ইতিহাস আকবরকে মহামতি খেতাব দিয়েছে। সম্ভবতঃ এটা তার প্রাপ্য। মোঘল সা¤্রাজ্যকে সর্বধর্মের, সর্ববর্ণের, সব ধরনের মানুষের সা¤্রাজ্যে পরিণত করার পেছনে তার যেমন অসামান্য অবদান তেমনি হুমায়ুনের ভীতিকর ব্যর্থতার পর সদ্য পুণরুদ্ধার করা টালমাটাল সা¤্রাজ্যের হাল ধরে তাকে স্থিতিশীল করা যেন তেন চ্যালেঞ্জ ছিলো না। তার উপর আকবরের বয়সটাই বা কতো তখন। ঐ বয়সে তো রাজপুত্ররা শিকার করে বেড়ায়। যা হোক আকবর সব সামলেছেন। ঘর এবং বাহির একই সাথে। বৈরাম খাঁর তত্ত¡াবধানে ছিলেন মাত্র চার বছর। অবশ্য এই সময়টাতেই বৈরাম খাঁ লড়েছিল পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ যা মূলতঃ মোঘল শাসনামলকে স্থায়ী ভিত্তি এনে দিয়েছিলো। আকবরের শাসনামল অর্জন আর কৃতিত্বে পরিপূর্ণ। তার শাসনামলে তাকে কেবলমাত্র দুর্গম বাংলা নিয়ে খানিকটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পরবর্তীতে যা তার সুযোগ্য পুত্র জাহাঙ্গীর আর তার যুগান্তকারী সব সুবাদাররা পুষিয়ে নেন। বারো ভুঁইয়ারা বিশেষ করে ভুঁইয়াকুল শিরোমণি “ঈসা খাঁ” আকবরকে দারুণ ভুগিয়েছিলেন।
আকবর যখন পরিণত যুবক তখন তার জীবনে পূর্ণতা আনেন তার সুযোগ্যা স্ত্রী যোধা বাই। আকবর সক্ষম হয়েছিলেন তার সময়কার সেরা প্রতিভাবানদেরকে তার রাজ দরবারে জড়ো করতে যা নবরতœ সভা হিসেবে পরিচিত। টোডর মল, আবুল ফজল, বীরবল, ফৈজি আরো কতো অসাধারণ মনীষীর মনীষা সমৃদ্ধ করেছিলো তার সময়টাকে। ইতিহাস তাকে তার এই নবরতœ সভার জন্য আলাদা মূল্যায়ন করে।
আকবর বিজেতাও ছিলেন। আকবরকে নিয়ে বিতর্কও কম ছিলো না। ধর্মীয় গুরুরা ছিলেন সবচেয়ে সরব। তার দ্বীন ই ইলাহি তাকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দেয়। আকবর তবু অনড় ছিলেন। কিছুটা মতি বিভ্রমের মতো মনে হলেও ব্যাপারটা যে গোল মেলে আর বিতর্কের উদ্রেককারী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ একথা তো সত্য যে আকবর মহামতি বটে তবে কোন নবী নন। তাই ধর্মীয় ব্যাপারে তার কোন উদ্ভাবন বা প্রাপ্তিযোগ এর কোনোটাই গ্রহণ যোগ্য নয়।
তবে হ্যাঁ আইন-ই-আকবরী, আকবর নামা ইত্যাদি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের চমৎকার উপাদান।
Comments
Post a Comment