আরবরা গ্রহণ করেছিলো। সেখান থেকে আমরা। এমনটা হওয়ার কারণ হলো মরুভূমির বেদুইন যাযাবর আরবদের কোন রাজকীয় সংস্কৃতি ছিলো না।
একটা সভ্যতার গড়ে ওঠার জন্যে পঞ্চাশ বছর খুব একটা বেশী সময় না। তার মধ্যে এর বেশীরভাড় সময়টাতেই যারা ক্ষমতায় ছিলো তাদের উদ্ভট ভাবনার কারণে আরও পশ্চাতে যেতে হয়েছে। সেই গভীর খাদ থেকে দেশটাকে টেনে তোলা সহজ কথা নয়। তবে সজাগ থাকতে হবে। কোন মোহ সৃষ্টিকারী যাদুকর যেন তাদের মোহ সৃষ্টিকরা কথা দ্বারা মোহাচ্ছন্ন করে আবার সর্বনাশ করতে না পারে।
একটা দেশের শক্তিশালী অবস্থানের জন্যে এর দরকার একটা শক্তিশালী মিডিয়া। এদিক দিয়ে আমরা আজও অনেকটা পিছিয়ে। আমাদের যেমন কোন বিশ্ব মানের টিভি ষ্টেশন এই ধরুন সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরা এর মতো কোন প্রতিষ্ঠান নেই তেমনি নেই নিউ ইয়র্ক টাইমস, হেরাল্ড ট্রিবিউন বা দ্য ডন এর মতো কোন পত্রিকাও। এই ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অন্ততঃ আজকের সময়টাতে।
আমাদের শিশুরা কিভাবে বেড়ে উঠছে তা ভেবে দেখতে হবে। তাদের শৈশব তাদের হক। তা তাদের জন্যে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই তারা গড়ে উঠবে চমৎকার কিশোর-কিশোরী হিসেবে। তার এরাই গড়ে তুলবে আগামীর নতুন প্রজন্ম। তাই এদের শুরুটা ভালো হওয়া দরকার।
একটা বিপর্যস্ত ইতিহাসের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ইংরেজদের ১৯০ বছর সময়কালে এই ভূ-খন্ডের প্রতি চরম অবহেলা এবং পরবর্তীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিমাতাসুলভ আচরণ আমাদের বিধিলিপির যে করুণ চিত্র এঁকে দিয়েছিলো তাকে মনের মতো করে সাজানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন রাখাল রাজা। তিনি আর কেউ নন বাঙালির বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তার আজীবনের সাধনায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের জন্যে একটা স্বাধীন ভূ-খন্ডের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। কিন্তু অকৃতজ্ঞ আমরা সেই বিরাট হৃদয়ের মানুষটিকেই স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় সপরিবারে হত্যা করেছিলাম। এর ঠিক কিছুদিন পরই আমরা হত্যা করেছিলাম জেলখানায় বন্দী জাতীয় চার নেতাকে। আমাদের সেই রক্ত ঋণ হয়তো কোনদিন শোধ হবে না।
সংস্কৃতির চর্চার ব্যাপারে এদেশে আজ পর্যন্ত কোন গোছালো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। একটা বাংলা একাডেমী আছে বটে তবে এটা কারো কারো বা অনেকেরই ব্যক্তিগত সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নিজস্ব সমৃদ্ধির জন্যে একটা চমৎকার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করছে। ব্যাপারটা ভীষণ লজ্জার কিন্তু সব সাহিত্যিকরাই ঐ বিশেষ পদকটির আশায় সত্য বলার চেয়ে বরং চাটুকারিতারই আশ্রয় নেয়। যদি কোন মতে পদকটা জুটে যায় তবেই তো ইতিহাস।
আমাদের প্রতিবেশী ভারত। এটি একটি বিরাট রাষ্ট্র। এর রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। এরকম একটা সমৃদ্ধ ইতিহাসের দেশের প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভারত নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। অথচ ভাষাকে বোঝা আমাদের জন্যে ভীষণ জরুরী। আমাদের একটা ভারত গবেষণা ইন্সস্টিটিউট থাকা দরকার।
মাত্র এক যুগ হচ্ছে সুষম উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে। তার সুফলই ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে পুরো দেশ এবং দেশবাসী। ঘরে ঘরে ভাতা-র টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এটা যদিও শেষ কথা নয় তবে এটা অবশ্যই গুরুত্বের দাবী রাখে যে সর্বস্তরে একটা গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামটা অশান্ত ছিলো। এর ফায়দা অনেকেই অনেকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে পাহাড়ে শান্তি এনেছিলো।
সে তো এক মহাকাব্যিক অর্জনের গল্প। সাম্প্রতিক সময়টাতে সমুদ্র সীমা বিজয়ও আমাদের একটা বড় সাফল্য। এসব অর্জন আমাদের দিন দিন সমৃদ্ধ করছে। অশিক্ষা বাঙালীর সবচেয়ে বড় অভিশাপ ছিলো। আর এই অশিক্ষার কারণেই সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরেই তথাকথিত “গড অব স্মল থিংস” তৈরি হয়েছিলো। হাল আমলে এই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ সচেতন হয়েছে।
অনেক ব্যাপারও আজও অমীমাংসিত। আমাদের জাতীয়তাবাদ কি হবে- বাঙালী না বাংলাদেশী। জাতির জনক বলেছেন বাঙালী জাতীয়তাবাদ। তর্ক না করে এটাই মেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি দূরদর্শী ছিলেন। শুধু শুধু এমনটা বলেননি। বাংলাদেশ নামক একটা রাষ্ট্রের সীমানা আর অস্তিত্ব তার মাথার চাইতে আর কার মাথার ভেতর বেশী ছিলো।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। বরং এ ব্যাপারে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর ব্যাপারে অনেকেই ভীষণ তৎপর। এটাকে আত্মঘাতী ছাড়া কি আর বলা যেতে পারে।
হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব বলতে মূলতঃ কিছু নেই। কোন ধর্মেই অন্য ধর্মের প্রতি কোন বিষ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হয়নি। শুধুমাত্র পার্থিব সুযোগ সুবিধা - তা সে পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক - দেশীয় কিংবা আন্তঃদেশীয় যাকে আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বলে থাকি - হাসিলের জন্যেই এসব ছড়িয়ে থাকি। এসব ঘৃণ্য প্রচেষ্টা শুরুতেই রুখে দেওয়া উচিত।
আমরা বিদেশীদের সংস্কৃতি অবাধে গ্রহণ করছি আমাদের উচিত আমাদের সংস্কৃতিকেও বাইরে রপ্তানি কর্।া সেরকম কোন মানসিকতা আজও পরিলক্ষিত হয়নি। কেবলমাত্র দু’চারজন নায়ক-নায়িকা প্রতিবেশীদের দেশে গিয়ে দু’চারটা চরিত্রে অভিনয় করলে সংস্কৃতি রপ্তানি হয় না। এর মূল কথাটা বুঝতে হবে। আমরা যে শুধু ইংরেজী বা হিন্দী দেখছি তা-ই নয় ইদানিং তুর্কীও দেখছি। আমাদেরটা কারা কারা দেখছে একবারও কি ভেবেছি?
স্বাধীনতার পর চারিদিকে সমাজতন্ত্র কায়েমের নামে সন্ত্রাস ছড়ালো। সিরাজ শিকদার ও তার পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ কি প্রতিষ্ঠা করবে তার দার্শনিক গন্তব্য আজও স্পষ্ট হয়নি। কখনও হবে বলেও মনে হয় না। সর্বহারা বলতে আসলে কি বোঝায়? বাঙালি তো সেটাই জানে না। বন্দুক কাঁধে নিয়ে লুটপাটই যদি সর্বহারা হয় তবে তো লেনিন, মাও আর হো-এর বিচার হবে সবার আগে। কিন্তু আদতে কি ব্যাপারটা তাই?
স্বাধীনতার পর থেকেই সড়কের অবস্থা বেহাল। বঙ্গবন্ধু খুব কমই সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই যেমন বন্যা, দুর্ভিক্ষ এর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র সবই একাকার অবস্থার সৃষ্টি করেছিলো। তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেননি। স্বপরিবারে নিহত হয়েছিলেন।
এরপর যারা এলেন তারা মতবাদ নিয়ে এতোটাই মাতলেন যে জনগণকে গিনিপিগ বানিয়েই ক্ষান্ত হলেন। তাতে লাভও হলো। আমরা দু দুটো নতুন রাজনৈতিক দল পেলাম। পাশাপাশি পেলাম যুদ্ধাপরাধের কারণে বাদ পড়া নর্দমার কীটদের। উপর্যুক্ত পরিবেশে তারাও শুরু করল বংশ বিস্তার। সব মিলিয়ে আমরা একটা আজব দেশে পরিণত হলাম। খুব ঠান্ডা মাথায় ওখান থেকে দেশটাকে টেনে তুলেছেন মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাথায় রাখতে হবে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। এদেশের মাটি তার মহান পিতা আর সকল আপনজনদের রক্তে ভেজা।
ভারতীয় উপমহাদেশ এমনিতেই তো পশ্চাদপদ। তার উপর বঙ্গ হলো সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনপদ। আর্যদের আগমনও উত্তর ভারত পর্যন্ত এসে থেমে গিয়েছিলো। তাই অশিক্ষা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অন্ধ-বিশ্বাস ইত্যাদিতে ভরে থাকা এই জনপদে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা ছিলো বহুত দূর কি বাদ। বিশ্ব সভ্যতার আজকের যে অবস্থান তাতে আমাদের অংশগ্রহণ কতটুকু তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না। অবাক লাগে এতোটা পিছিয়ে পড়ার পরেও আমাদের এই নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। একটা ভালো শার্টের কাপড়, একটা ভালো প্যান্টের কাপড়, স্যুট, পারফিউম, কাফলিংয়ের বাটন থেকে টাই এমনকি মেয়েদের গোপন কাপড়-চোপড়ও অন্য দেশ থেকে আসে। লজ্জার ব্যাপার। এগুলোর ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা যায় তা হলো ইঞ্চির মাপ মিললেও বাটির মাপ ছোট-বড় হয়ে যায়। হবেই তো। অন্যের বানানো জিনিস আমাদের ফিট হবে কেন?
শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী আর নাজিমুদ্দিন পর পর বিদায় নিয়েছিলেন। বেঁচে রইলেন আজীবনের এলোমেলো মওলানা ভাসানী। তরুণ মুজিবের নেতৃত্বেই তাই বাংলার মুক্তি মিলেছিলো। তার চারজন সেনাপতি ছিলেন। যারা তাদের হত্যা করেছিলো তাদের বংশধররাও পালিয়ে বেঁচেছে। নইলে বাংলার মাটি হয়তো কিছুটা হলেও পাপমুক্ত হতে পারতো।
দেশপ্রেমিকের অভাব এদেশে বরাবরই ছিলো। গাল ভরা বুলি নিয়ে যারাই রাজনীতিতে এসেছিলো সব সময়ই ধান্দা করেছে লুটের। আজও এতো চেষ্টার পরেও সরকারী-অফিসগুলোতে ভোগান্তির শেষ নেই। যেতে হবে বহুদুর। তাই এখনও অনেক কিছু করণীয় আছে।
রাজনীতিতে পারিবারিক ধারাবাহিকতা চিরকালই ছিলো। এটাকে দোষের কিছুও বলবো না। কিন্তু তাই বলে অযোগ্য অথর্বরাও গদি আঁকড়ে বসে পড়ে শুধুমাত্র লুটের আশায়। এ কারণেই অনেকেই আজ দেশ থেকে নির্বাসিত। বিদেশের মাটিতে বসে মিথ্যে হুঙ্কার দেওয়া যায় তবে তাতে জনগণের মন ভরে না। মেলে না কাক্সিক্ষত সাড়া। ক্রাউন প্রিন্স এটা ভালোভাবেই টের পেয়েছেন।
পৃথিবী বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষ। মানুষের জীবন। কিন্তু বাঙালীর কেন জানি গতিটাই পেছনের দিকে। এর যে কি যে সঠিক ব্যাখ্যা তা স্বয়ং সে নিজেও জানে না। এ কারণেই এদের যারা পূর্ব পুরুষ, মূলত যারা হিন্দু, তাদের দেবতার সংখ্যাও তেত্রিশ কোটি। বিভ্রান্ত হলে যা হয়।
আজকাল কাক আর কবি একাকার হয়ে যাচ্ছে। অভিনেতা আর ভাঁড় উভয়েরই ছড়াছড়ি। কার কথা বলবো। সংলাপ রচনা ছাড়াই উপস্থিত মতে ডায়ালগ ডেলিভারি দিয়ে একটার পর একটা যাচ্ছে তাই এলোমেলো নাটক তৈরী করেই বাজিমাত করে দিচ্ছে প্রযোজক আর নাট্যকাররা। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ বা থিয়েটার কিংবা মঞ্চের অভিজ্ঞতা ছাড়াই রাতারাতি তারকা বনে যাচ্ছে অভিনয়ের কিছুই না জানা তরুণ-তরুণীরা। সবচেয়ে এলোমেলো অবস্থা নাচের। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে আদৌ কোন সত্যিকার অর্থে নৃত্য জানা নৃত্যশিল্পী আছে কিনা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে আমাদের গানের চর্চা বেশ ভালো।
আমাদের শৈশবের দিনগুলোর কথা বেশ মনে পড়ে। গ্রামাঞ্চলে অনেক খেলাধুলা প্রচলিত ছিলো। দাঁড়িয়াবাঁধা, কানামাছি, ছি-বুড়ি, ডাংগুলি ইত্যাদি খেলাগুলো বেশ মজার ছিলো। হাডুডু, ফুটবলও বেশ জমতো। শীতকালে ছোট আকারে বনভোজন হতো প্রায়ই। মাঠের ভেতর শুক্নো খড়কুটো দিয়ে কুড়েঘর তৈরী করা হতো। গ্রাম্য জীবনের এইসব সংস্কৃতি ছিলো সত্যিকার অর্থেই বেশ মজার।
পৃথিবী এগিয়েছে অনেক। অনেক দেশই অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা কারো চেয়ে পিছিয়ে আছি ভাবতেই লজ্জায় মনটা কুকড়ে যায়। আমরা চাই আগামী দিনগুলোতে আমরাও সবার সাথে তাল মিলিয়ে জোর কদমে এগিয়ে যাবো।
অন্যদের সাফল্যে ভালো যে লাগে না তা নয়। তবে সব সময়ই মনে হয় এই সাফল্যটা আমাদের হলে মন্দ হতো না।
আমাদের যারা প্রতিভাবান ছিলো তাদের অবদানকে খাটো করবো না। তবে তাদের অনেকেরই অবস্থান দেখি বিদেশের মাটিতে। সেখানেই তাদের কৃতিত্ব। শুধু নামের সাথে বাঙালি বংশোদ্ভুত এই শব্দ দুটো যা একটু লাগানো থাকে। এসব যদি দেশের মাটিতে হতো বড়ো ভালো হতো।
কিভাবে তরুণরা উঠে আসতে পারে তার কোন চেষ্টা দেখা যায় না। যদি কেউ উঠে আসতে পারে তাহলে হয়তো বাহবা দেওয়ার লোকের অভাব থাকে না। লোকজন এতোটাই বিভ্রান্ত যে হিরো আলমই এখন আমাদের সিগনেচার হিরো। মজা নেওয়ার মতো ব্যাপার বটে। আমিও ভাবছি তার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি আমিও আমার আখেরটা গুছিয়ে নিতে পারি। এখন তো এসবের উপর দিয়েই চলছে।
হিন্দুরা আছে একটা দোটানার মধ্যে। তারা বুঝে উঠতে পারছে না এখানে থাকবে নাকি ভারত চলে যাবে। কারণ একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা ভরসা পায়। অন্য কেউ এলে তো প্রতিটি দিনই টেনশনের। অবশ্য তেমন খারাপ কিছু ঘটে না। তবে ব্যাপারটার বেশীর ভাগই মানসিক।
বেকারত্বের সমস্যার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বেশ বড় দুটো সংকটের নাম। এর উপর অনেক সরকারের ভাগ্যও নির্ভর করেছে অতীতে। আগামীর পৃথিবীতেও এগুলো বড় নিয়ামক হয়েই থাকবে।
চিকিৎসার কথা কি আর বলবো? সরকারী হাসপাতালগুলো কবে যে রোগীদের নিরাপদ আশ্রয় হবে। প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রয়োজন আছে ক্রমবর্ধমান চাপ সামলাতে। ভেজাল খাওয়া মানুষের অসুখ বিসুখ লেগে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।
সমাজের অবস্থা তথৈবচ বলবো এজন্যে যে ধনী গরীবের বৈষম্য দিন দিন শুধু বাড়ছেই। তাছাড়া বৃহৎ কোম্পানীগুলোর চাপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা শিল্প কারখানা যায় যায় অবস্থা। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা তাদের জন্যে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সত্যি কথা বলতে কি আজও আমরা রাজনীতির প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করতে পারিনি। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছে। তিনিই সব দেখছেন। সকল মন্ত্রণালয়। সকল ঘটন-অঘটন-দুর্ঘটনা ইত্যাদি কিন্তু সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানিকীকরণ বলতে যা বুঝায় তার থেকে আজও আমরা অনেক যোজন দূরে অবস্থান করছি।
অবশ্য এদেশে গণতন্ত্র অর্থহীনই বলবো। কারণ মানুষগুলোর সবুজ সিদ্ধান্তগুলো দেশের জন্য বার বার বিপদ ডেকে আনে। চতুর মানুষগুলো এই সুযোগ নিয়েই ধোঁকা দিয়ে অতীতে বার বার ক্ষমতায় এসেছে। প্রতারিত করেছে জনগণকে। আমাদের মতো দেশের জন্যে প্রয়োজন কিছুটা ডিক্টেটর টাইপের সরকার। ডান্ডায় বরাবরই আমরা ঠান্ডা।
আমাদের খনিজ সম্পদ আহরণ ও তার বিষয়টি বরাবরই রহস্যময়। আমরা মূলত জানিই না যে আদৌ আমাদের কোন খনিজ সম্পদ আছে কি-না। এ ব্যাপারটা কখনোই জনগণের কাছে পরিষ্কার করা হয়নি যদিও এ ব্যাপারে নানা কথা বাজারে প্রচলিত যার বেশীরভাগই মনগড়া।
পরীক্ষা এলেই শোনা যায় প্রশ্ন ফাঁসের কথা কিন্তু কারা এর সাথে জড়িত তার সুরাহা হয় না কখনও। কেউ খোলাসা করে বলে না আসলে কি ঘটেছে?
অন্যের উপর দোষ চাপানো আমাদের একটা স্বভাব। এর থেকে কোনদিন মুক্তি মিলবে বলে তো মনে হয় না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশী দেখা যায়। অন্যের বদনাম করতে করতেই বক্তৃতার সময়টা শেষ হয়ে যায়। নিজের চিন্তা-ভাবনার কথা আর জনগণকে জানানোর সময় হয় না। অবশ্য চিন্তা-ভাবনা থাকলে তো।
স্বার্থপরতা পুরো সমাজটাকে ঘুণ পোকার মতো পেয়ে বসেছে। এখন আর কেউ মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা কিংবা ডেসমন্ড টুটু হতে চায় না। রাজনীতি যখন বিনা পুঁজিতে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা সেখানে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে কে-ই বা যায়।
জনগণের উচিত আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসটা জানা কিন্তু সেই অতীত থেকেই ইতিহাসকে এতোটা বিকৃত করা হয়েছে যে ইতিহাস আজ এক আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত বাসী ফুল।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

UCPDC - 600 Bangla

ইউসিপিডিসি-৬০০ ধারা-১ঃ ইউসিপিডিসি-এর প্রয়োগঃ ইউসিপিডিসি এর ২০০৭ সালের সংশোধনী আইসিসি পাবলিকেশন ৬০০ এর বিধি বা ধারাসমূহ (স্ট্যাণ্ড বাই লেটার অব ক্রেডিট সহ) সকল এলসিতে প্রয়োগ হবে। এলসিতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে উল্লেখ না করলে তা সকল পক্ষের উপরই কার্যকর হবে। ধারা-২ঃ সংজ্ঞা ঃ অন্য কোন অর্থে ব্যবহার না করলে এই বিধিতে এ্যাডাভাইজিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বোঝাবে যে ইস্যুইং ব্যাংক এর অনুরোধে ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে। গ্রাহক বলতে সেই পক্ষকে বোঝাবে যার অনুরোধে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। ব্যাংকিং কর্ম দিবস বলতে সেই দিনকেই বুঝাবে যেদিন ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত বিধি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে তার প্রত্যাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বেনিফিসিয়ারী বলতে সেই পক্ষকে বুঝাবে যার পক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশন বলতে সেই প্রেজেণ্টেশনকে বুঝাবে যা ঋণের সকল শর্তানুযায়ী করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদর্শ ব্যাংকিং চর্চার আওতাধীন। কনফার্মেশন বলতে কনফার্মিং ব্যাংক এর পাশাপাশি ইস্যুইং ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে একটি কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশনকে অনুমোদন ঝুঝায়। কনফার্মিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে ঝুঝা

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে