আনাতোলিয়ার পাহাড় আর তার মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে তাবু খাটিয়ে বসবাস করা তুর্কীদের অনেকগুলো গোত্রের মধ্যে একটা গোত্র ছিলো কাই গোত্র। গোত্রের গোত্রপতি সুলেইমান শাহ। তিনি একজন আল্লাহ্ ভীরু মানুষ। পার্থিব জগতে তার সম্বল একটি ঘোড়া, একখানা তরবারী আর একখানা ছোট খঞ্জর। এই সামান্য সম্বলটুকু নিয়েই তার ছোট গোত্রটাকে নিয়ে তিনি দ্বীনের রাস্তায় জীবন বিলিয়ে দিতে প্রত্যাশী। সন্তানদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন দুর্বলদের পক্ষে দাঁড়াতে। তার স্ত্রী হায়েমা হাতুন ও তার মতোই দ্বীনদ্বার আর পহেজগার। সত্য আর ন্যায়ের পথে সমান দৃঢ় একজন মানুষ।
ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রথমে তার বিয়ে হয়েছিলা এই গোত্রেরই গুনদুজ আলপ নামের একজনের সাথে। ধারণা করা হয় এই ঘরেই জন্মেছিল তার প্রথম পুত্র আর্তুগ্রæল গাজী। ইতিহাসে যিনি উসমানীয় খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা উসমানের পিতা। সুলেইমান শাহের ঘরে হায়েমা হাতুনের ছিলো তিন পুত্র- সুংগুরতেকিন, গুনদুগদু আর দুনদার। যেহেতু আর্তুগ্রæল ছিলো গোত্রপতি স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তান তাই গোত্রের লোকজনদের অনেকেই আর্তুগ্রæলকে তাদের গোত্রের সঠিক প্রতিনিধি মনে করতো না। বরং তারা তাদের ভবিষ্যৎ গোত্রপতি হিসেবে তাদের গোত্রপতি সুলেইমান শাহ ও হায়েমা হাতুনের পুত্র গুনদুগদুকে সঠিক উত্তরাধিকার মনে করতো। এতদ্বসত্তে¡ও গোত্রের অনেকেই আবার গুনদুজ আলপকে যেমন সম্মান করতো তেমনি আর্তুগ্রæলকেও ভালোবাসত। আর্তুগ্রæল ছিলো বীর যোদ্ধা। তার বেশ কয়েকজন ভালো বন্ধু ছিলো যারা তাকে প্রাণের চাইতেও বেশী ভালবাসত। এমনকি আর্তুগ্রæল মারা যাওয়ার পরও এদের কেউ কেউ যারা বেঁচেছিলো তারা তার পুত্র উসমানের হয়ে লড়াই করেছে।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে আর্তুগ্রæল যখন তার ছোট্ট বাহিনীটা নিয়ে একটা জায়গা দিয়ে অতিক্রম করছিলো তখন তার নজরে পড়ে যায় যে দু’টো বাহিনীর মধ্যে তুমল যুদ্ধ হচ্ছে। আর্তুগ্রæল দেখলো একটা বাহিনী প্রায় পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তিনি তার বাহিনী নিয়ে পরাজিতদের পক্ষে দাঁড়ালেন। যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলো। আর্তুগ্রæল জানতে পারলেন তিনি যাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তারা রুমের সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের বাহিনী। মোঙ্গলদের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে তার বহিনী যখন হেরেই যাচ্ছিল তখন আর্তুগ্রæলের বীরত্বের কারণেই বিজয় এসেছে। আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাকে দরবারে ডাকলেন। রাতের খাবার খেতে খেতে প্রস্তাব দিলেন সেলজুক সাম্রাজ্যের বাইজান্টাইন সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে আর্তুগ্রæল যদি তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান নেয় তাহলে একদিকে তার বীরত্বের কারণে সেলজুকদের সীমান্তটাও যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি এই এলাকায় বাইজান্টাইন সৈন্যরা মুসলমান ও খ্রিস্টান নির্বিশেষে দরিদ্র মানুষের উপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে তারও একটা ফয়সালা সে করতে পারবে।
ইতিহাস এখান থেকেই তার বাঁক নেয়। ভাসমান কাই গোত্রটি তখন যে এলাকায় অবস্থান করছিলো তা ছিলো আইয়ুবী সাম্রাজ্যের অধীন। উক্ত সাম্রাজ্যের কিছু উচ্চাভিলাসী কর্মকর্তার কারণে তাদের খারাপ দৃষ্টিতে পড়েন আর্তুগ্রæল। আর এ কারণেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি তার দলবল নিয়ে আলাউদ্দিন কায়কোবাদের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী সোগুত অঞ্চলে চলে যাবেন। তার এই চলে যাওয়া এতোটা সহজ ছিলো না। কারণ গোত্রের অনেকেই এটা মানতে পারেননি। তিনি মাত্র গুটি কয়েক লোকজন যারা শেষ পর্যন্ত তাকে পরিত্যাগ করেনি তাদেরকে নিয়েই অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। দুর্গম আর বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে তারা অবশেষে সোগুত পৌঁছান। আর এখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন যাত্রা।
তার মৃত্যুর পর তার পুত্র উসমান তার জীবদ্দশায় ২৫ হাজার বর্গমাইল এলাকার মতো একটা অঞ্চলে তার ছোটখাট একটা রাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হন। ওসমানের মৃত্যুর পর তার পুত্র ওরহান পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। এই ওরহানের হাতেই মূলতঃ সত্যিকার অর্থে সাম্রাজ্যের বিকাশ শুরু হয়। দীর্ঘ অবরোধের মাধ্যমে ওরহান বাইজান্টাইনদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি বুরসা দখল করতে সক্ষম হন। এটাই সোগুতের পর উসমানীয়দের রাজধানীতে পরিণত হয়। ওরহানের সাফল্যের কারণে তৎকালীন বাইজান্টাইন সম্রাট তার এক কন্যাকে ওরহানের সাথে বিবাহ দিতে রাজী হন। এভাবেই শুরু হয় অটোমানদের অগ্রযাত্রা। ৮১ বছর বয়সে ১৩৬২ সালে ওরহানের যখন মৃত্যু হয় ততদিনে সাম্রাজ্যের ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত হয়ে গেছে। প্রশস্ত কাধের অধিকারী রক্তবর্ণের ওরহান ছিলেন বীর যোদ্ধা।
ওরহানের মৃত্যুর পর তার পুত্র মুরাদ ক্ষমতায় বসেন। তিনিই ইতিহাসে প্রথম মুরাদ নামে পরিচিত। তার শাসনকাল ছিলো ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রথম বায়েজিদ ক্ষমতায় বসেন । ইতিহাসে তিনি বায়োজিদ দ্য থান্ডারবোল্ট নামে পরিচিত। তাকে বজ্রের সাথে তুলনা করা হতো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ১৪০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আঙ্কারার যুদ্ধে এশিয়ার আর এক বিজেতা তৈমুর লংয়ের কাছে পরাজিত হন। তার সাম্রাজ্যে অস্থিরতা নেমে আসে যা প্রায় পরবর্তী এক যুগ ধরে চলে। ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র প্রথম মুহাম্মদ ক্ষমতায় বসে সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল করতে সক্ষম হন। তিনি ১৪২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর তার পুত্র দ্বিতীয় মুরাদ ক্ষমতায় বসেন।
তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তারপর তিনি অবসর নেন। ক্ষমতায় বসান তার তরুণ পুত্র দ্বিতীয় মুহাম্মদকে। এই দ্বিতীয় মুহাম্মদই কন্সট্যান্টিনোপল জয় করেছিলেন। তবে প্রথমবারে তা সম্ভব হয়নি। প্রথমবার ক্ষমতায় বসে অস্থিরমতি যুবক মুহাম্মদ মাত্র দু’বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর সাম্রাজ্য সামলাতে পুণরায় স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন দ্বিতীয় মুরাদ। এ যাত্রায় তিনি ১৪৪৬ থেকে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। আর ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় বসে মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দেই কন্সট্যান্টিনোপল জয় করে পুরো পৃথিবীকে অবাক করে দেন। সেই সাথে সাথে পূর্ণ হয় নবী করিম (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বানী। মুসলমানরা এর আগেও বহুবার অর্থাৎ খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে শুরু করে উমাইয়া খেলাফত, আব্বাসীয় খেলাফত, এমনকি উসমানীয় খেলাফতের সময়কালেও অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভেদ্য দুর্গের নগরী কন্সট্যান্টিনোপল জয় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সেই মহান ও পবিত্র কর্মটি ২১ বছরের তরুণ দ্বিতীয় মুহাম্মদের দ্বারা আল্লাহ সম্পাদন করালেন। এই যুদ্ধে বীর যোদ্ধা হাসান উলুবাতালিয়ার অসীম বীরত্ব ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। অমর হয়ে আছে সেই খ্রিস্টান কামান বিশেষজ্ঞ যার বানানো কামান দ্বারা কন্সট্যান্টিনোপলের দুর্গের দুর্ভেদ্য থিওডোসিয়াস দেয়াল ভাঙ্গা সম্ভব হয়েছিলো তার কথা। বিজয়ের পর মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর নাম রাখলেন ইসলামবুল। বর্তমানে যা ইস্তান্বুল নামে পরিচিত।
উসমানীয়দের ইতিহাস দীর্ঘ। ৩৬ জন শাসকের ৬২৫ বছরের শাসনকাল যা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহাল ছিলো।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment