ইংরেজরা যখন এক শত পঞ্চাশ বছর ধরে অবহেলিত মুসলমানদের বর্ণ হিন্দুদের সশস্ত্র আন্দোলনের বিপরীতে ব্যবহার করতে চাইল তখন মুসলমানদেরও গত্যন্তর রইলো না সাড়া না দিয়ে। কারণ দীর্ঘ সময়ের অবহেলায় মুসলমানরা একেবারে তলানীতে এসে পড়েছিল। তছাড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হিন্দু সমাজের মুখোমুখি দাঁড়াতে মুসলমানরাও বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলো। এই কাজে ইংরেজদের সহায়ক শক্তি হতে রাজী হলো আলীগড় পন্থীরা। দেওবন্দপন্থীরা যেমন অসাম্প্রদায়িক ভাবনার ভিত্তিতে সম্মিলিত ভারতের কথাই সব সময় ভেবেছে তেমনি বরাবরই চিন্তা-ভাবনায় ব্যতিক্রম বাংলার মানুষ মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চাইতে কংগ্রেসের সেকিউলার রাজনীতি কথা চিন্তা করেছে।
এ ব্যাপারে বাংলার ইসলামী পন্ডিতরাও ছিলেন দারুণ অগ্রণী। মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীতে তারা বালার মুসলমানদের উন্নয়নের জন্যে কৃষক-প্রজা পার্টি গড়ে তুলেছিলো। এর নেতা ছিলো শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আকরাম খাঁ, মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। প্রজা পার্টি যদিও প্রজাদের উন্নয়নের জন্যে লড়ছিলো কিন্তু এর প্রধান নেতারা নিজেরাই ছিলো ভূ-স্বামী। তবুও তারা উদারনৈতিক হওয়ায় প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই প্রজাদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো।
শিক্ষার অগ্রগতি, পূর্বের চেয়ে অধিক মাত্রায় চাকরিতে যোগদান, ইংরেজী শিক্ষায় অগ্রসর হওয়া ইত্যাদি ছিলো তাদের বিবেচনার বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা নিজেরা জমিদার শ্রেণীভুক্ত হওয়া সত্তে¡ও তারা যে সমাজ বদলের জন্যে পথে নেমেছিলো এটা যে কোন ভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু সময় যতো গড়াতে লাগলা পরিস্থিতি ততই তাদের প্রতিকূলে চলে যেতে লাগলো। দুটো সম্প্রদায়ের মধ্যে আজন্ম পুষে রাখা অবিশ্বাস, সন্দেহ আর অর্থনৈতিক ব্যবধান এতই তীব্র হয়ে দেখা দিলো যে একটা সময় ফজলুল হককেই বাধ্য হয়ে প্রজা পার্টি ছেড়ে মুসলিম লীগে যোদ দিতে হলো। কারণ সময় যতো গড়াচ্ছিল বাংলা সহ অন্যান্য প্রদেশগুলোতেও যে সব অসাম্প্রদায়িক দল ছিলো তারাও জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলো। মূলতঃ ভাবনাটা এরকম হয়ে দাঁড়ালো যে ইংরেজ ভারত ছেড়ে গেলে হিন্দু মুসলমান এক সাথে থাকা আদৌ সম্ভব হবে কিনা? উত্তরও পাওয়া গেলো। সম্ভব নয়। কারণটা সবারই জানা। তাই সব ধরনের সহাবস্থানের ভাবনা বিলুপ্ত হয়ে গেলো। উদার পন্থার জায়গা নিলো স্ব স্ব কওমের ভাবনা, আমরা যাকে সাম্প্রদায়িকতা বলি। তখনকার সময়ে যে এমনটা হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ প্রসঙ্গে যদি আজকের এই একবিংশ শতাব্দীর কথা বলি যখন এটা বলা হয় যে পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-দর্শন, রাজনৈতিক মতবাদে চরম উৎকর্ষতা লাভ করেছে তাহলেও কি একথা বলা যাবে যে পৃথিবী সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হয়েছে। মোটেই না বরং আমি বলব এটা আরও তীব্র হয়েছে। ঝধসঁবষ চ. ঐঁহঃরহমঃড়হ ও তার ঞযব ঈষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ-এ একথাই বলেছেন যে আগামীর পৃথিবীতে ধর্মই হবে প্রধান নিয়ন্ত্রক। হচ্ছেও তাই। মানুষ ধর্ম পালনে অতোটা নিষ্ঠাবান না হলে কি হবে ধর্মের ভিত্তিতেই তারা বিভাজিত হতে পছন্দ করে। পৃথিবী আজ সুস্পষ্টভাবে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী প্রভৃতিতে বিভাজিত। অতএব তখনকার বাস্তবতায় এটাকে অবাস্তব কিছুও বলা যাবে না।
সংকটে পড়েছিলো মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশগুলোর মুসলমানেরা। তাদের মধ্যে যারা সীমানা পেরিয়ে এপারে আসতে চাইল তাদের প্রায় ২০ লাখই উগ্রবাদী হিন্দুদের হাতে হামলার শিকার হয়ে পথিমধ্যেই মরে পড়ে রইল। বাকীরা সব হারিয়ে কোনোমতে পাকিস্তানে এসে পৌঁছেছিলো। সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা হয়েছিলো পাঞ্জাবে। দেশভাগে পাঞ্জাবে যেন গজব নেমে এসেছিলো। সেখানকার শিখরা দেশভাগের প্রসঙ্গ ওঠার পর থেকেই অস্ত্রশস্ত্র বানিয়ে তৈরি হয়েই ছিলো। যখন মানব ইতিহাসের সবচাইতে বৃহৎ ও করুণ মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর শুরু হলো তখনই তারা তাদের বানানো গদা, তরবারী, দা সহ আরও অনেক ধরনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে অসহায় মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। পথে পথে দুর্ভাগা মুসলমানদের লাশ পড়ে রইল স্তুপ হয়ে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, অসুস্থ, পঙ্গু, গর্ভবতী মহিলা, প্রতিবন্ধী কেউই বাদ পড়লো না। সেদিন তাদের গদার আঘাতে মুসলমানদের মাথার খুলিগুলো বোমার মতো ঠাস ঠাস শব্দে ফেটেছিলো।
উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষের যে বীজ সেদিন নতুন করে রোপিত হয়েছিলো তা আজ পর্যন্ত ¤øাণ তো হয়ইনি বরং দিনে দিনে তা বৃদ্ধিই পেয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের উত্থান এর তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। থেমে থেমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের তুচ্ছ অজুহাতে। বাংলা এখনও যদিও এর ছোবল থেকে কিছুটা মুক্ত তবুও তা কতক্ষণ থাকবে বোঝা দায়। কারণ নাগিনীরা যেভাবে ফণা তুলছে আর বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে তাতে বাংলাকে খুব বেশি দিন বাঁচানো যাবে বলে মনে হয় না। মমতার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে যে সাফল্য প্রদর্শিত হচ্ছে তা নিতান্তই সাময়িক। কারণ কংগ্রেস ও বামদের ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং বি জে পির উত্থান অত্যন্ত খারাপ সংকেত দিচ্ছে।
যে প্রসঙ্গে ছিলাম। গোড়ার দিকের রাজনৈতিক মেরুকরণ। কথা আসতে পারে এর গুরুত্ব কোথায়? এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই মেরুকরণই যে নানা মুখী বিরূপতা সৃষ্টি করেছিলো পরবর্তীতে এটাই আমাদের মধ্যে নানামুখী অন্তর্কলহ সৃষ্টি করেছিলো। এই অন্তর্কলহই যে পারস্পরিক অসহনশীলতার জন্ম দিলো তা-ই সামরিক শাসকদের জন্যে উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করলো।
সাম্প্রদায়িক ভাবনার উপর ভর করে পাকিস্তানের জন্ম হলেও পাকিস্তানের ভেতরের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার মানুষগুলো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার কথা ভাবলো। যেমন পূর্ব পাকিস্তানে তারা আওয়ামী লীগ গড়ে তুললো। ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের উত্থান হতে লাগলো আর মুসলিম লীগ তলানীতে গিয়ে ঠেকলো। পশ্চিম পাকিস্তানীরা দেখলো মুসলিম লীগের হারিয়ে যাওয়া মানে ক্ষমতাও তাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়। তাই সামরিক শাসক আইয়ুব সামরিক বাহিনীর লোক হওয়া সত্তে¡ও মুসলিম লীগকে পুনর্জীবন দিতে চাইলেন। তার এই নতুন মুসলিম লীগ যা পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামে পরিচিত আরও অধিক পরিচিত ছিলো কনভেনশনাল মুসলিম লীগ নামে। কারণ একটি বিশেষ কনভেনশন ডেকে এর জন্ম দেওয়া হয়েছিলো।
কোন কিছুতেই কোন কাজ হলো না। সংখ্যাগুরু পূর্ব পাকিস্তানীরা ১৯৭০-এর নির্বাচনে একচেটিয়া বিজয় লাভ করে প্রমাণ করে দিলো পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। ভুট্টোর পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তানে ভালো করলেও আসন সংখ্যা বড়ই কম। তাকে যদি সরকার গঠন করতেই হয় তাহলে তা করতে হবে যদি আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয় তবে। আর এক্ষেত্রেও তাকে কোয়ালিশন সরকারই গঠন করতে হবে। তবে সে আশা সুদূর পরাহত। তাই যুদ্ধ অনিবার্য হলো।
পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলো। নাম হলো বাংলাদেশ। এখানেও সেই একই সমস্যা। অসন্তুুষ্টি। কে বেশী পেলো, কে কম এসবকার আর অন্যদের সাথে নয়। সমস্যাটা নিজেদের মধ্যে। জাতির জনক অনেক বুঝাতে চাইলেন যে এ দেশটা আমাদের সবার।একে বাঁচাতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাকেই মনে করা হলো সবচেয়ে বড় সমস্যা।
সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কতিপয় বিভ্রান্ত স্বার্থপর আর নির্বোধ আর ঐ যে বললাম অতীতে সৃষ্টি হওয়া নানামুখি মেরুকরণের উপজাতগুলো বিতর্কিত সব ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। মোশতাক, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, মাহাবুবুল আলম চাষী এমনকি পরবর্তী সময়ের ব্যতিক্রমী আচরণ করা মওদুদ আহমেদ বা অন্যান্যদের ব্যাকগ্রাউন্ড যদি ঘাটা হয় দেখা যাবে এদের অতীতের সংঘটনগুলোও বিতর্কিত। আর মূল ধারা থেকে সরে যাওয়া এইসব সামরিক শাসকরা (জিয়া, এরশাদ) তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যে এসব বিতর্কিত ব্যক্তিদেরই জড়ো করেছিলেন যা আমাদের স্বাধীনতা তথা রাজনীতির মহান ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছিলো। ধর্মের নামে এরা এদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করার জন্যে যাবতীয় অধর্মের কাজগুলো করেছিলো সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যে। ভারত বিদ্বেষের ধুয়া তুলে বিভিন্ন জায়গায় ইসলামী শ্লোগান জুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে এমন সব দফা ঘোষণা করেছিলো যা এতোটাই বিভ্রান্তিকর যে বাংলাদেশের অশিক্ষিত ধর্মভীরু কুসংস্কারচ্ছন্ন মুসলমান সম্প্রদায় এদের ভাঁওতাবাজি ধরতেই পারেনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের প্রধান ও সবচেয়ে পুরাতন আর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগেরও যে ব্যর্থতা ছিলো না তা কিন্তু নয়। আওয়ামী লীগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছদ্মবেশী লুটেরা, দেশদ্রোহিদের দাপটে বরং সত্যিকারের দেশপ্রেমিকরা এতোটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো যে স্বয়ং তাজউদ্দীনই মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়ে যান।
এ সব সমস্যার আর কোন সমাধান হয়তো ছিলো না। কোনও মিরাক্লও ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবকে সপরিবারে জীবন দিয়ে লুটেরাদের জন্যে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে হলো। তারপর প্রায় ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলল ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া গণতন্ত্রের বিকৃত শিশুর লালন-পালন।
যে প্রসঙ্গে ছিলাম। রাজনীতির গোড়ার দিকের মেরুকরণ। যখনই বঙ্গভঙ্গ হলো বর্ণ হিন্দুরা তাদের কতৃত্ব হারানোর ভয়ে আবারও নড়ে চড়ে বসলো। অবশ্য বঙ্গভঙ্গের আগেই তারা সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি শুরু করেছিলো। ১৯০৩ সালেই প্রমথনাথ মিত্র ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে গোপনে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। ১৯০৫ সালে হলো বঙ্গভঙ্গ। ১৯০৬ সালে শ্রী অরবিন্দ ঘোষ তার ভাই বারীন্দ্র ঘোষকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন যুগান্তর সমিতি। অতি শীঘ্রই ঢাকায়ও পুলিন বিহারী দাশের নেতৃত্বে এর শাখা হয়ে গেলো। কিন্তু আন্দোলনও যেহেতু হিন্দু রীতিতেই হচ্ছিলো মুসলমানরা সেখানে অচ্ছ্যুৎই থেকে গেলো। তারা খুঁজে নিলো ভিন্ন প্ল্যাটফরম।
তাছাড়া উভয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাও ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। মুসলমানরা এই প্রথম দেখতে পেলো তাদের কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ। হিন্দুরা ইংরেজ বিরোধিতার চাইতেও বড় করে দেখলো প্রতিদ্ব›িদ্ব সম্প্রদায়টির উত্থানের সম্ভবনা। দুজনের অবস্থা দুরকম। অতএব একত্রে আগানো কঠিন। ইংরেজ বিরোধীতাও তাই ভিন্ন মাত্রা পেলো। বর্ণ হিন্দুরাই ধারাবাহিক সশস্ত্র হামলাকে এগিয়ে নিলো। অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক ভাবনার অধিকারী মুসলমানদেরও তারা সাথে পেলো। যেমন কংগ্রেসে আব্বাস তৈয়বজী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ নেতাগণ। স্বদেশী আন্দোলনে বাংলায় ব্যরিস্টার আব্দুর রসুল সহ আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম। তবে তা মূল ধারার কাছে যে খুবই অনুল্লেখ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুর্ভাগ্য মুসলমানদের। পার্টিশনের সময়টাতে যে দল ইংল্যান্ডের ক্ষমতায় আর যিনি এলেন ভারতের ভাইসরয় হয়ে এদের কেউই মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন না। আসলে জিন্নারও করার কিছু ছিলো না। জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত হওয়া ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষটি তখন মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে কীটদষ্ট পাকিস্তান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
যে কথার উল্লেখ করেছিলাম আগেই। কারো বিপরীতে বা বিরুদ্ধে নয়, আবহমান বাংলার রূপ রস গন্ধে মাখানো অনুভূতি নিয়ে চিরন্তন অসাম্প্রদায়িক ভাবনার ধারক ও বাহক হিসেবে যে সংগঠনটি গড়ে উঠেছিলো সেই শেরে বাংলার কৃষক প্রজা দলটি একসময় আওয়ামী লীগের কাছেই ¤øান হয়ে যায়। শেরে বাংলাও চলে যান দুনিয়া থেকে। মারা যান সোহরাওয়ার্দী। বৃদ্ধ বয়সে এসে দাঁড়ান লাল মওলানা। তাই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্ব›িদ্ব হয় আওয়ামী লীগই। ভারসাম্যহীনতার এই সময়ে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্যে আওয়ামী লীগকেই ব্যবহার করে। আর এই সুবাধেই কুচক্রীরা ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ডটি ঘটিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে নিয়ে সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় এক ধরনের গণতন্ত্র গণতন্ত্র খেলায় মেতে ওঠে।
আর এভাবেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত ক্রমশঃ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। ইতিহাসের চরম পর্যায়ের বিকৃতি দেখা যায়। বাংলাদেশ প্রায় অর্ধ শতাব্দী পিছিয়ে যায়। অবশেষে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে জাতি আবারও আলোর মুখ দেখতে পায়।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment