“বহুদ্ভ শাহ জাহাঙ্গীর যাফ্ৎ সাদ জেবর
বনামে নূরজহাঁ বাদসহে বেগম অর।”
এই লাইন দু’টো কোথায় লেখা থাকতো জানেন? জাহাঙ্গীর, হ্যাঁ, স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে প্রচলিত মুদ্রায় তাদের দু’জনের নাম যেমন অংকিত থাকতো তেমনি লেখা থাকতো এই লাইন দু’টো। একজন তো পেলাম স¤্রাট জাহাঙ্গীর। অন্যজন তাহলে কে? নূরজহাঁ। নূর জাহান।
হ্যাঁ। তিনি স¤্রাজ্ঞী নূর জাহান। স¤্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। কিন্তু কে এই নূর জাহান? কি তার অতীত?
ইতিহাস জাহাঙ্গীরের নাম অমর করে রেখেছে। কিন্তু ক’জন জানে শের আফগানের কথা। এই শের আফগান ছিলো নূর জাহানের স্বামী।
নূর জাহানের দিকে জাহাঙ্গীরের নজর পড়ার পরই তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তাকে মরতে হবে। কিন্তু সে না হয় তার মনের ভাবনা। তবে নূর জাহানও কি এটা চেয়েছিলো? হয়তো তাই। তাতে তার অনেক লাভ। মোঘল স¤্রাজ্ঞী হওয়ার হাতছানি। অথচ কি-না করেছিলো শের আফগান স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে থাকতে। তবে শেষ তক যা হবার তাই হয়েছিলো। তাকে মরতে হয়েছিলো? কিন্তু কিভাবে?
জাহাঙ্গীর যখন বাঘ শিকারে বের হলেন বাঘকে ঘিরে ফেলার পর প্রস্তাব দিলেন কে একা বাঘকে হত্যা করতে পারবে? অনেকেই রাজী হলো কিন্তু শের আফগান দেখলেন এতে বীরত্ব নাই। তিনি অ¯্রহীন হয়ে বাঘকে হত্যার প্রস্তাব দিলেন। কেউ এগোলো না। শের আফগান বাঘকে হত্যা করলেন। তার উপাধি হলো শের আফগান। এ যাত্রা সে বেঁচে গেলো।
এবার নিযুক্ত করা হলো হাতি। মাহুত কে বলা হলো চিপা গলিতে শের আফগানকে পদপিষ্ঠ করে মারতে। জাহাঙ্গীর দাঁড়িয়ে ছিলেন জানালায়। কিন্তু যা দেখলেন তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ। শের আফগান হত্যা করলেন হাতিকে। শের আফগান এ যাত্রাও বেঁচে গেলেন।
অবশেষে যা হবার তাই হলো। শের আফগানকে সরাসরি আক্রমণ করলো কুতুবুদ্দিন এন্ড গং। শের আফগান বুঝলো কুতুবুদ্দীনই হলো মূল কালপ্রিট। সে কুতুবুদ্দীনকে দ্বিখন্ডিত করলো। কিন্তু তার সৈন্যদল শের আফগানকে আক্রমণ করলো। শের আফগান নিহত হলো বীরের মতো।
এই হলো নূর জাহানের স্বামী শের আফগানের জীবন দানের কাহিনী। নূর জাহানের স্বামী হওয়া তার জন্যে সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো। কিন্তু যে নূর জাহানের জন্যে তাকে আত্মাহুতি দিতে হলো সেই নূর জাহানের অনুভূতি কি ছিলো?
আসুন জানা যাক দীনেশচন্দ্র সেনের লেখা থেকে, “নূর জাহান স্বামীর হনন সংবাদ পাইয়া বিচলিত হন নাই। তিনি নাকি এমন কথাও বলিয়াছিলেন যে, তাঁহার স্বামী, তাহার নিশ্চিত মৃত্যু পূর্ব্ব হইতে অনুমান করিয়া, তাঁহাকে বিনা আপত্তিতে স¤্রাটের অঙ্কশায়িনী হইবার অনুমতি দিয়া গিয়াছেন।”
অবশ্য শোনা যায় কুতুবদ্দীনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে জাহাঙ্গীর অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন। আর আফসোস করে বলেছিলেন তিনি মেহেরুন্নেসার মুখ পর্যন্ত দর্শন করবেন না কিন্তু ইতিহাস হতে দেখা যায় অতঃপর মেনেরুন্নেসা নূর জাহান হয়েছিলেন।
এখন আপনারাই বলুন নারী তাহলে কিসে আটকায়। কোনো কিছুতেই না। ক’জন পুরুষই বা জীবনে শের আফগান হতে পারে। তবুও তো মেহেরুন্নেসা আটকাননি। বরং শের আফগানের মৃত্যু তাকে মোটেই বিচলিত করেনি। তিনি অতিশয় আনন্দে জাহাঙ্গীরের ঘর করেছেন।
Comments
Post a Comment