এমনিতেই সংসার চলে না। তার উপরে আরও একজন এসে জুটেছে। ভাগে কম পড়ার কারণে যদিও সবাই বিরক্ত তবুও একজন ঠিকই হাসি খুশী। সে আর কেউ নয়। এই বাড়ীর গৃহকর্ত্রী রাবেয়া। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক রাবেয়ার মুখে হাসি। তার বিশ্বাস আল্লাহ্র তরফ থেকে একটা না একটা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে।
এই আশ্রয়স্থলটা রাবেয়া খুলেছিল বছর কয়েক আগে। এর যদিও কোন সাইনবোর্ড নাই তবুও এটাকে সবাই আশ্রয়স্থল হিসেবে জানে। রাবেয়ার সামর্থ্য সীমিত। সেই সীমিত সামর্থ্য দিয়েই সে এটা পরিচালনা করছে। তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আর তার অতৃপ্ত আত্মার শেষ ইচ্ছে ছিলো এটা। রাবেয়া যেন তার রেখে যাওয়া টাকায় গরীব, অসহায় মানুষের সেবা করে। সমাজে গরীব মানুষের কোন অভাব নেই। রাবেয়া দেখেছে যে এতো গরীবের দায়িত্ব সে নিতে পারবে না। তাই সে সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলে শুধুমাত্র পিতৃমাতৃহীন অসহায় কিন্তু পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই তাদেরকেই সে শুধু আশ্রয় দেবে যাতে অন্ততঃ কুকুর, বিড়াল খেয়ে না ফেলে।
সিদ্বান্ত নেওয়ার পর রাবেয়া অপেক্ষা করতে থাকে। পিতার কবরের ভিজা মাটি তখনও শুকায়নি। রাবেয়ার দুচোখের কোনে তখনও থেকে থেকে দুচার ফোটা অশ্রু জল। হঠাৎই প্রথম খবরটা আসে। স্টেশনের পাশে কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো একটা বাচ্চা কারা যেন ফেলে রেখে গেছে। রাবেয়া ছুটে যায়। চাঁদের মতো শিশু। পৃথিবীর সব শিশুই সুন্দর। আহা! এরা কি জালিম। এভাবে মায়ের নাড়ী ছেঁড়া ধন ফেলে রেখে যায়। আর এর মাও বা কেমন। শুধু শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। হয়তো বা পরিস্থিতির উপর সেই অসহায় মার কোন হাত নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে রাবেয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়। সেই যে শুরু তারপর বিগত কয়েক বছরে একে একে সাত জন। নতুন জনকে নিয়ে সংখ্যা এবার আটে দাঁড়াল। যারা আছে তাদেরই কষ্ট হয়। নতুন জন খাবে কি! তবে রাবেয়ার এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তার ঐ এক কথা। যার রিজিক সে খাবে। আমি কে খাওয়ানোর। বাজার ঘাট অবশ্য রাবেয়ার বাপের রেখে যাওয়া টাকায়ই হচ্ছে। তবুও সে জানে এসব দুনিয়াবী। এর পেছনে আল্লাহ্র হাত। তিনি কোন কোন হেকমত অবলম্বন করেন। অতএব, চিন্তা করার কিছু নেই। তার কাজ সঠিক কাজটি করা আর আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়া। ফায়সালা একটা না একটা হয়ে যাবে।
নতুন আগন্তুক অনেক চটপটে। তার চাহনিতে যাদু আছে। রাবেয়া সেই যাদুর মায়ায় পড়ে যায়। বাবা, মা একসাথে মরেছে। বেচারী একা যাবে কোথায়। শেষমেষ রাবেয়ার কোলে। রাবেয়াও খুশি। এই আশ্রয়স্থলে যে প্রথম এসেছিল সে তখন মোটামুটি বড় হয়েছে বলা যায়। অনেক কথা বলতে শিখেছে। রাবেয়াকে ডাকে মাদার টেরিজা বলে। রাবেয়া তার নাম রেখেছিল কুলসুম। কুলসুম এসে রাবেয়াকে বলে মাদার টেরিজা। মেম্বার যেভাবে বাড়ছে তাতে কদিন পরে আমাদের কপালে কি কিছু জুটবে।
রাবেয়া হাসে। কুলসুমও হাসে। এই হাসির মানে। আলাদা দুজনেই খুশি। রাবেয়ার আশ্রয়স্থল নিয়ে এলাকায় কম রাজনীতি হয়নি। বাপের টাকা পয়সা খরচ করে এতিম অসহায়দের লালন পালনের পাশাপাশি তাকে এ নিয়ে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়েছে। অবশেষে খবর গিয়ে পৌঁছায় জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক স্বশরীরে এসে হাজির। রাবেয়াকে বলা হয় শিশু পাচারকারী। রাবেয়া কার জন্যে শিশু পাচার করবে। তার টাকা পয়সার কি দরকার। সে মানুষটা বিধবা, নিঃসন্তান। জগত সংসারে যার কেউ নেই। এই এতিম অসহায় বাচ্চারা ছাড়া সে কার জন্য মানব পাচার করবে। পয়সা কামাবে। তার পিতার রেখে যাওয়া জায়গাই তো সে ভোগ করছে না। তাহলে কার জন্য সে অন্ধকার জগতে পা বাড়াবে।
তবুও কথা হয়। মানুষের জিহবা তরবারীর চাইতেও ধারালো। তরবারীতে কাটলে দেখা যায়। কথায় কাটলে দেখা যায় না। কলিজায় লাগে।
জেলা প্রশাসক সাহেব বিস্তারিত স্বচক্ষে দেখেন। তিনি খুশি। খোঁজ খরব নিয়ে জানতে পারেন বিগত কয়েক বছর যত ছেলেমেয়েরা এসেছে তারা সবাই আছে। তাহলে পাচার হলো কে। জেলা প্রশাসকের দুচোখের কোনে পানি। তিনি তার কর্মকর্তাসুলভ আচরনে সেই পানি লুকোন। তারপর সবার সামনে ঘোষনা করেন আজ থেকে এই আশ্রয়স্থল নিয়ে কেউ কোন কথা তুললে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি কর্মকর্তাদের ডেকে আশ্রয়স্থলের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন। রাবেয়ার কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তাকে জানাতে বলেন। তিনি রাবেয়াকে তার কর্মের অনুপ্রেরণা ও সমর্থন স্বরূপ তার স্বরচিত একটা স্মারক প্রদান করেন। সেটা ঘরে লাগানো হয়।
রাবেয়া ভীষন খুশি। খুশি আশ্রয়স্থলের সবাই। বাড়ীর নামকরণ করা হয় রাবেয়া হাউস। কুলসুমই কাজটা করে। সে এবার তেরতে পা রেখেছে। জেলা প্রশাসকের সাথে তার মায়ের হয়ে অনেক কথা সে বলেছে। জেলা প্রশাসক তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছে। রাবেয়া এক ফাঁকে জানিয়ে দিয়েছে এই আশ্রয়স্থলে কুলসুমই প্রথম।
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। রাবেয়া তার আট সন্তানকে নিয়ে বারান্দায় গুটি সুটি মেরে বসে আছে। শীতকালের বৃষ্টি ঠান্ডাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার কষ্টের কিছু নেই। এই সব আবহাওয়ায় তারা অভ্যস্ত। হঠাৎ করে বৃষ্টি ঠেলে একটা লোক এসে হাজির। সারা শরীর বলতে গেলে ভিজা। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, এর মা একে জন্ম দিতে গিয়ে মরে গেছে। এর বাপ এর মাকে আগেই ছেড়ে দিয়েছিল। এখন বেচারা কোথায় যাবে।
রাবেয়ার জন্যে এটা নতুন কিছু নয়। তবে পার্থক্য এটুকুই যে রাবেয়ার জায়গাটা এখন অনেকটা কুলসুমই নিয়ে নিয়েছে। এতে রাবেয়ার কিছুটা স্বস্থি হয়েছে। সে কুলসুমকে ডাক দেয়। আগন্তুক কুলসুমের হাতে ছোট্ট শিশুটিকে তুলে দিয়ে পলকের মধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
এই আশ্রয়স্থলটা রাবেয়া খুলেছিল বছর কয়েক আগে। এর যদিও কোন সাইনবোর্ড নাই তবুও এটাকে সবাই আশ্রয়স্থল হিসেবে জানে। রাবেয়ার সামর্থ্য সীমিত। সেই সীমিত সামর্থ্য দিয়েই সে এটা পরিচালনা করছে। তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আর তার অতৃপ্ত আত্মার শেষ ইচ্ছে ছিলো এটা। রাবেয়া যেন তার রেখে যাওয়া টাকায় গরীব, অসহায় মানুষের সেবা করে। সমাজে গরীব মানুষের কোন অভাব নেই। রাবেয়া দেখেছে যে এতো গরীবের দায়িত্ব সে নিতে পারবে না। তাই সে সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলে শুধুমাত্র পিতৃমাতৃহীন অসহায় কিন্তু পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই তাদেরকেই সে শুধু আশ্রয় দেবে যাতে অন্ততঃ কুকুর, বিড়াল খেয়ে না ফেলে।
সিদ্বান্ত নেওয়ার পর রাবেয়া অপেক্ষা করতে থাকে। পিতার কবরের ভিজা মাটি তখনও শুকায়নি। রাবেয়ার দুচোখের কোনে তখনও থেকে থেকে দুচার ফোটা অশ্রু জল। হঠাৎই প্রথম খবরটা আসে। স্টেশনের পাশে কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো একটা বাচ্চা কারা যেন ফেলে রেখে গেছে। রাবেয়া ছুটে যায়। চাঁদের মতো শিশু। পৃথিবীর সব শিশুই সুন্দর। আহা! এরা কি জালিম। এভাবে মায়ের নাড়ী ছেঁড়া ধন ফেলে রেখে যায়। আর এর মাও বা কেমন। শুধু শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। হয়তো বা পরিস্থিতির উপর সেই অসহায় মার কোন হাত নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে রাবেয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়। সেই যে শুরু তারপর বিগত কয়েক বছরে একে একে সাত জন। নতুন জনকে নিয়ে সংখ্যা এবার আটে দাঁড়াল। যারা আছে তাদেরই কষ্ট হয়। নতুন জন খাবে কি! তবে রাবেয়ার এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তার ঐ এক কথা। যার রিজিক সে খাবে। আমি কে খাওয়ানোর। বাজার ঘাট অবশ্য রাবেয়ার বাপের রেখে যাওয়া টাকায়ই হচ্ছে। তবুও সে জানে এসব দুনিয়াবী। এর পেছনে আল্লাহ্র হাত। তিনি কোন কোন হেকমত অবলম্বন করেন। অতএব, চিন্তা করার কিছু নেই। তার কাজ সঠিক কাজটি করা আর আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়া। ফায়সালা একটা না একটা হয়ে যাবে।
নতুন আগন্তুক অনেক চটপটে। তার চাহনিতে যাদু আছে। রাবেয়া সেই যাদুর মায়ায় পড়ে যায়। বাবা, মা একসাথে মরেছে। বেচারী একা যাবে কোথায়। শেষমেষ রাবেয়ার কোলে। রাবেয়াও খুশি। এই আশ্রয়স্থলে যে প্রথম এসেছিল সে তখন মোটামুটি বড় হয়েছে বলা যায়। অনেক কথা বলতে শিখেছে। রাবেয়াকে ডাকে মাদার টেরিজা বলে। রাবেয়া তার নাম রেখেছিল কুলসুম। কুলসুম এসে রাবেয়াকে বলে মাদার টেরিজা। মেম্বার যেভাবে বাড়ছে তাতে কদিন পরে আমাদের কপালে কি কিছু জুটবে।
রাবেয়া হাসে। কুলসুমও হাসে। এই হাসির মানে। আলাদা দুজনেই খুশি। রাবেয়ার আশ্রয়স্থল নিয়ে এলাকায় কম রাজনীতি হয়নি। বাপের টাকা পয়সা খরচ করে এতিম অসহায়দের লালন পালনের পাশাপাশি তাকে এ নিয়ে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়েছে। অবশেষে খবর গিয়ে পৌঁছায় জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক স্বশরীরে এসে হাজির। রাবেয়াকে বলা হয় শিশু পাচারকারী। রাবেয়া কার জন্যে শিশু পাচার করবে। তার টাকা পয়সার কি দরকার। সে মানুষটা বিধবা, নিঃসন্তান। জগত সংসারে যার কেউ নেই। এই এতিম অসহায় বাচ্চারা ছাড়া সে কার জন্য মানব পাচার করবে। পয়সা কামাবে। তার পিতার রেখে যাওয়া জায়গাই তো সে ভোগ করছে না। তাহলে কার জন্য সে অন্ধকার জগতে পা বাড়াবে।
তবুও কথা হয়। মানুষের জিহবা তরবারীর চাইতেও ধারালো। তরবারীতে কাটলে দেখা যায়। কথায় কাটলে দেখা যায় না। কলিজায় লাগে।
জেলা প্রশাসক সাহেব বিস্তারিত স্বচক্ষে দেখেন। তিনি খুশি। খোঁজ খরব নিয়ে জানতে পারেন বিগত কয়েক বছর যত ছেলেমেয়েরা এসেছে তারা সবাই আছে। তাহলে পাচার হলো কে। জেলা প্রশাসকের দুচোখের কোনে পানি। তিনি তার কর্মকর্তাসুলভ আচরনে সেই পানি লুকোন। তারপর সবার সামনে ঘোষনা করেন আজ থেকে এই আশ্রয়স্থল নিয়ে কেউ কোন কথা তুললে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি কর্মকর্তাদের ডেকে আশ্রয়স্থলের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন। রাবেয়ার কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তাকে জানাতে বলেন। তিনি রাবেয়াকে তার কর্মের অনুপ্রেরণা ও সমর্থন স্বরূপ তার স্বরচিত একটা স্মারক প্রদান করেন। সেটা ঘরে লাগানো হয়।
রাবেয়া ভীষন খুশি। খুশি আশ্রয়স্থলের সবাই। বাড়ীর নামকরণ করা হয় রাবেয়া হাউস। কুলসুমই কাজটা করে। সে এবার তেরতে পা রেখেছে। জেলা প্রশাসকের সাথে তার মায়ের হয়ে অনেক কথা সে বলেছে। জেলা প্রশাসক তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছে। রাবেয়া এক ফাঁকে জানিয়ে দিয়েছে এই আশ্রয়স্থলে কুলসুমই প্রথম।
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। রাবেয়া তার আট সন্তানকে নিয়ে বারান্দায় গুটি সুটি মেরে বসে আছে। শীতকালের বৃষ্টি ঠান্ডাটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার কষ্টের কিছু নেই। এই সব আবহাওয়ায় তারা অভ্যস্ত। হঠাৎ করে বৃষ্টি ঠেলে একটা লোক এসে হাজির। সারা শরীর বলতে গেলে ভিজা। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, এর মা একে জন্ম দিতে গিয়ে মরে গেছে। এর বাপ এর মাকে আগেই ছেড়ে দিয়েছিল। এখন বেচারা কোথায় যাবে।
রাবেয়ার জন্যে এটা নতুন কিছু নয়। তবে পার্থক্য এটুকুই যে রাবেয়ার জায়গাটা এখন অনেকটা কুলসুমই নিয়ে নিয়েছে। এতে রাবেয়ার কিছুটা স্বস্থি হয়েছে। সে কুলসুমকে ডাক দেয়। আগন্তুক কুলসুমের হাতে ছোট্ট শিশুটিকে তুলে দিয়ে পলকের মধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
Comments
Post a Comment