আরবে ইসলামের যে বিকাশ হয়েছিলে সময়ের সাথে সাথে তা আরবের গÐি পেরিয়ে প্রথমে পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য এশিয়া এবং ধীরে ধীরে আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের একটা বেশ বড় অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথমে খোলাফায়ে রাশিদীন, অতঃপর উমাইয়া খেলাফত ও আব্বাসীয় খেলাফত ইসলামের পতাকা নিয়ে যখন এশিয়া থেকে আফ্রিকার বিশাল প্রান্তরে চষে বেড়াচ্ছিল ঠিক তখনই ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এমন বিবিধ কারণের পাশাপাশি সর্বোপরি জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে মধ্য এশিয়ার স্তেপস তৃণাঞ্চল থেকে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে একটা যাযাবর জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে পড়তে থাকে যারা তুর্ক নামে পরিচিত। এরা ছিলে যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী।
তাছাড়া যে কোন পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে এরাই ছিলো সর্বোত্তম। এর প্রমাণও রয়েছে। পৃথিবীতে মোঙ্গলদের যে আগ্রাসনের কথা শুনলে আজও মানুষের গা শিউরে ওঠে তাকে একমাত্র এই তুর্কীরাই প্রতিহত করতে পেরেছিলো। এরা মূলত বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর অধীনে দাস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সেনাবাহিনীতে কর্মরত হতো। দ্রæত গতিতে শত্রæর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাদের পরাস্ত করার যে বিদ্যার জন্য মোঙ্গলরা এতোটা বিধ্বংসী হয়েছিলো তাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা এই তুর্কী জাতিরই ছিলো যারা ইতিহাসে মামলুক বা দাস নামে পরিচিত। আর এ কারণেই ভারতীয় উপমহাদেশ, আনাতোলিয়া এবং আফ্রিকার মামলুক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মোঙ্গলরা মূলত দাঁড়াতেই পারেনি।
আব্বাসীয়দের খেলাফত চলাকালীন আরও অনেক ইসলামী সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এদের কোন কোনটা যেমন আব্বাসীয়দের সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে তেমনি এর বাইরেও কোন কোন ইসলামী সাম্রাজ্য গড়ে উঠতে দেয়া যায়। যেমন, গজনভিদ সাম্রাজ্য। আর এই গজনভিদদের দ্বারা বিজিত ঘোর সাম্রাজ্য বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ইসলামে দীক্ষিত হয় এবং পরবর্তীকালে তারাই ইসলামের পতাকা নিয়ে মূলত দক্ষিণ এশিয়া সহ এশিয়ার একটা বিরাট অংশ তাদের ঘোড়ার খুড়ের নিচে নিয়ে আসে। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার এই বিরাট অঞ্চল যার অন্তর্ভুক্ত বর্তমান ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ইত্যাদি এই এলাকায় তুর্কী মামলুক, আফগান বিশেষ করে পশতুন ও তৈমুরীয় বংশের লোকদের শাসনই চালু হয়েছিলো। পরবর্তীতে এরাই ভারতীয়দের সাথে মিশে ইন্দো-তুর্কী, ইন্দো-আফগান ইত্যাদি জাতিসত্তার জন্ম দেয় যারাও শাসকগোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়। যেমন, খিলজিরা কিংবা শের শাহ সুরী ইত্যাদি।
সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মধ্য এশিয়ায় বেশ কিছু শক্তিশালী মুসলিম সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে সেলজুক সাম্রাজ্য, খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য। ১২০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে যখন মঙ্গোলিয়া থেকে চেঙ্গিস খান আর তার দলবল পঙ্গপালের মতো মধ্য এশিয়ার দিকে ছুটিতে শুরু করে লোকে তাদের সংখ্যা, ধ্বংস করার ক্ষমতা আর গতি দেখে প্রথমটায় ইয়াজুজ-মাজুজ ভেবে ভুল করেছিলো। সেই ঘোর কাটতে না কাটতে তাদের অনেক দিন লেগে যায়। আর ততদিনে চেঙ্গিস খানও তার মোঙ্গল বাহিনী নিয়ে খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের বারোটা বাজাতে সক্ষম হয়। পৃথিবীর ভাগ্য ভালো না মন্দ বলা কঠিন ১২২৭ সালে চেঙ্গিস খান মাত্র ৬৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। নইলে পৃথিবীর যে কি অবস্থা হতো তা বলা কঠিন। অবশ্য তার মৃত্যুর পর তার বংশধররা যেমন, ওগেদেই খান, মংকে খান, কুবলাই খান, হালাকু খান এবং তাদের বিখ্যাত সেনাপতি বাইজু নয়ন, সুবুতাই বা অনান্যরা যে ধ্বংসলীলা চালিয়ে ছিলো তা পৃথিবী আজও ভুলতে পারেনি।
কেন্দ্র তথা গ্রেট মোঙ্গল এম্পায়ারের শাসকদের চালানো ধ্বংসলীলার পাশাপাশি ইলখানাটের প্রধান হালাকু খান ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলো তা মানুষ আজও অত্যন্ত ভয়ের সাথে স্মরণ করে। তেমনি চাগাতাই খানাটের চাগাতাই খানের বংশধররা, গোল্ডেন হোর্ডের বাটু খান আর কেন্দ্র তথা গ্রেট মোঙ্গল এম্পায়ারের হালাকুর ভ্রাতা আরিক বোকেও কম যাননি। বাটু খান তো ইউরোপেও রাতারাতি ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো। যা হোক ১২৯৪ সালে কুবলাই খানের মৃত্যু হলেও সম্মিলিত গ্রেট মোঙ্গল সাম্রাজ্য টিকে ছিলো ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে মোঙ্গলরা তাদের প্রতিষ্ঠিত চীনের ইউয়ান ডাইনেস্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এশিয়ার মধ্যভাগে গড়ে ওঠা ইলখানাটে, চাগাতাই খানাটে এবং গোল্ডেন হোর্ডের দুই অংশ হোয়াইট হোর্ডে ও বøু হোর্ডের বলতে গেলে বেশীর ভাগই ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে মুসলমানদের সাথে মিশে যায়। মোঙ্গল তান্ডবে বিধ্বস্ত খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য, সেলজুক সাম্রাজ্য পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় দিল্লীর মুসলিম সালতানাত ও পরবর্তীতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
আফ্রিকায় মিশরের কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমীয় খেলাফত, আইয়ুবীয় সালতানাত এবং পরবর্তীতে শক্তিশালী মামলুক সালতানাত অনেক সোনালী ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিলো। সাইফ উদ্দীন কুতুজ, রুকনদ্দীন বাইবার্সের মতো মহান যোদ্ধারা আইন জালুতের প্রান্তরে মোঙ্গলদের পৃথিবী জয়ের স্বপ্নকেই ধূলিসাৎ করে দেয়। সবচেয়ে বড় কথা যে তুর্কীরা ছুটেছিল এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে, যে মোঙ্গলরা তাদের তাড়া করেছিলো ইসলামের মহান আদর্শের সুশীতল ছায়াতলে এসে তারাও একসময় সঠিক পথের দিশা পায়।
এই ছোট্ট আলোচনায় অনিবার্যভাবেই যাদের কথা না বললেই নয় তারা হলো বাইজান্টাইন ও ক্রুসেডার। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ছিলো তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী সাম্রাজ্য। খ্রিস্টের জন্মের পূর্বেই রোমে গড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে গ্রীসেও ছড়িয়ে পড়া এই গ্রেকো-রোমান সাম্রাজ্যের ওয়েস্টার্ণ অংশ পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকের সময়ে নরম্যানদের কবলে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এর পূর্বের অংশ অর্থাৎ এশিয়ার অংশ এর পরও প্রায় ১০০০ বছর টিকে ছিলো। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান সুলতান মোহাম্মদ আল ফাতিহ কন্সন্ট্যান্টিনোপল দখল করলে তাদের সর্বশেষ ঘাঁটিটুকুও শেষ হয়ে যায়।
ক্রুসেডাররা অবশ্য এসেছিল তারও আগে অর্থাৎ ১০৯২ থেকে ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে তারা প্রথম ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলো। এরপর একে একে প্রায় ২০০ বছর অর্থাৎ ১২৭১ কিংবা কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ১২৯১ পর্যন্ত পরিচালিত এই ধর্মযুদ্ধে উভয় পক্ষই অর্থাৎ খ্রিস্টান ও মুসলমান সম্প্রদায় উভয়ই অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করেছে। মুসলমানরা সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে ১১৮৭ সালে ৯২ বছর আগে অর্থাৎ ১০৯৫ সালে হারানো জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অবশ্য সালাউদ্দীনের পূর্বে ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মহান ভূমিকা রেখে গেছেন ইমাদ উদ্দীন জেঙ্গি এবং নুর উদ্দীন জেঙ্গি যারা মূলত ছিলো সেলুজকদের মামলুক সেনাপতি। জেঙ্গিদ সাম্রাজ্যের এই দুই মহান বীর ইতিহাসের পাতায় তাই অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। তাদের স্বপ্নের পূর্ণতা দিয়েছিলেন সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আইয়ুবী সাম্রাজ্য যার বিস্তার ছিলো আফ্রিকার মিশর থেকে পশ্চিম এশিয়ার লেভান্ত জুড়ে। পরবর্তীতে তাদের শাসকদের অযোগ্যতার কারণে তারা প্রথমে সেলজুক ও পরে মোঙ্গলদের পেটের মধ্যে চলে যায়। আর ধীরে ধীরে একসময় মহান অটোমান সাম্রাজ্য এগুলো পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়।
এশিয়ায় ইতিহাসের যে বিবর্তন তাকে ইসলামের ইতিহাসের বিবর্তনই বলি কিংবা অন্য কোন মিথস্ক্রিয়াই বলি তার অপূর্ণই থেকে যাবে একজনের কথা না বললে। তিনি তৈমুর লং। এশিয়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ধ্বংসলীলা চালানো ইতিহাসের সেরা বিধ্বংসী এই সামরিক শাসকের ছোবল থেকে ইসলামী সাম্রাজ্য কিংবা মোঙ্গল অথবা খ্রিস্টান সাম্রাজ্যের কিছুই রক্ষা পায়নি।
একটা কথা বাদ পড়ে গেছে। আর তাহলো এশিয়া যেমন বিস্তৃত তেমনি অদ্ভুত এর গ্রহণ করার ক্ষমতা। তাই আজও গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মানবজাতির সবচেয়ে বৈচিত্রময় এলাকাটির নাম এশিয়া। যেখানে ইউরোপ, আফ্রিকা কিংবা আমেরিকার জাতিগুলোর মধ্যে আজও তেমন কোন জাতিগত বৈচিত্র্য আসেনি সেখানে এশিয়া পর পর সমৃদ্ধ হয়েছে নানা জাতির সংমিশ্রণে। এর সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবন যাপনের বিশেষত্বের পাশাপাশি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও যে অদ্ভুত সংমিশ্রণ হয়েছে তা সত্যিকার অর্থেই মনোযোগ আকর্ষণের দাবী রাখে। ইউরোপ থেকে যে ক্রসেডাররা এসেছিলো তারা যখন বিদায় নেয় তাদের সবাই-ই যে ইউরোপে ফিরে গিয়েছিলো তাও কিন্তু নয়। কেউ কেউ এখানে রয়েও গেছে। আবার যারা রয়ে গেছে তাদের অনেকেই ইসলামকে গ্রহণ করেছে ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে। তারও আগের কথা যদি বলি ইস্টার্ণ চার্চ আর ওয়েস্টার্ণ চার্চের মধ্যে যে বিভাজন তাও খ্রিস্টান সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলো। পরবর্তীতে যখন প্রোটেস্ট্যান্টরা এলো সেটা আরও বেশী নাড়া দিলো। পাশাপাশি সেই পুরনো অর্থোডক্সরাতো ছিলোই। এসবের পরও সংখ্যায় অল্প হলেও নেস্টোরিয়ান কিংবা ইভানজেলিস্টরাতো রয়েছেই।
এসব কথা বললাম এ জন্যে যে খ্রিস্টানদের এই সবগুলো সম্প্রদায়ই, তা সে আকৃতিতে ছোট বড় যাই হোক, তাদের মিশনারী কার্যক্রমের মাধ্যমে পৃথিবীর এমন কোন ভূখন্ড বা দ্বীপ নেই যেখানে যায়নি। তাইতো একটু খেয়াল করলে দেখা যায় ভারতের পূর্বাঞ্চলের যে সাতটি প্রদেশ সেভেন সিস্টারস নামে পরিচিত সেখানকার দুর্গম অঞ্চলেও খ্রিস্টান জনসংখ্যার আধিক্যই দেখা যায়। কয়েকটি প্রদেশে তো শতকরা ৯০ ভাগের উপরে জনসংখ্যাই খ্রিস্টান। তারপর ধরা যাক আফ্রিকার কথা। মাগরেবের দেশগুলো বাদ দিলে অনেকগুলো সাব সাহারান কান্ট্রি ও আফ্রিকার নিচের দিকের অর্থাৎ দক্ষিণ দিকের দেশগুলোতে খ্রিস্টান জনসংখ্যার আধিক্যই দেখা যায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোও বাদ যায়নি। এই একটা জায়গায় মুসলমানরা আজও পিছিয়ে। সরাসরি ভূ-খÐ জয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর একটা বড় অংশ তারা শাসন করলেও মিশনারী কাজে তাদেরকে ব্যর্থই বলা যায়। অথচ মানবতার যে জয়গান তারা শিখেছিলো তাতে তাদেরই মানব সেবার এই মিশনে সবচেয়ে অগ্রগামী হওয়ার কথা ছিলো।
মুসলমানরা আরও একটা জায়গায় পিছিয়ে পড়েছিলো। আর তা হলো ফার্ডিনান্ড ম্যাগিলান, জেমস কুক, কলম্বাস প্রমুখ নাবিকরা যেমন সমুদ্র চষে বেরিয়েছিলো নতুন ভূখÐের সন্ধানে আর খুঁজে পেয়েছিলো আমেরিকার মতো সমৃদ্ধ ভূখন্ড যা আজও পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা পরাশক্তি সেক্ষেত্রে মুসলমান শাসকরা তখন নিজেদের মধ্যে হিংসা, হানাহানি, বিলাসী জীবন যাপনে মত্ত ছিলো। আর এর খেসারতও তাদেরকে দিতে হয়েছে অনেক বড় মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে।
ইউরোপে যখন রেঁনেসা হয়, কিংবা শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে তারা যখন আধুনিকতার চরম শিখরে উঠে যায় ইসলামী সাম্রাজ্যগুলো তখন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলেই ধুকতে থাকে। আর এভাবেই একসময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ তুরস্ক আধুনিক সময়ে এসে ইউরোপের রুগ্ন মানবে পরিণত হয়। হায়রে নিয়তি। সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারলে যে কতোটা পিছিয়ে যেতে হয় তা মুসলমানরা যখন টের পায় ততদিনে ইউরোপ, আফ্রিকা এমনকি এশিয়ারও অনেক ভূখন্ড তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
অনেক কথাই বলার থাকে। হয়তো এই বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে সেই সব অনেক কথার কিছু কিছু কথা আসবে তবু অনেক কিছুই যে বাদ পড়ে যাবে তাও নিশ্চিত। দেড় হাজার বছরের যে দীর্ঘ পরিক্রমা তা কি আর মাত্র দুটো মলাটের ভিতর আনা যায়। তবু শুরুর এই আলোচনায় কিছু কিছু চুম্বক অংশ তুলে আনার চেষ্টা করলাম।
মুসলমানদের সোনালী দিনগুলোতে তাদের সামরিক অভিযানে যে বহর ব্যবহৃত হত তা যখন কোথাও তাবু ফেলত তখন তার দৈর্ঘ্য হতো প্রায় ত্রিশ মাইল আর প্রস্থ হতো কম করে হলেও পাঁচ মাইল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অনেক শক্তিশালী ইসলামী সাম্রাজ্যই তাদের অধীনস্থ এলাকায় সেই মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেনি। ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উঠলে আমরা তাই শুধুমাত্র কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই শুনি। অর্থাৎ ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ড কিংবা আরও অনেক পৃথিবী কাঁপানো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাশ্চাত্যের বিধর্মী রাষ্ট্রে। শিক্ষার চেয়ে শক্তিশালী যে কিছু নেই পৃথিবীতে তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment