যদি মানচিত্রের দিকে চোখ বোলান দেখতে পাবেন অস্ট্রিয়া দেশটির অবস্থান কোথায়। ইউরোপের কেন্দ্রবিন্দুতে। পাশেই জার্মানী তার পাশে ফ্রান্স। তারপরই স্পেন। মনে পড়ে ঐ সময়ের কথা। যখন এদিক দিয়ে উসমানীয়রা আগাতে আগাতে ভিয়েনায় পৌঁছে গিয়েছিলো। আর অন্যদিকে স্পেনেও মুসলিম শাসন চলছিলো। প্রথম মুরাদের সময়কালে উসমানীয়দের ইউরোপ বিজয় শুরু হয়। প্রথমে আড্রিয়ানোপল তারপর পুরো বলকান। সার্বিয়া আর বুলগেরিয়ার যুবরাজের পাশাপাশি পূর্ব রোমান সা¤্রাজ্যের স¤্রাটকেও কর দিতে বাধ্য করেন। এই অভাবনীয় সাফল্য এসেছিলো তার শাসনকাল ১৩৬২ থেকে ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর শুধু সামনে আগানো। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় গিয়ে থামা। ওদিকে গ্রানাডার পতন হয়েছিলো ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারী। ১৩৮৯ থেকে ১৪৯২ পর্যন্ত সময়কালটা একেবারে কম সময় নয়। একশ বছরের বেশী। যদি এই সময়টায় দু’দিক দিয়ে চেপে ধরা যেত ইউরোপের চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়া এমন কঠিন কিছু ছিলো না। কিন্তু তা হয়নি। কারণও অনেক। ইউরোপের অভ্যন্তরে যতোটা এগিয়েছিলো তা ঐ অটোমানরাই।
আন্দালুসিয়ার মুসলিম শাসকরা তো ব্যস্ত ছিলো নিজেদের মধ্যে কলহ বিদ্রোহে। যে কমপ্লেক্সিটি উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকদের মধ্যে ছিলো তা ঐ আন্দালুসিয়াতে এক্সপোর্ট হয়েছিলো। তাই তারা আর ইউরোপের মূল ভূখন্ডের দিকে আগাতে পারলো না। দুই একজন যে চেষ্টা করেনি তাও কিন্তু নয়। তুরসের যুুদ্ধে আব্দুর রহমান গাফেকি হেরে যান ৭৩২ খ্রিস্টাব্দে। এরপরও টুকটাক চেষ্টা হয়েছিলো আন্দালুসিয়ার মুসলমানদের সোনালী সময়টাতে। কিন্তু লাভ হয়নি। তারা পিরেনিজ পবর্তমালা অতিক্রম করে ইউরোপে পা বাড়াতে পারেনি। পরবর্তীতে উসমানীয়দের আস্তে আস্তে ইউরোপ থেকে সরে আসা মুসলমানদের জন্যে বিরাট দুঃসময়ের সব বন্দোবস্ত করে দেয়। আজকের পৃথিবীর যে বিন্যাস এবং বাস্তবতা তার বেশীরভাগই নির্ধারিত হয়েছিলো সেদিন ইউরোপে অটোমানদের ভাগ্যের উপর।
কথা আসলো এজন্যে যে, এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে আরও অনেক মুসলিম সা¤্রাজ্য ছিলো। তারা লড়েছে শুধু নিজেদের মধ্যে। কেউ সাহস করে ইউরোপে পা বাড়ায়নি। শুধুমাত্র উসমানীয়রাই সেই সাহস দেখিয়েছিল। তাদের বীরত্ব গাঁথা তাই মুসলিমদের জন্যে সত্যিকারের জিহাদের বার্তাই দেয়। কিন্তু মুসলমান আজ হৃত গৌরব। নিজেদের গৌরবময় অতীত ভুলে বসে আছে। আর সেই সাথে লাঞ্চিত হচ্ছে সর্বত্র।
Comments
Post a Comment