Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

সাসানিদ-রোমান দ্ব›দ্ব এবং ইসলামের বিস্তারে এর প্রভাব

পবিত্র কুরআনের সুরা আর রূমের ১ থেকে ৬ আয়াতের মধ্যে পারস্যের অগ্নি উপাসকদের দ্বারা “পিপল অব দ্যা বুক” অর্থাৎ কিতাব প্রাপ্ত রোমকদের পরাজয় এবং অতি শীঘ্রই তারা যে বিজয় লাভ করবে এ ব্যাপারে আল্লাহ্র তরফ থেকে নবী করিম (সাঃ) কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে মুসলমানদেরকেও বিজয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, “আর সেই দিন মু’মিনরা আনন্দিত হবে, আল্লাহ্র সাহায্যে।”
প্রথমে পারস্যের সাসানিদ সম্রাট খসরু পারভেজ কর্তৃক রোমকদের শোচনীয় পরাজয় এবং পরবর্তীতে রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস কর্তৃক পুণরায় খসরুকে পরাজিত করে সাম্রাজ্যের উদ্ধার পর্বটি মোটামুটি ৬০২ থেকে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত এক দীর্ঘ সময়ের সংঘটিত ঘটনাক্রম। কিন্তু এই ঘটনাপ্রবাহের সাথে ইসলামের বিস্তার এবং বিকাশের একটা গভীর এবং আত্মিক যোগ রয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে এই ঘটনাপ্রবাহ আলোচনা করে এর গভীর মমার্থ উপলব্ধি করার চেষ্টা করবো।
মহানবী (সাঃ)-এর নবুয়ত প্রাপ্তিরও আট বছর আগে অর্থাৎ ৬০২ খ্রীষ্টাব্দে রোম সম্রাট মরিস তারই অনুগত ফোকাস কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন। ফোকাস শুধু মরিসকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হননি তার সম্মুখে তার পাঁচ পুত্রকে শিরচ্ছেদ করেন এবং সম্রাট মরিসকেও মৃত্যুদন্ড দেন। কিছুদিন পর তার সম্রাজ্ঞী এবং তিন কন্যাকেও মৃত্যুদÐ দেন।
এ ঘটনা তৎকালীন প্রভাবশালী পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজকে রোম সাম্রাজ্য আক্রমণের একটা যৌক্তিক ভিত্তি এনে দেয়। মূলতঃ এর সাথে খসরু পারভেজের একটা ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতাবোধও যুক্ত ছিলো। কারণ সম্রাট মরিসের সহযোগিতায়ই তিনি মূলত পারস্যের সম্রাট হয়েছিলেন। খসরু পারভেজ তার এই ঋণের কথা ভুলে যাননি। তিনি তার এবং তার পরিবারের এই নৃশঃস হত্যাকাÐের চরম প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৬০৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তিনি একদিকে এশিয়া মাইনরের এডেসা যা বর্তমানে উর্ফ নামে পরিচিত এবং অন্যদিকে সিরিয়ার এন্টিয়ক পর্যন্ত বিজয় করতে সক্ষম হন। ফোকাসের মন্ত্রীরা যখন দেখলো যে ফোকাস দেশকে রক্ষা করতে পারবে না তখন তারা আফ্রিকার গভর্নর হেরাক্লিয়াসকে সম্রাট নির্বাচিত করেন। হেরাক্লিয়াস ফোকাসের প্রতি সেরকম আচরণই করেন যেমনটা সে মরিসের সাথে করেছিলো। আর এসব ঘটনা ঘটেছিলো ৬১০ খ্রীষ্টাব্দে অর্থাৎ ঠিক সেই বছর যে বছর আমাদের মহানবী (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
খসরু নতুন সম্রাটের সাথে চুক্তিতে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। হেরাক্লিয়াস খসরুর এই অভিযান সামলাতে ব্যর্থ হন। ৬১৩ খ্রীষ্টাব্দে দামেস্ক এবং ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম খসরুর হস্তগত হয়। খসরুর জেরুজালেম আক্রমণে খ্রিস্টানদের রক্তের বন্যা বয়েছিলো। ৯০ হাজারেরও অধিক খ্রিস্টান নিহত হয় এবং তথাকথিত প্রধান ক্রস (খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মতে যে ক্রুশ দ্বারা বিদ্ধ করে যিশুকে হত্যা করা হয়!) তা খসরু নিয়ে যান। নগরীর সমস্ত গীর্জা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। প্রধান পুরোহিতকে বন্দী করা হয়। এই সময় খসরু দম্ভ ভরে হেরাক্লিয়াসকে এক চিঠিতে লেখেন, “যদি তোমাদের স্রষ্টা এতই শক্তিশালী হয় তাহলে সে আমার হাত থেকে তোমাদের জেরুজালেমকে রক্ষা করলেন না কেন?” পরবর্তী এক বছরের মধ্যে খসরু জর্ডান, ফিলিস্তিন সমস্ত সিনাই উপদ্বীপ দখল করে মিশর সীমান্তে পৌঁছে যান।
ঠিক এসময় কালে মক্কার মুসলমানরা কাফেরদের সাথে দ্ব›েদ্ব লিপ্ত ছিলো। ৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে মুসলমানদের একটি দল খ্রিস্টান শাসিত হাবাস রাজ্যে আশ্রয় নেন যা ছিলো বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের একটি বন্ধু রাষ্ট্র। তখন মক্কার কাফেররা মুসলমানদের প্রায়শই বলত পারস্যের অগ্নি উপাসকরা যেমন খ্রিস্টানদের নিশ্চিহ্ন করবে সেভাবে আমরাও তোমাদের নিচিহ্ন করবো। আর এরকম প্রেক্ষাপটেই আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সুরা রূম নাজিল করেছিলেন। আল্লাহ্ এই সুরার মাধ্যমে অচিরেই রোমানদের পাশাপাশি মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার সুসংবাদ দান করলেন। তখন হযরত আবুবকর (রাঃ) বাইজান্টাইনদের বিজয়ের উপর ৮ বছরের একটি বাজী ধরেন (ইসলামে তখনও বাজী নিষিদ্ধ হয়নি)। পর পর প্রায় ৮ বছর পার হয়ে গেলো। রোমান কিংবা মুসলমান কারোরই বিজয়ের লেশমাত্র দেখা গেলো না। বরং উভয় দলই মার খেতে খেতে এমনভাবে কোনঠাসা হতে লাগলো যে বিজয়ের আশাই ক্রমশঃ মøান হয়ে যাচ্ছিলো। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে মিশর পারসিকদের হস্তগত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে ৬১৭ খ্রিস্টাব্দেই খসরু বসফরাসের অপর তীরে এসে হাজির হন এবং সম্রাট হেরাক্লিয়াসকে আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন। নিরুপায় সম্রাট কনস্ট্যান্টিনোপল ত্যাগ করেন এবং কার্থেজে আশ্রয় নেন যা বর্তমান তিউনিস নামে পরিচিত।
এ সময় আবু বকর (রাঃ) তার বাজীর সময়কাল ১০ বছর বৃদ্ধি করেন এবং উটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০ তে নেওয়া হয়। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। একই সময় হেরাক্লিয়াসও গোপনে কৃষ্ণ সাগর পাড়ি দিয়ে ট্র্যাবজনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আর্মেনিয়া আক্রমণের মধ্য দিয়ে পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমন শুরু করেন। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আজারবাইজান আক্রমন করেন এবং কোরুমিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম হন যেখানে অগ্নি উপাসকদের প্রধান উপাসনালয় অবস্থিত ছিলো।
আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ঐ একই বছর বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা কাফেরদের বিরুদ্ধে ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় লাভ করতে সক্ষম হয়। আর এভাবেই পবিত্র কোরআনে বর্ণিত উভয় ভবিষ্যদ্বানী মাত্র দশ বছরের মধ্যেই সত্যে পরিণত হয়। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইনরা নিনেভের যুদ্ধে পারসিকদের সবচেয়ে বড় আঘাতটি করে। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে খসরু পারভেজ এবং তার ১৮ জন পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হয়। হেরাক্লিয়াসের বিজয় রথ অব্যাহত থাকে। খসরুর পুত্র কোবাদ জেরুজালেমের মূল গীর্জায় হলিক্রস স্থাপন করেন।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak