বাস্তবে যা করা উচিত আর মন যা করতে চায় এ দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেই ফারাক আর তার পথচলা বলা যায় রেল লাইনের মতোই সমান্তরাল। কখনও মেলে না। রাজাও হিমশিম খায়। হিমশিম খায় প্রজাও। খাওয়ারই কথা। খাবে না-ই বা কেন? দু’জনেই তো রক্ত মাংসের মানুষ। হোক না পোস্ট পজিশনটা একটা আলাদা। একটা কথা না বলে পারছি না। আসলে এই রক্ত মাংস জায়গাতে এসেই কথাটা কেমন জানি আটকে যায়। আমার তো মনে হয় পাপ-পূণ্যের জন্মও এখানটায়। সাত-সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে যে সাদা চামড়ার ইংরেজ এসেছিলো যারা নিজেদেরকে খুব বেশি সভ্য বলে দাবী করতো তাদের সাথে খোলা জায়গায় পায়খানা করা অশিক্ষিত বর্বর শুদ্র জাতের ভারতীয়দের খুব একটা তফাৎ কোথায়? ইংরেজরাই তো বিধবা বিবাহ চালু করেছিলো। আর বহু বিবাহ বন্ধ করেছিলো যাতে বিধবাগুলোকে তারাই ভোগ করতে পারে। নইলে তো আবার স্থানীয় রাঘব বোয়ালরাই ওগুলোকে খেয়ে সাবাড় করে দেবে। রাম মোহন যখন এই দারুণ গ্যাড়াকলটা বুঝলেন ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বিল উঠে গেছে বড় লাটের টেবিলে। তাই বুঝি আফসোস করে বলেছিলেন, ধর্ম-আর জাত দুটোই নষ্ট করলাম। সিঁদুর পড়া ঘোমটা দেওয়া লজ্জাবতী ভারতীয় রমণীর রোস্ট উঠল ইংরেজদের ঝকঝকে ডাইনিং টেবিলে। দোষ আমি তবে ইংরেজদেরও দেব না। যত দোষ আসলে ঐ রক্ত-মাংসের, আফ্রিকার বন্য মানুষ থেকে শুরু করে ইউরোপের সিদ্ধ আধুনিক সাহেব- সবার শরীরেই তো ঐ রক্ত মাংস। বাদ যাচ্ছে না হিজড়ারাও। বরং তারা নাকি আরও বেশী আকর্ষণীয়। তাইতো মোঘল দরবারের ভাগমতী আর ফুটপাতের ফুলমতি- রাত যত বাড়ে উভয়ের চাহিদা আর কদর দুটোই তত বাড়ে। নেশার বোতল আর গভীর রাত- এর চেয়ে উত্তেজক পৃথিবীতে আর কি আছে? আর এ দুটোই ডেকে নিয়ে যায় রক্ত মাংসের কাছে। পাপী তাপী সুফি মৌলভী সাধু সন্ন্যাসী যোগী ত্যাগী সবাই ভোগী। বলার অপেক্ষা রাখে না সবই রক্ত মাংসের খেলা। এই অদৃশ্য যাদুর খেলায় প্রত্যেকের গোপন চাহনি চাহিদা আর সামর্থ্য অনুযায়ী জানান দেয় এই তো আমি এখানে। চলে আসো। কথা হবে। দেখা হবে। “দেখবো দেখাবো পরষ্পরকে খুলে হৃদয়ের যতো দাগ - আয়না পাষাণী একবার পথ ভুলে - পরীক্ষা হোক কার কত অনুরাগ।” (হেলাল হাফিজের কাছে ঋণী এই চমৎকার লাইনগুলো লেখার জন্য)। রক্ত-মাংসের কথা বলছিলাম। এতো কিছুর মধ্যেও একদল দুর্ভাগা ঠিকই থাকে। নিয়তি তাদের জন্যে অন্য রকম কিছু নির্ধারণ করে রাখে। তাকে নিয়েই তাদের বাঁচতে হয়। কষ্টের জীবন। তবু নষ্ট করার সাহস পায় না। বেঁচে থাকা যে বড় মধুর।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment