Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2018

Fabricare receipt 01 08 2024

মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় / জয় গোস্বামী

বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর আমি তখন নবম শ্রেণি, আমি তখন শাড়ি আলাপ হল, বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি আমি তখন নবম শ্রেণি, আমি তখন ষোলো ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলো বেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে সত্যি বলো, সেসব কথা মনে পড়ে? সেসব কথা বলেছ তুমি তোমার প্রেমিকাকে? আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে দেখেছিলাম আলোর নীচে : অপূর্ব সে আলো! স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো জুড়িয়ে দিল চোখ আমার পুড়িয়ে দিল চোখ বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক! রাতে এখন ঘুমোতে যাই একতলার ঘরে মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যোৎস্না এসে পড়ে আমার পরে যে-বোন ছিল চোরাপথের বাঁকে মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে আজ জুটেছে, কাল কী হবে?- কালের ঘরে শনি আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই? কেমন হবে, আমি যদি নষ্ট মেয়ে হই?

স্নান / জয় গোস্বামী

সংকোচ জানাই আজ; একবার মুগ্ধ হতে চাই। তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি। এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্নাজলে লুণ্ঠিত হবার- আজ দেখি, অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে... জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতই প্রত্যাশা করেছ। তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে বলে যে-প্রেমিক ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যা বাগ্দান হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে। আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল অক্ষত রেখেছ ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার? শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে এখনো গোপন করে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা; সমস্ত যৌবন ধরে ব্যাধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে, জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেব বলে এখনো রাত্রির এই মরুভূমি জাগিয়ে রেখেছি। দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠাল সংকেত- যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে; যে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার... পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি সভ

মা কখনো যায় না চ’লে / আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

মা কখনো যায় না চ’লে হারিয়ে যেতে পারে আমার মা’ মন আস্লো ফিরে তিরিশ বছর পরে। আমি মায়ের কোলে ছিলাম আমার কোলে মা মা’র কপালে ফোঁটা দিলাম নজর দিয়ো না। মা কখনো যায় না চ’লে আমার সোনার মা।

তুমি ডাক দিলে / হেলাল হাফিজ

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল, কতো হুলুস্থল অনটন আজন্ম ভেতরে আমার। তুমি ডাক দিলে নষ্ট কষ্ট সব নিমেষেই ঝেড়ে মুছে শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌঁছুবো পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব পথে এতোটুকু দেরিও করবো না। তুমি ডাক দিলে সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরুদ্যান হবো, তুমি রাজি হলে যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো। একবার আমন্ত্রণ পেলে সব কিছু ফেলে তোমার উদ্দেশে দেবে উজাড় উড়াল, অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে লোকালয়ে থাকবো না আর আমরণ পাখি হয়ে যাবো,- খাবো মৌন মুগ্ধতা তোমার।

বাম হাত তোমাকে দিলাম / হেলাল হাফিজ

এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।  একটু আদর করে রেখো, চৈত্রে বোশেখে খরা আর ঝড়ের রাত্রিতো মমতায় সেবা ও শুশ্রƒষা দিয়ে বুকে রেখো, ঢেকে রেখো, দুর্দিনের যতœ নিও সুখী হবে তোমার সন্তান। এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম। ও বড়ো কষ্টের হাত, দেখো দেখো অনাদরে কী রকম শীর্ণ হয়েছে, ভুল আদরের ক্ষত সারা গায়ে লেপ্টে রয়েছে, পোড়া কপালের হাত মাটির মমতা চেয়ে সম্পদের সুষম বণ্টন চেয়ে মানুষের ত্রাণ চেয়ে জন্মবিধি কপাল পুড়েছে, ওকে আর আহত করো না, কষ্ট দিও না ওর সুখে সুখী হবে তোমার সন্তান। কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।

কারণ ঘাতক না হ’লে / আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

আমরা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ কসাই। চোখের নিরিখে মাপি উচ্চতা ওজন বয়স, স্থির করি বধ্যভূমিতে কারা যাবে, কয়জন যাবে। যেমন অপত্য স্নেহে পিতা পুত্রের অথবা মমত্ববোধে পুত্র পিতার পৃষ্ঠের পরিসর দেখে। কারণ ঘাতক না হ’লে নিশ্চয়ই হত হ’তে হবে।

ভালোবাসা পেলে কোন বোকা প’ড়ে থাকে নষ্ট জলে / রফিক আজাদ

টেলিফোনে ভেসে আসে সুদূর সাগর থেকে ফেরা স্বাস্থ্যকর সুবাতাস, এতোদিন আমার দু’কান ছিলো খুব তৃষ্ণায় কাতরঃ রূঢ় নরনারীদের বাজখাঁই গলা শুনে-শুনে, ভেবেছি, শুনতে চাওয়া মধু-ক্ষয়া উচ্চারণ, কথকতা, নেহাৎ অন্যায়! তোমার জীবন থেকে চুরি ক’রে সামান্য সময় তোমাকে যখন শুনি, মনে হয়, আরো কিছুদিন স্থিরভাবে পৃথিবীর বয়স বাড়াই-ভালাবেসে হাতে তুলে নিই ফের পরিত্যক্ত অস্ত্রটি আমার। ভালবাসা পেলে কোন্ বোকা প’ড়ে থাকে নষ্ট জল, বরং মুহূর্তে জাগে ভিতরের সাহসী পুরুষ। তোমার নিবিড় কণ্ঠে মৌমাছির গুঞ্জরণ শুনিঃ সামান্য সময় ব্যেপে তোমাকে শুনে তো তৃপ্তি নেই, চাই দীর্ঘ কথোপকথন, তোমার সান্নিধ্য চাই অনেক-অনেক ক্ষণঃ চলো ভাঙি মানুষর তৈরি প্রয়োজনে-গড়া সময়জ্ঞাপক ঘড়ি-উভয়েই। তোমাকে আমার সঙ্গে যদি পেয়ে যাই পাশাপাশি নিশ্চিত ধসিয়ে দেবো সুপ্রাচীন যে কোন দেয়াল, মানুষের রসব অপরাধ আমি ক্ষমা ক’রে দেবো, কোলে তুলে নেবো নোংরা কর্দমাক্ত শত্রুর শরীর, গাছপালাদের দেবো আরো বেশি সাজিয়ে-গুছিয়ে। তোমার সময় হবে?-বহুক্ষণ মুখোমুখি ব’সে তোমার মুখের কথা প্রসারিত বুকে গেঁথে নেবো! ভালোবাসা পেলে কোন বোকা প’ড়ে থাকে নষ্ট জলে, সাহসী পুরুষ দ্রুত জেগে উঠে সমুদ্র সাঁতারা

হেমন্ত শেষে / মায়া এঞ্জেল্যু

আহা কী স্নেহে হেমন্তের পাতাগুলি রেণু রেণু ছড়িয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর টুং টুং ছোট্ট আওয়াজ পরিতৃপ্ত আকাশ কখনো টকটকে সূর্যান্তে কখনো গোলাপ পাপড়ির মত ভোরবেলায় অবিশ্রান্ত জাল বুনে বুনে ঘোলাটে করে তুলছে ধূসর থেকে হয়ে উঠছে কালো, আরামদায়ক প্রেমিক-প্রেমিকারা এই পত্ঝর দ্যাখে শেষ থেকে সমাপনের ইশারাময় এই নিঃস্বতায় ধরা থাকে ভঙ্গিমাটি, সতর্কতার তাদের জন্য, যারা এখনো জানেনি আমাদের সমস্ত আরম্ভ শুধু থেমে যাওয়ার জন্য আবার শুধুমাত্র শুরু করার জন্য নতুন করে।

কাশ্মিরী মেয়েটি / আহসান হাবীব

কাশ্মিরী মেয়েটির কালো চোখ। ফরিদের ছোট ছেলে সে-চোখের কিছুটা আলো চেয়েছিলো! সাহস অসীম নয় কেননা মেয়ের অবিরাম হাতপাখা আঁখিজল ঢের দেখেছে সে। এমন কি মাঝে মাঝে দু’একটা ফুটো তামা সেই হাতে রেখেছে সে। কাশ্মিরী মেয়েটির ঘাগরাটি লাল, কাশ্মিরী মেয়েটির তনু গোলগাল। ফরিদের ছোট ছেলে নাম আমজাদ তার ছিলো সাধ, খেলবে ম্যাজিক সেই ঘাগরাটি নিয়ে কাশ্মিরী মেয়েটিকে পুরো এক পয়সার সিগারেট দিয়ে কাশ্মিরী মেয়েটির চোখ দুটি সাপের মতন, কাশ্মিরী মেয়েটির দাঁতগুলো ভীষণ ধারালো : নখে তার বিষ- মুখে বুলি নরম নরম : বেইমান কুত্তা হায় তোম্। কাশ্মিরী মেয়েটির নাজেহাল হাল! পথের মোটর এক হোলো বালচাল! ফিরে গেলো দিন ; কাশ্মিরী মেয়েটির ঘাগরা বিলীন, হাসে তার চোখ। আমজাদ চেয়েছিলো কিছুটা আলোক!

দুঃখের আরেক নাম / হেলাল হাফিজ

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী। অলৌকিক কিছু নয়, নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার। আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে, পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে। নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন, মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি। তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে, আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ পৃথিবীকে উপহাস  করে।  একদিন কোকিলের সুসময় ছিলো, আজ তারা আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে। এখন তুমিই বলো নারী তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো। আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়, ব্যাকুল শুশ্রƒষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ, এতোদিন নারী ও রমণীহীন ছিলাম বলেই ছিলো দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় / হেলাল হাফিজ

এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। মিছিলের সব হাত     কণ্ঠ     পা এক নয়। সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে, কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার। শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে, কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে।  কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়। যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান  তাই হয়ে যান  উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়। এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

মেঘলা দুপুরে / মহাদেব সাহা

মেঘলা দুপুরে অনন্তপুরে কী করে সবাই মন বলে, আজ যাই, কোথা যাই! মেঘলা দুপুরে পদ্মপুকুরে কে করে রোদন চোখে জল আসে, চোখে জল আসে, ডাকে ঝাউবন। মেঘলা দুপুরে অন্তঃপুরে কী করে বিরহী আমি কোথা যাই, আমি কোথা যাই, এ যাতনা সহি! মেঘলা দুপুরে বিমোহিত সুরে কে গায় ভজন, দূরে ছুটে যায়, দূরে ছুটে যায়, দূরে ছুটে যায় মন। মেঘলা দুপুরে বহরমপুরে বাজে কী বাদ্য মন বেঁধে রাখে, মন বেঁধে রাখে, কার এ সাধ্য! মেঘলা দুপুরে কাহার নূপুরে ওঠে কী ছন্দ মন ভরে যায়, মন ভরে যায়, ফুলের গন্ধ। মেঘলা দুপুরে দিনাজপুরে সে আছে কেমন পথ চেয়ে আছি, পথ চেয়ে আছি, বিষণœ মন।

সমর্পণ / মহাদেব সাহা

তুমি আমার গানগুলো রাখো আমার এই লজ্জা তুমি ঢাকো; তোমার কাছে আমার যাবতীয় এমনি করে রাখতে তবে দিও; এমনি করে রাখতে দিও গান এমনি করে ঘোচাও ব্যবধান; তোমার হাতে তুলে দিয়ে সব পালন করি অনন্ত উৎসব; তুমি আমার রাখো যদি গান, তাহলে হয় দুঃখ অবসান।

এই কবিতা তোমার জন্য / আনিসুল হক

এই কবিতা তোমার জন্য তোমার থেকেই জন্ম নিচ্ছে তোমার নাকি আমার জন্য ন্রা না ভেবে যেমন ইচ্ছে এই কবিতা তোমার জন্য তুমিই তো এর জন্মদাত্রী জড়ায়ুতে ছিলে অন্ধ-রাত্রি এই কবিতা তোমার জন্য এই বিকেল শুধুই তোমার হেলে পড়া সূর্য জানে অন্ধ কেন হলেন হোমার এই কবিতা তোমার জন্য তুমি একে পড়ছ বলে চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে ঝরছে রুপা জোছনা গলে এই কবিতা পড়বে যখন রাত্রি কাটে রাত্রি ভরে এই কবিতা স্বপ্ন ছুঁয়ে ওষ্ঠ ছোঁয়ায় নরম ভোরে এই কবিতা কেবল তোমার এই কবিতার সকল স্বত্ব তোমার নামেই রইল লেখা এই কথাটাই কেবল সত্য...

রাধা আমার রাধা / আনিসুল হক

রাধা আমার রাধা,  তুমি যখন রাত্রি জাগছ আি ম ঘুমে  কাদা! কানাই আমার কানাই তুমি যখন কাব্য করো, আমার বাজে শানাই। কেমন করে তোমাকে আজ জানাই, তোমার কাছে সে ধন আছে আমার কাছে যা নাই আকাশটাকে পিঁটি ভেবে রুটির মতো গোল করে চাঁদ বানাই ভাবছ তুমি ওই মেয়েটির কাছ আকাশকুসুম াাছে এসব কথা বলতে আমার মানাই রাধা আমার রাধা আমি যখন বাতাস হয়ে বাজছি তোমার শার্সিতে তুমি ঘুমে কাদা

গ্রীনরোডে / পিয়াস মজিদ

ঢাকার আবর্জনাভরা রাস্তার ভিড়ে গ্রীনরোড আমার কাছে ছিল তাৎপর্যরঞ্জিত। সোনালি। কারণ গ্রীররোড থাকতেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। আমি গ্রীনরোডের সামনে দিয়ে পথ চলতে গিয়ে মাঝেমধ্যে থমকে দাঁড়াতাম। মনে হত ৫১ নম্বর বাড়িটা থেকে চক্ষুষ্মান জনতার ভিড়ে বিরল প্রজাতির একজন জন্মান্ধ আমাকে খুব সংগোপনে ডাকছেন তার সযতœ-নির্মিত পরোক্ষের দিকে। কুহেলি ভর কর আমার অস্তিত্বের ওপরে। আমি তার আহ্বানে প্রলুব্ধ হতেই দেখি এ এক গোলকধাঁধা। সৈয়দ মঞ্জিলের সমস্ত দরোজায় তালা ঝুলছে। চাবি খুঁজছি মহারাজ বলে সবাই চেঁচাচ্ছে আর এমনকি রাস্তাও চলেছে আশ্চর্য রাস্তায়। দিগি¦দিকহারা আমি চিৎকার শুরু করতেই কোত্থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এলেন জ্যোৎ¯œা-রৌদ্রের সেই চিকিৎসক। বললেন ‘বদমাশ সত্য অপবাস্তবকে জীবন প্রতীয়মান করতে চায় বলেই আমি দশদিগন্ত থেকে ধার করে এনেছি এই মাতাল মানচিত্র। এখন আপনার ইচ্ছে হলে বেছে নিতে পারেন আমার অশোককানন।’ স্মৃতি থেকে আমি দিব্যি মনে করতে পারি অমরতার জন্যে একমাত্র মৃত্যুই আশ্রয় নিয়েছিল তার নিঃসঙ্গ কাননে। গ্রীনরোড দিয়ে হাঁটতে থাকলে এখন কেউ আমার পথরোধ করে না। আর সহ্য করতে হয় না কারও রূপালি সংবেদন কিংবা নীলাভ জলতরঙ্গের রক্তাভ-প্রহার।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা : আসক্ত দার্শনিকতার পর্যটন / সুমন গুণ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার কবিতার সবচেয়ে বড়ো ধরন হলো নিঃশব্দ এক দার্শনিকতা, যা তাঁর সবধরনের কবিতাকে সাবলীলভাবে ছুঁয়ে রয়েছে। এমন নয় যে তাঁর বলার ধরনটি মৃদু, নরম। বরং যা বলেন তিনি, বেশ জোর গলায় বলেন, এমনও বলা যায় যে এই গলা তুলে কতা বলার ধরনটি-ই তাঁর কবিতাকে সমসময়ের অন্য কবিতার থেকে আলাদা করেছে। এই প্রসঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়তে পারে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি, কিন্তু এখানে এই কথাটুকু বলে রাখা ভালো যে কেন এমন প্রবল এক ভঙ্গি সত্ত্বেও দার্শনিকতার আগে নিঃশব্দ কথাটি বসালাম আমি। সুনীলের যে-কোন কবিতা পড়লেই বোঝা যায় যে যখন কিছু বলছেন তিনি, তখন, বলার পাশাপাশি বক্তব্যটিকে তুলে নিচেছন অন্য আরেকটি স্তরে। এই দ্বিতীয় দার্শনিকতার পরতটিই সুনীলের কবিতার নিজস্ব ঠমক। এমনিতে শব্দ নিয়ে তাঁর খুব সচেতন নিরীক্ষা তেমন একটা ছিল না, নির্দিষ্ট শব্দের চেয়ে বরং রহস্যময় অর্থময়তার একটা প্রবাহ বজায় রেখে কবিতা লিখতে ভালোবাসতেন তিনি। শঙ্খ ঘোষের কবিতা নিয়ে তাঁর আর অলোকরঞ্জনের সেই বিখ্যাতহ বিতর্ক তো আমাদের সবার মনে আছে। কবিতার শব্দের দোলাচল নিয়ে যা বলেছিলেন তিনি, তা সাধারণভাবে যে-কোনো কবিতা সম্পর্কেই বলা যায়, কিন্ত

শঙ্খ ঘোষের কবিতা : নিহিত ও ক্ষতচিহ্নময় / সুমন গুণ

একটা সময় ছিল, ওই আশির দশকে,যখন শঙ্খ ঘোষ আমাদের অধিকার করে নিচ্ছেন ক্রমশ, আর আমরা সেই টানের স্বরূপ বুঝে নিতে চাইছি নানা কায়দায়। সেই সময় আমি যেখানে থাকতাম, তার আশেপাশে কবিতা নিয়ে চর্চার ধরনটা ছিল শঙ্খ ঘোষের কবিতার যে ধরন, তার উলটো। এখানে কথা উঠবে, শঙ্খ ঘোষের কবিতার ধরনটা কেমন, আর তার উলটো ধরন বলতেই বা কী বোঝায়। এভাবে সোজা বা উলটো করে লেখালেখির কোনো ধরনকে ধরা যায় নাকি?     এই দুটো সমস্যা নিয়ে একটু খেলতে পারলেই একটা লেখা গুছোনা হয়ে যায়। প্রথম কথা, শঙ্খ ঘোষের, শুধু শঙ্খ ঘোষ কেন, কোনো লেখকেরই কবিতাভাষাকে কোনো একবগগা ধরনে চেনানো যায় না। বাংলা কবিতায় শঙ্খ ঘোষের একটা জায়গা ঠিক হয়ে গেছে। শঙ্খ ঘোষের কবিতার পাতা উলটে যেতে যেতে টের পাওয়া যায় সময় তার সব রহস্য আর সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর কবিতায় নানা গমকে উঠে আসতে চেয়েছে।     এই গমকটা খুব বড়ো ব্যাপার। কে কীভাবে কথা বলবেন কবিতায়, তার মাত্রা বা বহরের ওপর নির্ভর করে তাঁর কবিতা কাকে, কতটা, কতদিন ছুঁতে পারবে। এমনিতে এখন বিশ্বমুহূর্তের আওতায় আমরা, যে-কেউ, যে-কোনো লেখকের কবিতা যে-কোনো সময়ে পড়ে ফেলতে পারি। ফলে মহাকালের ধারণাটা আগে যতটা ঘোরালো ছিল, এখন তা আরো গুলিয়

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় সময়চিহ্ন / সৈয়দ কওসর জামাল

১. তাঁর বিষয়ে অনেকেই ব‘লে থাকেন যে তিনি বাংলা কবিতায় ‘ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক’। ওই কথার প্রতিবাদ ক’রে আমি এই মুহুর্তেই বলতে চাই যে সুধীন্দ্রনাথ মর্মে মর্মে রোমান্টিক কবি, এবং একজন শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসংগ্রহের (১৯৬০) ভূমিকায় একথা লিখেছেন বুদ্ধদেব বসু। এমন সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় সময়শাসন লক্ষ করে তার চিহ্নগুলো নির্ণয় করা দুরুহ মনে হতে পারে। কিন্তু বুদ্ধদেব বসুকে পুনরায় উদ্ধৃত করে বলতে হয় রোমান্টিক বলেই “তিনি ছিলেন না যাকে বলে মিনারবাসী’, স্বকালের জগৎ ও জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে লিপ্ত হ’য়ে আছে তাঁর কবিতা।” সমসাময়িক বিষয় অবলম্বন করে কবিতা শুধু নজরুল লেখেন নি, কবিতার ধ্রুপদি মানে বিশ্বাসী ও ক্লাসিকাল-মনস্ক সুধীন্দ্রনাথও লিখেছেন। কেন এমন হলো, জানতে আমাদের তিনটি বিষয় লক্ষ করতে হবে। প্রথমত, যুদ্ধের নান্দীরোলের ভিতর ত্রিশের কবিদের বাল্যকাল কাটলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সংকটের আগ্রাসন সুধীন্দ্রনাথকে এবং অংশত জীবনানন্দকে বেশি বিদীর্ণ করেছিল। ক্লান্তি ও মৃত্যুর কথা এই দুটি সমভাবে কবির মধ্যেই বিদ্যমান। সুধীন্দ্রনাথ তাঁর অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন এইভাবে- আমি বিংশ শতাব্দীর সমান বয়সী;

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

‘গীতাঞ্জলি’-র রবীন্দ্রনাথ / সৈয়দ কওসর জামাল

    ‘গীতাঞ্জলি’র ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন :“এই গ্রন্থের প্রথম কয়েকটি গান পূর্বে অন্য দুটি-একটি পুস্তকে প্রকাশিত হইয়াছে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে যে-সমস্ত গান পরে পরে রচিত হইয়াছে তাহাদের পরস্পরের মধ্যে একটি ভাবের ঐক্য থাকা সম্ভবপর মনে করিয়া তাহাদের সকলগুলিই এই পুস্তকে একত্র বাহির করা হইল। (৩১ শ্রাবণ, ১৩১৭)     যে ভাবের ঐকের কথা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, সে ভাব কবির ঈশ্বরচেতনার। নৈবেদ্য (১৩০৮) থেকে গীতাঞ্জলি (১৩২১) পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ব্রহ্মানুভূতি, ঈশ্বরভাবনা ও ভক্তির এক পথরেখা নির্মিত হয়েছে। তবে তা একরৈখিক নয় কখনোই। নৈবেদ্য-র কবিতায় কবির একাত্মতা সর্বমানবের সঙ্গে, যে দুঃখের সংক্ষোভ. সেখানে    তা-ও সর্বমানবের। এই মানবমুখিতা, যা অতি নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রকবিতারই একটি ধারা, গীতাঞ্জলি পর্বে এসে পথ হারিয়েছে কবির ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঈশ্বরবোধের কাছে। স্বদেশপ্রেম, ঔপনিষদিক ঈশ্বরভক্তি ও সর্বমানবের মঙ্গলচিন্তাÑনৈবদ্যে-র ভক্তিরসকে উজ্জীবিত রেখেছে। সেখানে ব্রহ্মাসংগীতের সমস্ত লক্ষণ নিয়েই ঈশ্বর জীবনস্বামী, প্রভু, জীবননাথ, অন্তর্যামী ইত্যাদি শব্দে সম্বোধিত হয়েছেন। এই ঈশ্বর তখনও ‘পরাণসখা বন্ধু’ হয়ে