Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

আধুনিক যুগের যুদ্ধ এবং যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা যে রকম হতে পারে

যুদ্ধ সবসময়ই ধ্বংসাত্মক। তবে আধুনিক যুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি তা হলো অসামরিক লোকজনদের ক্ষয়ক্ষতির বাইরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।

আমরা যারা এই প্রজন্মের মধ্যে কিছুটা সিনিয়র তারা সেই ৯০’র দশকের ইরাক-ইরান যুদ্ধের সংবাদ শুনে প্রথম যুদ্ধ বিষয়ে অবগত হই বলেই মনে করি। ইরান এটাকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বলেই মনে করতো। এরপর উল্লেখ করতে হবে ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চলা দীর্ঘমেয়াদী ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা। এই যুদ্ধের কথা আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে জেনেছি।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখতে চাই ইরাক-ইরান যুদ্ধটা চলেছিলো ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়কালটাতে। ১৯৮৮ সালে যখন এই যুদ্ধটা শেষ হয় তখন আমার বয়স ১৬ বছর। বয়সটা অনেক কিছু বোঝার জন্যে যথেষ্ট হলেও শুধুমাত্র পত্র-পত্রিকার পাতায় যুদ্ধের খবর পড়ে আর ছবি দেখেই সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে। (কারণ তখনও সিএনএন বা আল জাজিরার মতো এতোটা সংবাদ পিপাসু মিডিয়া ছিলো না)। পরবর্তীতে অবশ্য এই অবস্থার পরিবর্তন আসে।

সে যা হোক ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে। আমেরিকা এই যুদ্ধে বেশ নাস্তানাবুদ হয়। পরবর্তীতে অবশ্য তারা আফগান যুদ্ধে রাশিয়াকে এর প্রতিশোধ ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু এর ফলাফল সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে মাঝখান দিয়ে আফগানিস্তানের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সময়কালটাতে চলা আফগান যুদ্ধ মূলতঃ আফগানিস্তানের মুজাহিদিনদের সাথে সে দেশের ক্ষুদ্র সমাজতান্ত্রিক সংগঠনের মধ্যকার লড়াই যাতে মুজাহিদিনদের পক্ষে আমেরিকার গোপন সাহায্যের হাত থাকলেও সমাজতান্ত্রিকের পক্ষে রাশিয়ার সাহায্য ছিলো বেশ সরবেই। তবে এ যুদ্ধও ইরাক ইরান যুদ্ধের সমসাময়িক। এ যুদ্ধের খবরাখবর আমরা পত্র পত্রিকার মারফতই পেতাম।

১৯৯০ সালে ইরাক যখন কুয়েত দখল করলো তখন ইরাকের হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করতে আমেরিকা “অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম” পরিচালনা করলেন। এ অভিযান চলেছিলো ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। তবে এটা বেশ সাড়া ফেলেছিলো। সেই যুদ্ধের কথাও আমরা জানতাম।

এসব পরিস্থিতি সবকিছু অতীতেই পড়ে রইলো। কিন্তু একটা নতুন মাত্রা পেলো যখন ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস হলো আর আল কায়েদা এর দায় স্বীকার করলো। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের ৭ই অক্টোবর আফগানিস্তান আক্রমণ করলো এই অজুহাতে। মূলত ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে এর প্রাথমিক পর্যায়ের পরিসমাপ্তি হলেও থেমে থেমে যুদ্ধ চলছিলো ২০২১ সাল পর্যন্ত যখন তালিবান আমেরিকাকে হঠাতে সক্ষম হলো।

ওদিকে ২০০৩ সালে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে বসলো যা মূলত ২০০৬ সালে সাদ্দাম হোসেনের ফাসির মাধ্যমে শেষ হয়েছিলো।

এদিকে ২০১১ সালে আইএস-এর ঘাঁটি থাকার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া আক্রমণ করে বসে। এখন ২০২২-এ এসেও এখানে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মাঝে মাঝে সংঘর্ষের কথা শোনা যাচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে আমরা যে কয়টি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করলাম তার প্রত্যেকটিতেই নারী, শিশু, বৃদ্ধ সহ বেসামরিক লোকজনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিক দিয়ে তালেবানদের আফগানিস্তান পুনরুদ্ধার এবং চলতি ইউক্রেন যুদ্ধ বেশ ব্যতিক্রম। এই দুটো যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ তেমন একটা নেই।

এদিকে একটা কথা না বললেই নয়। আফগানিস্তান ও ইরাকের পাশাপাশি অন্যান্য জায়গা থেকে ধৃত মুসলিম বিদ্রোহী যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গী (জঙ্গ বা যুদ্ধ থেকে কথাটার উৎপত্তি) বলে অভিহিত করেন তাদের গ্রেফতারের পর ২০০২ সালে বানানো গুয়ান্তানামো বে নামক সামরিক ঘাঁটিতে নির্মিত নির্মম কারাগারে বন্দী করে যে অমানবিক নির্যাতন করা হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার অযোগ্য। এর প্রায়শ্চিত্ত অলরেডি যুক্তরাষ্ট্রের শুরু হয়ে গেছে। দেশটি ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাশিয়া ও তার মিত্ররা এর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছে। ইউক্রেনের খাওয়া গণধোলাই এই মর্মে প্রথম শিক্ষা বলেই মনে হচ্ছে। এরপরেই তালিকায় আছে লিথুনিয়া, পোল্যান্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়তো আগামীতে এদের পরিণতিও বেঁচে থাকলে অনেকেই দেখতে পারবে।

আমেরিকার দুর্দিন মূলতঃ তখন শুরু হয়ে গিয়েছিলো যখন আফগানিস্তান থেকে তালেবানদের কাছে তাদের লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছিলো। পুরো পৃথিবী বুঝে গিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের দিন মোটামুটি শেষ হতে চলেছে। দিনে দিনে এ লক্ষণ আরও স্পষ্ট হতে চলেছে।

আমাদের আজকের আলোচনা এই সময়ের যুদ্ধ এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কেমন হতে পারে এর রূপরেখা। পুতিনকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনই মনে হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধে তার বিরুদ্ধে আঙুল তোলার সুযোগ বেশ কমই। তবে সবকিছুর পর যুদ্ধ যুদ্ধই। অনিচ্ছা সত্তে¡ও অনেক সময় এমন সব ক্ষয় ক্ষতি হয়ে যায় যা বলার অপেক্ষা রাখে না।


Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak