বাবর মাত্র চার বছর পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই তিনি ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ঘাঘরার যুদ্ধে বাংলার সুলতানকে পরাজিত করে গৌড় দখল করেন। আর হুমায়ুন। তাকে একই সাথে লড়তে হলো শত্রæ আর নিজের দুর্ভাগা নিয়তির সাথে। অবশ্য নিয়তির সাথে কি লড়া যায়। যায় না। হুমায়ুনকে তাই হারতে হলো। হতে হলো দেশ ছাড়া। এটাই তো হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই সাফাভিদদের দেশ ইরান। সেখান থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে প্রথমে কান্দাহার, তারপর কাবুল, মুলতান, লাহোর, পাঞ্জাব ইত্যাদি অতঃপর দিল্লি।
হুমায়ুন বহাল হলেন ঠিকই, তবে আয়ু তার শেষ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দুনিয়া থেকে বিদায়। বাংলার কথা ভাববার সময়ই বা কই? তখনও বাংলায় আফগানদের শাসন চলছে। এই আফগানরাও আবার বলতে গেলে অনেকটা স্বাধীনের মতোই। দিল্লীর বৈশ্যতা মানার ধার তারা ধারে না। অতঃপর আকবর বসলেন। তার সামনেও চ্যালেঞ্জ। নাম তার হিমু। বৈরাম খাঁ দাঁড়ালেন কোমর শক্ত করে। আবার লড়াই হলো পানিপথের মাঠে। আকবর জিতলেন বৈরাম খাঁর তরবারীতে। তারপর ধীরে ধীরে ক্ষমতায় নিজেকে স্থির করলেন।
১৫৭৪ এ প্রথম সুবাদার পাঠালেন খান ই খানান মুনিম খানকে। শুরু হলো বাংলা অভিযান। তারপর একে একে খান জাহান, হাসান কুলি খান, মুজাফফর খান তুরবাতি, মির্জা আজিজ কোকা, ওয়াজির খান তাজিক, শাহবাজ খান কাম্বোহ, সাদিক খান, আবারও শাহবাজ খান কাম্বোহ, সাঈদ খান, রাজা মানসিংহ, কুতুব উদ্দীন কোকা, জাহাঙ্গীর কুলি বেগ, ইসলাম খান চিশ্তি, কাসিম খান চিশ্তি, ইব্রাহিম খান ফতেহ ই জং, দারাব খান, মাহাতাব খান, মুর্কারম খান, ফিদাই খান, কাসিম খান জুভাইনি, মীর মোহাম্মদ বাকির, মীর আব্দুস সালাম, প্রিন্স শাহ সুজা, মীর জুমলা, শায়েস্তা খাঁ, আজম খান কোকা, প্রিন্স মোহাম্মদ আযম, আবারও শায়েস্তা খাঁ, দ্বিতীয় ইব্রাহিম খাঁ, আবারও প্রিন্স আজিম উশ শান (১৬৯৭-১৭১২) এবং এর পর বাংলার স্বাধীন নবাব হয়েছেন মুর্শীদ কুলী খান, সুজাউদ্দীন খান, সরফরাজ খান, আলীবর্দী খাঁ এবং সবশেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
মোঘলদের দারুণ দিনগুলোতে তাদের যোগ্য সুবাদারেরা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরা, বার্মা, কামরূপ ইত্যাদিও তাদের আয়ত্তে এনেছিলো। মোঘল বাংলায় অনেক স্বাধীন নবাবও ছিলো। আর ঐ ঘটনা ঘটেছে বারবার। যখনই বাংলার শাসক সুযোগ পেয়েছে বিদ্রোহ করেছে। কারণটা আর কিছু নয়। দিল্লি থেকে এর বিরাট দূরত্ব। বাংলার দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থা, নদী, জল, কাদা, হাওয়া, মশা, মাছি. সাপ, ব্যাঙ, কেঁচোসহ কলেরা, ডায়েরিয়া, আমাশয়ের মতো বিচিত্র সব প্রাণঘাতী রোগ জীবাণু। বাংলায় যে কতো মোঘল সুবাদার মরেছে তার বর্ণনা করুণ। এখান থেকেই তো আক্রান্ত হয়ে অতঃপর জ্বরে ভুগে মরেছিলেন বিশ্বজয়ী বীর আলেক্সান্ডার।
Comments
Post a Comment