Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

মোঘল-আসাম সংঘর্ষ MUGHAL AHOM CONFLICT MIR JUMLA II

 

মোঘলদের সাথে আসামের সংঘর্ষ চলেছিলো ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই ছিলো জয় পরাজয়ের গল্প। যদিও অবশেষে মোঘলদেরই ত্যাগ করতে হয়েছিলো আসাম তবুও আসামের দুর্গম এলাকায় অনেক দুঃখ-কষ্ট-ভোগান্তির মধ্যেও অনেক মোঘল সেনাপতি যেমন কাসিম খান চিশ্তি, দ্বিতীয় মীর জুমলারা যে ইতিহাস রচনা করেছিলো তাও কম সাফল্যের আর গৌরবের নয়।

আসামের সাথে মোঘলদের সংঘর্ষ আলোচনা করতে গেলে শুরুতেই একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার। বর্তমানে যা কুচ বিহার তার সাথে আসামের ইতিহাস ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এই কোচ বিহার যা এখন কুচ বিহার নামে পরিচিত ছিলো তারও ছিলো দুটো ভাগ। একটা কোচ বিহার আর একটা কোচ হাজো।
 
তিক্ততার সূত্রপাত হয়েছিলো যখন মোঘলরা রাজা নর নারায়নের পুত্র লক্ষী নারায়নকে সমর্থন দান করেন। তখনই কোচ হাজোর রাজা দাবী করা রঘুদেব যিনি চিলা রায়ের পুত্র তার মেয়েকে বিয়ে করেন আসামের রাজা সুখাম্ফা। তারা এই সম্পর্ক আরও গভীর করেন পরবর্তীতে কোচ হাজোর আরেক রাজা পরিক্ষিতের মেয়েকে আসামের আরেক রাজা সুসেংফার সাথে বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
 
তবে মূল সংঘাত শুরু হয় ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে। যখন মোঘল সুবাদার কাসিম খান চিশ্তির নির্দেশে আবু বকর ও ভুষণার রাজা সত্রজিতের অধীনে মোঘল বাহিনী কোচ হাজো এলাকায় অগ্রসর হয়। ধীরে ধীরে তারা আসামের সীমানায় পৌঁছে যায়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে এই প্রথম মোঘল-আসাম শক্তিদ্বয় মুখোমুখি অবস্থান নেয়। মোঘলদের সামলাতে আসামীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অভিযানে মোঘলদের প্রাথমিক সাফল্য থাকলেও আসামীদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোঘলরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়। মোঘলদের প্রথম যাত্রার আসাম অভিযান এরূপভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
 
আবারও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় তখনই যখন আসাম অভিযানে মোঘলদের এই ব্যর্থতা কোচ হাজো এলাকায় অবস্থানরত মোঘলদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিদ্রোহী করে তোলে। এই সুযোগ নিতে আসামের রাজা প্রতাপ সিংহ ক্ষমতাচ্যুত রাজা পরিক্ষিতের পুত্র বলিনারায়নকে রাজা ঘোষণা দেন এবং সাহায্য পাঠান কিন্তু কার্যত বলি নারায়ন ব্যর্থ হন।
 
১৬১৮ খ্রিস্টাব্দে ধানিকলের পাহাড়ি প্রধানগণ মোঘলদের বিরূদ্ধে বিদ্রোহী হলে এবারও আসামের রাজা এগিয়ে আসেন তাদের সাহায্য করতে। প্রথম পর্যায়ে মোঘলরা বাধ্য হন পিছু হটতে কিন্তু অনতিবিলম্বে তারা শক্তি সঞ্চয় করেন এবং পাহাড়ি প্রধানগণকে সরিয়ে দিয়ে ধানিকল দখল করতে সক্ষম হন। পাহাড়ি প্রধানগণ আসামে আশ্রয় নেন।
 
একদিকে আসামে আশ্রয় নেওয়া পাহাড়ি প্রধানগণের আশ্রয়দান এবং অন্যদিকে বিশ্বঘাতক সত্রজিতের মোঘলদেরকে আক্রমণ করার ধারণা উস্কে দেয়ায় তিক্ততা বেড়ে যায়। তখনি বলিনারায়ন কোচ হাজো অভিযান শুরু করেন। একটা সময় ধরে সংঘর্ষ চলার পর উভয় পক্ষ ক্ষান্ত দেয়।
 
১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। মোঘলরা অগ্রসর হলেও সমধারা দূর্গের সাথে সংঘর্ষে মোঘলদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উভয় পক্ষ শান্তি চুক্তি করে। ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দের এই চুক্তি “আসুরার আলী চুক্তি” নামে পরিচিত।
 
এই চুক্তির ফলে মোঘলরা আসামীদেরকে স্বীকার করে নেয়। আসামীরাও মোঘলদেরকে কোচ বিহার ও কোচ হাজোর শাসক হিসেবে মেনে নেয়। কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও উভয় পক্ষ চুক্তি মেনে নিয়ে নতুন করে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে।
১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানের অসুস্থতাকালীন সময়ে পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকারের লড়াইয়ের সময়কালীন দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আসামের রাজা জয়ধ্বজ গৌহাঁটি থেকে মোঘলদের বিতাড়িত করে মানস নদী পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তার এই আক্রমণ ঢাকার কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তিনি বিপুল সংখ্যক মোঘল প্রজাকে বন্দী করে নিয়ে যান।
 
আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় স্থির হলে তিনি মীর জুমলাকে নির্দেশ দেন আসাম অভিযানের। মীর জুমলা অগ্রসর হন কোন বাধা ছাড়াই। আর এভাবেই তিনি গৌহাঁটি পৌঁছাতে সক্ষম হন। বলা হয়ে থাকে আসামীদের মধ্যকার আন্তঃ বিরোধের কারণে তিনি বলতে গেলে কোনো প্রকার প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি। আরও অগ্রসর হলে তিনি প্রতিরোধের মুখোমুখি হন। তবে তা তাকে প্রতিহত করতে পারেনি। তিনি সীমালুগড় ও সমধারা দূর্গ জয় করে রাজধানী গড়গাঁও জয় করেন। আসামের রাজা জঙ্গলে আশ্রয় নেন।
 
বর্ষাকাল আসে। আসামের বৃষ্টিপ্লাবিত আবহাওয়ায় মোঘলরা বসে থাকতে বাধ্য হয়। বর্ষকালের সুযোগ নিয়ে আসামীরা রাজধানী গড়গাঁও ও মথুরাপুর বাদে সমস্ত এলাকাটাই জয় করে নেয়। বর্ষা শেষ হলে চাঙ্গা হওয়া মোঘল বাহিনী পুনরায় আক্রমণ শুরু করে। রাজা আবারও পাহাড়ে পলায়ন করেন। অবশেষে উভয় পক্ষের সম্মতিতে কোচ হাজো পুনরায় মোঘলদের অধীনস্ত হয়। আসামের রাজা জয়ধ্বজ ব্যাপক ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।
 
জয়ধ্বজের ছেলে চক্রধ্বজ (১৬৬২-১৬৭০) ক্ষমতায় বসলে তিনি চুক্তি অস্বীকার করেন। এদিকে মীর জুমলা ক্ষমতায় বসান সৈয়দ ফিরোজ খানকে। মীর জুমলার মৃত্যুর পর আসামে মোঘল অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। প্রথমে সরাইঘাটের যুদ্ধ (১৬৭১) ও পরে ইটাখুলির যুদ্ধে (১৬৮২) মোঘলরা পরাজিত হলে তারা বর্তমান বাংলাদেশের যে সীমানা সেই পর্যন্ত সরে আসতে বাধ্য হয়। আর এভাবে আসাম পর্ব শেষ হয়।
 
OMAR KHALED RUMI_mughal-ahom_assam

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak