জামশেদের সাথে মুনার
পরিচয় হয়
আরিচার ফেরিঘাটে। অনেক
বছর পর
মুনারা সেবার
সবাই মিলে
বরিশালে তাদের
বাপ-দাদার
ভিটেয় গিয়েছিল
ঈদ করতে। কিন্তু
ঈদের সেই
আনন্দ আরিচার
ফেরিঘাটে এসে
লম্বা জ্যামে
পড়ে যখন
মাটি হওয়ার
জোগাড় তখনই
জামশেদ নামক
এই অদ্ভুত
প্রাণীটির সাথে তার পরিচয়।
জ্যামের মধ্যে ঘন্টার
পর ঘন্টা
গাড়ীতে বসে
থেকে মুনার
যখন নিঃশ্বাস
বন্ধ হওয়ার
জোগাড় তখনই
সে তাদের
নতুন কেনা
বিএমডব্লিউ গাড়ী থেকে নেমে রাস্তার
পাশে গিয়ে
দাঁড়াল।
জ্যাম দেখে
তার মাথা
খারাপ হওয়ার
জোগাড়।
যতদূর চোখ
যায় থেমে
থাকা গাড়ীর
সারি।
ঘাট থেকে
তারা এখনও
বেশ কয়েক
কিলোমিটার দূরে। সে আনমনে
বলে উঠল-
সর্বনাশ! এ
জ্যাম তো
আজ ছাড়বে
বলে মনে
হচ্ছে না। তার
উপরে নদীর
পানি নেমে
যাওয়ায় ফেরি
চলাচলেও বিঘœ
হচ্ছে।
আজ তাদের
কপালে দুর্ভোগ
আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে
সে যখন
আবারও গাড়ীতে
গিয়ে বসার
জন্যে মোড়
ঘুরতে যাবে
তখনই এক
অতি উৎসাহী যুবক
এসে তার
সামনে দাঁড়াল। মুচকি
হেসে নিজের
থেকেই আগ
বাড়িয়ে বলল,
ভীষণ জ্যাম
আপা! ছাড়তে
মনে হয়
কয়েক ঘন্টা
লাগবে।
-তাইতো দেখছি।
মুনা অনিচ্ছা
সত্ত্বেও বললো।
-অপেক্ষা জিনিসটা ভীষণ
কষ্ট আর
বিরক্তির।
বিশেষ করে
যাত্রা পথে।
-আসলেই তাই।
মুনা যোগ
করলো।
-আগে পরিচিত হই। আমি
জামশেদ সরদার। পিতার
নাম হাকিম
সরদার।
দাদার নাম
মালেক সরদার। আমরা
সরদার বংশ
আপা।
এক সময়
দাপট ছিল। এখন
কিছুই নাই। তিনবেলা
খাবার জোগাড়
করাই কষ্ট।
-খুবই দুঃখজনক।
-আপনার পরিচয়?
-আমার পরিচয় দিয়ে
আপনি কি
করবেন।
আমার পরিচয়
কি আপনার
কোন কাজে
আসবে?
-কি জানি।
আসতেও তো
পারে।
কে যে
কার কখন
কাজে আসে
কেউ বলতে
পারে না।
-দার্শনিকের মত কথা। ভালোই
লাগল শুনতে।
-একটা পান খাবেন। আমি
পান খাই। ভালোই
লাগে।
বিড়ি সিগারেটের
নেশা নাই। তামাক
বা গুলও
নেই না। নেশা
বলতে এই
এক পান। অরিজিন্যাল
গাছের পান। গ্রামের
বাড়ী থেকে
নিয়ে এসেছি। খেয়ে
দেখেন।
ভালো লাগবে। খেতে
খেতে সময়
কাটবে।
পান খাওয়া তো
দূরে থাক,
পান খাওয়ার
কথা কখনও
ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করেনি মুনা।
পান খায়
তাদের বাসার
বুয়া।
এ নিয়ে
মুনা অনেক
দিন তাকে
মন্দ বলেছে। বকেছেও
ভীষণ।
পানের পিক
ফেলে ঘর-বাড়ী নষ্ট
করে মহিলা। মাঝে
মাঝে তাদের
দামী কাপড়-চোপড়েও দাগ
বসায়।
কিন্তু কোন
কথায়ই তার
আক্কেল হয়
না।
পান খাওয়া
সে কিছুতেই
ছাড়তে পারছে
না।
আগে সামনা-সামনি খেত। এখন
লুকিয়ে খায়। মুনা
হঠাৎ
করেই নিজের
অজান্তে হেসে
ওঠে।
-কি ব্যাপার? হাসলেন
যে! আমার
কথা শুনে
কি আপনার
হাসি পেল।
-না, না, এটা
অন্য ব্যাপার। দিন
আপনার অরিজিনাল
পান একটা। খেয়ে
দেখি।
ভালো না
লাগলে জরিমানা
কিন্তু।
-তা করতে পারেন। তবে
মনে হয়
ভালোই লাগবে। জামশেদ
সরদারের স্পেশাল
পানের খিলি। দাম
মাত্র দুই
টাকা।
তবে আপনার
জন্যে ফ্রি।
-আমার জন্যে ফ্রি
কেন?
-প্রচারের জন্য আপা। বুঝলেন,
প্রচারের জন্যে। আজ
ফ্রি খাওয়াচ্ছি। ভালো
লাগলে কাল
তো আর
ফ্রি খাবেন
না।
পয়সা দিয়ে
খাবেন।
তখন পুষিয়ে
যাবে।
-আপনি তো সত্যিই
মজার মানুষ। পান
বিক্রি করেন
না তো
আবার।
-ভয় নেই আপা। সরদাররা
এখনও এত
গরীব হয়নি
যে পান
বেচতে হবে। সরদারি
নেই তাতে
কি।
ইজ্জত তো
আছে।
নেন, পান
খান।
সত্যি সত্যিই জামশেদের
হাত থেকে
পান নিয়ে
মুখে দেয়
মুনা।
অক্সফোর্ডের অর্থনীতির মাষ্টার্স মেয়ে কোথাকার
কোন অচেনা
যুবকের হাত
থেকে পান
নিয়ে মুখে
পুড়ে দেয়। অবাক
কান্ডই বলতে
হবে।
নতুন একটা
স্বাদে তার
মুখটা যেন
কেমন করে
ওঠে।
তার চোখে-মুখে সেই
অভিব্যক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জামশেদের মুখে
হাসি।
সে খুশীই
হয়।
-এবার আস্তে আস্তে
চিবোতে থাকেন। প্রথমে
একটু ঝাল
ঝাল লাগবে। তারপর
সব ঠিক
হয়ে যাবে। শেষের
দিকটায় গিয়ে
দেখবেন কি
দারুন মজা। তখন
আর আপনার
মনে হবে
না যে
পান খেয়ে
আপনি ভুল
করেছেন।
বরং মনে
হবে এক
জীবনে পান
না খেয়েই
বরং ভুল
করেছেন।
মুনা আস্তে আস্তে
পান চিবোতে
থাকে।
অদ্ভুত একটা
অনুভূতি তাকে
ঘিরে ফেলে। কানের
কাছটা গরম
হয়ে ওঠে। জীবনের
প্রথম পান। তাও
আবার কাঁচা
সুপারি দিয়ে। তার
কাছে কেমন
যেন একটা
নেশার মত
লাগে।
সে তার
অস্তিত্বের গভীরে এই নতুন স্বাদের
আস্বাদ গ্রহণ
করতে চেষ্টা
করে।
মনে মনে
বলে, জিনিসটা
মন্দ নয়। বুয়াকে
তাহলে দোষ
দিয়ে লাভ
নেই।
জীবনের অনেক
না পাওয়ার
দুঃখ এরকম
একটু আস্বাদনের
মধ্যেই যদি
ভুলে থাকা
যায় তাহলে
মন্দ কি!
এই প্রথম মুনা
জামশেদের দিকে
তাকায়।
পরিপূর্ণ হাসি
তার মুখে। জামশেদ
জিজ্ঞেস করে,
কেমন লাগছে
আপা।
জরিমানা করবেন
নাকি?
মুনা হেসে ফেলে। মাথা
নাড়িয়ে জানায়-
না।
জামশেদ ভীষণ
আনন্দ অনুভব
করে।
দুজনে গিয়ে
রাস্তার পাশের
ঘাসের উপর
বসে।
মুনাই প্রথম
কথা বলে-
-কি করেন আপনি?
-একটা ছোট-খাট
চাকরি করি। তবে
সরকারী চাকরি। গ্যারান্টি
আছে।
তার উপরে
উপরি আয়ের
সুযোগ আছে। তবে
আমি অতটা
বেহায়া নই। ঘুষ
খাই না। আছে
ভাবতেই ভালো
লাগে।
অন্য রকম
একটা আনন্দ।
-ঘুষ খান না
কেন? আজকাল
তো সবাই
হর-হামেশা
জানান দিয়েই
ঘুষ খাচ্ছে। আপনার
না খাওয়ার
কারণ?
-ঘুষের পয়সায় বরকত
নাই।
সংসারে রহমত
থাকে না।
- কথাটা মন্দ বলেননি। হারামে
আরাম নাই।
-এই কথা আপনি
জানলেন কেমন
করে?
-আমাদের বুয়ার কাছ
থেকে।
কাজের বুয়া।
-কথাটা সত্যি।
আল্লাহর গজব
নামে।
-এসব কথা থাক। আপনাদের
গ্রামের বাড়ী
কোথায়?
-বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার
আগরপুর গ্রামে। ওখানে
একটা কলেজ
আছে।
কলেজের নাম
আগরপুর ডিগ্রী
কলেজ।
নতুন কলেজ। তবে
বেশ ভালো। অনেক
ছাত্র-ছাত্রী। কলেজের
পাশে একটা
খাল।
খালের ওপারে
একটা বাজার। বাজার
থেকে আধা
কিলোমিটারের কম পথ আমাদের বাড়ী। সরদার
বাড়ী।
এক সময়
নাম ছিল। এখন
অবস্থা তেমন
একটা ভালো
নয়।
সবাই তিন
বেলা খেতে
পায় না।
-এই কথা আপনি
আগে একবার
বলেছেন।
-আপনার মাথা দেখছি
একদম ক্লিয়ার। শুনেছি
বড় লোকের
ছেলে-মেয়েদের
মাথায় বুদ্ধি
থাকে না। স্মৃতি
শক্তি খারাপ
হয়।
হারাম পয়সার
কারণেই নাকি
তাদের ছেলে-মেয়েদের এই
অবস্থা।
গায়-গতরে
শুধু চর্বি
জমে।
মাথা মোটা।
-বড় লোকের সম্পর্কে
অনেক কিছুই
শুনেছেন দেখছি। কিন্তু
আমাকে আপনার
বড় লোক
মনে হওয়ার
কারণ কি?
-আপনি বিএমডব্লিউ গাড়ী
থেকে নেমেছেন। এই
গাড়ী নিশ্চয়ই
গরীব লোকের
গাড়ী না।
-আপনি বিএমডব্লিউ চেনেন?
- চিনব না কেন?
জার্মানদের অহংকার এই বিএমডব্লিউ।
-আর কি কি
গাড়ী চেনেন?
-রোলস রয়েস, লিমুজিন,
মার্সিডিজ বেঞ্জ, নিশান পেট্রোল, পাজেরো,
ল্যান্ড ক্রুইজার,
টয়োটা, ওপেল,
আরও কত
কি?
-বাহ্! আপনি দেখছি
গাড়ী বিশেষজ্ঞ। এত
গাড়ী চিনলেন
কেমন করে।
-আপনাদের মতো কিনতে
গিয়ে কিংবা
চড়ে তো
আর চিনি
নি।
আমার এক
চাচাত ভাই
গুলশানের একটা
গ্যারেজের মিস্ত্রী। ওর কাছে
মাঝে মাঝে
যাই।
ওই-ই
চিনিয়ে দেয়। ভালোই
লাগে।
গাড়ী জিনিসটা
বেশ মজার।
-কখনও এসব দামী
গাড়ীতে চড়েছেন?
-জি চড়েছি।
তবে অন্যভাবে।
-কি ভাবে?
- ও যখন টেষ্ট
করে তখন
মাঝে মাঝে
আমাকে উঠিয়ে
নিয়ে দু-এক চক্কর
দেয়, ভালোই
লাগে।
-আপনি কিভাবে ঢাকায়
যাচ্ছেন?
-বাসে করে।
-এসি বাস?
-এসি বাস কোথায়
পাবো।
সাধারণ বাসের
টিকিট পাওয়াই
তো কঠিন। অনেক
কষ্টে জোগাড়
করেছি।
-বাকী পথটুকু আমাদের
সাথে গাড়ীতে
যাবেন।
কি আপত্তি
আছে।
-আপনার আব্বা-আম্মা
রাগ করবেন
না তো?
-ওনারা আমার আব্বা-আম্মা বুঝলেন
কেমন করে?
-চেহারায় মিল আছে।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ।
-বলেন তো আমি
দেখতে কার
মতো হয়েছি?
-আপনার বাবার মত। উনি
অনেক সুন্দর। আপনার
মায়ের চেয়েও
বেশী।
-তাই নাকি।
আপনি এত
কিছু খেয়াল
করেছেন?
-মাঝে মাঝে করতে
হয়।
- কেন বলুন তো?
-এমনি এমনিই, মানুষের
জীবনের সবকিছু
ভেবে চিন্তে
হয় না। তবে
উপস্থিত বুদ্ধি
দিয়ে অনেক
সময় নিজেকে
গুছিয়ে নেয়া
যায়।
আপনি কি
মনে করেন
আমি দুর্ঘটনাক্রমে
আপনার সাথে
কথা বলেছি। মোটেই
তা নয়। আমি
অনেকক্ষণ ধরেই
দূর থেকে
আপনাদের খেয়াল
করছিলাম।
বিশেষ করে
আপনাকে।
আপনি অনেক
সুন্দর।
আপনাকে দেখে
বুঝতে পারছি
আপনার বিয়ে
হয়নি।
বিয়ে হলে
সাথে জামাই
থাকতো।
তাছাড়া বিবাহিতা
মেয়েদের দেখলে
বোঝা যায়। আমি
একটা অবিবাহিত
ছেলে।
পাত্রী খুঁজছি। সবাই
আকাশের চাঁদ
হাতে পেতে
চায়।
যোগ্যতা না
থাকলেও আশা
করে।
আমি কোন
দেবতা নই। আর
দশ জন
মানুষের মতোই
সাধারণ।
আকাশ-কুসুম
কল্পনা করি। রাখাল
হয়ে বাশী
বাজাই যেন
রাজকন্যা আমার
সেই বাশীর
সুরে পাগল
হয়ে ছুটে
আসে।
আমার হাতে
তো আর
সত্যি সত্যিই
বাশী নাই। তাই
আপনাকে পান
খাওয়ালাম।
মন জয়
করার জন্য। যদিও
আমি জানি
আপনাদের গাড়ীর
একটা চাকার
সমান দামও
আমার নাই। তবুও
লোভ সামলাতে
পারি না। মানুষ
আসলে একটা
আজব জিনিস।
-এক নিঃশ্বাসে অনেক
কথা বলে
ফেলেছেন।
এবার একটু
দম নিন। পানি
খাবেন?
-দিন।
মুনার হাত থেকে
পানির বোতলটা
নেয় জামশেদ। ঢক
ঢক করে
অনেকটা পানি
গিলে নেয়
পেটের ভেতর। তারপর
একটু থেমে
বিমর্ষ কন্ঠে
জিজ্ঞেস করে-
আপনি কি
আমার কথায়
ভীষণ মাইন্ড
করেছেন?
-কেন, মাইন্ড করার
মত কিছু
কি বলেছেন?
-বললামই তো।
অনেক বাজে
কথা বলে
ফেলেছি।
হোক না
সত্য।
তাই বলে
এইভাবে বলাটা
ঠিক নয়। এটা
ভদ্রতার খেলাপ। আপনার
সাথে আজই
প্রথম পরিচয়। এতটা
নিরেট সত্য
কথা বলা
আমার ঠিক
হয়নি।
আমি সত্যিই
ভীষণ দুঃখিত।
-থাক আর দুঃখ
পেতে হবে
না।
বলেই যখন
ফেলেছেন তখন
আর কিইবা
করার।
তবে এখন
নিশ্চয়ই হাল্কা
লাগছে।
-তা একটু বলতে
পারেন।
আমি আবার
সত্য কথাটা
না বলে
বেশীক্ষণ থাকতে
পারি না। সরদার
বাড়ীর মানুষগুলো
একটু এরকমই। এক
সময় তাদের
অনেক কিছু
ছিল।
এখন...
এই পর্যন্ত বলতেই
মুনা তাকে
থামিয়ে দেয়। হেসে
বলে, এই
নিয়ে তিনবার। আমার
মুখস্থ হয়ে
গেছে-
’এখন অবস্থা
তেমন একটা
ভালো নয়। সবাই
তিন বেলা
খেতে পায়
না’
মুনা হাসিতে ভেঙ্গে
পড়ে।
জামশেদও হাসে
তার সাথে
সাথে।
শীতের তীব্রতা কমে
রৌদ্রের প্রখরতা
ক্রমেই বেড়ে
চলছে।
কিন্তু জ্যাম
যেন কিছুতেই
ছাড়তে চাইছে
না।
মুনার হঠাৎ মনে
হলো তার
ক্ষিধে পেয়েছে। সে
জামশেদকে বসতে
বলে গাড়ী
থেকে খাবার
আনার জন্যে
উঠে গেল। খাবার
নিয়ে ফিরে
এসে দেখে
জামশেদ নেই। সে
আশে-পাশে
অনেক খুঁজল। সবগুলো
গাড়ী তন্ন
তন্ন করে
খুঁজল।
কিন্তু কোথাও
জামশেদ নামের
কোন প্রাণী
তার চোখে
পড়ল না। মুনার
মনটা ভীষণ
খারাপ হয়ে
গেল।
কেন যে
খারাপ হলো
তা সে
নিজেও জানে
না।
রাস্তার পাশে
এসে দাঁড়িয়ে
আনমনে কিছুক্ষণ
মাঠের দিকে
তাকিয়ে রইল। সেখানে
ধানখেতে সবুজ
ধানগুলো সামান্য
বাতাসেই তির
তির করে
কাঁপছে।
সেই কাঁপন
যেন সে
তার বুকের
ভেতরেও অনুভব
করলো।
কি যেন
ভেবে হঠাৎ করে
খাবারগুলো রাস্তার পাশের ডোবায় ছুঁড়ে
ফেলে দিল। তারপর
নিজের অজান্তেই
কেঁদে উঠল।
একজন অচেনা মানুষের
জন্যে এই
প্রথম তার
সারা অন্তর
জুড়ে নুহের
প্লাবনের মত
যে অদৃশ্য
তুফান উঠল
চোখের জলে
যেন তার
সামান্যই প্রকাশ
পেল।
মুনা নিজেও
বুঝে উঠতে
পারলো না
হঠাৎ
তার কি
হলো।
তাহলে কি
লোকটাকে তার
ভালো লেগেছে?
তেমন কিছুতো
মনে হয়নি। তবে
এমন হচ্ছে
কেন?
দেখতে দেখতে কয়েক
মাস পেরিয়ে
গেল।
মুনার জীবন
তার নিজস্ব
গতিপথ ধরেই
এগোতে লাগল। সখের
বসে নেওয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরির পাশাপাশি নিজস্ব
ব্যবসা নিয়েই
তার অন্তহীন
ব্যস্ততা।
অন্যকিছু নিয়ে
ভাববার সুযোগ
কোথায় তার। তবুও
মাঝে মাঝে
কেন জানি
জামদেশের কথা
তার মনে
পড়ে।
মজার নাম। জামশেদ
সরদার।
মানুষটা আরও
মজার।
ঘটনার বাকি
অংশ মনে
পড়তেই মন
খারাপ হয়ে
যায়।
বুকটা কেমন
যেন ভারী
হয়ে আসে। শত
চেষ্টা করেও
কেন জানি
সে সেদিনের
ঘটনার বাকি
অংশটা কিছুতেই
ভুলতে পারে
না।
জামশেদ কোথায়
হাওয়া হয়ে
গেলো?
তেজগাঁওয়ে তার নতুন
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
“মুনা ইন্টারন্যাশনাল” এর
নতুন অফিসের
জন্য একটা
জায়গা কেনার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুনা। কাগজপত্র
যাচাইয়ের জন্য
তাকে ভূমি
অফিসে যেতে
হবে।
সকাল সকাল
উঠে সে
প্রাত্যহিক কার্যকলাপগুলো সেরে তৈরী হয়ে
নেয়।
প্রথমে একটু
মাজারে যাবে। ওখান
থেকে সোজা
ভূমি অফিস। সেখান
থেকে কাজ
সেরে সোজা
বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ তার একটাই
ক্লাস।
বেলা বারোটার
সময়।
বের হতে গিয়েই
একটা ধাক্কা
খায় সে। সাধারণত
তার কখনও
এমন হয়
না।
কিন্তু আজ
কেন জানি
হঠাৎ
করেই হাত
থেকে তার
নতুন কেনা
ওকলির সানগ্লাসটা
মেঝেতে পড়ে
যায়।
তবে ভাঙ্গেনি। কাচে
সামান্য একটু
আচড় লেগেছে
এই যা। তবু
তার মন
খারাপ হয়ে
যায়।
কেন এমন
হলো, কখনও
তো এমন
হয় না।
মাজার হয়ে যখন
ভূমি অফিসে
পৌঁছায় তখন
বেলা দশটা। অফিস
মোটামুটি জমজমাট। সে
ঠিক বুঝে
উঠতে পারে
না কোন
টেবিলে কার
সাথে কথা
বলবে।
হঠাৎ
একটা লোককে
দেখে ডাক
দিতে গিয়েও কেন জানি আচমকা
থেমে যায়। মনে
করার চেষ্টা
করে, জামশেদ
না! এখানে
কেমন করে?
কোথা থেকে। সে
কি তাহলে
এই অফিসে
চাকরি করে?
এতসব ভাবনার
কোন কুল
কিনারা না
করেই সে
তার সামনে
গিয়ে সজোরে
বলে, জামশেদ
ভাই না। আমি
মুনা, আমাকে
চিনতে পেরেছেন?
-হ্যাঁ, পেরেছি।
আরিচার ফেরীঘাটে
দেখা হয়েছিল
ঈদের ছুটিতে
ঢাকা ফেরার
পথে।
তা আপনি
কিন্তু সেবার
আপনার নাম
বলেননি।
এখন জানলাম
আপনার নাম
মুনা।
-আপনি ওভাবে না
বলে কোথায়
চলে গিয়েছিলেন
বলেন তো। আমি
আপনাকে অনেক
খুঁজেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাই
নি।
আপনাকে না
পেয়ে আমিও
সারাদিন না
খেয়ে ছিলাম। সব
খাবার পানিতে
ফেলে দিয়েছিলাম। আপনি
কাজটা ঠিক
করেননি।
-কি জানি।
হয়তো বা
ঠিক করিনি। আবার
হয়তোবা ঠিকই
করেছিলাম।
সেদিন ওভাবে
ফেলে না
এলে আজকের
এই সাক্ষাৎ হয়তো
এতোটা মধুর
হতো না।
-আপনি কি আমার
সাথে মজা
করছেন।
একজন মানুষকে
কষ্ট দিয়ে
আপনি তামাশা
করছেন।
এটা কিন্তু
ভারী অন্যায়।
-ক্ষমা চাইছি।
আর কখনও
এমন হবে
না।
-জানেন আমি কিন্তু
এখন পান
খাই।
ভালোই লাগে। পান
খেতে গেলে
আপনার কথা
মনে পড়ে। দুচোখে
পানি আসে। সবাই
মনে করে
পানের ঝাল। মা
বলে, কষ্ট
হলে ঐ
সব ছাইপাশ
খাওয়ার দরকার
কি।
আমি তাকে
বলতে পারি
না- এটা
পানের ঝালের
পানি না?। আমার
আত্মার ক্রন্দন। আমি
কেন কাঁদি
তোমরা কেউ
তা বুঝবে
না।
উল্টো আমি
নিজেই বলি,
পান খেলে
ঝাল তো
একটু লাগবেই। তুমি
বুঝবে না।
-আপনি নিজে বোঝেন?
-হ্যাঁ, বুঝি।
বুঝি বলেই
তো কাঁদি।
-বুঝলে কেন সবকিছু
পেছনে ফেলে
নিজের ইচ্ছের
হাতে নিজেকে
সমর্পন করতে
পারেন না?
- সে সুযোগ আর
দিলেন কই। আপনি
তো পালিয়ে
এলেন।
-তা এলাম বটে। তবে
আমার হৃদয়
ঐ আরিচার
ঘাটেই ফেলে
এসেছি।
-আমি কিন্তু তা
কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।
-সে জন্যেই তো
আজ এতদিন
পরে আবার
ফেরত পেলাম।
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ। এবার
বলুন, এখানে
কেন?
-আমি একটা জমি
কিনব।
আমার নিজের
নতুন অফিসের
জন্যে।
জায়গাটার ব্যাপারে
জানতে এসেছি।
-কই, দেখি কাগজপত্র।
মুনা ব্যাগ থেকে
কাগজগুলো বের
করে জামশেদকে
দেয়।
জামশেদ কাগজগুলো
হাতে নিয়ে
খানিকটা চোখ
বুলায়।
তারপর মুনার
দিকে তাকিয়ে
বলে- আসুন। আমার
টেবিলে গিয়ে
বসি।
মুনাকে একটা চেয়ার
টেনে বসতে
দেয়।
নিজে তার
চেয়ারে গিয়ে
বসে।
তারপর একটার
পর একটা
কাগজ উল্টে
দেখতে থাকে
গভীর মনোযোগে।
এই প্রথম মুনা
জামশেদকে ভালো
করে লক্ষ্য
করে।
শক্ত দেহের
সুগঠিত সক্ষম
সুপুরুষ।
বলিষ্ঠ গড়নের
তামাটে বর্ণের
মুখাবয়বে গ্রীক
পুরাণে বর্ণিত
পুরুষের মতই
পৌরুষের ছাপ। সাদা-মাটা পোষাকের
আড়ালেও একটা
দারুণ ভালোলাগা
মানুষটার সারাটা
অবয়ব জুড়ে। প্রাচীন
পুরুষের মতই
নির্জীব মানুষটির
ভেতর থেকে
সারল্যের একটা
অন্য রকম
বহি:প্রকাশ
তাকে যারপরনাই
মুগ্ধ করে। সে
অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকে। ভীষণ
আধুনিক কোন
মেয়ের আধুনিক
চশমা পড়া
চোখের ভেতর
এই প্রথম
কোন সনাতনী
পুরুষ তার
গভীর অন্ধকার
ছায়া ফেলে
তার পুরো
পৃথিবী অন্ধকারে
ঢেকে দেয়। সেই
অন্ধকারের গহীন ভেতরে মুনার শরীরের
ভেতরটা কেমন
যেন মুচড়ে
ওঠে।
ভূমি অফিস থেকে
যখন মুনা
বের হয়
তখন বেলা
এগারোটা।
জামশেদের কাছ
থেকে বিদায়
নিয়ে সে
গাড়ী নিয়ে
সোজা ছোটে
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। বারোটায় তার
ক্লাস।
পথে যেতে
যেতে বার
বার জামশেদের
মুখটা তার
চোখের পর্দায়
ভেসে ওঠে। শরীরটা
গাড়ীতে উঠে
এলেও মনটা
তার পড়ে
থাকে ভূমি
অফিসের টেবিলের
উপর রেখে
আসা কাগজপত্রের
সাথে।
দিন গড়িয়ে মাস
যায়।
মুনা নিজেই
কেন জানি
বার বার
ভূমি অফিসে
ছুটে আসে। জামশেদ
তাকে আসতে
না বললেও
সে হয়ত
আসত।
ভূমির কাজ
তার শেষ
হয়ে গেছে
সেই কবে। কিন্তু
ভূমি অফিসের
সেই মানুষটার
সাথে তার
যে লেনদেন
তা যেন
কখনও শেষ
হবার নয়। এক
জীবনের সন্ধিহীন
এই পথ
চলার যে
আবর্ত তা
যেন মহাজগতের
বুকে সৃষ্টির
শুরু থেকে
নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান গ্রহরাজির
অনন্ত গতিপথের
মতই সত্য।
মুনার জন্মদিনে দাওয়াত
পায় জামশেদ। সে
যায়ও।
না যাওয়ার
কোন কারণও
নেই।
গরীব হলেও
সে তো
মানুষ।
তাছাড়া মুনা
তাকে ভালোবাসে। সম্মানও
করে।
তার যাওয়াটাই
স্বাভাবিক।
কিন্তু তার
এই যাওয়াটা
অন্য কারো
কাছেই স্বাভাবিক
লাগে না। কারন
সেদিনের অনুষ্ঠানে
জামশেদই একমাত্র
বেমানান সোপিস। বড়লোকদের
জাঁকজমকপূর্ণ সেই আলোকোজ্জ্বল সন্ধ্যায় জামশেদের
স¯তা শার্ট
পড়ে পান
খেয়ে লাল
মুখের যে
প্রদর্শনী তা সবার কাছে বেশ
বেমানানই মনে
হয়েছে।
অনেকে বুঝেও
উঠতে পারেনি
সে কি
মেহমান নাকি
কোন কাজে
এসেছে।
ব্যাপারটা মুনার বাবা-মারও নজর
এড়ায়নি।
তারা এক
কথায় জানিয়ে
দিয়েছে যে
সে যেন
মনে রাখে
যে সে
স্বপন চৌধুরীর
একমাত্র মেয়ে
মুনা চৌধুরী
এবং অক্সফোর্ড
পড়–য়া ছাত্রী। আর
কিছু না
বললেও চলে। মুনার
যা বোঝার
সে বুঝে
নিয়েছে।
তার ভীষণ
কষ্ট হতে
থাকে।
জামশেদকে সে
কেমন করে
ভুলে যাবে। এই
ভেজালের দুনিয়ায়
একমাত্র খাঁটি
মানুষকে সে
কেমন করে
ভুলে যাবে। এ
কি সম্ভব!
পূর্ণিমার পর অমাবস্যা
আসে।
জোয়ারের পরে
আসে ভাটা। এসব
প্রকৃতির নিয়ম। আমি
না বললেও
সত্য।
বললেও সত্য। মুনার
জীবনও তেমনি
উজান-ভাটায়
গড়া।
আসলে মুনার
জীবন কেন,
প্রতিটি মানুষের
জীবনই অজস্র
চড়াই আর
উৎরাইয়ে
গড়া।
তা সে
সফল মানুষই
হোক আর
ব্যর্থ মানুষই
হোক।
কেউই এ
সত্যের বাহিরে
নয়।
মুনাই বা
তার ব্যতিক্রম
হতে যাবে
কেন।
জামশেদকে পেয়ে
আবার হারিয়ে
ফেলা।
তারপর আবার
কাকতালীয়ভাবে খুঁজে যাওয়া। তারপর
আবার পথ
চলা।
অত:পর
অন্যের অস্বস্তি:
এবং তার
বহিঃপ্রকাশ। সবকিছু মিলিয়ে তার
যে ছোট্ট
উপাখ্যান তা
যে একেবারে
নিষ্কন্টক তা কিন্তু নয়।
সাফল্যে আর
প্রাচুর্যে সাজানো তার যে সোনালী
জীবন সেই
জীবনের উদ্যানের
সবুজ ঘাসে
যে ফুল
আসে সেখানে
প্রজাপতির সাথে সাথে কিছু ক্ষতিকর
কীটপতঙ্গও যে নেই তা কিন্তু
নয়।
জীবন তবু
চলে।
থেমে থাকে
না।
কারণ চলার
মধ্যেই তার
অস্তিত্ব।
মুনার খুব ইচ্ছে
করে তার
এই দীর্ঘ
প্রেমহীন জীবনে
জামশেদের সাথে
যে সম্পর্ক
গড়ে উঠেছে
তাকে তার
খোলস থেকে
বের করে
এনে ভালোবাসার
সবগুলো রঙ
মেখে একটি
রঙিন প্রজাপতি
হয়ে উড়তে। কিন্তু
কেন জানি
সে তা
পারে না। পারে
না সে
তার সহজাত
বৈশিষ্ট্যের কারনে। বাবা-মায়ের
আদর-সোহাগে
বেড়ে ওঠা
মুনা সুন্দরী
হওয়া সত্ত্বেও
সবসময়ই বন্ধু-বান্ধবদের সযতেœ
এড়িয়ে চলেছে। এড়িয়ে
চলেছে এই
জন্যে যে
তার বাবা-মা তাকে
জানিয়ে দিয়েছে
তাদের পছন্দ
করা পাত্রের
সাথেই তার
বিয়ে হবে। অতএব
অন্য কিছু
ভেবে লাভ
নেই।
মুনাও সব
সময় একটা
কথাই ভেবেছে। সে
তার বাবা-মায়ের একমাত্র
মেয়ে।
তাদের দুঃখ
দেওয়া তার
পক্ষে সম্ভব
নয়।
মুনা তাই
এক জীবনে
অজস্র ভালো
লাগার কাছ
থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছে
অবলীলায়।
জলের কাছে
গিয়েও হাত
মুখ না
ধুয়েই বাসী
মুখে ফিরে
এসেছে লক্ষ্মী
মেয়েটির মতো। ভালোবাসার
কোমল ভুবনে
পা পড়ার
আগেই সে
তার পায়ের
তলায় কাঁটার
অস্তিত্ব পেয়েছে। কিছু
বোঝার আগেই
নিঃশব্দে সে
তার হৃদয়ের
গোপন খিড়কি
বন্ধ করে
দিয়েছে।
জামশেদের ক্ষেত্রেও তার
ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক কিছু
বললেও সে
আসলে খোলাসা
করে কিছুই
বলেনি।
অনেকটা পথ
হেঁটে গেলেও
সে আসলে
কোন পথই
অতিক্রম করেনি। দৃষ্টির
আড়ালে চলে
গেলেও সে
যে কোন
দূরত্বই অতিক্রম
করেনি তা
স্পষ্ট বোঝা
যায় তার
নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখে। জীবন
এবং যৌবনের
এই লগ্নে
এসে কোন
নারীর ভেতরে
পুরুষের স্পর্শে
যে আকুলতা
তা তার
মত অসূর্যস্পর্শা
কেন, যে
কোন বাজারের
মেয়ে মানুষকেও
মাঝে মাঝে
উতালা করে
ছাড়ে।
কিন্তু মুনা
ধীর, স্থির,
শান্ত।
সে যেন
তার ভবিতব্য
জানে।
তবুও সে
মাঝে মাঝে
ছুটে যায়
ভূমি অফিসের
সেই পান
খেয়ে ঠোঁট
লাল করা
সস্তা শার্টের
সাথে আরও
বেশী সস্তা
মেয়েলী ঢংয়ের
বুক খোলা
বোতাম ঝোলানো
আদ্যিকালের সোয়েটার পড়া বেমানান মানুষটির
কাছে।
ভালোবাসার এই এক
গুন।
প্রেম নিতান্ত
হাবলাকেও মাঝে
মাঝে স্মার্ট
করে তোলে। ভীরুকে
করে তোলে
সাহসী।
আর প্রতিশ্র“তি
ভঙ্গ করার
ক্ষেত্রে প্রেমের
যে বিকল্প
নেই তা
দুনিয়ার সবাই
জানে।
কত প্রেমিক-
প্রেমিকারাই যে মা-বাবাকে দেওয়া
মিথ্যে প্রতিশ্র“তি
ভঙ্গ করে
অবলীলায় গোপনে
তাদের প্রেম
চালিয়ে গেছে
তার হিসেব
কেই বা
রাখে।
কিন্তু মুনা
এখনও এসবের
কিছুই পারেনি। তার
দৌড় ঐ
ভূমি অফিস
পর্যন্তই।
জামশেদ সবই বোঝে। মুনার
জন্যে তার
ভীষণ মায়া
হয়।
কিন্তু সে
কিছুই বলে
না।
বলার তার
কিছু নেইও। মুনা
যে নিজেই
নিজের সাথে
প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে তা সে
তিলে তিলে
অনুভব করে। বরং
তার ভাবতে
ভীষণ ভালো
লাগে যে
মুনার মত
একটি অসামান্যা
মেয়ে তার
জীবনের সাথে
তাকে জড়িয়ে
নিয়েছে।
তবে তার
ভয়ও হয়। এই
জড়ানো যেন
সুন্দরীর আঁচলে
জড়ানো কাঁটার
মত না
হয়।
জামশেদ তাই
অনেকটাই শান্ত। আবেগের
ভারে যতটাই
কম্পমান তার
চেয়ে অধিক
সতর্ক তার
প্রতিটি পদক্ষেপে। মুনার
মতো একটি
অসাধারণ মেয়েকে
সে বিপদে
ফেলতে পারে
না।
বিপদ নয়তো
কি।
দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার মত
একটি গোবেচারা
অপদার্থ মানুষকে
মুনার মতো
একটি নিষ্পাপ,
কোমল, সর্বগুনে
গুনান্বিতা সবেধন নীলমনি মেয়ের গলায়
ঝুলিয়ে দেওয়ার
যে অন্যায়
চেষ্টা তাকে
বিপদে ফেলা
ছাড়া আর
কিইবা বলা
যেতে পারে।
জামশেদ গরীব।
তাই বলে
এতোটা ছোট
সে নয়। মুনাকে
পাওয়ার লোভ
তারও আছে। তাই
বলে তার
প্রকাশ এতোটা
নগ্ন হোক
তা সে
চায় না। মুনা
ভালো মেয়ে। তাকে
ভালোবাসে বেশ
ভালো কথা। কিন্তু
তাই বলে
সে তো
তাকে আরও
বেশী প্রলুব্ধ
করতে পারে
না।
বরং সে
নিরপেক্ষ থাকতে
চেষ্টা করে। নিজেকে
তার খানিকটা
অপরাধী মনে
হয়।
কারণ মুনার
জীবনের যে
চলন্ত ট্রেন
তাতে একটা
ময়লা বহনকারী
মালগাড়ীর মত
সেই জুড়ে
দিয়েছিল নিজেকে।
আরিচার ঘাটে গায়ে
পড়ে কথা
না বললে
এই নিষ্পাপ
মেয়েটাকে আজ
আর এতোটা
অদৃশ্য আগুনে
পুড়তে হতো
না।
তার উপর
পান খাওয়াতে
গেলে কেন
তুমি বাপু!
দুষ্ট আর
ঐ প্রেমে
পাগল করা
মন্ত্র পড়া
পান কি
এই নিরপরাধ
মেয়েটিকে না
খাওয়ালেই চলত
না।
অপরাধ তো
বাপু তুমিই
করেছ।
খেসারত দিতে
হলে তোমাকেই
দিতে হবে। এর
মধ্যে অন্যকে
টানছো কেন?
জামশেদকে খুঁজে পেয়েছে
প্রায় দু’মাস
হলো।
মুনা অবশ্য
এই সময়টার
মধ্যে বেশ
কয়েকবারই ভূমি
অফিসে গেছে
নানা অজুহাতে। অবশ্য
তার উদ্দেশ্য
যে একটাই
তা জামশেদও
জানে।
এ নিয়ে
অবশ্য দুজনেই
হাসে।
কিন্তু জামশেদকে
নিয়ে কখনও
সে বাহিরে
যায়নি।
অফিসের ভেতরে
জামশেদ খুবই
ফর্মাল।
কথা বলে
অত্যন্ত মেপে
মেপে।
মুনার সাথে
এমন আচরণ
করে যেন
মুনা তার
কাছে কোন
অফিসিয়াল কাজেই
এসেছে।
মুনাও সেটা
বুঝতে পারে। মুখ
টিপে হাসে। মনে
মনে বলে,
দাঁড়াও।
মজা দেখাচ্ছি। ভাবখানা
এমন যেন
ভাজা মাছটি
উল্টে খেতে
জানে না। ভেতরে
ভেতরে দারুন
সেয়ানা।
একদিন বিকেলে হঠাৎ করেই
মুনা এসে
হাজির হয়। সাথে
তার এক
বান্ধবী।
জামশেদ একটু
অবাকই হয়। এ
পর্যন্ত যতবারই
মুনা এসেছে
একাই এসেছে। আজ
সাথে বান্ধবী
কেন?
মুনাই খোলাসা করে। বাইরে
বেরোবে।
মা ফোন
করতে পারে। রুমা
সাথে আছে
শুনলে কোন
টেনশন করবে
না।
জামশেদকে নিয়ে
নিশ্চিন্তে ঘোরা যাবে। কেউ
দেখলেও কিছু
মনে করবে
না।
সব দিক
দিয়েই নিরাপদ।
কিন্তু মুনাকে অবাক
করে দিয়ে
জামশেদ তার
সাথে না
বেরোবার সিদ্ধান্ত
জানিয়ে দেয়। রুমাও
ভীষণ অবাক
হয়।
এই শ্রীর
একটা লোকের
এত অহংকার। তার
তো সাত
জনমের কপাল
তাদের মত
এরকম সুন্দরী
আর বড়
লোকের আধুনিক
শিক্ষিতা, স্মার্ট মেয়েদের সাথে এভাবে
ঘুরতে পারার
প্রস্তাব পাওয়ায়। কিন্তু
এই ব্যাটার
মাথায় নিঃসন্দেহে
গোবর ছাড়া
আর কিছু
নেই।
নইলে এভাবে
কেউ না
বলে।
মুনা ভীষণ মর্মাহত
হয়।
সে কল্পনাও
করতে পারেনি
জামশেদ তাকে
এভাবে না
বলবে।
কিন্তু মানুষ
আসলেই বড়
বিচিত্র জিনিস। জামশেদ
আরও বিচিত্র। যুবক
বয়স।
পান খায়। ঘুষ
খায় না। সুদর্শন,
কিন্তু সস্তা
দরের শার্ট
পড়ে।
মেয়েলি ঢংয়ের
বুক খোলা
বোতাম ঝোলানো
সোয়েটার পড়ে। গলায়
মাফলার পেচিয়ে
রাখে।
যদিও তার
কোন ঠান্ডার
সমস্যা নেই। গড়ান
গাছের গুড়ির
মত নিঁখুত
দৈহিক গড়নের
অধিকারী জামশেদ
রোগ বালাই
কি জিনিস
তা জানে
না।
ঠান্ডা লাগার
তো প্রশ্নই
আসে না।
দু’বান্ধবী
চলে যায়। জামশেদ
একা বসে
থাকে অফিসের
বারান্দার বেঞ্চিতে। বিকেল গড়িয়ে
সন্ধ্যা নামে। কৌটার
পান একে
একে শেষ
হয়ে আসে। জামশেদ
তবু ঠায়
বসে থাকে। উঠতে
গিয়েও কেন
জানি সে
উঠতে পারে
না।
জীবনে এই
প্রথম তার
নিজেকে এতোটা
ভারী মনে
হয়।
তার মনে
হয় সে
যেন পৃথিবীর
বুক থেকে
তার সমস্ত
পাঠ চুকিয়ে
আবারও সেই
মায়ের জঠরে
ফিরে গেছে। সেখানে
একটি অন্ধকার
কুঠুরিতে সে
দশ মাস
দশ দিন
ছিলো।
জামশেদ হু
হু করে
মা বলে
কেঁদে ওঠে। আজ
এতোদিন পরে
তার কেন
জানি মনে
হয়ে তার
মা তার
নাম ধরে
তাকে ডেকে
উঠেছে।
শৈশবে পিতৃ-মাতৃহীন জামশেদ
অদ্ভুত এক
পাথরের মত
নিস্তব্ধ।
জামশেদের সমস্ত
গ্রন্থিগুলো মুহূর্তের মধ্যে খুলে মেঝেতে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে
পড়ে।
রাতের সেই নিস্তব্ধতার
মাঝে সে
নিজেই নিজের
ভাঙ্গা টুকরোগুলো
কুড়িয়ে নিয়ে
কোনোমতে পা
বাড়ায়।
সব মানুষকেই
শেষে একাই
তার ঘরে
ফিরতে হয়।
মুনা আর আসে
না।
জামশেদও যায়
না।
কষ্টের কাটাকুটি
খেলা চলে
নিরবে নিভৃতে। দিন
যায়, মাস
যায়, বছর
গড়ায়।
মুনার আর
কোন খোঁজ
পাওয়া যায়
না।
জামশেদ আস্তে
আস্তে মেনে
নেয় সবকিছু। বরং
তার মনে
হয়, এই
ভালো।
তবু তো
একটা সমাধান
হলো।
কষ্টের ব্যাকরণকে
জিইয়ে রেখে
ভালোবাসার ভাষা আর কতটাই বা
সুখ দিতে
পারে।
মুনার জন্যে
ব্যাপারটা কিছুটা হলেও সহজ হয়ে
গেলো।
সে তবু
একটা উপলক্ষ্য
খুঁজে পেলো
জামশেদের কাছ
থেকে দূরে
সরে যাবার।
শাবাশ জামশেদ! শাবাস!
তুই ভালোই
করেছিস সেদিন
ওকে ফিরিয়ে
দিয়ে।
একবার ভালো
করেছিলি আরিচার
ঘাটে ফেলে
আসে।
কিন্তু নির্বোধ
নিয়তি তাকে
আবার টানতে
টানতে তোর
কাছে নিয়ে
এসেছিল।
এবার আবার
ভালো করেছিস
ওকে ফিরিয়ে
দিয়ে।
অভিমানী মেয়ে,
অপমান সইতে
না পেরে
সেই যে
চলে গেছে
আর আসবে
না।
তোর কোন
ভয় নেই। তুই
বেঁচে গেছিস। ভালোবাসার
যে দহন
তাতে দুজন
মিলে একত্রে
পোড়ার চাইতে
একাকীত্বের এই মর্মবেদনা কিছুটা হলেও
মহান।
তুই ব্যাটা
মহা মানব
হয়ে গেছিস
রে।
ছোট খাট
একটা বুদ্ধু
আর কি!
গৌতম বুদ্ধ। একালে
না হলেও
পরকালে তোর
এই মহান
কাজের প্রতিদান
পাবি।
নির্লোভ হওয়া
এতোটা সহজ
নয়।
এক বছর, দুই
বছর, তিন
বছর।
জামশেদ এখনও অবিবাহিত। সবাই
বলে তার
আর বিয়ে
থা করে
কাজ হবে
না।
সে নিজেও
তাই ভাবে। কি
লাভ বিয়ে
করে।
মুনার মতো
মেয়ে কি
আর চাইলেই
পাওয়া যাবে। অত
কোমল, অত
মায়াবতী।
আর বিয়ে
না হলেও
ক্ষতি কি!
প্রেম তো
তার জীবনে অন্তত:
একবার হলেও
এসেছিল।
তাও সে
যেন তেন
প্রেম নয়। রাজকীয়
প্রেম।
মুনার মতো
রাজকুমারীর প্রেম। সবার ভাগ্যে
হয় না।
জামশেদ আবারও ঈদের
ছুটিতে দেশের
বাড়ীতে যাচ্ছিল। আরিচার
ঘাটে পৌঁছাতেই
গাড়ী থেকে
নামল।
বাটা খুলে
পান মুখে
দিতে যাবে
এমন সময়
কে যেন
পেছন থেকে
ডাকল।
আরে, জামশেদ
ভাই না। জামশেদ
ফিরে তাকালো। তার
চিনতে অসুবিধা
হলো না। রুমা
দাঁড়িয়ে আছে। কোলে
একটি বছর
দুই বয়সের
শিশু।
পাশে ওর
জামাই-ই
হবে সম্ভবত:। জামশেদ
এগিয়ে গেলো। মুচকি
হেসে জিজ্ঞেস
করলো-
-কেমন আছেন? দুলাভাইকে
সাথে নিয়ে
দেশের বাড়ীতে
ঈদ করতে
যাচ্ছেন তাই
না।
-হ্যাঁ। আপনিও
যাচ্ছেন বুঝি?
-হ্যাঁ, যাচ্ছি।
আমি প্রতি
বছর ঈদে
বাড়ীতে যাই। ওখানে
আমার বাবা-মার কবর। ঈদে
আমি বাড়ী
না গেলে
তারা কষ্ট
পাবে।
একা একা
ঈদ করতে
তাদের ভালো
লাগবে না
নিশ্চয়ই।
জামশেদ তাদের
একমাত্র ধন। সে
কি তাদের
কাঁদাতে পারে।
কথাগুলো বলতে বলতে
জামশেদের কন্ঠ
কেমন ভারী
হয়ে আসে। রুমাও
সেটা বুঝতে
পারে।
সে অন্য
প্রসঙ্গে চলে
যায়।
জিজ্ঞেস করে-
-মুনার কথা মনে
আছে?
- থাকবে না কেন?
-ওর তো বিয়ে
হয়ে গেছে।
-তাই নাকি।
কবে হলো। কই
আমাকে তো
কিছু জানালো
না।
- আপনার সাথে দেখা
করে আসার
পনের দিনের
মাথায়ই ওর
বাবার এক
বন্ধুর ছেলের
সাথে হঠাৎ করেই
বিয়ে হয়ে
গেল।
ওরা ব্রাজিলে
থাকে।
ঐ ছেলে
ব্রাজিলে ব্যবসা
করে।
-পৃথিবীতে এতো দেশ
থাকতে ব্রাজিল
কেন রে
বাবা?
-যাতে আপনি অত
দূরে যেতে
না পারেন। কথাটা
বলেই হাসলো
রুমা।
তারপর বললো-
মজা করলাম। এমনিই। আপনি
কিছু মনে
করেন নি
তো?
-না, না, মনে
করবো কেন। মজা
তুমি করতেই
পারো।
-মুনা বলেছিল আপনি
নাকি সব
ধরণের গাড়ী
চেনেন।
এখানে দাঁড়িয়ে
বলতে পারবেন-
ঐ যে
লাল গাড়ীটা
ওটা আমাদের। ওটা
কি গাড়ী।
- শেভ্রোলেট।
-এটা তো আমাদের
এখানে কিছুটা
হলেও আনকমন। আপনি
কেমন করে
বললেন?
-এই গাড়ি ইন্ডিয়ার
বিখ্যাত লেখিকা
শোভা দে
ব্যবহার করেন। আপনি
শোভা দে
কে চেনেন?
না চেনার কি
আছে।
জামশেদ একটু
ভারিক্কি ভাব
নিয়েই জবাব
দেয়।
আমি তার
অনেক বই-ই পড়েছি।
-বলেন কি? ভারতের
আর কোন
কোন লেখকের
বই পড়েছেন?
-বিক্রম শেঠ, অমিতাভ
ঘোষ, শিব
খেরা, অরুন্ধতী
রায়, কিরন
দেশাই, মনিকা
দেশাই, আরও
কত কি?
এভাবে বলে
ঠিক শেষ
করা যাবে
না? ভারতীয়
বংশোদ্ভুত অনেক বিখ্যাত লেখকও আছে। তাদের
বইও পড়েছি। এই
যেমন ধরেন-
ভি এস
নাইপল, ঝুম্পা
লাহিড়ী, রুথ
প্রায়র জাবভালা
সহ আরও
অনেকে।
-থ্যাংকস আপনাকে।
মুনা তাহলে
ভুল করেনি।
-কেন?
-আপনি অনেক কিছু
জানেন? উপর
থেকে দেখে
বোঝা যায়
না।
-আমি অনেক কিছু
জানি বলেই
যে মুনা
আমাকে ভালোবেসে
ভুল করেনি
কথাটা ঠিক
নয়।
ভালোবাসার সাথে জানা-না-জানার
কোন সম্পর্ক
নেই।
আমি অন্তত
তাই মনে
করি।
গাড়ীর বিষয়টি
ছাড়া আর
কোন বিষয়ে
আমি কখনই
মুনাকে আমার
জ্ঞানের পরিচয়
দেইনি।
তাও গাড়ী
চেনার ব্যাপারে
আমি তাকে
যে ব্যাখ্যা
দিয়েছিলাম তা সে বিশ্বাস করেছিল। কথাটা
সত্য আবার
পুরোপুরি সত্য
নয়।
-কথাটা কি ছিল?
আমি ওকে বলেছিলাম-
আমার এক
চাচাতো ভাই
গুলশানের একটা
গ্যারেজের মিস্ত্রী। ওর কাছ
থেকে গাড়ী
চিনেছি।
কথাটা পুরোপুরি
সত্য নয়। আমার
এক চাচাত
ভাই গাড়ীর
গ্যারেজে মিস্ত্রীর
কাজ করে
সত্য তবে
তা গুলশানে
নয়।
আর তার
কাছে আমি
কখনও গাড়ী
চিনতে যাইনি। আমি
আমার জীবনের
চারপাশে ছড়ানো
বাস্তবতা থেকেই
সবকিছু শিখে
নিয়েছি।
কেউ আমাকে
হাতে ধরেও
কিছু শেখায়
নি।
তাছাড়া আমি
প্রচুর পড়াশুনা
করি।
প্রতিদিন অফিস
শেষে কম্পিউটারে
বসি।
ইন্টারনেটে সবকিছু ব্রাউজ করি যা
আমার জানতে
মন চায়।
-আপনি নিয়মিত ইন্টারনেট
ইউজ করেন?
-না করার কি
আছে।
এতো সুন্দর
একটা জিনিস।
-আমার ভাবতেই অবাক
লাগছে।
আপনি এতো
স্মার্ট।
তাহলে এমন
ক্যাবলার মতো
চলেন কেন?
-আমাকে রাজার মতো
চলতে হবে
এমন কোন
বাধ্যবাধকতা আছে। আমি রাজার
মতো চললেই
বা কি,
না চললেই
বা কি। জগতের
কি কিছু
এসে যাবে। আবার
ভিখিরির মতো
চললেও তো
জগত সংসারে
কোন কিছু
থেমে থাকবে
না।
এতে আসলে
কিছুই আসে
যায় না। সব
হচ্ছে আমাদের
মনের ব্যাপার।
-সেদিন মুনাকে ফিরিয়ে
দিয়েছিলেন কেন?
- তোমার বান্ধবীকে বাঁচানোর
জন্যে।
আমি তাকে
বিপদে ফেলতে
চাইনি।
-কিন্তু সে তো
আপনাকে ভীষণ
ভালোবাসতো।
এখনও বাসে। আমার
সাথে যখনই
ফোনে কথা
হয় আপনার
কথা বলে
আর কাঁদে। ওর
স্বামী আপনাদের
ভালোবাসার কথা জানে। ও
তাকে সবই
জানিয়েছে।
-কাজটা সে ঠিক
করেনি।
-কেন?
- আমাদের মধ্যে এমন
কিছু হয়নি
যে তা
জানাতে হবে।
-কিছু হয়নি বলেই
তো জানানো
দরকার।
কিছু হলে
তো জানানো
যেতো না।
-কিন্তু মানুষ স্বভাবত:ই সন্দেহপ্রবন। ঈর্ষাপ্রবনও
বলতে পারো।
-ওর স্বামী ভীষণ
ভালো।
সব কিছু
জানার পরও
ওকে ভীষণ
ভালোবাসে।
-এটা মিথ্যে কথা।
-মিথ্যে নয়।
সত্যি।
ও আমাকে
বলেছে।
- কোন মেয়েই তার
স্বামী সম্পর্কে
মিথ্যে বলে
না।
বরং বাড়িয়ে
বলে।
এটা মেয়েদের
নিজেদের সুখী
দেখানোর একটা
কৌশল।
তুমি নিজেও
তোমার স্বামী
সম্পর্কে অনেক
সময় অনেক
কিছুই বাড়িয়ে
বলো।
অথচ তুমি
নিজেও জানো
এসব সত্যি
নয়।
তবুও বলো। কারণ
এতে তুমি
গর্ববোধ করো। অন্তত:
অন্যের সামনে
তো অবশ্যই।
-কথাটা মিথ্যে নয়।
-আমি মিথ্যে বলবো
কেন? তাতে
আমার লাভ
কি?
- তা ঠিক।
কোন লাভ
নেই।
যা হওয়ার
তাতো হয়ে
গেছে।
-ওটা কোন বিষয়
নয়।
ভালোবাসা হারানো
দুঃখের কিন্তু
এটাই একমাত্র
বিষয় নয়। সত্যকে
বোঝা, তাকে
উপলব্ধি করা
এবং তাকে
ধারণ করা
মানব জীবনের
জন্যে অপরিহার্য। তা
সে যে
ভালোবাসা হারিয়েছে
তার জন্যও
যেমন সত্য
তেমনি যে
ভালোবাসা পেয়েছে
তার জন্যেও
তেমন সত্য। নিজের
জীবনে ঘটে
যাওয়া কোন
তুচ্ছ বাস্তবতার
নিরিখে জগতের
বিরাট সত্যকে
বিচার করা
বা কোন
সিদ্ধান্ত গ্রহণ ঠিক নয়।
-আপনি কি দার্শনিক?
-না, আমি একজন
সাধারণ মানুষ। অতি
সাধারণ মানুষ।
-আমার তা মনে
হয় না। আমার
মনে হয়
আপনি প্রকাশ
না করলেও
মুনা আপনাকে
চিনতে পেরেছিল। আপনার
মধ্যে ও
হয়ত কিছু
একটা খুঁজে
পেয়েছিল।
নইলে যে
মেয়ে প্রেম
করার পুরো
বয়সটাই প্রেমহীন
পার করলো
সেই মেয়ে
শেষে এসে
এতো গভীর
ভালোবাসায় নিপতিত হলো কেন।
তাও আবার
তার ঘরানার
কেউ হলে
একটা কথা
ছিল।
সম্পূর্ণ ভিন্ন
ঘরানার।
আপনি আমার
কথায় কিছু
মনে করেননি
তো।
-এইবার মনে করলাম। মনে
করলাম এই
জন্যে যে
তোমার এটা
জিজ্ঞেস করাটাই
বরং ভিন্ন
অর্থ বহন
করে।
আমি কিছু
মনে করেছি
কিনা এটা
জিজ্ঞেস করে
তুমি হয়তো
বুঝিয়ে দিতো
পারো আপনার
কিন্তু এখানে
মনে করার
মত একটা
জায়গা ছিলো। কিন্তু
আপনার চামড়া
মোটা বলে
আপনি হয়তো
তা টের
পাননি।
আমি তাই
আপনাকে মনে
করিয়ে দিলাম। নইলে
তোমার নির্ভেজাল
সত্য উচ্চারণে
আমি কিছু
মনে করবো
কেন।
তুমি যা
বলেছ তা
জলের মত
সত্য।
-আপনার সাথে পারা
মুশকিল।
- এটা কোন কথা
নয়।
তুমি একটা
চমৎকার
মেয়ে।
আমি দুঃখিত
তোমার অনুমতি
ছাড়াই বারবার
তোমাকে তুমি
করে বলার
জন্যে।
বলে যখন
ফেলেছি এখন
তো আর
চাইলেই ফিরিয়ে
নিতে পারবো
না।
-দুঃখিত বলে একটু
পর করে
দিলেন না?
-না, না, তা
হবে কেন?
তোমরা তো
আমার আপনই। ভীষণ
আপন।
-আমার মোবাইল নাম্বারটা
চাইলে রাখতে
পারেন।
মাঝে মাঝে
মুনার সম্পর্কে
জানতে পারবেন। ওর
সাথে আমার
প্রায়ই কথা
হয়।
-আমি মোবাইল ব্যবহার
করি না। তাছাড়া
আমি ঐ
অফিসেই আছি। মুনা
চাইলে সেখানে
গিয়ে দেখা
করতে পারবে। না
চাইলে জোর
করে গায়ে
পড়ে তাকে
বিরক্ত করা
কেন?
-আপনি ওকে ভুল
বুঝবেন না। এটা
আমার অনুরোধ। আমি
জানি ও
আপনাকে কতটুকু
ভালোবাসে।
-তুমি ভালো থেকো। তোমার
বাচ্চাটা অনেক
সুন্দর হয়েছে। ঠিক
তোমার মতোই।
জামশেদ আর কথা
বাড়ায় না। বাসে
উঠে পড়ে। ফেরীঘাটের
জ্যাম পেরিয়ে
গাড়ী ফেরীতে
উঠে যায়। রুমাদের
গাড়ীটা একটুর
জন্যে উঠতে
পারে না। ওরা
আলাদা হয়ে
যায়।
হাইওয়ে ধরে
দ্রুতগতিতে গাড়ী ছুটতে থাকে।
জামশেদের মন
জগতের সকল
গতিশীল বস্তুকে
মুহূর্তে ছাড়িয়ে
পলকের মধ্যে
হাজির হয়
ব্রাজিলে ঠিক
মুনার হৃদয়ের
দরোজায়।
খটাখট আওয়াজ
তুলে দরোজায়
কড়া নাড়ে। মুনার
কন্ঠস্বর ভেসে
আসে- কে?
জামশেদ আপন
মনে বলে
ওঠে- আমি!
তোমার জামশেদ,
জামশেদ সরদার!
পাশের সিটের লোকটা
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করে- ভাই
সাহেব, আমাকে
কি কিছু
বলেছেন।
-জী না! জামশেদ
ধাতস্থ হয়। জামশেদের
চোখের কোনায়
মুক্তো দানার
মত এক
ফোঁটা জল
ধরনীর বুকে
ঝড়ে পড়ার
জন্য অপেক্ষমান। জামশেদ
তা আলগোছে
আঙুলের কোনায়
মুছে নেয়।
আকাশের বুকে ফেরারী
মেঘের পদধ্বনি। চারিদিকে
মেঘের যত্রতত্র
ছোটাছুটি।
সাদা মেঘ,
কালো মেঘের
মিলিত সজ্জায়
আকাশের বুকে
বর্ষার ঘনঘটা। দেখতে
দেখতে শেষ
পর্যন্ত বৃষ্টিটা
শুরুই হয়ে
গেল।
নিজেকে বৃষ্টির
পানির হাত
থেকে বাঁচানোর
জন্যে একটা
ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকে পড়ল জামশেদ। আনমনে
দাঁড়িয়ে আছে
সে।
তার মত
বৃষ্টি তাড়িত
আরও অনেকেই
আশ্রয় নিয়েছে। আসলে
কিই বা
করার।
হঠাৎ একটা
মিষ্টি কন্ঠে
তার শ্রবণশক্তি
সজাগ হলো। সে
অবাক হয়ে
তাকালো।
সত্যিই তো। এ
যে সত্যিই
তার মুনা। এতোদিন
পরে এভাবে
দেখা হবে
সে স্বপ্নেও
ভাবেনি।
সে সজোরে
ডাকতে গিয়েও
থেমে গেল। মুনা
অবশ্য এদিকটায়ই
আসছে।
জামশেদকে না
দেখার তার
কোন কারণ
নেই।
অতঃপর দেখা হয়ে
যায় তাহাদের
তখনও তাহাদের বেদনাহত
হৃদয়ের
সবগুলো ক্ষত হতে
রক্ত ঝরিতেছে
অবিরাম
যেমন রক্ত ঝরে
আহত ধান
শালিকের
কোমল শরীর হতে
শিকারীর ঘায়ে
কিংবা হাঁসের ঠ্যাং
যেখানে লোমের
আড়ালে
লুকানো ক্ষতচিহ্ন হতে
রক্তের গোপন
ধারা বয়
তখনও তাহাদের হৃদয়
হয়ত কোন
কথা
বলে না মুখের
ভাষায়, অবশ্য
ভাষাহীন সেই
চাহনি
অনন্তের পানে যুগ
যুগ অবাক
চেয়ে রয়।
মুনা দারুন অবাক
হয় জামশেদকে
দেখে।
তার কন্ঠস্বর
যেন ভাষা
হারিয়ে ফেলে। কথা
বলতে পারে
না শত
চেষ্টা করে। হাঁ
করে তাকিয়ে
থাকে জামশেদের
দিকে।
সে বিশ্বাস
করতে পারছে
না সত্যি
সত্যিই জামশেদ
তার সামনে
দাঁড়িয়ে।
তার জামশেদ।
জামশেদই প্রথম কথা
বলে।
আস্তে করে
জিজ্ঞেস করে,
ভালো আছো?
-ভালো আছি।
তুমি কেমন
আছো? - মুনার
কন্ঠ কেঁপে
কেঁপে ওঠে।
-ভালোই। এভাবে
দেখা হবে
ভাবিনি?
-কিভাবে দেখা হবে
আশা করেছিলে?
-না, মানে এমন
বৃষ্টিভেজা দিনে, ঠিক এইভাবে।
-তাহলে দেখা হওয়ার
আশা করতে।
-হ্যাঁ, করতাম।
-ফিরিয়ে দিলে কেন?
-সেটা আমার চেয়ে
তুমিই ভালো
জানো।
-আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে
গেছে।
আমি চলে
এসেছি।
বাবা-মার
সাথে আছি।
-কতদিন হয়ে এসেছ। মাস
খানেক হবে।
-কই রুমা তো
আমাকে কিছু
জানালো না।
-তুমি জানতে চাওনি
তাই।
-কিন্তু!
- কোন কিন্তু নয়। আমিই
ওকে বারণ
করেছি।
বলেছি- নিয়তি
যেদিন সাক্ষাত
করিয়ে দেবে
সেদিন তো
সবই জানতে
পারবে।
এত ব্যস্ত
হবার কিছু
নেই।
-নিয়তি খুব তাড়াতাড়িই
দেখা করিয়ে
দিল।
-তাই তো দেখছি।
-আমি তোমাকে বিয়ে
করতে চাই।
-এখনও। সব
কিছু জানার
পরেও।
-কেন নয়।
আমি তো
এখনও অবিবাহিতই
আছি।
আমার জীবনে
যে শূন্যতা
তা একমাত্র
তুমিই পূরণ
করতে পার।
-এভাবে তো কখনও
বলোনি?
-বলার কি কোন
অবকাশ ছিল।
-ছিল? তুমি কাজে
লাগাও নি। বরং
প্রত্যাখ্যান করেছো।
-তোমার ধারণা ভুল।
-হতে পারে।
কিন্তু তোমার
সিদ্ধান্তই এজন্যেই দায়ী।
-যদি বলি তুমিও
তো আসতে
পারতে সবকিছু
পিছনে ফেলে। আমিতো
এখনও আমার
জায়গায় বসে
আছি।
-সব মেয়েরাই চায়
তাকে কেউ
হাত ধরে
নিয়ে যাক। নিজের
থেকে যাওয়া
যায়না।
কিন্তু তুমি
তা করোনি।
-এ ব্যর্থতা আমারই। কিন্তু
আমিও তো
অসহায়।
-এসব বাজে যুক্তি। তুমি
চাইলেই পারতে। তোমার
তো কোন
পিছুটান ছিলো
না।
তুমি জোর
করলে আমি
একটা উপলক্ষ
পেতাম।
আমার সিদ্ধান্তের
পক্ষে একটা
লজিক অন্তত:
পেতাম।
নিজেকে বোঝাতে
পারতাম তুমি
আমাকে তীব্রভাবে
চাও বলেই
আমি ঘর
ছেড়েছি, বাবা-মাকে কষ্ট
দিয়েছি।
কিন্তু আমার
পক্ষে তো
সে রকম
কোন যুক্তি
ছিলো না।
-ভালোবাসা আর যুক্তি
এক নয়।
-মানছি। কিন্তু
ভালোবাসা দাঁড়িয়ে
থাকে যুক্তির
ভিত্তির উপর। কোন
প্রেমই অযৌক্তিক
নয়।
- তোমার কথাই ঠিক। এখন
কি সিদ্ধান্ত
নিয়েছো তাই
বলো।
- এভাবে হুট করে
কোন সিদ্ধান্ত
নেওয়া যায়
না।
ভাবতে হবে।
- ভেবে ভেবে ভালোবাসা
হয় না।
-তাহলে কি ভাবে
হয়।
-এই যে এভাবে। ভাবনাহীন,
দ্বিধাহীন, দ্বন্দ্বহীন, তর্কহীন। বলতে
বলতে জামশেদ
মুনার হাত
ধরে।
মুনাও তাকে
বাধা দেয়
না।
চারপাশে অনেক
মানুষ।
তারা তাদের
মত করে
গল্প করছে। বাইরে
তখনও অঝোর
ধারায় বৃষ্টি
ঝরছে অবিরাম।
মুনার এই সিদ্ধান্ত
কিছুতেই মেনে
নিতে চায়
না তার
বাবা-মা। তারা
খুব ভালো
করেই জানে
তাদের মেয়ে
আবেগের বশবর্তী
হয়ে যে
ভুল করতে
যাচ্ছে তার
জন্যে তাকে
অনেক খেসারত
দিতে হবে। কিন্তু
মুনার যুক্তি
একটাই।
ভালোবাসাকে ত্যাগ করে সে তো
তার বাবা-মার পছন্দেই
বিয়ে করেছিলো। তাহলে
এমন হলো
কেন।
স্বামীর সংসার
করার জন্যে
সে বিশ্ববিদ্যালয়ের
চাকরী ছেড়ে,
সাজানো ব্যবসা
ফেলে রেখে
পৃথিবীর অপর
প্রান্তে সুদূর
ব্রাজিলে পাড়ি
জমিয়েছিল।
কিন্তু কই
সংসার তো
তার ভাগ্যে
জুটলো না। সুখ
তার কপালে
হলো কই!
জামশেদ তাহলে
কি দোষ
করেছে।
সে যদি
জামশেদের সাথে
সুখী হয়
তাতে অন্যের
অসুবিধাটা কোথায়।
কিন্তু বাবা-মার
যুক্তি হলো
জামশেদের যে
অবস্থা তাতে
তার ঘরে
গিয়ে তার
দু’দিন টেকাই
মুশকিল।
মুনাও যে
সেটা বোঝে
না তা
নয়।
বিলাস আর
ঐশ্বর্যের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা
মুনা নিজেও
তা নিয়ে
শংকিত।
তবু ভালোবাসা
থাকলে নাকি
সামান্য ঘরও
স্বর্গে পরিণত
হয়।
আর ভালোবাসাহীন
প্রাসাদও নাকি
বিরান মরুভূমি। এই
যদি হয়
তাহলে তো
জামশেদের কাছেই
সে সুখী
হতে পারে।
মুনা ঠিক এই
মুহূর্তে বিয়ের
কথা ভাবছে
না।
তবে বিয়ে
সে জামশেদকেই
করবে।
এই সিদ্ধান্ত
সে মনে
মনে নিয়ে
ফেলেছে।
তাদের ছাড়াছাড়ি
হয়েছে মাত্র
এক মাস
হলো।
ঠিক এখনই
বিয়ে করলে
সবাই ছি!
ছি! করবে। তাছাড়া
ইদ্দত পালনেরও
একটা বিষয়
আছে।
বিয়ের আগের
এই দিনগুলো
সে জামশেদের
সাথে প্রেম
করে কাটাতে
চায়।
যে প্রেম
তার এক
জীবনে করা
হয়ে ওঠেনি
সেই প্রেম। হয়তো
এর মধ্যে
দিয়ে দুজনে
একটা স্বাভাবিক
সম্পর্কে ফিরে
যেতে পারবে। সংসার
করার জন্যে
মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
জীবনের জন্যে
এর প্রয়োজন
আছে।
প্রতিদিন অফিসের শেষে
মুনা এসে
দাঁড়ায় দরোজার
কাছে।
জামশেদ টেবিলের
কাগজপত্র গুঁছিয়ে
রেখে আস্তে
উঠে পড়ে। তারপর
দুজনে বেরিয়ে
পড়ে মুনার
গাড়ীতে করে। মুনার
পছন্দমত কোন
একটা জায়গায়
গিয়ে দুজন
বসে।
তারপর ধীরে
ধীরে কথা
শুরু হয়। জামশেদ
তেমন কিছু
বলে না। মুনাই
শুরু করে
বেশীর ভাগ
ক্ষেত্রে।
সাধারণ সব
প্রসঙ্গ দিয়ে
শুরু হয়
কথোপকথন।
-শরীর কেমন?
-ভালো। তোমার?
-ভালো। অমন
মুখ ভার
করে আছো
যে? মন
খারাপ?
-নাহ্! মন খারাপ
হতে যাবে
কেন? তাছাড়া
তুমি আছো?
মনতো এমনিতেই
ভালো।
- কেন? আমি কি
মন খারাপের
ওষুধ?
-তাও বলতে পারো। তুমি
আসলেই মনটা
ভালো হয়ে
যায়।
-তাই বুঝি মুখ
এতো ভার
করে রাখো।
-মন ভালো আছে। কিন্তু
ভাবছি।
-কি ভাবছো?
- তোমাকে নিয়ে?
-আমাকে নিয়ে ভাববার
কি হলো। আমি
কি তোমার
ঘাড়ে চেপে
বসেছি নাকি।
-বসোনি। কিন্তু
নিতে তো
হবে।
- সে যখন নেবে
তখন দেখা
যাবে।
এখন হাসো।
- তোমার এই ভারী-ভারী মুখ
আমার কাছে
আষাঢ়ের মেঘের
মতো মনে
হয়।
মনে হয়
এখনই বৃষ্টি
নামবে।
-অসুবিধা নেই।
এই হাসলাম। এবার
হলো তো।
-রুমার কাছে শুনলাম
তুমি অনেক
কিছুই জানো। প্রচুর
পড়াশুনা করেছো। কই
আমার কাছে
তো কখনও
এ বিষয়ে
কিছু বলোনি। নাকি
আমার চেয়ে
রুমাকে বেশি
পছন্দ হয়েছিল
বলেই সেদিন
আমাদের সাথে
বের হওনি।
-বাজে কথা রাখো। অন্য
কিছু বলো।
-রাগ করলে?
-না। রাগ
করবো না। তুমি
উল্টো পাল্টা
বলবে আর
আমি রাগ
করবো না।
-আচ্ছা ঠিক আছে
বাবা।
আর বলবো
না।
তুমি আমাকে
এবারের মতো
মাফ করে
দাও।
- দিলাম। এবার
গল্প করো।
-তুমি ছেলে চাও
না মেয়ে
চাও।
-এখনও ভাবিনি।
-আর কবে ভাববে। বুড়ো
হতে আর
দেরী কতো।
-তা অবশ্য মন্দ
বলোনি।
আমার বন্ধু
বান্ধবদের ছেলে-মেয়েরা বড়ো হয়ে
গেছে।
-আমারও তো একই
অবস্থা।
অনেক বান্ধবীর
ছেলে-মেয়ে
দেখলে তো
মনে হয়
বিয়ে দেওয়া
যায়।
অবশ্য ওদের
খুব অল্প
বয়েসে বিয়ে
হয়েছিলো।
ব্যাপারটা আমার কখনোই পছন্দ হয়নি। এখনও
আমি সাপোর্ট
করি না।
-আমিও করি না। এজন্যেই
তো দেরী
হলো।
-আমি ফিরে না
এলে তুমি
কি একা
থাকতে?
-হয়তোবা থাকতাম।
-কষ্ট হতো না?
-হতো। কিন্তু
কি আর
করার।
এক জীবনে
তোমার মতো
আর একটা
মেয়ে কোথায়
পেতাম।
-শোনো। আমার
কিন্তু ছেলে
পছন্দ।
আমার প্রতি
দুবছরে একটা
করে ছেলে
চাই।
মিস করা
চলবে না।
-ফাজলামো রাখো।
দেওয়ার মালিক
আল্লাহ্।
-কিন্তু তোমাকে তো
চেষ্টা করতে
হবে।
-তা করা যাবে। এখন
অন্য গল্প
করো।
-কেন? অন্য গল্প
করবো কেন?
সামনে সংসার
সাজাতে যাচ্ছি। সেই
সংসারের গল্পই
তো আমার
কাছে সবচেয়ে
বেশী আগ্রহের। তোমাকে
সাথে নিয়ে
নতুন করে
জীবনের স্বপ্ন
সাজাতে চাই। সেই
জীবনে তুমি
আমার পাশে
থাকবে তো?
কথা দাও। পাশে
থাকবে।
আজীবন।
আমরণ।
-কথা দিলাম।
-এবার আমি নিশ্চিন্ত। তুমি
ঈমানদার লোক। আমি
জানি কথা
দিলে তুমি
তা রাখবে।
-চেষ্টা করবো, তবে
আশা করি
পারবো।
এমনি কত আশা-ভরসা, ভাব-ভালোবাসা আর
স্বপ্নের জাল
বুনে বুনে
প্রতিটি দিন
সামনে এগোতে
থাকে।
জীবনের গল্প
যেন প্রতিদিনই
নতুন।
নতুন তার
রূপ রস
গন্ধ আর
স্পর্শ।
আমরা কেউই
এর বাইরে
নই।
বাইরে নয়
তারাও যারা
ভালোবেসেছে কিংবা আগামী দিনে বাসবে।
Comments
Post a Comment