Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

 স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠা মূলতঃ ইতিহাস বিমুখ হয়েই - ওমর খালেদ রুমি

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে যখন বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলেন তখনই বাংলাদেশ একটা অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলো। তারপর একের পর এক সামরিক শাসন, সংবিধানকে দুমড়ে মুচড়ে অকার্যকর করে রাখা, এমন সব সংশোধনী আনা যা পরবর্তীতে পুরো জাতির ইজ্জত আর অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জেলখানায় আটক অসহায় নিরপরাধ চার নেতাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যার মধ্য দিয়ে যে রক্তের ঋণ তৈরি হয়েছে জাতি কি কোনদিন তা শোধ করতে পারবে। এরকম একটা এলোমেলো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী অতিক্রম করে ফেললাম।

যারা যুদ্ধের পরপরই জন্মেছি তারাও আজ পঞ্চাশে উপনীত। মোটামুটি বলতে গেলে একটা প্রজন্ম তার জীবন ও যৌবনের মূল্যবান সময়টা এই স্বাধীন বাংলায় পর করে ফেলেছে। কিন্তু তাদের যৌবনের সেই সোনালী সময়ের একটা বিরাট সময় (অর্থাৎ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০) এই পনেরোটি বছর (যখন তাদের মানসিক ভিত্তিটা গড়ে উঠেছে) কেটেছে দু’জন সামরিক শাসকের সময়কালকে দেখে। একজন জিয়া যিনি চালাক, ধীর, স্থির, শান্ত, চৌকষ আর অন্যজন তার অনুসারী এরশাদ যিনি রোমান্টিক, চপলমতি, আংশিক কবি, উন্নয়নকামী, আধুনিক, রাজনৈতিক দর্শনশূন্য চতুর মানুষ।

সবচেয়ে বড় কথা হলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সময়কালটায় যা কিছু ঘটেছে তা যেমন একটা গণতন্ত্রমনা জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করেছে তেমনি পুরো প্রজন্মটাকে একটা বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। এই সময়ে যারা বেড়ে উঠেছে তাদের কাছে রাজনীতিটা একটা তামাশা বৈ অন্য কিছু মনে হয়নি। এতে রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তলনীতে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ পুরো পাকিস্তান সময়কালটাতে আমাদের পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, তাদের সততা, সাংবিধানিক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, তাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো ছিলো গর্ব করার মতো।

কিন্তু দেখতে দেখতে চোখের সামনে থেকে ধানগুলো সরে গিয়ে চিটাগুলো ভেসে উঠলো। তারা কর্তৃত্বও করলো। সর্বনাশ করে দিয়ে গেলো আমাদের শুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনার সুস্থ ধারার। আমরা আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঠিক তথ্যগুলোতে এই প্রজন্মকে জানাতে ব্যর্থ হলাম। ফলাফল আর কিছু নয়। অস্তিত্বহীন একটা ইতিহাস বিমুখ প্রজন্ম আমাদের মাথার উপর জগদ্দল পাথারের মত চেপে বসেছে। আর এসব নিয়ে যদি কেউ কথা বলে তো সে হচ্ছে পাগল, মাতাল, উন্মাদ। এই সব কারণেই অনেক সময় অনেক জাতিকে পরবর্তীতে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হয়। খেসারত দিতে হয় অনেক বড় ধরণের। আর এর থেকে বেড়োনোরও পথ থাকবে না যদি না আমরা সময়মতো সচেতন না হই।

তাহলে কি একথা বলব যে সময় ফুরিয়ে গেছে। হয়ত এখনও নয়। তবে ফুরিয়ে যাবে। কারণ সবকিছুরই একটা মেয়াদ থাকে। মেয়াদ ফুরিয়ে এক্সপায়ার হয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের এই প্রজন্মকে ইতিহাসের সঠিক জ্ঞানটা দিতে হবে। নইলে পরবর্তী প্রজন্মগুলোও ধীরে ধীরে এক ধরণের ইডিয়টে পরিণত হবে।

এখন কথা হচ্ছে এই দায়িত্ব কে বা কারা পালন করবে। সরকার? জনগণ? বুদ্ধিজীবি? আমলা? নাকি বিদেশ থেকে আসা কেউ? কে? কে হবে সেই মহান ত্রাণকর্তা যে জাতিকে অন্ধকার (যা দেখা যায় না) থেকে আলোতে নিয়ে আসবে।

সরকার যথেষ্ট করছে। তবে দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়। আমাদেরও কাজ আছে। যে যার জায়গা থেকে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। নিজের ক্ষুদ্র অবস্থান, ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে। জানান দিতে হবে আমরা ঘুমিয়ে পড়িনি, জেগে আছি, ১৬ কোটি বাঙালির এই দেশ এত সহজে ফুরিয়ে যেতে পারে না। এর ইতিহাস এত সহজে ¤øান হবার নয়।

মনে রাখতে হবে আমাদের রয়েছে রাজনৈতিক ত্যাগ আর মহিমার আদর্শ। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে এর কোন বিকল্প নেই। এই প্রজন্মক সত্যিকারের ইতিহাসমুখী হতেই হবে।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak