আজকাল সংগ্রামী মেয়েদের একদম দেখাই যায় না। যাবেই বা কেমন করে। অর্থনীতির সূচক এগিয়েছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা । মধ্যম আয়ের একটা দেশের মানুষের জীবন যাত্রায় যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে তাতে বেশীর ভাগ মানুষই আপাতঃ স্বচ্ছলতা ভোগ করছে। অর্থের সূচক সাধারণ মানুষের জীবনের গতিধারায় যে পরিবর্তন এনেছে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার তেমন কোন সুযোগ নেই। সমস্যা আসলে অন্যত্র। এই পরিবর্তন মূলতঃ আমাদের আগামীর জন্যে আশাবাদী না করে বর্তমানের জন্যে ভীষন ভোগবাদী করে তুলেছে। ফাষ্ট ফুডের দোকানে গোগ্রাসে গলাধকরণ ছেলেমেয়েদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতির পরিণতি যে কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা আইনস্টাইন অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন। We are going to get a generation of idiots. কথাটা ফলতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। সংগ্রামী মেয়ের আবার কোথায় দেখায় পাওয়া যাবে । এটা এখন রাতারাতি দুর্লভ ।
তবুও এই গল্প বলতে হচ্ছে। কারন সব কালে, সব যুগে, সব দেশে ব্যতিক্রম সব সময়ই ছিলো । তবে তা কম আর বেশী এই যা। পথ চলতে চলতে অবশেষে তার দেখা পেলাম । গরংং গধষরহধ. দিন রাত নাক চোখ বন্ধ করে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বপ্ন একটাই । ঘুরে দাঁড়াবেন। স্বপ্ন দেখা দোষের নয়। গরংং গধষরহধ-ও দেখতে পারেন। তাকে কেউ মানাও করেনি। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। কোন কিছুই যেন তাকে ঝঁরঃ করছে না। তার সময় যেন কিছুতেই ফিরছে না। একটার পর একটা বিপত্তি তাকে বেসামাল করে তুলছে প্রতিদিন। কিন্তু গরংং গধষরহধ একটুও হতাশ নয় । তাকে এগিয়ে যেতে হবে। জড়নবৎঃ ঋৎড়ংঃ বলেছেন- গরষবং ঃড় মড় নবভড়ৎব ও ংষববঢ়. কিন্তু জটিলতা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত ।
তার মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন কিছুদিন হলো । সত্তরোর্ধ্ব বুড়ো বাপের শরীরটাও ইদানিং যথারীতি ভালো যাচ্ছে না। বড় বোনটার বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তার অবস্থা সামান্য ভালো । সে-ই শহরতলীতে ছোট একটা জায়গা কিনে একটা টিনের ঘর তুলে দিয়েছে । এখন গরংং গধষরহধ তার অসুস্থ বুড়ো বাপকে নিয়ে থাকেন। একমাত্র ভাইটা শহরে থাকে । দিন মজুরী করে পেট চালায় । লেখাপড়া তেমন কিছু শেখেনি। শহরতলীতে ভদ্রলোকের বসবাস খুবই কম। যত সব আগাছায় ভরা । এই এলাকাটাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে নাক চোখ বন্ধ করে পথ চলতে হয়। ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে হয়। তাতেও রেহাই নেই। গরংং গধষরহধ র পদে পদে বাধা । এলাকার বখাটেদের নজর তার দিকে । তার যে এখনও বিয়ে হয়নি। শত হোক মাস্টার্স পাস মেয়ে ।
গরংং গধষরহধ – র একটা চাকরি হয়ে গেল। চাকরিটা মন্দ না। সময়ের তুলনায় ভালোই বলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এ এলাকায় এ রকম লোকের সংখ্যাও নেই বললেই চলে। গরংং গধষরহধ এখন এই পতিত এলাকার নজর কাড়াদের মধ্যে একজন। উৎপাত বেড়েই চলেছে।
গরংং গধষরহধ তবুও নির্বিকার। কারন আর কিছুই নয়। এখানে তার কোন গধঃপযরহম নাই। অবশেষে গধঃপযরহম পাওয়া গেল। তার মতোই সমমনা সমপেশারই একজন । ছেলেটিকে ভদ্রই বলতে হবে। সব মিলিয়ে মন্দ নয়। গরংং গধষরহধ কে সুখীই বলতে হবে। যদিও প্রতিটি সুখের মধ্যেও অসংখ্য বেদনা লুকিয়ে থাকে। গরংং গধষরহধ র কাছে সবকিছুই মন্দের ভালো।
বিয়ে গরংং গধষরহধ - র জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আনেনি। সবেেচয় বড় কথা তার নবঃঃবৎ যধষভ কে চাকরির সুবাধে তার কাছ থেকে আপাততঃ দূরেই থাকতে হচ্ছে। তবে মনে মনে ইচ্ছে গুছিয়ে নিয়ে কাছে চলে আসার। ইচ্ছেটা মন্দ নয়। একত্রে থাকা। একটু ভালো থাকা। একটু ভালোবাসা। খুব বেশী না হোক সামান্য হলেও ভালোলাগা।
গরংং গধষরহধ বিধ্বস্ত হলেও এলোমেলো না। তাকে অনেকগুলো চৎড়নষবস ভরী করতে হবে। তার বিশ্বাস সে পারবে। যদিও ব্যাপারটা কঠিন। আর মাঝে মাঝে তা তার কাছে কঠিনতর মনে হয়। তবুও সে আশাবাদী । ধৈর্য্যরে ফল দেরীতে হলেও ফলে। গরংং গধষরহধ নিজেকে বুঝ দেয় । ইবঃঃবৎ ষধঃব ঃযধহ হবাবৎ. না হয় একটু দেরী হোক। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী সে না।
সবচেয়ে বড়ো কথা একটা সুন্দর জীবনের জন্যে সে বেঁচে আছে। তার স্বপ্নের কাছে তাকে পৌঁছাতে হবে। গরংং গধষরহধ- র কাছে কুপ্রস্তাবের ছড়াছড়ি। সে বিবাহিত জেনেও যে কেউ ড়ভভবৎ দিচ্ছে। কিন্তু সব কিছু মুখ বুঝে মেনে নি্েচ্ছ সে। ঝিনুক নীরবে সহো।
সবকিছুর পরও তার কাছে মনে হচ্ছে একটা ছেলে খুব বাড়াবাড়ি করছে। যখন তখন সামনা সামনি এসে দাঁড়ায়। শালীন অশালীন মিলিয়ে যা কিছু বলে তার সারমর্ম একটাই । তোমার শরীরটা চাই। এই নিদানের দিনে তুমিই অমূল্য। গরংং গধষরহধ সবকিছু বোঝে। হাজার সমস্যা। তবুও বিকৃতির ভেতরেই যাদের আনন্দ তাদের কাছে তেতো মদও অমৃত। এভাবেই পৃথিবী তার ভারসাম্য রক্ষা করছে।
গরংং গধষরহধ র মনটা দিনে দিনে কেন জানি অস্থির হয়ে উঠছে। দূরে কোথাও চলে যেতে পারলেই ভালো হতো । কিন্তু বদলির ব্যাপারটাও তার কাছে কেন জানি কঠিন ঠেকছে। কেউই তার ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছেনা। গরংং গধষরহধ ভেতরে ভেতরে কিছুটা হতাশ। কিন্তু তবুও সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার কাছে চেষ্টার বিকল্প নাই।
দিনগুলো ক্রমশঃ খারাপের দিকে এগুচ্ছে। কিছু কিছু মানুষের জীবনটাই এমন। সবকিছু ক্রমশঃ উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়। অন্যেরা যা না চাইতেই পায় তাদের তার জন্যেই সংগ্রাম করতে হয়। এই যেমন ধরুন আমরা কেউ কেউ জন্মেছিই স্বাধীন দেশে । আর অনেককেই এই দেশটিকে পেতে পুরো জীবনটাই ঝঃৎঁমমষব করতে হয়েছে। তারপরও তারা স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি। কি করুন! কি দুর্বিসহ! একবার ভাবুনতো।
ভাববার আকাঙ্খাটুকুও গরংং গধষরহধ - র নেই। অফিসের হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনীর পর ঘরে ফিরে সব ঝামেলা। অসুস্থ বুড়ো বাপের পরিচর্যা । গরংং গধষরহধ তার আজন্ম রুগ্ন শরীর নিয়ে তবুও ক্লান্তিহীন। সবচেয়ে বড় কথা নিয়তিকে সে মেনে নিয়েছে। তাই সে আরও অভিযোগহীন, নিরুত্তর।
গরংং গধষরহধ উপর দিয়ে একটার পর একটা ধকল যাচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ করেই বখাটে ছেলেটা সামনে এসে হাজির। বরাবরের মতো সেই আচরণ। গরংং গধষরহধ-র মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলে। পুরো ব্যাপারটা ছেলেটি ভালোভাবে নিতে পারেনি। তা তার মুখ দেখেই গরংং গধষরহধ বুঝতে পারে। কিন্তু তার আর কিইবা করার আছে। একটা জীবনে একজন মানুষ কতটা সহ্য করতে পারে। গরংং গধষরহধ এখন নিঃস্ব।
দেখতে দেখতে ঈদুল ফিতর এসে পড়ে। গরংং গধষরহধ তাদের বাসাটা খালি রেখে কোন এক আত্মীয়ের বাসায় একটা রাত্রের জন্যে বেড়াতে যায়। আর সেই রাতেই তাদের বাসায় চুরি হয়ে যায়। গরংং গধষরহধ বুঝতে পারে ঘটনার নেপথ্যে কারা। সে ইচ্ছে করলে পুলিশকে জানাতে পারে। কিন্তু সে জানে এতে কোন লাভ হবে না। এসব অপরাধীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সময় গড়িয়ে যায়। গরংং গধষরহধ জীবন বরাবরের মতোই ম্লান আর ফিকে। সমস্যা জর্জরিত জীবনে আর কিভাবেই বা চলবে। সে এখন একটা বারোমাস কর্দমাক্ত পানির স্রোত নিয়ে বয়ে চলা নদী।
সপ্তাহের শেষ দিন অফিস শেষ করে গরংং গধষরহধ বাসায় ফেরে। মনটা আজ ভীষন খারাপ। সামনে ঈদুল আযহা। কিন্তু তার মনে কোন আনন্দ নেই। মুসলমানদের বৎসরে তিনটি ধর্মীয় উসবের দিন। তার মধ্যে ইদুল আযহা একটি। চারিদিকে কিছুটা উৎসবের আমেজ। কিন্তু তার জীবন বরাবরে মতোই নিস্প্রভ । গরংং গধষরহধ-র মনে বহুমূখী চিন্তার জটিল জাল। সেই জাল তার অস্তিত্ত্বকে আপাদমস্তক ছড়িয়ে রেখেছে।
রাত বাড়তে থাকে। হঠাৎ কিছু লোক ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। তার মধ্যে সেদিনের সেই ছেলেটিও আছে। তারা গরংং গধষরহধ-র বুড়ো বাপকে আঘাত করতে শুরু করে। গরংং গধষরহধ ছুটে গিয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা গরংং গধষরহধ কে হাতে নাতে ধরে ফেলে। দুর্বৃত্তদের আঘাতে গরংং গধষরহধ -র বুড়ো বাপ তার চোখের সামনেই ঢলে পড়ে। তার পর শুরু হয় গরংং গধষরহধ -র উপর শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে গরংং গধষরহধ পৃথিবী ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায়।
তার শেষ যাত্রা এতোটা অনাড়ম্বর হবে এই কথা সে কখনও চিন্তাও করেনি।
Comments
Post a Comment