ভালোবাসা। এতো উচ্চারিত একটা শব্দ যে ঘৃণা ধরে যাওয়ার কথা। তবুও তা আজও পৃথিবীর মধুরতম শব্দ। কারণটা কি? এর দ্রব্যগুণ? শব্দগুণ? উচ্চারণ মাধুর্য? শ্রুতিমধুরতা? কিছুই না। এর কুশীলবদের কারণে। হ্যাঁ, পৃথিবীতে যতো মানুষ ততোই যেমন তার পথ ততোই তেমনি তার মত। আর আমি বলবো ততোই তার ভালোবাসার ধরণ, ধারণ, কারণ, করণ, বারণ, নিবারণ, অকারণ, জ্বালাতন, প্রকরণ, আরো যে কতো কি তার কিছু কিছু আপাততঃ বলা বারণ।
যখন মনে পড়ে পৃথিবীর সব প্রেমকাহিনীর কথা, শুরুতেই চলে আসে আদম আর হাওয়ার নাম। দু’জনকে হারিয়ে দু’জন কতো যে উতলা। হাঁটলেন কতো পথ। অবশেষে দেখা হলো সেই পবিত্র ময়দানে। আরাফাতের মাঠ। ওখানেই উঠবো কেয়ামতের দিন। প্রভুর সাথে দেখা হবে। সাক্ষাতের সবচেয়ে বড়, মূল্যবান, মর্যাদাবান, স্বর্গীয় উদ্যান। সবার সাথে সবারও দেখা হবে।
পৃথিবী সম্পর্কে কি ধারণা আমরা পোষণ করি? আমরা কি সৃষ্টিকর্তার ইঙ্গিত আসলেই বুঝি। এটা মূলতঃ চলমান। এই আম-জাম-কলা-কচু-লিচু-মাঠ-ঘাট-নদী-পাহাড়-ঝর্ণা-এমনি এমনি সৃষ্টি করা হয়নি। এগুলো ধ্বংস হবে ঠিকই কিন্তু আবারও সৃষ্টি করা হবে। সৃষ্টি করবেন সৃষ্টিকর্তাই। কারণ আর কিছুই নয়। তিনি এটা করবেন, আমার যতদূর মনে হয়, তিনি তাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন, যারা মনে করে এগুলো এমনি এমনি হয়েছে, আসলে তিনিই এসবের ¯্রষ্টা। এর প্রয়োজনও আছে। তাই হয়তো তিনিই বলবেন, “লিল্লাহে ওয়াহেদিল কাহহার।” “আমি ছাড়া আর কে আছে আজ।” কথা সত্যি। তার এমনটা করাও চুড়ান্ত যৌক্তিক। বেক্কলের দল। বুঝেও বোঝে না। তিনি যে ¯্রষ্টা এটা না বোঝার কি আছে? এসব তো আমার জানামতে কেউ বানায় নি। কেউই বলতে পারবে না কে বানিয়েছে। তাহলে এটাই তিনি।
ছিলাম ভালোবাসার বিষয়ে। এতো যে থ্যাতাব্যাতা করা হয়েছে প্রেমকে তবু তার আবেদন কমে না। কমবে কেমন করে। এতো যে ভালো চায়না স্যামসং মোবাইল যতো দামীটাই কেন না কেন, এক বছরের মাথায়ই স্লো হতে শুরু করে। আর প্রেম। কোটি কোটি বছর হলো এখনো ফুল চার্জ, ফুল স্পিড। টাচ করার সাথে সাথেই বিদ্যুৎ খেলে যায়। কোলকাতা হার্বালের সমস্ত ওষুধও যে বুড়ো দাদুর ক্রেনটাকে এক ইঞ্চি নড়াতে পারেনি ১৮ বছরের কাজের মেয়ের হালকা মালিশেই সেটা জাতীয় পতাকা টাঙ্গানোর লৌহদন্ড। ভালোবাসায় সবকিছুই সম্ভব।
হ্যাঁ। ভালোবাসার কথাই বলছিলাম। আমারও স্মৃতি আছে। তবে তা বিভৎস। ম্যাচ না করার গল্প। তাই তাতে যাবো না। বরং ভালো কিছুর কথা বলতে চাই। অনেক ভালো ভালো প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি আছে। তাদের কথা। যারা ভালোবাসে এবং ভালোবাসা পায় তাদের কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি দেখেছি। ক্যাম্পাস ছাড়ার আগেই তাদের অনেকের ছুটি হয়ে গেছে। কেউ কেউ অবশ্য গন্তব্যে পৌঁছেছে। ভালো অনুভূতি।
প্রেম নিয়ে একজন আমাকে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছে। সে একটি মেয়েকে জানতো। মেয়েটি ইংরেজিটা ভালোভাবে রিডিং পড়তে পারতো না। শক্ত শব্দগুলো মাঝে মধ্যেই আটকে যেতো। তাই ছেলেটির কাছে আসতো রিডিং পড়া শিখতে। ইংরেজিটা তার ভালো হলো বটে কিন্তু শরীরটা একেবারে মন্দ হয়ে গেলো। প্রেম শুধু দেয়ই না, নেয়ও। মনে রাখা উচিত।
প্রেম নিয়ে এই লেখাকে কোন সাধারণ লেখা মনে করা নিতান্ত বোকামির কাজ হবে। কারণ এই লেখা যতো সামনে আগাবে ততোই ভালোবাসা নিয়ে ভয়াবহতা এবং মধুরতা- এই দুটোরই সন্ধান পাওয়া যাবে। আমরা যখন কিছু লিখতে বসি একেবারে শুধু শুধু বা এমনি এমনি বসি না, একটা পরিকল্পনা থাকে। মহান আল্লাহ্ সৃষ্টির পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। লেখার গুরুত্ব নিশ্চয়ই বুঝাতে পারছেন।
প্রেম নিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন জনি ডেপ। স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ড উদ্ভিন্না যৌবনা। হার্ডের বারোয়ারী প্রেমের কাহিনী উঠে আসছে একের পর এক। জড়িয়ে গেছে তেল ছাড়া গাড়ি চালানোর আজব কারিগর ইলন মাস্কের নামও। এতোদিন তাহলে লোকটা সত্যিই মুখোশের আড়ালে ছিলো।
এরকম ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন টাইগার উডসও। তবে তা নিজের কারণে। নিজেই জড়িয়ে পড়েন অজ¯্র রমণীর সাথে। জড়িয়ে পড়েছিলেন বিল কসবিও। শিশুদের দলাই মলাই করার ঘৃণ্য কাজে। প্রেমের বিকৃত রূপ।
স্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত প্রেম দেখাতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন উইল স্মিথ। এখন সেই স্ত্রীই যায় যায় করছেন। দুঃসময়ে কেউ থাকে না পাশে। বার বার দেখেছি। সোনা-দানা কিংবা টাকা-পয়সার প্রতি অনেকের প্রেম তাই সন্দেহের চোখে দেখা উচিত নয়। অন্ততঃ দুঃসময়ে বেঈমানি করে না।
ভালোবেসে লটর পটর করে অতঃপর বিয়ে করে ঝাল মিটিয়েছেন প্রিয়াংকা-নিক জোনাস। দীপিকা পাদুকোন আর বণবীর সিং দেখিয়ে দিয়েছেন ভালোবাসার ক্ষেত্রে কাপুরও কোনও বাধা না। একই কান্ড করে ফেলেছেন হালের রণবীর কাপুর আর আলিয়া ভাট। ছোট্ট আলিয়া ঠিকই সেট হয়ে গেছেন লম্বা রণবীরের জীবনের সেটে। শহীদ কাপুর দেখিয়ে দিয়েছেন প্রেম থাকলে প্রেমিকার নায়িকা হওয়া জরুরী নয়। কারিনাও কম যাননি। সাইফকে ভালোবেসে প্রমাণ করে দিয়েছেন তিন-তিনটা ছেলেমেয়ের মা হওয়া যায় কতো সহজে। প্রেমে কি-না হয়। ভিকি-কৌশল আর ক্যাটরিনা কাইফই তো তা প্রমাণ করে দিলেন। ভালোবাসা আসলেই ভালোবাসা। পার্থক্য শুধু এটুকুই সময় বদলেছে। তাই ধরণ ধারণ একটু বদলেছে বটে তবে আসল উদ্দেশ্য একই। ধরো তক্তা মারো পেরেক। মাঝে মাঝে করো ব্রেক।
প্রেম নিয়ে কথা অনেক। কোন একটা একক বইতে আনা সম্ভব নয়। ভালোবাসার রহস্য ঘাটতে ঘাটতে সুস্থরা পাগল হয় আর পাগলরা সুস্থ। কেমন করে? একটু ভেবে দেখুন। বুঝতে পারবেন। কতো জন ভালোবাসা না পেয়ে পাগল হয়েছে আবার কতো পাগল ভালোবাসা পেয়ে হয়েছে সুস্থ। আমরা সবাই জানি প্রেম এমনই। তবু আমরা ভালোবাসি। বার বার ভালোবাসি। ভালা না বেসে পারা যায়। ভালোবাসার রসায়ন যেহেতু শরীরের ভেতরেই তৈরি হয় তাই প্রতিটি মানুষই এক একটা ভালোবাসা তৈরীর ফ্যাক্টরী। এর চোঙ থেকে ভালোবাসার ধোয়া বেরোয়।
লেডি ডায়না ভালোবেসেছিলেন দোদি আল ফায়েদকে। এই প্রেম যেন তেন প্রেম ছিলো না। দু’জনে মরে প্রমাণ করলেন প্রেম কাকে বলে। জেমাইমা চলে এলেন পাকিস্তানে ইমরানের কাছে। অবশ্য থাকতে পারেননি। প্রেম সব সময় সবাইকে আটকাতে পারে না।
““Whatever should are made of, his and mine are the same.”- এই কথাটা Emily Bronte -র। হৃদয় তা সে নারী কিংবা পুরুষ যারই হোক মূলতঃ একই।
এ তো গেলো হৃদয়ের ধরণের কথা কিন্তু তার ভেতরে যে মজার জন্ম হয় তা আমের আচারের চেয়েও মজার। তাইতো Jane Austen বলেছেন “There is no charm equal to tenderness of heart.”
ভালোবাসলে তাই তো মানুষ কাছে আসে। প্রথমেই যে কাজটা naturally করে বসে তাহলো একজন আর এক জনকে চুমু দেয়। কেন দেয়? ঐ যে বলেছিলাম হৃদয় এর ভেতরে কিছু একটা জন্মায়। মিলনের আঁকুতি। চ P. B Shelley তাইতো বলেছেন, “Soul meets soul on lovers’ lips.”
বুঝতে পেরেছেন তাহলে। কেন এতো আঁকুতি থাকে প্রেমের ভেতর আর প্রেমিক প্রেমিকার ভেতর। ভেতরে যা জন্মায় তাকে বাইরে বের করে আনার প্রবণতা। এখান থেকে জন্ম হয় মূলতঃ প্রেমের প্রাথমিক ধারণার। তারপর তা ডালপালা বিস্তার করে মহীরূহে পরিণত হয়। সেই ডালপালায় পাখি বসে, বাসা বাঁধে, আরো কতো কি?
প্রেমের বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা ফুরোবার নয়। কোনদিন ফুরোবেও না। ভালোবাসা নিয়ে পৃথিবীর তাবত মানুষের প্রত্যেকেরই নিজস্ব অনুভূতি আছে। তবে মহামানবদের ক্ষেত্রে এর প্রকাশ সত্যিই দারুণ, “Keep love in your heart. A life without it is like a sunless garden when the flowers are dead. The consciousness of loving and being loved brings warmth and richness to life that nothing else bring”- এই কথাটা কার জানেন? Oscar wilde এর। তিনি কতোটা সত্যি বলেছেন তাতো বুঝতেই পারছেন। শুরু থেকে প্রেম নিয়ে যে প্যাঁচাল পারছি এই কথাগুলোর ভেতর যেন তার সবটাই আছে। প্রেম তবে একাই একশো। প্রেম ছাড়া জগতে আর আছেই বা কি? প্রেম বাদ দিলে আর থাকেই বা কি? TO BE CONTINUED...
Comments
Post a Comment