Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

উমাইয়া খেলাফত

৬৬১ খ্রিস্টাব্দে হযরত আলী (রাঃ)-এর শাহাদাত বরণের পর ঐ বছর তার জ্যৈষ্ঠ্য পুত্র হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) খেলাফতের দায়িত্ব পান। কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই সিরিয়া থেকে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলে যুদ্ধের আশংকা দেখা দেয়। মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই এড়াতে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) এক শান্তিচুক্তিতে সম্মত হন এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর হাতে খেলাফতের দায়িত্ব তুলে দেন। আর এভাবেই প্রথমে মদীনা, তারপর কুফা ও অবশেষে উমাইয়াদের হাত ধরে দামেস্কে মুসলমানদের খেলাফত স্থানান্তরিত হয়। হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রথম ইয়াজিদ খেলাফতের দায়িত্ব নেন। যদিও ঐতিহাসিকগণ এ কথাই বলেন হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)-এর সাথে কৃত চুক্তি অনুযায়ী হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর খলিফার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল।
প্রথম ইয়াজিদ ক্ষমতায় ছিলেন ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অতঃপর ক্ষমতায় আসে তারই পুত্র দ্বিতীয় মুয়াবিয়া। তিনি মাত্র বছর খানেক ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর ৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় আসেন প্রথম মারওয়ান। তিনিও মাত্র বছর খানেক ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর তার স্থলাভিষিক্ত হন তারই পুত্র আব্দুল মালেক। আর এভাবেই সুফিয়ানিদ ডাইনেস্টির পর মারওয়ানের হাত ধরে মারওয়ানিদ ডাইনেস্টির সূত্রপাত হয়। আব্দুল মালেক ক্ষমতায় ছিলেন ৬৮৫ খ্রি. থেকে ৭০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অতঃপর তার দুই পুত্র প্রথম আল ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রিস্টাব্দ) এবং সুলেইমান (৭১৫-৭১৭ খ্রিস্টাব্দ) ক্ষমতায় ছিলেন।
অতঃপর ৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় আসেন উমর বিন আব্দুল আজিজ। ইতিহাসে যিনি দ্বিতীয় উমর হিসেবে খ্যাত হয়ে আছেন। সম্ভবতঃ তাকেই উমাইয়াদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ৭২০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হলে দ্বিতীয় ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেন এবং ৭২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। অতঃপর আব্দুল মালিকের আর এক পুত্র হিসাম ক্ষমতায় বসেন। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ৭২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অতঃপর ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় ইয়াজিদের পুত্র দ্বিতীয় আল ওয়ালিদ যিনি ৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। অতঃপর তৃতীয় ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেন এবং মাত্র কয়েকমাস ক্ষমতায় থাকেন।
এরপর ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় আল ওয়ালিদের পুত্র ইব্রাহিম। তিনিও মাত্র কয়েক মাস ক্ষমতায় ছিলেন। অতঃপর ঐ বছরই অর্থাৎ ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মারওয়ান যিনি দ্বিতীয় আল ওয়ালিদের পুত্র ক্ষমতায় বসেন এবং ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে যাব নদীর যুদ্ধে আস-সাফফাহর কাছে পরাজিত হয়ে মিশরে পলায়ন করেন এবং সেখানে নিহত হন। আর এভাবেই উমাইয়া খেলাফতের পরিসমাপ্তি হয় এবং আস-সাফফাহর হাত ধরে সূত্রপাত হয় আব্বাসীয় খিলাফতের।
উমাইয়া খেলাফতের সময় ইসলামী সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার হয়। রাষ্ট্র ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়। বেশ কয়েকজন শক্তিশালী শাসকের নেতৃত্বে মুসলমানরা অনেক যুদ্ধেও জয়লাভ করে। উমাইয়া শাসনামলের অজ¯্র উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটি হলো কন্সন্ট্যান্টিনোপলের অবরোধ যা হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর সময় ৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল। এই অবরোধে মহানবী (সাঃ)-এর অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী বয়োবৃদ্ধ হযরত আবু আইয়ুব আল আনসারী (রাঃ) অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবরোধ চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ ৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কন্সন্ট্যান্টিনোপলের দূর্গের বাইরে বিখ্যাত থিওডেসিয়াস দেওয়ালের কাছাকাছি একটা জায়গায় তাকে সমাহিত করা হয়। নবী (সাঃ)-এর প্রতিশ্রæতি পূরণ অর্থাৎ হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী “একদিন কন্সন্ট্যান্টিনোপাল বিজীত হবে” এই প্রতিশ্রæতি পূরণের জন্য তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়সেও এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। আজও সেখানেই অর্থ্যাৎ বর্তমান ইস্তাম্বুলে তার রওজা মোবারক বিরাজমান।
উমাইয়াদের সামরিক বিজয়ও উল্লেখ করার মতো। তাদের শাসনামলেই কেন্দ্র পরিচালিত ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম একক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে যা তিনটি মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিলো। তারা ককেশাস, ট্রান্স-অক্সিয়ানা, মাগরেব, আল-আন্দালুস, সিন্ধ ইত্যাদি এলাকা তাদের দখলে আনেন। ইসলামিক সাম্রাজ্য বিস্তারে তাদের অবদান অত্যন্ত মর্যাদার সাথে স্মরণ করা হয়।   
উমাইয়া খিলাফত (৬৬১-৬ই আগস্ট ৭৫০):
প্রথম মুয়াবিয়া (৬৬১-৬৮০)
প্রথম ইয়াজিদ (৬৮০-৬৮৩)
দ্বিতীয় মুয়াবিয়া (৬৮৩-৬৮৪)
প্রথম মারওয়ান (৬৮৪-৬৮৫)
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (৬৮৫-৭০৫)
প্রথম আল-ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫)
সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক (৭১৫-৭১৭)
দ্বিতীয় উমর (৭১৭-৭২০)
দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪)
হিশাম ইবনে আবদুল মালিক (৭২৪-৭৪৩)
দ্বিতীয় আল-ওয়ালিদ (৭৪৩-৭৪৪)
তৃতীয় ইয়াজিদ ৭৪৪
ইবরাহিম ইবনুল ওয়ালিদ ৭৪৪
দ্বিতীয় মারওয়ান (৭৪৪-৭৫০)


Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak