Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

MUGHAL IN INDIA NURUDDIN BAKER JANG TIPU SULTAN IMAD UL MULK AHMAD SHAH DURRANI

 

আমাদের অনেকেই মনে করেন যেহেতু মোঘলরা ভিনদেশী তাই তারা আমাদেও আপন তো নয়ই বরং পর বা আমাদের ইতিহাসের অংশ নয়। এটা যে কতো বড় একটা নির্বোধের ভাবনা তা বোঝানো মুশকিল। পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসই মাইগ্রেশনের ইতিহাস। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় এই অঞ্চলে প্রথম যারা এসেছিলো তারা আফ্রিকা থেকে সমুদ্র উপকূল ধরে মিশর আরব হয়ে আরব সাগরের তীর ঘেঁষে ভারতের শেষ সীমানায় এসে পৌঁছায়। তারপর যারা আসে তারা ইউরোপের নি¤œভাগ অর্থাৎ কৃষ্ণসাগর, কাষ্পিয়ান সাগর, আরল সাগর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে আগত মানুষ যাদেরকে আমরা আর্য বলি। তারপর যারা তারা হলো শক, হুন, তাতার আর শেষ দিকে এসে যারা এলো তারা হলো আফগান, মোঘল কিংবা ইংরেজ।

অবশ্য খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ প্রায় পাঁচশ বছর আগে গ্রীকরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিলো মিশর ও এশিয়া মাইনরে আর পরবর্তীতে তাদেরকে স্থানান্তরিত করেছিলো রোমনরা। এসব ইতিহাস তো আমাদের সবারই জানা।
মূলতঃ যে কারণে এতো কথা বলা তা হলো সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোর যে ইতিহাস তাতে যাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে মোঘলদের ইতিহাসই সবচেয়ে বর্ণাঢ্য। ইতিহাস সাক্ষী দেয় তারা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
 
কখনও কখনও আমরা তাদের কাছে ছুটে গিয়েছি। আবার কখনও কখনও তারাই ছুটে এসেছে আমাদের উদ্ধার কর্তা হিসেবে। সিপাহি বিদ্রোহের কথা যদি ধরি তাহলে দেখা যায় সিপাহীরা মোঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে তাদের অবলম্বন করলেন। এক কথায় অসহায় বৃদ্ধ বাদশাহ না করতে পারলেন না। ফলাফল তার চোখের সামনেই শাহজাদাদের মৃত্যুদন্ড তো দেখতে হলোই পাশাপাশি কতো আপনজন যে হারাতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আবার ওদিকে যদি পলাশীর যুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ের প্রতিরোধের ইতিহাস লক্ষ্য করি অর্থাৎ ফকির মজনু শাহ নামের আড়ালে যে ইতিহাসকে ঢেকে ফেলা হয়েছে তার মূলে প্রবেশ করলে পাওয়া যায় একজন মোঘল শাহজাদার সংগ্রামের ইতিহাস। তিনি নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন ইংরেজদের প্রতিহত করতে।
 
আমরা অনেকেই জানি না যে এই মহান বীরের নাম নূরউদ্দীন বাকের জং। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলার পতন হলে মোঘলরা তাকেই বাংলার সুবাদার নিয়োগ করে আর এটাই ছিলো নিয়মতান্ত্রিক। কারণ বাংলা যেহেতু মোঘলদের অধীনে আর সিরাজদ্দৌলা যেহেতু স্বাধীনতা ঘোষণাকারী নবাব আলীবর্দ্দী খানের নাতি (তাই সেও স্বাধীন) অতএব তার পরাজয়ের সাথে মোঘল সুবাদারীর তো প্রভাব থাকার কথা না। তারা ছিলো মুর্শিদাবাদে। আর নূরউদ্দীন বাকের জংয়ের কার্যকলাপ ছিলো উত্তরবঙ্গ অর্থাৎ রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ইত্যাদি এলাকায়। আসল কথা হলো মুর্শিদ কুলী খাঁ-র সময়কাল থেকে বাংলার সুবাদাররা নিজেদের নবাব ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রের মোঘল শাসনকে স্বীকার করার চেষ্টা করেছে। ইতিহাস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে তাদের এই ঠুন্কো ঘোষণাই বাংলাকে ইংরেজদের থাবায় নিতে সক্ষম করেছিলো। এছাড়াও মোঘল কর্তৃত্বের বাইরে চলে আসায় মোঘল শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। ওদিকে মারাঠারা চেপে বসে কেন্দ্রের মোঘল শক্তির উপর। আর কেন্দ্র তখন মারাঠাদের অর্থের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বাংলাকে দেখিয়ে দেয় তাদের খাজনা আদায়ের জায়গা হিসেবে। আর মারাঠারাও তখন সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার উপর।
 
ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলার নিরীহ জনগণ। মুর্শিদাবাদের নবাবরা তো তাদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র দ্বারা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিলো কিন্তু মোঘল শাহজাদা তথা সুবেদার নূর উদ্দীন বাকের জং বাংলার সেই দুর্দিনে বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলো কিন্তু ইংরেজরা সেই ইতিহাসকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে সফলও হয়। তারা সেই বিদ্রোহকে নবাবের পক্ষ থেকে বিদ্রোহ না বলে বরং ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহ বলে চালিয়ে দেয়। আর এভাবেই এক মহান বীরের লড়াইয়ের ইতিহাস পরিণত হয় ফকিরের প্রতিবাদে।
 
এই অবকাশে একটু বলে রাখতে চাই, ১৭৫৭ সালে বাংলার বুকে যখন পলাশীর মর্মন্তুদ ইতিহাস রচিত হয় তখন দিল্লীতেও সংঘটিত হয় এক হৃদয় বিদারক ইতিহাস। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রধান উজির ইমাদ উল মূলক এর ষড়যন্ত্রে মোঘল বাদশা আহমদ শাহ বাহাদুর অন্ধ হয়ে যান এবং তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
 
বসানো হয় দ্বিতীয় আলমগীরকে। ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তাকেও হত্যা করা হয়। একের পর এক মোঘল বাদশা যেন তার হাতের পুতুল। এই সময় অবশ্য একটা ঘটনা ঘটে। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালীর হস্তক্ষেপে ইমাদ উল মূলক ক্ষমতাচ্যুত হন। প্রধান উজির হন নজিবউদ্দৌলা। তিনি দায়িত্বে ছিলেন ১৭৫৬ থেকে ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। কিন্তু ১৭৫৯ সালে ইমাদ উল মূলক স্বরূপে আবিভূত হলো। তিনি মোঘল বাদশা দ্বিতীয় আলমগীরকেও হত্যা করান। শুধু তাই নয় ভাবী বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু তিনি পালাতে সক্ষম হন। তাকে আশ্রয় দেন সুজাউদ্দৌলা এবং ঘোষণা দেন স¤্রাট হিসেবে। বাদশাও তাকে ঘোষণা দেন প্রধান উজির হিসেবে। ওদিকে দিল্লীতে ইমাদ উল মূলক মারাঠাদের সহযোগিতায় তৃতীয় শাহজাহানকে ক্ষমতায় বসান এবং নিজে হন উজিরে আযম। এভাবে প্রায় এক বছর কাল চলেছিলো। এরপর আহমদ শাহ দূররানী দিল্লী আক্রমণ করলে ইমাদ উল মূলক পলায়ন করেন। মারাঠারা আবদালীর মুখোমুখি হন এবং পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠারা করুণ পরিণতি বরণ করেন। বলা হয় ইতিহাসে এরকম করুণ ঘা হিন্দুরা আর কখনো খেয়েছে কী-না জানা নেই। মুনীর চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রাপ্তর যারা পড়েছেন তারা কিছুটা হলেও জানেন পানির জন্যে মৃত্যুরত তাদের সেই আহাজারি। সে যা হোক ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালী কর্তৃক তৃতীয় শাহজাহানের উৎখাত হলে বৈধ স¤্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম সিংহাসন ফিরে পান। এদিকে আরও যে একটি ঘটনা মনে রাখার মতো তা হলো যখন শাহজাদা আলী গওহর (দ্বিতীয় শাহ আলম) জীবন বাঁচাতে সুজা উদ্দৌলার কাছে আশ্রয় নেন তখন তাকে ধরার জন্যে ইমাদ উল মূলক বাংলার বেঈমান নবাব মীর জাফরকে আহŸান জানান। কিন্তু মীর জাফর সেই দুঃসাহস দেখাননি।
 
এখানে ইতিহাসের একটা করুণ শিক্ষার কথা বলে রাখি। ইমাদ উল মূলককে দিল্লীর দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম সফদর জং। আর এই ইমাদ উল মূলকই পরবর্তীতে সফদর জং-এর পুত্র সুজা উদ্দৌলার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান। ইতিহাস কতো নির্র্মম। অবশ্য আহমদ শাহ আবদালীর সহযোগিতায় পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে নজিব উদ্দৌলা, সুজা উদ্দৌলা প্রমুখেরা (ইমাদ উল মূলক পালিয়ে গেলেও) তার সহযোগী মারাঠাদের বয়ে যাওয়া রক্তের ¯্রােত দান করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। মারাঠারা তাদের চামচামির জবাব হাতে নাতেই পেয়েছিলো। ইতিহাস থেকে দেখা যায় আবদালীর সেই অভিযান ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের পরবর্তীকালে শান্তিতে বসবাসে ভীষণভাবে সহায়ক হয়েছিলো। আর একটা কথা, ইংরেজরা একে একে মুসলিম বীর যেমন নূরউদ্দীন বাকের জং, টিপু সুলতান প্রমুখদেরকে হত্যা করে হিন্দুদেরকে যেভাবে বাড়তে সাহায্য করেছিলেন মুসলমানদের বন্ধু আবদালী তাদের কড়া শিক্ষা না দিলে উপমহাদেশে মুসলমানদের বসবাস করাই কঠিন হয়ে যেতো। মনে রাখা উচিত স্পেন আজ ভুলে গেছে একদিন সেখানে মুসলমানরা ছিলো। আজও ভারতের বুকে আসাদউদ্দীন ওয়ায়সি, আকবরউদ্দীন ওয়ায়সির মতো বাঘেরা আছে বলে সেখানে মাঝে মাঝে দু’একটা হুংকার শোনা যায়। অথচ বলতে আফসোস লাগে, এই ভারতীয় উপমহাদেশটা মুসলমানরা প্রায় সাড়ে সাতশ বছর শাসন করেছিলো।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak