পাশাপাশি অনেকগুলো বাড়ী। সবশেষ বাড়ীটা ময়নাদের। ঘরের পাশে ছোট্ট পুকুর। প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে ওরাই পিছিয়ে। কি শিক্ষা-দীক্ষা, কি অর্থ-বিত্ত। চারপাশে ওদের তাই কোন অবস্থান নেই। তবুও ইদানিং ময়নার মনটা ভালো। কারণ আর কিছু নয়। এ পাড়ার সবচেয়ে বড় ঘরের সুশিক্ষিত ছেলে জয়নাল কেন জানি তাদের পরিবারটাকে পছন্দ করে। সময় পেলেই তাদের বারান্দায় এসে বসে। নাস্তা পানি কিছু দিলে খায়। তারপর টুকটাক গল্প করে উঠে চলে যায়। সবাই ভাবে ময়নার জন্যেই তার এই দরদ। কিন্তু না। বিষয়টা সবাই অন্যভাবে নিলেও ময়না সত্যটা জানে। জয়নালের আগমনের কারণ আর যাই হোক অন্ততঃ ময়না নয়। কারণ ময়নার বান্ধবী রুমাই হলো জয়নালের ভালোবাসার মানুষ।
অবশ্য জয়নালের এই আসা যাওয়া নিয়ে কেউ কোন কথা বলছে না। কারণ আর কিছু নয়। জয়নালের ভালোমানুষের ইমেজ। এলাকার সবাই জয়নালকে ছোট বেলা থেকেই জানে। তার সাথে রুমার সম্পর্কের কথাও সবার জানা। এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথাও নেই। কিন্তু কথা হলো অন্যত্র। সাধারন ময়নাদের উঠোনে জয়নাল কেন বারবার আসে। তার উপর বারান্দায় উঠে বসে। নাস্তা পানি দিলে খায়। কিছুক্ষণ গল্প সল্প করে চলে যায়। জয়নাল তো এলাকার অন্য কারো বাড়ীর সীমানায়ও যায় না। এমনকি যে রুমাকে সে এতো ভালোবাসে তাদের বাড়ীতেও না। রুমাদের বাড়ীতে যাওয়ার ব্যাপারে জয়নালের বাড়ীর তরফ থেকে তো নয়ই, রুমাদের বাড়ীর তরফ থেকেও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং সবাই খুশী। এ সম্পর্ক শুরু থেকেই সবাই মেনে নিয়েছে। মেধাবী জয়নালের সাথে সুন্দরী, গুনবতী আর ধনবান বাপের কন্যা রুমাকে যে মানাবে তা সাধারনেও বোঝে। তবুও একটা কথা তো থেকেই যায়। জয়নাল এ নিয়ে মুখ খুলে কাউকে কিছু বলেও না। কথা প্রসঙ্গে কিছু একটা বললেও না হয় বোঝা যেত। কিন্তু জয়নাল নির্বিকার। তার আচরণও স্বাভাবিক।
একদিন জয়নাল ময়নাদের বারান্দায় বসে গল্প করছিল। হঠাৎ করেই ময়নার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো - আমরা তো সবচেয়ে গরীব পরিবার। তারপরও আপনি আমাদের বাড়ীতে আসেন। এটা কি আমাদের দয়া করে।
জয়নাল কিছু বলে না। শুধু আস্তে করে হাসে। ময়না কিছুটা হতাশ হয়। সে একটা উত্তর আশা করেছিল।
এভাবে কিছুদিন চলে যায়। জয়নাল উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে চলে যায়। ময়নার বিয়ে হয়ে যায় পাশের গ্রামে। সময় দ্রুত বদলে যেতে থাকে।
অনার্স পরীক্ষা শেষ করে ছুটিতে বাড়ীতে আসে জয়নাল। অনেক দিন পর সে গ্রামের বাড়ীতে কিছুটা সময় কাটানোর সিদ্বান্ত নেয়। ময়নাও বাপের বাড়ীতে নাইওর আসে। জয়নাল ছুটিতে আসলে রুমা বেশির ভাগ সময় এ বাড়ীতেই থাকে।
এবার জয়নাল আর রুমার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। রুমা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে না পারলেও স্থানীয় কলেজ থেকে অনার্স করেছে। সে লেখাপড়ায় ভালো। জয়নালের যোগ্য পাত্রী।
জয়নাল, রুমা আর ময়না একত্রে বসে গল্প করছে। সন্ধ্যার পরের গ্রাম একটু অন্য রকম। আজ আকাশে পূর্ণ চাঁদ। উঠোনে জ্যোৎ¯œার ছাড়াছড়ি। সবাই উঠোনে জড়ো হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে বিহ্বল তিনটি মানুষ। তাদের সাথে আরও একজন মানুষ যোগ দিয়েছে। তার নাম সুন্দর আলী। ময়নার জামাই। ময়না মেট্রিক পাশ হলেও জামাই তার ভালই হয়েছে। সুন্দর আলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছেলে। ভালো চাকুরী করছে। সে জয়নাল, রুমা আর ময়নার সম্পর্কের কথা জানে। ময়না তার কাছে তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক গল্প করেছে।
গল্প জমে ওঠে। মূলতঃ জয়নাল আর সুন্দরই কথা বলছে। তারা কথা বলছে বিভিন্ন জাতীয় আর আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে। মাঝে মাঝে রুমাও যোগ দিচ্ছে। জয়নাল মেধাবী। তবে সুন্দরও কম যায় না। ময়না কম লেখা পড়ার মানুষ। তবে তার জ্ঞানও একেবারে মন্দ নয়। অতো বেশি না জানলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারে। সে অবশ্য শুনছে। তেমন কিছু বলছে না। এক পর্যায়ে আলোচনা কিছুটা স্তিমিত হলো। হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে ময়নাই মুখ খুলল। জয়নাল ভাই, অনেক দিন আগে আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। আপনি জবাব দেননি। আজ জবাব দেবেন। সবাই উপস্থিত আছে। সবার সামনে বলতে নিশ্চয়ই আপনার সমস্যা নেই।
কোন সমস্যা নেই। আর আমার মনেও আছে প্রশ্নটা কি। আমি কেন তোমাদের বাড়ীতে যাই।
হ্যাঁ।
কারনটা না জানাই ভালো।
কেন? কোন অসুবিধা আছে
হ্যাঁ আছে। আবার নেইও।
তাহলে বলুন।
আমাদের মেম্বরকে ভালো করে চেনো।
হ্যাঁ চিনি। কেন কি হয়েছে!
কিছু হয়নি।
তাহলে?
সে তোমাকে নষ্ট করার পরিকল্পনা করেছিল। যখন দেখল ও বাড়ীতে আমার নিয়মিত আসা যাওয়া আছে তখন সে রণে ভঙ্গ দেয়। তোমার কোন ক্ষতি হোক এটা আমি মানতে পারি।
এই কথা আপনি আমাকে বলেননি কেন?
এটা বলার মতো কোন কথা নয়। ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপার।
জানলে আমি সাবধান হতে পারতাম।
তোমার সাবধানতার কিছু নেই। আমাদের দেশে মেয়েদের সাবধানতায় কিছু আসে যায় না।
হয়তো বা তাই।
তবে তোমার যে কোন ক্ষতি হয়নি সে জন্যে আল্লাহর দরবাররে শুকরিয়া আদায় করো।
সবাই কিছুক্ষণের জন্যে চুপ হয়ে যায়।
Comments
Post a Comment