এপ্রিলের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই বন্যা শুরু হয়ে গেলো। আবহাওয়া এতো খারাপ যে ঘরে থেকে বের হওয়া দায়। সবাই বলাবলি করছে বন্যার যা ধরন তাতে মনে হয় এটা আরো মারাত্মক হবে। সবাই বাজারের দিকে ছুটল। ভালো মন্দ কথা নয় পর্যাপ্ত চাল, ডাল, আর আলু অন্ততঃ এনে রাখা দরকার।
সিদ্বান্তটা যে সঠিক ছিলো তা আস্তে আস্তে প্রমান হতে লাগল। বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে লাগল। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা পানির ঢল পুরো গ্রাম তলিয়ে ফেলতে লাগল। যাদের ঘর বাড়ী নাজুক তাদের যা কিছু ছিলো তাও বানের জলে ভেসে গেলো। সব কিছু মিলেমিশে একাকার অবস্থা।
এই পানির মধ্যেই মাতবর সাহেব বেরিয়ে পড়েন সবার খোঁজখবর নিতে। কোমড় সমান পানি ভেঙ্গে তিনি ঘরে ঘরে লোকের খোঁজখবর নিতে আসেন। পাছে তাকে সাপে কাটে এই ভয়ে একটা নৌকার ব্যবস্থা করা হয়। মাতবর তবুও নাছোড়বান্ধা। এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত এটাই ব্যতিক্রম। হয়তো বা শেষ পর্যন্তও। কারণ এ গ্রামে বন্যা বার বার আসে। কিন্তু এই এক মাতবর ছাড়া কেউই ঘর ছেড়ে বের হয় না। তিনি বরাবরই ব্যতিক্রম।
মাতবর শুধু নামেই মাতবর। এক সময় তাদের সব ছিলো। পদবীটা তখন মানাত। এখন শুধু পদবীটাই আছে। জৌলুস খসে গেছে অনেক আগেই। তবুও মাতবর বের হন নিজের যা কিছু সহায় সম্বল আছে তা নিয়েই। লোক জনের পাশে দাঁড়ান। হোক না তা অল্প। তবুও এই দুঃসময়ে অনাহারী লোকের মুখে এক মুঠো চিড়াই বা কে তুলে দেয়।
এবারের এই আয়োজনে হঠাৎ করেই একটা মাত্রা যোগ হলো। এলাকাবাসী তো দূরে থাক মাতবর নিজেও এতোটা আশা করেননি। সুদূর ঢাকা থেকে একদল ছেলেমেয়ে চলে এসেছে। তারা এসেছে মূলতঃ মাতবর সাহেবকে সাহায্য করতে। মাতবর সাহেবের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে। কে বা কারা যেন মাতবর সাহেবের এই তৎপরতার কথা ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে। মাতবর সাহেবের কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া।
ছেলেমেয়েগুলোর জন্য উপজেলা শহরেই একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেব। ছেলেমেয়েরা ট্রাক ভর্তি খাবার দাবাড় আর কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছে। এতো সাহায্য এভাবে আর কখনও আসেনি এই আজো পাড়াগাঁয়। মাতবর সাহেবের দুচোখে পানি। তিনি দ্বিগুন উৎসাহে ছেলেমেয়েদের সাথে কাজ করছেন। তার কাছে মনে হচ্ছে তার বয়স অর্ধেকে নেমে এসেছে।
টানা তিন দিন কাজ করে সাবার কাছেই কিছু না কিছু পৌঁছানো সম্ভব হলো। ছেলেমেয়েদের সাথে দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেল। সবার সাথে পরিচয় হলো। এক এক জন এক এক জেলার। কথাবার্তার ভাব সাবে মনে হলো দুএক জন বাদে বাকী সবাই জোড়া জোড়া। এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের যা হয় আর কি।
সব কিছুর মধ্যেই কিছু একটা কিন্তু খুঁজে পায় কেউ কেউ। চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরই একজন। তিনি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মাতবর সাহেবের কর্মের খরব তাহলে ঢাকায়ও পৌঁছে গেছে। তাকে নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখিও হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে লোকটা আবার ঝামেলা করবে না তো। চেয়ারম্যান সাহেব তার মন্ত্রনাদাতা কালপ্রিট মোতাহেরকে ডাকেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্যে। কিন্তু মোতাহেরকে কিছুটা হতাশ মনে হলো। তিনি চেয়ারম্যান সাহেবকে তেমন একটা আশ্বস্ত করতে পারলেন না। চেয়ারম্যান সাহেব ধরেই নিলেন এ যাত্রা তার আর বোধ হয় রক্ষা নেই। মাতবর দাঁড়ালে তাকে হারতে হবে নির্ঘাত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভীষন খুশী। এমনিতেই তিনি মাতবর সাহেবকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। তার উপরে তার চমক আর দ্যুতি দেখে আরও অবাক। তিনি ভালো করে জানেন মাতবর সাহেব কিছু পাওয়ার আশায় এসব করেন না।
অবশ্য এখন আর মাতবরকে সমর্থন দেওয়ার লোকের অভাব নেই। গ্রামের অনেক বিত্তশালীরা এবার তার পিছু পিছু মাঠে নেমেছে। সেবামূলক কাজে হাত লাগিয়েছে। তারা মাতবরকে আশ্বস্ত করেছে আগামীতে যে কোন কাজে তারা তার পাশে থাকবে। আর্থিক কিংবা শারীরিক সকল প্রকার সাহায্য করবে।
ঢাকা থেকে যে ত্রান এসেছিলে গ্রামের লোকের সহযোগিতায় তার কয়েকগুন বিতরণ করা হয়েছে। এই বিষয়টাই চেয়ারম্যানকে বেশি চিন্তিত করেছে। বরবার তো কখনও এমন হয়নি। মাতবর এক একা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। এবার চিত্র আলাদা।
চেয়ারম্যান ঝিম মেরে বারান্দায় বসে আছে। তার মনে হচ্ছে শনির দশা লেগেছে। খবর সবগুলোই খারাপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী খরচে মাতবরকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। ওদিকে তার চিরকালের মন্ত্রনাদাতা মোতাহের তওবা পড়ে মাতবরের দলে যোগ দিয়েছে। মোতাহেরের যোগদান যে বিরোধী শিবিরকে কতোটা শক্তিশালী করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী চৌধুরী সাহেবও এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন। তিনি নিজে সামনে এগিয়ে গেলে সমস্যা ছিলো না। কিন্তু তিনি তা না করে মাতবরের মাথার উপরে নিজের ছাতা মেলে ধরেছেন। মাতবর এখন এই এলাকার মহাত্মা গান্ধী।
চেয়ারম্যানের সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কিছুটা দেরী হলেও কথা ছিলো। সামনেই নির্বাচন।
সিদ্বান্তটা যে সঠিক ছিলো তা আস্তে আস্তে প্রমান হতে লাগল। বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে লাগল। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা পানির ঢল পুরো গ্রাম তলিয়ে ফেলতে লাগল। যাদের ঘর বাড়ী নাজুক তাদের যা কিছু ছিলো তাও বানের জলে ভেসে গেলো। সব কিছু মিলেমিশে একাকার অবস্থা।
এই পানির মধ্যেই মাতবর সাহেব বেরিয়ে পড়েন সবার খোঁজখবর নিতে। কোমড় সমান পানি ভেঙ্গে তিনি ঘরে ঘরে লোকের খোঁজখবর নিতে আসেন। পাছে তাকে সাপে কাটে এই ভয়ে একটা নৌকার ব্যবস্থা করা হয়। মাতবর তবুও নাছোড়বান্ধা। এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত এটাই ব্যতিক্রম। হয়তো বা শেষ পর্যন্তও। কারণ এ গ্রামে বন্যা বার বার আসে। কিন্তু এই এক মাতবর ছাড়া কেউই ঘর ছেড়ে বের হয় না। তিনি বরাবরই ব্যতিক্রম।
মাতবর শুধু নামেই মাতবর। এক সময় তাদের সব ছিলো। পদবীটা তখন মানাত। এখন শুধু পদবীটাই আছে। জৌলুস খসে গেছে অনেক আগেই। তবুও মাতবর বের হন নিজের যা কিছু সহায় সম্বল আছে তা নিয়েই। লোক জনের পাশে দাঁড়ান। হোক না তা অল্প। তবুও এই দুঃসময়ে অনাহারী লোকের মুখে এক মুঠো চিড়াই বা কে তুলে দেয়।
এবারের এই আয়োজনে হঠাৎ করেই একটা মাত্রা যোগ হলো। এলাকাবাসী তো দূরে থাক মাতবর নিজেও এতোটা আশা করেননি। সুদূর ঢাকা থেকে একদল ছেলেমেয়ে চলে এসেছে। তারা এসেছে মূলতঃ মাতবর সাহেবকে সাহায্য করতে। মাতবর সাহেবের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে। কে বা কারা যেন মাতবর সাহেবের এই তৎপরতার কথা ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে। মাতবর সাহেবের কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া।
ছেলেমেয়েগুলোর জন্য উপজেলা শহরেই একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেব। ছেলেমেয়েরা ট্রাক ভর্তি খাবার দাবাড় আর কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছে। এতো সাহায্য এভাবে আর কখনও আসেনি এই আজো পাড়াগাঁয়। মাতবর সাহেবের দুচোখে পানি। তিনি দ্বিগুন উৎসাহে ছেলেমেয়েদের সাথে কাজ করছেন। তার কাছে মনে হচ্ছে তার বয়স অর্ধেকে নেমে এসেছে।
টানা তিন দিন কাজ করে সাবার কাছেই কিছু না কিছু পৌঁছানো সম্ভব হলো। ছেলেমেয়েদের সাথে দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেল। সবার সাথে পরিচয় হলো। এক এক জন এক এক জেলার। কথাবার্তার ভাব সাবে মনে হলো দুএক জন বাদে বাকী সবাই জোড়া জোড়া। এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের যা হয় আর কি।
সব কিছুর মধ্যেই কিছু একটা কিন্তু খুঁজে পায় কেউ কেউ। চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরই একজন। তিনি ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মাতবর সাহেবের কর্মের খরব তাহলে ঢাকায়ও পৌঁছে গেছে। তাকে নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখিও হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে লোকটা আবার ঝামেলা করবে না তো। চেয়ারম্যান সাহেব তার মন্ত্রনাদাতা কালপ্রিট মোতাহেরকে ডাকেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্যে। কিন্তু মোতাহেরকে কিছুটা হতাশ মনে হলো। তিনি চেয়ারম্যান সাহেবকে তেমন একটা আশ্বস্ত করতে পারলেন না। চেয়ারম্যান সাহেব ধরেই নিলেন এ যাত্রা তার আর বোধ হয় রক্ষা নেই। মাতবর দাঁড়ালে তাকে হারতে হবে নির্ঘাত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভীষন খুশী। এমনিতেই তিনি মাতবর সাহেবকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। তার উপরে তার চমক আর দ্যুতি দেখে আরও অবাক। তিনি ভালো করে জানেন মাতবর সাহেব কিছু পাওয়ার আশায় এসব করেন না।
অবশ্য এখন আর মাতবরকে সমর্থন দেওয়ার লোকের অভাব নেই। গ্রামের অনেক বিত্তশালীরা এবার তার পিছু পিছু মাঠে নেমেছে। সেবামূলক কাজে হাত লাগিয়েছে। তারা মাতবরকে আশ্বস্ত করেছে আগামীতে যে কোন কাজে তারা তার পাশে থাকবে। আর্থিক কিংবা শারীরিক সকল প্রকার সাহায্য করবে।
ঢাকা থেকে যে ত্রান এসেছিলে গ্রামের লোকের সহযোগিতায় তার কয়েকগুন বিতরণ করা হয়েছে। এই বিষয়টাই চেয়ারম্যানকে বেশি চিন্তিত করেছে। বরবার তো কখনও এমন হয়নি। মাতবর এক একা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। এবার চিত্র আলাদা।
চেয়ারম্যান ঝিম মেরে বারান্দায় বসে আছে। তার মনে হচ্ছে শনির দশা লেগেছে। খবর সবগুলোই খারাপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী খরচে মাতবরকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। ওদিকে তার চিরকালের মন্ত্রনাদাতা মোতাহের তওবা পড়ে মাতবরের দলে যোগ দিয়েছে। মোতাহেরের যোগদান যে বিরোধী শিবিরকে কতোটা শক্তিশালী করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী চৌধুরী সাহেবও এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন। তিনি নিজে সামনে এগিয়ে গেলে সমস্যা ছিলো না। কিন্তু তিনি তা না করে মাতবরের মাথার উপরে নিজের ছাতা মেলে ধরেছেন। মাতবর এখন এই এলাকার মহাত্মা গান্ধী।
চেয়ারম্যানের সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কিছুটা দেরী হলেও কথা ছিলো। সামনেই নির্বাচন।
Comments
Post a Comment