Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com : The glittering city aroundLife is rich with red, blue light of neonWide sky over the headPieces of moonlight, scatteredAnd in that splashed pieces of meteorThose are taken by the scientists of NASASo height the civilization reachesThis city is the flow of happiness nowSome men like us pass the wayWith frustration
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ২৩ বছরের পাকিস্তানী শাসনের গ্লানিমুক্ত হয় বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার বড় প্রয়োজন ছিলো। ইংরেজদের শোষন ও পাকিস্তানীদের শাসন থেকে আমাদের মুক্তি যে কতোটা জরুরী ছিলো তা আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। স্বাধীন না হলে ৪৫ বছরের মাথায় দেশটিকে এই অবস্থানে দেখা যেত না। বরং এমনটা হতে পারতো বাংলার আকাশে শুকুনের চোখ আমাদেরই মৃতদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এমনটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ অনেক পরাধীন ভূখন্ডের ভাগ্যেই এমনটা ঘটেছে। যাহোক সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে মাত্র নয় মাসেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এ ব্যাপারে অবশ্য ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বের হাতকে খাঁটো করার সুযোগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা বাঙালীর শক্তি সামর্থ্য না থাকলেও আন্তরিকতা ছিলো। আর সেই আন্তরিকতা এসেছিল প্রগাঢ় জীবন বোধ থেকে। আইনস্টাইন তার ই=এমসি২ পেয়েছিলেন সরাসরি বিজ্ঞান থেকে নয়। বরং তার গভীর জীবনবোধই তাকে বিজ্ঞানের এই জটিল তত্ত্ব খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলো। মূলতঃ অনেক কিছুরই উৎসমূল এই জীবনবোধ। বাঙালির সার্থকতা এখানেই যে সে অনেক কিছু থেকে দূরে থাকলেও জীবন বোধের খুব কাছাকাছি ছিলো। আর মুজিবের সবচেয়ে বড় সার্থকতা এখানেই যে তিনি নিজেও কোন জনবিচ্ছিন্ন নেতা ছিলেন না। প্রগাঢ় জীবন বোধের একটা মানুষ যে মাটি আর মানুষের খুব কাছাকাছি ছিলো। আর সেজন্যেই বলতে গেলে খালি হাতের একটা জাতিকে তিনি স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিতে পেরেছিলেন। আজ ৪৫ বছর পর যদি পেছনের দিকে ফিরে তাকাই অজগ্র নোংরা, পঁচা, গলা যেমন দেখতে পাই তেমনি সুন্দর, সুবর্ন, উজ্জ্বলও কিছু কিছু দেখতে পাই। এই দুটোই মূলতঃ গভীর জীবন বোধের ফসল। একটি হয়েছে না থাকার কারণে তার অন্যটি সম্ভব হয়েছে থাকার কারণে। যারা বাংলার সাথে তাদের জীবনকে জুড়তে পারেননি তারা কখনই এই দেশ, মাটি আর মানুষের জন্যে কিছুই করতে পারেননি। সুষমা কোন গাছের ফল নয় যে তা ঝরে ঝরে পড়বে। তাকে পেতে হলে মা, মাটি আর মানুষকে ভালোবাসতে হবে। এই বাংলা বরাবরই ভালোবাসার পূণ্যভ’মি।
১৯৬৬ সালে যখন শেখ মুজিব ৬ দফার ডাক দিলেন মূলতঃ পাকিস্তানের সাথে আমাদের চির বিরহের সীমারেখা টানা হয়ে গেল। পরবর্তী ইতিহাস তারই সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী যদি তা উপলদ্ধি করতো তাহলে বুটের চাইতে ব্যালটকেই বেশি মূল্য দিতো। কিন্তু সেখানেও সেই গভীর জীবনবোধের অভাব। ইট, কাঠ, পাথরের শুষ্ক ভালোবাসায় সেই জীবনবোধ কই। বাঙালি চিরকাল সবুজের মধ্যেই তার ভালোবাসা খ্ুঁজে পেয়েছে।
একটা কথা আজও মাথায় রাখতে হবে উন্নয়ন যতই চূড়ান্ত হোক না কেন, আমরা চিরকাল আমাদের বোধের দ্বারা পরিচালতি।
আজও বাঙালির প্রতিটি পর্বে জীবনের ছাপ। যে বাঙালিটি আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডে বসবাস করে সেও যে মনে প্রাণে সনাতন বাঙালি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং আজকের আধুনিকতা বাঙালির সেই বোধকে আরও তীব্র করেছে। আমাদেরকে এই অনুপ্রেরণাকেই ধরে রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল এই লাল আর সবুজের মধ্যে। তাই তো বার বার ছোবল হানা সত্ত্বেও তারা মাথা তোলে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১৯৭০ সালে যে নির্বাচনটা হয়েছিল তা বাঙালির জন্য এক জ্যামিতিক বিজয়। এই নির্বাচনের ফলাফল বাঙালির জন্যে একটা ক্ষেত্র তৈরি করল। দাবীর ক্ষেত্র। এবার যতোই তালবাহানা করো তোমাকে ঘাটে তোমাকে আসতেই হবে। পাকিস্তানীরাও ঘাটে এসেছিল। তবে তা নির্বোধের মতো। নয় মাস যুদ্ধ করার পর। জ্ঞান থাকলে ২৫শে মার্চ কালো রাতের প্রয়োজনই ছিলো না। ইতিহাসের এই গাঢ় গভীর পাপের দায় তাদেরকেই নিতে হবে। শুধু মাত্র ২৫শে মার্চের কালো রাত্রির কর্মকান্ডের জন্যেই তাদের বিচার হওয়া উচিত। পুরো নয় মাসের কাহিনী তো শিকেয় তুলে রাখলাম। প্রয়োজন হলে নামিয়ে আনব।
ইয়াহিয়া সম্ভবত সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছিলেন। ইতিহাস তাকে সবচেয়ে জটিল অবর্তে ফেলে দিয়েছিলো। তিনি এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করলেন। কোন লাভ হলো না। ফলাফল বরাবরই বাংলাদের পক্ষে। মার্চের ১ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ নাটকীয়তা চরমে উঠল। আসলে সময় যতো আগাচ্ছিল বাস্তবতা ততোটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। অবশেষে ২৫শে মার্চ রাতে এসে সব অন্ধকার এক সাথে নেমে এলো। ঢাকা হয়ে গেলো মৃত্যু আর আর্তনাদের ভয়াল শহর। রাস্তা, ঘাট এমনকি ঘরের মধ্যে মানুষ মরে পড়ে রইল। যা কিছু অবাক হওয়ার তা হলো একটি দেশ সাধারনত তার শত্রু রাষ্টের উপর হামলা চালায়। কিন্তু পাকিস্তান নিজেই তার নিজ ভূখন্ডে হামলা চালালো। এই হামলাই প্রমান করে বাংলাদেশ আসলেই একটি পৃথক ভূখন্ড। এটি পাকিস্তানের সাথে নৈতিক ভাবে কখনও ছিলো না। যা ছিলো তা শুধুমাত্র ইতিহাসের বিজয়ের একটা জড় বাস্তবতা। এখানে অন্য কিছু খুঁজে লাভ নেই। এই আপাতঃ বেদনা বিধুর মিলনকেই কেউ কেউ তাদের আত্মার বন্ধন হিসেবে ধরে নিলো। এরাই পরবর্তীতে রাজাকার, আল-বদর আল-শামস হয়েছিলো। শত্রু খুঁজতে বিদেশে যেতে হয়নি। ঘরের শত্রু বিভীষন ঘরেই ছিলো।
মুজিবকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া হলো না। উল্টো বাঙালি নিধনের নেশায় মেতে উঠলো। এমন কুমন্ত্রণা কারা দিয়েছিলো তা আজ আর অজানা নেই। তবুও কথা থেকে যায় সেদিনের ভুলে থেকে একদল জনগোষ্ঠী আজও শিক্ষা নেয়নি। তাদের বিষাক্ত হুংকার আর চাপা ক্ষোভ আজও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘৃনার বিষবাষ্প ছড়ায়।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। কার কি ভূমিকা ছিলো তা আজ আর নাই বলি। বাসি হয়ে যায়নি। অনেকেই আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যারা তীরে বিষ মাখানোর পর সেই তীর বাঙালির বুকে মেরেছিলো তাদের অনেকেই আজ সাধু সাজার চেষ্টা করছে। নিজেকে খোলা আকাশের নীচে নির্দোষ বলে দাবী করছে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীর বলতে গেলে বেশিরভাগই আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাত্র কয়েকজন আলোচিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারে গোটা জাতি শুদ্ধ হয় না। এ ব্যাপারে জাতীয় ভাবনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নগর কেন্দ্রিক আজকের এই ভাবনা ভবিষ্যতে জাতিকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। আমাদের আরও গভীর গিয়ে এর মূল খুঁজতে হবে।
নয় মাস যুদ্ধ চললো। শুরুতে অগোছালো থাকলেও ধীরে ধীরে বাঙালি নিজেকে গুছিয়ে নিলো। যতই সময় গড়াচ্ছিলো যুদ্ধ পাকিস্তানীদের জন্য শাখের করাত হচ্ছিলো। তারা না পারছিলো টিকে থাকতে না পারছিলো ছেড়ে যেতে। একটা ভুল সামরিক সিদ্বান্তের মাসুল দিতে দিতে তারা এক সময় ক্লান্ত হয়ে রনে ভঙ্গ দিলো। ৯৩০০০ সৈন্য সমেত চিরকালের দুর্বল আর পরাজিত বাঙালীর কাছে পৃথিবীর অন্যতম বাহিনী পরাজয় স্বীকার করলো। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বিজয়ের গাঁথা আছে। এই বিজয় গাঁথা এতোটাই মধুর যে বাঙালি চিরকাল এর অমৃতসুধা পান করবে। ৪৫ বছর পর আজকের এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখলে সেদিনের রক্তভেজা বাংলাদেশের জন্যে অন্তরটা বার বার ডুকরে কেঁদে ওঠে।
১৬ই ডিসেম্বরে এসে বিজয় হস্তগত হয়। সবকিছু ঠিক ঠাক মতোই চলছিল। ভারতীয় বাহিনীও যথা সম্ভব শীঘ্রই চলে গেলো। বাঙালি তার নিজের ধন নিজের হাতে পেলো। সমস্যাটা হলো এখানেই। দীর্ঘদিন শাসিত হওয়ার কারণে শাসন ক্ষমতার ভার কিভাবে নিতে হয় তা তারা মূলতঃ ভুলেই গিয়েছিলো। তাদের আচরনে রাজার অভিব্যক্তি এলো না। বরং তারা অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলো। মুজিব একা আর কজনকে সামলাবেন। একদিকে বিজয়ীর উগ্রতা অন্যদিকে পরাজিতদের ষড়যন্ত্র । মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই তাকে পুরো ব্যবস্থাটার খোল নলচে বদলাতে হলো। বাকশাল কায়েম হলো। কিন্তু বাকশালের মানে বুঝে তাকে মনে প্রানে গ্রহণ করার জন্য দরকার সেই মাত্রার ধৈর্য্য আর দেশপ্রেম। পাশাপাশি অবশ্যই জ্ঞানের গভীরতাও। কিন্তু বাঙালির এসব তখন তলানীতে। প্রতিক্রিয়াশীলরা জেঁকে বসেছেন। আর যায় কোথায়। বিন¯্র জ্যোৎ¯œার নিচে একদল মাতাল ষাড়ের কান্ড করে বসল। তারা ধরে নিলো মুজিবকে সরিয়ে দিলেই তাদের পথ পরিস্কার। কিন্তু সে তো মাত্র তিন মাসের জন্য।
৩রা নভেম্বরেই অপরাধীদের দেশছাড়া করলেন খালেদ মোশাররফ। জিয়াও তাদের ঘরে রাখলেন না। সুযোগ দিয়ে বিদেশে রাখলেন মমি করে। ইতিহাসের কুলাঙ্গাররা এদেশে আর কখনও আগের মতো সদলবলে প্রতিস্থাপিত হতে পারোনি।
জিয়ার মৃত্যু অনেক ক্ষতি করেছে! সবচেয়ে বড় ক্ষতি তার অশিক্ষিতা রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য স্ত্রীকে বাঙালির উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। একটা জাতির জাতীয় পরিস্থিতি কতোটা ঘোলাটে আর দুর্ভাগ্যজনক হলে শুধুমাত্র একজন মৃত জেনারেলের স্ত্রী হওয়ার কারনে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হন তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বের দরবারে বাঙালির ইমেজ একেবারে তলানীতে গিয়ে পৌঁছলে। বাংলাদেশ আবারও হাসির পাত্রে পরিনত হলো।.....
এমনটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ অনেক পরাধীন ভূখন্ডের ভাগ্যেই এমনটা ঘটেছে। যাহোক সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে মাত্র নয় মাসেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এ ব্যাপারে অবশ্য ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বের হাতকে খাঁটো করার সুযোগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা বাঙালীর শক্তি সামর্থ্য না থাকলেও আন্তরিকতা ছিলো। আর সেই আন্তরিকতা এসেছিল প্রগাঢ় জীবন বোধ থেকে। আইনস্টাইন তার ই=এমসি২ পেয়েছিলেন সরাসরি বিজ্ঞান থেকে নয়। বরং তার গভীর জীবনবোধই তাকে বিজ্ঞানের এই জটিল তত্ত্ব খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলো। মূলতঃ অনেক কিছুরই উৎসমূল এই জীবনবোধ। বাঙালির সার্থকতা এখানেই যে সে অনেক কিছু থেকে দূরে থাকলেও জীবন বোধের খুব কাছাকাছি ছিলো। আর মুজিবের সবচেয়ে বড় সার্থকতা এখানেই যে তিনি নিজেও কোন জনবিচ্ছিন্ন নেতা ছিলেন না। প্রগাঢ় জীবন বোধের একটা মানুষ যে মাটি আর মানুষের খুব কাছাকাছি ছিলো। আর সেজন্যেই বলতে গেলে খালি হাতের একটা জাতিকে তিনি স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিতে পেরেছিলেন। আজ ৪৫ বছর পর যদি পেছনের দিকে ফিরে তাকাই অজগ্র নোংরা, পঁচা, গলা যেমন দেখতে পাই তেমনি সুন্দর, সুবর্ন, উজ্জ্বলও কিছু কিছু দেখতে পাই। এই দুটোই মূলতঃ গভীর জীবন বোধের ফসল। একটি হয়েছে না থাকার কারণে তার অন্যটি সম্ভব হয়েছে থাকার কারণে। যারা বাংলার সাথে তাদের জীবনকে জুড়তে পারেননি তারা কখনই এই দেশ, মাটি আর মানুষের জন্যে কিছুই করতে পারেননি। সুষমা কোন গাছের ফল নয় যে তা ঝরে ঝরে পড়বে। তাকে পেতে হলে মা, মাটি আর মানুষকে ভালোবাসতে হবে। এই বাংলা বরাবরই ভালোবাসার পূণ্যভ’মি।
১৯৬৬ সালে যখন শেখ মুজিব ৬ দফার ডাক দিলেন মূলতঃ পাকিস্তানের সাথে আমাদের চির বিরহের সীমারেখা টানা হয়ে গেল। পরবর্তী ইতিহাস তারই সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী যদি তা উপলদ্ধি করতো তাহলে বুটের চাইতে ব্যালটকেই বেশি মূল্য দিতো। কিন্তু সেখানেও সেই গভীর জীবনবোধের অভাব। ইট, কাঠ, পাথরের শুষ্ক ভালোবাসায় সেই জীবনবোধ কই। বাঙালি চিরকাল সবুজের মধ্যেই তার ভালোবাসা খ্ুঁজে পেয়েছে।
একটা কথা আজও মাথায় রাখতে হবে উন্নয়ন যতই চূড়ান্ত হোক না কেন, আমরা চিরকাল আমাদের বোধের দ্বারা পরিচালতি।
আজও বাঙালির প্রতিটি পর্বে জীবনের ছাপ। যে বাঙালিটি আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডে বসবাস করে সেও যে মনে প্রাণে সনাতন বাঙালি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং আজকের আধুনিকতা বাঙালির সেই বোধকে আরও তীব্র করেছে। আমাদেরকে এই অনুপ্রেরণাকেই ধরে রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল এই লাল আর সবুজের মধ্যে। তাই তো বার বার ছোবল হানা সত্ত্বেও তারা মাথা তোলে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১৯৭০ সালে যে নির্বাচনটা হয়েছিল তা বাঙালির জন্য এক জ্যামিতিক বিজয়। এই নির্বাচনের ফলাফল বাঙালির জন্যে একটা ক্ষেত্র তৈরি করল। দাবীর ক্ষেত্র। এবার যতোই তালবাহানা করো তোমাকে ঘাটে তোমাকে আসতেই হবে। পাকিস্তানীরাও ঘাটে এসেছিল। তবে তা নির্বোধের মতো। নয় মাস যুদ্ধ করার পর। জ্ঞান থাকলে ২৫শে মার্চ কালো রাতের প্রয়োজনই ছিলো না। ইতিহাসের এই গাঢ় গভীর পাপের দায় তাদেরকেই নিতে হবে। শুধু মাত্র ২৫শে মার্চের কালো রাত্রির কর্মকান্ডের জন্যেই তাদের বিচার হওয়া উচিত। পুরো নয় মাসের কাহিনী তো শিকেয় তুলে রাখলাম। প্রয়োজন হলে নামিয়ে আনব।
ইয়াহিয়া সম্ভবত সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছিলেন। ইতিহাস তাকে সবচেয়ে জটিল অবর্তে ফেলে দিয়েছিলো। তিনি এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করলেন। কোন লাভ হলো না। ফলাফল বরাবরই বাংলাদের পক্ষে। মার্চের ১ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ নাটকীয়তা চরমে উঠল। আসলে সময় যতো আগাচ্ছিল বাস্তবতা ততোটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। অবশেষে ২৫শে মার্চ রাতে এসে সব অন্ধকার এক সাথে নেমে এলো। ঢাকা হয়ে গেলো মৃত্যু আর আর্তনাদের ভয়াল শহর। রাস্তা, ঘাট এমনকি ঘরের মধ্যে মানুষ মরে পড়ে রইল। যা কিছু অবাক হওয়ার তা হলো একটি দেশ সাধারনত তার শত্রু রাষ্টের উপর হামলা চালায়। কিন্তু পাকিস্তান নিজেই তার নিজ ভূখন্ডে হামলা চালালো। এই হামলাই প্রমান করে বাংলাদেশ আসলেই একটি পৃথক ভূখন্ড। এটি পাকিস্তানের সাথে নৈতিক ভাবে কখনও ছিলো না। যা ছিলো তা শুধুমাত্র ইতিহাসের বিজয়ের একটা জড় বাস্তবতা। এখানে অন্য কিছু খুঁজে লাভ নেই। এই আপাতঃ বেদনা বিধুর মিলনকেই কেউ কেউ তাদের আত্মার বন্ধন হিসেবে ধরে নিলো। এরাই পরবর্তীতে রাজাকার, আল-বদর আল-শামস হয়েছিলো। শত্রু খুঁজতে বিদেশে যেতে হয়নি। ঘরের শত্রু বিভীষন ঘরেই ছিলো।
মুজিবকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া হলো না। উল্টো বাঙালি নিধনের নেশায় মেতে উঠলো। এমন কুমন্ত্রণা কারা দিয়েছিলো তা আজ আর অজানা নেই। তবুও কথা থেকে যায় সেদিনের ভুলে থেকে একদল জনগোষ্ঠী আজও শিক্ষা নেয়নি। তাদের বিষাক্ত হুংকার আর চাপা ক্ষোভ আজও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘৃনার বিষবাষ্প ছড়ায়।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। কার কি ভূমিকা ছিলো তা আজ আর নাই বলি। বাসি হয়ে যায়নি। অনেকেই আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যারা তীরে বিষ মাখানোর পর সেই তীর বাঙালির বুকে মেরেছিলো তাদের অনেকেই আজ সাধু সাজার চেষ্টা করছে। নিজেকে খোলা আকাশের নীচে নির্দোষ বলে দাবী করছে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীর বলতে গেলে বেশিরভাগই আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাত্র কয়েকজন আলোচিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারে গোটা জাতি শুদ্ধ হয় না। এ ব্যাপারে জাতীয় ভাবনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নগর কেন্দ্রিক আজকের এই ভাবনা ভবিষ্যতে জাতিকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। আমাদের আরও গভীর গিয়ে এর মূল খুঁজতে হবে।
নয় মাস যুদ্ধ চললো। শুরুতে অগোছালো থাকলেও ধীরে ধীরে বাঙালি নিজেকে গুছিয়ে নিলো। যতই সময় গড়াচ্ছিলো যুদ্ধ পাকিস্তানীদের জন্য শাখের করাত হচ্ছিলো। তারা না পারছিলো টিকে থাকতে না পারছিলো ছেড়ে যেতে। একটা ভুল সামরিক সিদ্বান্তের মাসুল দিতে দিতে তারা এক সময় ক্লান্ত হয়ে রনে ভঙ্গ দিলো। ৯৩০০০ সৈন্য সমেত চিরকালের দুর্বল আর পরাজিত বাঙালীর কাছে পৃথিবীর অন্যতম বাহিনী পরাজয় স্বীকার করলো। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বিজয়ের গাঁথা আছে। এই বিজয় গাঁথা এতোটাই মধুর যে বাঙালি চিরকাল এর অমৃতসুধা পান করবে। ৪৫ বছর পর আজকের এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখলে সেদিনের রক্তভেজা বাংলাদেশের জন্যে অন্তরটা বার বার ডুকরে কেঁদে ওঠে।
১৬ই ডিসেম্বরে এসে বিজয় হস্তগত হয়। সবকিছু ঠিক ঠাক মতোই চলছিল। ভারতীয় বাহিনীও যথা সম্ভব শীঘ্রই চলে গেলো। বাঙালি তার নিজের ধন নিজের হাতে পেলো। সমস্যাটা হলো এখানেই। দীর্ঘদিন শাসিত হওয়ার কারণে শাসন ক্ষমতার ভার কিভাবে নিতে হয় তা তারা মূলতঃ ভুলেই গিয়েছিলো। তাদের আচরনে রাজার অভিব্যক্তি এলো না। বরং তারা অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলো। মুজিব একা আর কজনকে সামলাবেন। একদিকে বিজয়ীর উগ্রতা অন্যদিকে পরাজিতদের ষড়যন্ত্র । মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই তাকে পুরো ব্যবস্থাটার খোল নলচে বদলাতে হলো। বাকশাল কায়েম হলো। কিন্তু বাকশালের মানে বুঝে তাকে মনে প্রানে গ্রহণ করার জন্য দরকার সেই মাত্রার ধৈর্য্য আর দেশপ্রেম। পাশাপাশি অবশ্যই জ্ঞানের গভীরতাও। কিন্তু বাঙালির এসব তখন তলানীতে। প্রতিক্রিয়াশীলরা জেঁকে বসেছেন। আর যায় কোথায়। বিন¯্র জ্যোৎ¯œার নিচে একদল মাতাল ষাড়ের কান্ড করে বসল। তারা ধরে নিলো মুজিবকে সরিয়ে দিলেই তাদের পথ পরিস্কার। কিন্তু সে তো মাত্র তিন মাসের জন্য।
৩রা নভেম্বরেই অপরাধীদের দেশছাড়া করলেন খালেদ মোশাররফ। জিয়াও তাদের ঘরে রাখলেন না। সুযোগ দিয়ে বিদেশে রাখলেন মমি করে। ইতিহাসের কুলাঙ্গাররা এদেশে আর কখনও আগের মতো সদলবলে প্রতিস্থাপিত হতে পারোনি।
জিয়ার মৃত্যু অনেক ক্ষতি করেছে! সবচেয়ে বড় ক্ষতি তার অশিক্ষিতা রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য স্ত্রীকে বাঙালির উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। একটা জাতির জাতীয় পরিস্থিতি কতোটা ঘোলাটে আর দুর্ভাগ্যজনক হলে শুধুমাত্র একজন মৃত জেনারেলের স্ত্রী হওয়ার কারনে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হন তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বের দরবারে বাঙালির ইমেজ একেবারে তলানীতে গিয়ে পৌঁছলে। বাংলাদেশ আবারও হাসির পাত্রে পরিনত হলো।.....
Comments
Post a Comment