৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা নগরীতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত সব কিছু সেখানকার নিয়ম মতই চলছিল। ঝামেলা বাঁধলো যখন তিনি ৪০ বছর বয়সে পৌঁছলেন। কয়েক বছর ধরেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হেরা গুহায় ধ্যান করছিলেন। একদিন সেখানেই ঘটল অলৌকিক ঘটনাটা। আল্লাহ্র ফিরিস্তা হযরত জিব্রিল (আঃ) এসে পৌঁছলেন। আল্লাহর বাণী তাঁর কাছে পৌঁছে দিলেন। সূরা আলাকের ১ম পাঁচটি আয়াত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বার্তা বাহক হলেন। তাঁর আহ্বানে হযরত খাদিজা (রাঃ) দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর কিশোর আলী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু মক্কায় তাঁর এই প্রচার নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হল। তাঁর নিজ বংশ মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশরাই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে গেল। আসলে এমনটা হওয়ারই ছিল। কুরাইশরা তাদের চিরাচরিত ধর্ম বিশ্বাসের উপর এই অনাকাঙ্খিত আঘাত অত সহজে মেনে নিতে পারেনি। তারা নানা ভাবে বিরোধিতা করতে শুরু করল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের শারিরীক এবং মানসিক উভয় ভাবেই অপমান করতে শুরু করল।
কিন্তু হিতে বিপরীত হল। ইসলাম দিনে দিনে শক্তিশালী হতে লাগল। মক্কায় প্রায় ১৩ বছরের জীবনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাওহীদ ও রিসালাতের বিশ্বাস অন্তরে বদ্ধমূল করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হলো না। ইসলাম প্রচারের ১১ বছরের মাথায় বেশ কিছু অনুসারীকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও কিছু অনুসারী মদিনায় হিজরত করেন। এভাবে প্রায় ১৩ বছরের মাথায় আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হযরত আবু বক্কর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে মদীনায় হিজরত করেন।
মদিনায় ইসলাম প্রচার তাঁর জন্য অনেক সহজতর হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইসলাম প্রচার মোটেই সহজ ছিল না। তাঁকে তাঁর আপন জনদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা এটা ছিল প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরূদ্ধে আঘাত। চাচা আবু তালেব মুসলমান ছিলেন না। কিন্তু তিনি তাঁকে তাঁর দাদার মৃত্যুর পর লালন-পালন করেছিলেন। তাই তিনি তাঁর পক্ষে দাঁড়ালেও তাঁর উপরও চাপ ছিল। অবশ্য কোন চাপের বিরূদ্ধেই তিনি তাঁর ভ্রাতুস্পুপুত্রকে পরিত্যাগ করেন নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তাঁর মাথার উপর ছায়া হয়ে ছিলেন। শোবে আবু তালেবে তিনি নবীজি (সাঃ) এর সাথে অবরুদ্ধ অবস্থায় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছিলেন। অতঃপর দুর্বল ও রুগ্ন অবস্থায় পৃথিবী ত্যাগ করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর চাচার মৃত্যুর দিনেও দিনভর তাঁর ঘরের বারান্দায় অপেক্ষা করেছিলেন। তাঁর আশা ছিল যদি শেষ মুহুর্তেও চাচাকে কলেমা পড়ানো যায়। কিন্তু আবু জাহেল এবং তার সঙ্গীরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাঁর চাচার শয্যা পাশে ভিড়তে দেন নি। তাদের ভয় ছিল পাছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে কলেমা পড়াতে সক্ষম হন। হযরত খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনে এটাই ছিল সবচেয়ে শোকাবহ ঘটনা।
মদীনার জীবনে নবীজি (সাঃ) এবং ইসলাম উভয়ের জন্য সবচেয়ে সাফল্যের অধ্যায়। মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ইসলামের প্রচার। হুজুর (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে এখানে বসেই ইসলামের বার্তা প্রচার করেছিলেন। মসজিদের সাথে মিলিত হুযরাতেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থাকতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) এই ঘরেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী ছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী এই ঘরেই তাঁকে দাফন করা হয়। আজও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এখানেই শুয়ে আছেন। তাঁর দুই পাশে হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর (রাঃ) শায়িত।
ইসলামের বিকাশ মূলতঃ সাধিত হয় এই মাদানী জীবনেই। মক্কার মোহাজির ও মদীনার আনসারদের মিলিত প্রয়াসে ইসলাম বিকাশ লাভ করতে থাকে। হুজুর (সাঃ) এর নবুয়তের ২৩ বছরের জীবন কখনও কুসুমাস্তীর্ন ছিল না। বদরের যুদ্ধ যা নবুয়তের চতুর্দশ বর্ষে সংঘটিত হয়েছিল অর্থাৎ ১৩ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল, ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সবচেয়ে বড় সংঘাত হিসাবে পরিচিত।
এরপর আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এসবের মধ্যে ওহুদ, খন্দক, হুনাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে অনেক সাহাবী শহীদ হন। মুসলমানদের মধ্যে নবীদের পরেই শহীদদের মর্যাদা। আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিলিয়ে দেওয়ার চেয়ে মহান আর কি হতে পারে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আর্থিক ভাবে অতোটা সচল ছিলেন না। কিন্তু ২৫ বছর বয়সে মক্কার ধনাঢ্য মহিলা হযরত খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তিনি স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন। আর হযরত খাদিজা (রাঃ) তাঁর সব সম্পদ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পায়ের কাছে ঢেলে দিয়েছিলেন। ইসলাম পূর্ববর্তী সময়েও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত দানশীল ও জনদরদী ছিলেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) কর্তৃক প্রদত্ত এই সম্পদ তিনি অকাতরে ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন।
Comments
Post a Comment