৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন মহানবী (সাঃ)-এর ইন্তেকাল হলে মুসলিম জাহানের জন্যে একজন নেতা নির্বাচন করা জরুরী হয়ে পড়ে। মূলত মহানবী (সাঃ) শেষ নবী হওয়ায় এটা কোন ধর্মীয় পদ বলে তখনও গণ্য হয়নি, এখনও হচ্ছে না এমনকি ভবিষ্যতেও হবে না। খলিফা মূলত মুসলমান সমাজকে পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব দানকারী একটি পদ বৈ আর কিছু নয়। তবে তাকে হতে হয় মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য। মহানবী (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তার হিজরতের সঙ্গী সবচেয়ে বরকতময় সাহাবী হযরত আবু বকর (রাঃ) সর্বসম্মতিক্রমে খলিফা বা নেতা নির্বাচিত হন। তিনি মাত্র দু’বছর এই দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে খেলাফতের দায়িত্ব পান ইসলামকে প্রকাশ্যে প্রচারের জন্যে যার কৃতিত্ব সবচাইতে বেশী এবং আল্লাহ্র নবী (সাঃ) ইসলামের শক্তিবৃদ্ধির জন্যে যাকে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে চেয়েছিলেন সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর মনোভাবের অধিকারী হযরত উমর ফারুক (রাঃ)। তার খেলাফতের সময়কাল নিয়ে আলোচনার পূর্বে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সংক্ষিপ্ত খেলাফত নিয়ে সামান্য একটু আলোচনা করতে চাই।
মহানবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর অস্থিরমতি আরবরা বিশেষ করে বেদুঈন সমাজ পুণরায় পৌত্তলিকতায় ফিরে যেতে শুরু করে। এটাই ইসলামের জন্য সর্বপ্রথম বিপর্যয়। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভন্ড নবীর আবির্ভাব হতে শুরু করে। সদ্য মুসলমান হওয়া আরবরা যাদের তখনও ইসলামের বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান হয়নি তারা এতে বিব্রত হতে শুরু করে। পুরো আরব উপত্যাকায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনেকে যাকাত দিতেও অস্বীকার করে বসে। ইসলামকে রক্ষা করতে হযরত আবু বকর (রাঃ) শক্ত পদক্ষেপ নিতে হয়। লিপ্ত হতে হয় যুদ্ধে। এই যুদ্ধ রিদ্দার যুদ্ধ নামে পরিচিত। আল্লাহ্র অশেষ কৃপায় তিনি পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। আরব উপত্যাকায় পুণরায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সংক্ষিপ্ত খেলাফতকাল এভাবেই অতিবাহিত হয়ে যায়। তবে এই অতি অল্প সময়ের দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি অন্যান্য বিষয়েও যে একদম নজর দেননি তা নয়। ৬৩৩ খ্রি. এর ১৮ই মার্চ অর্থাৎ যেদিন হিজরতের ১২তম বছর পূর্ণ হয় তার আগেই আল্লাহ্র অসীম কৃপায় আল্লাহ্র তরবারী বা সাইফুল্লাহ খ্যাত হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এবং অন্যান্য মুসলিম বীরদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার ফলে তিনি আরব উপত্যাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। বিদ্রোহ দমনের পর পরই তিনি নতুন ভূখন্ড জয়ের দিকে নজর দেন। তিনি সর্বপ্রথম ইরাকের দিকে নজর দেন। সাসানীয়দের দ্বারা শাসিত ইরাক ছিলো তৎকালীন সময়ের অন্যতম সমৃদ্ধ ও ধনী প্রদেশ। তিনি সেখানে ইসলামের মহান বীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের (রাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলমান সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। এর পাশাপাশি তিনি তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের অধীন সিরিয়া জয়ের উদ্দেশ্যে ৪টি পৃথক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু আশানুরূপ সাফল্য লাভ হয়নি। ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের মহান বীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ইরাক জয় করে সিরিয়ায় গমন করলে সেখানে তার নেতৃত্বে কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হয়। মুতার যুদ্ধের চতুর্থ সেনাপতি যার হাতে একই যুদ্ধে আটটি তরবারী ভেঙ্গে ছিলো এবং নবম তরবারী হাতে নিয়ে যুদ্ধ জয় করে ফিরেছিলেন সেই মহান বীর খালিদ বিন ওয়ালিদের অপ্রতিরোধ্য বীরত্বে এভাবে একের পর এক বিজয় লাভ হয় আর তার মহান বীরত্ব গাঁথা চারিদিকে বাতাসের মতো হু হু করে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত আবু বকর (রাঃ) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র সান্নিধ্যে পরপারে চলে যান। খেলাফতের দায়িত্ব এসে পড়ে হযরত উমর (রাঃ)-এর উপর যার উপাধি ছিলো ফারুক। তার খেলাফতের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামের বিজয়রথ বিদ্যুতের গতিতে ছুটতে থাকে। একের পর এক এলাকা ইসলামের পতাকা তলে আসতে শুরু করে।
তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর শুরু করা সাসানীয় ও বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে অভিযানের পাশাপাশি মিশরেও অভিযান শুরু করেন। এসব এলাকাগুলোতে বাইজান্টাইন ও সাসানিয়রা দীর্ঘ দিন ধরে যুদ্ধ করে বলতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। তাই মুসলমানরা অতি দ্রæত এসব এলাকাগুলো জয় করে নিতে সক্ষম হয়। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই মুসলমানরা সমগ্র মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন দখল করে নিতে সক্ষম হয়। ৬৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা মিশর জয়ে সক্ষম হয় এবং ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইরাক এবং পারস্য বা ইরান সহ সমগ্র সাসানীয় সাম্রাজ্য দখল করতে সক্ষম হয়। আর এভাবেই তিনি তার খেলাফতের সময়কালে মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট ভূখন্ড করতে সক্ষম হন।
তিনি ইসলামিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করতে সক্ষম হন যাতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দকে ১ম হিজরি ধরে গণনা করা হয়। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে প্রশাসনিক দপ্তর যা মূলত দেওয়ান নামে পরিচিত স্থাপন করেন। তিনি সামরিক বাহিনীকে রাষ্ট্রের অধীন করেন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক এদের বেতন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি বিজিত এলাকার জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং জীবন ব্যবস্থায় সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ না করে বরং তাদের জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একজন শাসক বা আমির এবং আর্থিক কর্মকর্তা যিনি আমিল নামে পরিচিত নিযুক্ত করেন।
তিনি সাহাবাদের (রাঃ) পেনশনের ব্যবস্থা করেন যাতে তারা খেয়ে পরে জীবন ধারণ করতে পারেন এবং বিজিত এলাকাগুলোতে মানুষকে ইসলামের মহান শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। উমর (রাঃ)-এর সময়ের অন্যতম আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং তার স্থলে আবু উবায়দাহ (রাঃ) কে দায়িত্ব প্রদান। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে এই ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে হযরত উমর (রাঃ)-এর যুক্তি ছিলো খালিদের ক্রমাগত বিজয়ে মানুষের মধ্যে এরকম একটা ধারণা জন্মাতে শুরু করেছিলো যে শুধুমাত্র তার কারণেই মুসলমানরা একের পর এক বিজয়ী হচ্ছে। হযরত উমর (রাঃ) মানুষের এই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যেই তাকে সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র সান্নিধ্যে চলে যান।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছিলো উহুদের যুদ্ধ যা ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিলো। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মুতার যুদ্ধের কঠিন পরিস্থিতিতে মহানবী (সাঃ) ঘোষিত পর পর তিনজন সেনাপতির সবাই নিহত হলে চতুর্থ সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের দায়িত্ব নেন এবং বিজয় লাভে সক্ষম হন। এই যুদ্ধে বিজয় মুসলমানদেরকে আরব উপদ্বীপে একটি প্রকৃত শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। মক্কার কাফেররা মুসলমানদের সামরিক শক্তিতে এতোটাই ভীত হয় যে মহানবী (সাঃ) বিনা বাধায় তার জন্মভূমি মক্কা বিজয়ে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তিনি হুনাইনের কঠিন যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। আগেই উল্লেখ করেছি রিদ্দার যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অতঃপর ইরাক জয়ের পর সিরিয়া জয়ের জন্য অগ্রসর হন। সেখানে উমর (রাঃ)-এর খেলাফত কালে প্রায় আড়াই বছর অজ¯্র যুদ্ধে জয়লাভ করে বিশাল ভূখÐে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করতে সক্ষম হন। তার তামান্না ছিলো শহীদ হওয়ার কিন্তু তার এই ইচ্ছে পূরণ না হওয়ায় তিনি সব সময় আফসোস করতেন। কিন্তু তাকে যখন জানানো হলো তিনি হলেন সাইফুল্লাহ বা আল্লাহ্র তরবারী আর আল্লাহ্র তরবারী কখনও ভাঙ্গতে পারে না তাই তার পক্ষে শহীদ হওয়া সম্ভব নয় তখন তার অন্তর কিছুটা হলেও সান্তনা পেয়েছিল। ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হলে তাকে সিরিয়ার হোমসে দাফন করা হয়।
৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর শাহাদাতের পর খেলাফতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন জুননুরাইন খ্যাত হযরত উসমান ইবন আফফান (রাঃ)। তিনি ছিলেন মক্কার প্রভাবশালী ও সম্পদশালী বনু উমাইয়া গোত্রের সদস্য। তার সময়কালে বাইজান্টাাইনরা মুসলমানদের দখলকৃত দুর্গগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে তিনি তা প্রতিহত করেন। তার নির্দেশে ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার আমির হযরত মুয়ারিয়া (রাঃ) আনাতোলিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং তুরস্কের টরাস পর্বত পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বিস্তারে সক্ষম হন। তার আমলেই হযরত মুয়ারিয়া (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে পরিচালিত একের পর এক অভিযানের কারণে শেষ পর্যন্ত বাইজান্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় কতস্ট্যান্স হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর সাথে এক চুক্তিতে উপনীত হতে বাধ্য হন। মুসলিম নৌবাহিনী উল্লেখযোগ্য শক্তিমত্তা অর্জনে সক্ষম হয়। খেলাফতের শেষের দিকে তিনি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সন্ট্যান্টিনোপল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু ততদিনে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ-এর নেতৃত্বে তার অসীম সাহসী যোদ্ধা হাসান উলুবাতালিয়ার অসমান্য বীরত্বের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা বহু আকাক্সিক্ষত কন্সন্ট্যান্টিনোপল বিজয়ে সক্ষম হন। বর্তমানে এটি ইস্তান্বুল নামে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত উসমান (রাঃ) করুণভাবে শাহাদাত বরণ করলে খেলাফতের দায়িত্ব আসে পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলামের দাওয়াত গ্রহনকারী মহানবী (সাঃ) এর চাচাত ভাই এবং জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ)-এর উপর। তিনি যদিও প্রথম দিকে এই দায়িত্ব নিতে রাজী হননি কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবং সবার চাপে বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের কারণে সৃষ্ট ফিৎনা যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ফিৎনা হিসেবে পরিচিত তার কারণেই পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক ছিলো না। তখনও মদীনার রাস্তায় রাস্তায় উসমান (রাঃ)-এর হত্যার সাথে জড়িত বিদ্রোহীরা ঘোরাফেরা করছিলো।
এমতাবস্থায় তালহা (রাঃ) এবং জোবায়ের (রাঃ) এর মতো সাহাবাদের একটা অংশও তাকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের বিচারের জন্য চাপ দিতে থাকে। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকাও (রাঃ) তাদের সমর্থন করেন। অবশেষে ষড়যন্ত্রকারীদের কূটচালে মুসলমানরা এক ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। উষ্ট্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে হাজার হাজার মুসলমান নিহত হয় যার মধ্যে অনেক সাহাবাও (রাঃ) ছিলেন। যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ)-এর বিজয় লাভ হয়। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন। যুদ্ধের পরবর্তী সময় দুটি পৃথক ঘটনায় হযরত তালহা (রাঃ) ও হযরত জোবায়ের (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন যা ছিলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তারা দুজনই মহানবী (সাঃ)-এর ঘোষিত আশারায় মোবাশ্বারা বা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এদিকে তৎকালীন সিরায়ার গর্ভনর হযরত মুয়াবিয়াও (রাঃ) হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচার দাবী করেন এবং বিচার না হওয়া পর্যন্ত হযরত আলী (রাঃ)-এর হাতে খেলাফতের বায়াত হতে অস্বীকার করেন। তার সাথে যুক্ত হন তৎকালীন মিশরের গর্ভনর হযরত উমর ইবনুল আস (রাঃ)। তারা হযরত আলী (রাঃ)-এর সংস্কার কর্মসূচীর অধীনে পাঠানো ফরমান অনুযায়ী পদত্যাগের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। এ খবর হযরত আলী (রাঃ) কে ভীষণ কষ্ট দেয়। অবশেষে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই যুদ্ধ সিফফিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে যখন হযরত আলী (রাঃ) এর বিজয় নিশ্চিত হতে যাচ্ছে তখন ঘটনাকে ভিন্ন ঘাতে প্রবাহিত করা হয় সন্ধির প্রস্তাবের মাধ্যমে। হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন বরবরাই শান্তির পক্ষে। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে রাজী হন। অতঃপর সালিশের আয়োজন করা হয়। যারা এই সালিশের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষ ত্যাগ করেন তারাই পরবর্তীতে দলত্যাগী বা খারেজী হিসেবে পরিচিত হন।
সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথা ছিলো হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়ই নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু হযরত আলী (রাঃ)-এর পক্ষে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) তার পদত্যাগের ঘোষনা দিলেও হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষে হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) পদত্যাগের ঘোষনা না দিয়ে বরং হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কেই খলিফা ঘোষনা করেন। অতঃপর মুসলমান সমাজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যে একদল কুফায় রাজধানী স্থাপনকারী হযরত আলী (রাঃ) কে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়। অন্য দল দামেস্কের শাসক হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে খলিফা দাবী করে।
৬৬১ খ্রিস্টাব্দে হযরত আলী (রাঃ) শাহাদত বরণ করলে তার জ্যৈষ্ঠ্য পুত্র হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে কুফার দিকে অগ্রসর হন। হযরত হাসান (রাঃ) রক্তপাত না চাওয়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর সাথে এক চুক্তিতে উপনীত হন। চুক্তি অনুযায়ী হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন। কথা ছিলো তার খেলাফতে শেষ হলে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন মহানবী (সাঃ)-এর দৌহিত্র শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) এবং জান্নাতের সর্দারনী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পুত্র হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)-এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসলে হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) তাকে খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন। অতঃপর তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ঐশী নির্দেশে সপরিবাওে কুফা অভিমুখে যাত্রা করেন। ইরাকের কারবালা নামক প্রান্তরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হন। এক মর্মস্পশী হৃদয়বিদারক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তার পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরাই শহীদ হয়ে যান কেবলমাত্র জয়নুলাবেদীন ছাড়া। এই জয়নুলাবেদীনের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে মহানবী (সাঃ)-এর বংশধররা বুলান্দ হয়। এই বংশের সদস্যরা যারা ফাতেমীয় নামে পরিচিত ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মিশরের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইতিহাসে যা ফাতেমীয় খিলাফত নামে পরিচিত। ১১৭১ সালে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী কর্তৃক মিশর বিজীত হলে ফাতেমীয়দের পতন ঘটে এবং মিশরে আইয়ুবীদের শাসন কায়েম হয়।
হযরত আলী (রাঃ)-এর সময়কাল এত বেশী ঘটনাবহুল ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত যে এই সময়ে তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য কোন প্রকার মনোযোগ দিতে সক্ষম হননি।
মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন মনের আধুনিক অ
Comments
Post a Comment