মাহমুদ ঝুলে আছে। এটা
নতুন কিছু
নয়।
তার জন্মের
সময় থেকেই
যেন ঘড়ির
কাঁটা ঝুলে
আছে।
শিশু অবস্থায়
মাহমুদের কিছু
করার ছিলো
না।
কিন্তু বড়
হয়ে সে
যখন তার
বাবা-মার
মুখে তার
জন্মানোর পর
থেকে এই
সংসারে আগত
দুর্দশার বর্ণনা
শুনলো তখন
মাহমুদ আর
নিজেকে ধরে
রাখতে পারলো
না।
পাশের খালের
উপর সদ্য
তৈরী কালভার্টের
উপর দিয়ে
যখনই সে
ঝাঁপ দিতে
যাবে তখনই
তাকে ধরে
ফেলল বিগত
দশ বছর
ধরে বিয়ের
অপেক্ষায় থাকা
ব্ল্যাকি আপা। মাহমুদের
মৃত্যু অপাততঃ
রহিত হলো। কিন্তু
ব্ল্যাকি আপা
ইস্যু মাহমুদকে
বেকায়দায় ফেলে
দিলো।
সবাই ধরে
নিলো ব্ল্যাকি
আপার সাথে
প্রেম ও
প্রণয় জনিত
সংকট থেকেই
মাহমুদের এই
আত্মহত্যার অপচেষ্টা। নইলে শুধু
শুধু সে
মরতে যাবে
কেন।
মূলত দুঃখ মাহমুদের
আজন্ম সঙ্গী। তার
সাথে যুক্ত
হওয়া মা-বাবার দুঃখ-গাঁথা তাকে
এতোটাই ভারাক্রান্ত
করেছিল যে
সে আর
নিজেকে সামলাতে
পারেনি।
কিন্তু তাতে
লাভটা কি
হলো।
আত্মহত্যা করে দুঃখের ভার হাল্কা
হওয়ার চাইতে
বরং ব্ল্যাকি
বিতর্ক তার
ঘাড়ে বোঝার
উপর শাকের
আটি হয়ে
গেলো।
সে বুঝে
উঠতে পারছে
না এই
পরিস্থিতি সে কেমন করে সামাল
দেবে।
তাকে সবাই
ভুল বুঝছে। এমনকি
তার বাবা-মাও।
তাদেরও কথা
একটাই।
এতো মেয়ে
থাকতে ব্ল্যাকি
কেন? এমনিতেই
দুঃখ যায়
না।
তার উপরে
একটা অপয়া
এসে যুক্ত
হলো।
মাহমুদ পুরোটাই
ঝুলে গেলো।
ভুল বোঝার সমস্যা
তার জীবনে
নতুন কিছু
নয়।
জীবনে একটার
পর একটা
এরকম প্রশ্নের
মুখোমুখি হয়েছে
সে।
কোনদিন জবাব
খুঁজে পায়নি। তাই
জবাব দিতেও
পারেনি।
আর এবার
তো এমন
পরিস্থিতি যে কথা বলাও বিপদ। কি
বলতে কি
বলবে।
কোন কথা
বলে আরও
বিপদ ডেকে
আনার চেয়ে
বরং চুপ
থাকাই ভালো। মাহমুদ
মুখ বন্ধ
রাখার সিদ্ধান্ত
নিলো।
এ বছর মাহমুদ
পঁচিশে পা
রাখল।
এর মধ্যেই
মাষ্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেছে।
কিন্তু হলে
কি হবে
তার কোন
পরীক্ষার ফলই
সন্তোষজনক নয়। চারটা সার্টিফিকেটের
মধ্যে তিনটাই
থার্ড ক্লাস। মাহমুদের
জন্যে তাই
ব্যাপারটা রাতারাতি আতঙ্কের। শিক্ষিত
পাস করা
যুবক হয়েও
সে কাউকে
সার্কিফিকেট দেখাতে পারে না।
মাহমুদের সমস্যা অন্তহীন। সব
সময় আরো
যেটা নজর
কাড়ে তাহলো
তার উচ্চতা। ৪
ফিট ৮
ইঞ্চির মাহমুদকে
ক্লাসের টিচাররা
কখনওই খুঁজে
পায়নি।
এককা-দোক্কার
মধ্যে দিয়ে
মাষ্টার্স সে ঠিকই কমপ্লিট করেছে। কিন্তু
সেই মাষ্টার্সই
তার জন্যে
একটা úার্মানেন্ট
লজ্জার ব্যবস্থা
করেছে।
সে না
পারছে কাউকে
বলতে, না
পারছে কারো
কাছে লুকাতে।
মাহমুদের এসব সমস্যাও
কোনো সমস্যা
না।
মূল সমস্যা
হচ্ছে বাজারে
না পাওয়া
যায় তার
গায়ের শার্ট
না পাওয়া
যায় কোন
স্যুট প্যান্ট
না পাওয়া
যায় তার
সাইজের কোন
জুতা।
সবকিছুই তার
অর্ডার দিয়ে
বানাতে হয়। রেডিমেড
কোন কিছুই
মানায় না। সময়ের
চাহিদার সাথে
কখনওই তাল
মেলাতে পারে
না সে। সবাই
কত সুন্দর
সুন্দর শার্ট,
প্যান্ট পড়ছে। সে
হা করে
তাকিয়ে তাকিয়ে
দেখছে।
মাহমুদ সত্যি
একটা বেকায়দার
মধ্যে দিয়ে
এগোচ্ছে।
মাহমুদের জন্মের পর
থেকে এ
পর্যন্ত কোন
সুখবর তাদের
ঘরে আসেনি। পরপর
তার পাঁচটা
বোন জন্মেছে। তারা
শুধু ঘরে
প্লেটের সংখ্যা
বাড়িয়েছে।
উপার্র্জনের কোন সুযোগ তৈরী করেনি। মাহমুদের
দিন মজুর
বাবা প্রচুর
পরিশ্রম করে
তাদের মুখে
অন্ন তুলে
দেয়ার চেষ্টা
করছে।
মাহমুদের একমাত্র
ভাইটাও সংসারে
সবার ছোট। বয়স
মাত্র পাঁচ
বছর।
সে কবে
বড় হবে। কবে
বাবা মার
আশা পুরণ
করবে।
মাহমুদ এখন
আর স্বপ্ন
দেখে না।
ঘটনা দিনে দিনে
জটিল আকার
ধারণ করছে। ব্ল্যাকির
বাবা-মা
মাহমুদের বাবার
সাথে দেখা
করে পরিস্থিতির
গভীরতা নিয়ে
কথা বলেছে। সবচেয়ে
বড় কথা
ঘটনা যেখানে
মোটেই জটিল
নয় সেখানে
তার কথা
বার্তা শুনে
মনে হচ্ছে
তিনি এটাতে
রঙ চড়িয়ে
ফায়দা নিতে
চাইছেন।
ফায়দা তেমন
কিছু নয়।
মাহমুদের বাবা নিতান্ত
হতদরিদ্র।
তার উপর
পাঁচ পাঁচটা
মেয়ে মাথার
উপর ঝুলছে। ছোট
ছেলেটার বয়স
পাঁচ বছর। সন্তানদের
মধ্যে তার
ঐ চার
ফিট আট
ইঞ্চি উচ্চতার
মাহমুদ যার
চারটা সার্টিফিকেটের
তিনটাই থার্ড
ক্লাস।
মাহমুদের বাপের
মাথায় হাত। এতোদিন
যা ছিলো
ভালোই ছিলো। সংসারে
অভাব অনটন
যাই থাক
কোনো উৎপাত ছিলো
না।
কিন্তু এবার
দেখছি তারও
বন্দোস্ত হচ্ছে। ব্ল্যাকি
নামের এই
সাক্ষাৎ
বিপদ এখন
তার ঘাড়ে
এসে জুটতে
চাইছে।
মাহমুদের বাপ
দুচোখে শর্ষের
ফুল দেখতে
থাকে।
মাহমুদের মাথা গুলিয়ে
আসছে।
আত্মহত্যার চিন্তা মাথা থেকে নেমে
গেলেও বেঁচে
থাকাও কষ্টের
হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু
মাহমুদ হাল
ছাড়তে নারাজ। তার
ধৈর্য্যরে কারনেই মনে হয় সে
এ পর্যন্ত
এসেছে।
কিন্তু এ
যাত্রা পরিস্থিতি
কেন জানি
বেশ ঘোলাটে
মনে হচ্ছে। মাহমুদ
বুঝতে পারছে
না এ
যাত্রা সে
কাটিয়ে উঠতে
পারবে কিনা। অবশ্য
মাহমুদ আশাবাদী। আশাই
তাঁকে বাঁচিয়ে
রেখেছে।
মাহমুদের মা বরাবরই
নরম মনের
মানুষ।
সংসার জীবনে
তিনি দেখিয়ে
দিয়েছেন ধৈর্য্য
কাকে বলে। পাঁচ
পাচটা মেয়ে
জন্ম দেওয়ার
জন্য তাকে
কম গঞ্জনা
সইতে হয়নি। তবু
তিনি কখনও
মুখ খোলেন
নি।
সন্তান মেয়ে
হওয়ার পেছনে
যে তার
কোন হাত
নেই এটা
তিনি জানলেও
কখনও মুখ
খুলে কিছু
বলেননি।
একেই বলে
ধৈর্য্য।
যে অপরাধ
তার নয়
তার জন্যেও
তিনি অপবাদ
সয়ে গেছেন
নীরবে।
একেই বলে
মানুষ।
মাহমুদের ব্যাপারটা যতোই
জটিলতার দিকে
যাক এ
নিয়ে মোটেও
চিন্তিত নন
তার মা। তার
একটাই কথা
ব্ল্যাকির যদি তার ছেলের বউ
হওয়ার ভাগ্য
থাকে তবে
তা হবেই। শুধু
শুধু ব্ল্যাকির
দোষ দিয়ে
লাভ নেই। ব্ল্যাকি
মেয়েটা মন্দ
কিসে।
পরিস্থিতি যখন এই
মাহমুদের প্রতিবেশীরা
তখন দুহাতে
মজা নিচ্ছে। তাদের
ভাবখানা এমনই
যেন অনেক
দিন পর
তারা আনন্দের
একটা উপলক্ষ্য
পেয়েছে।
অবশ্য এটাই
স্বাভাবিক।
গ্রামগঞ্জের নিরানন্দ জীবনে একটা উপলক্ষ্য
সবার জন্যে
আনন্দের খোরাক
যোগাচ্ছে।
দেখতে দেখতে সপ্তাহ
পেরিয়ে গেলো। মাহমুদের
বাবা আপ্রাণ
চেষ্টা করছে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। কিন্তু
কিছুতেই কিছু
হচ্ছে না। ওদিকে
ব্ল্যাকিও ঝেড়ে কাশছে না।
না সরাসরি
কিছু বলছে। না
পুরো ব্যাপারটার
জট খুলে
দিচ্ছে।
তার অবস্থানটা
ঠিক পরিস্কার
নয়।
হঠাৎ করেই
ঘটনার ভেতরে
একজনের আবির্ভাব
হয়।
সে আর
কেউ নয়। তিনি
কানা হাবিব। দু’ দুটি
খুনের মামলার
আসামী।
সে দাবী
করে বসে
ব্ল্যাকির সাথে তার বিয়ের কথা
ঠিক হয়ে
আছে।
মামলার আসামী
হওয়ায় বেশ
কিছুদিন এলাকা
ছাড়া কানা
হাবিব।
এবার একটা
সিষ্টেম হওয়ায়
লোকালে ঢুকে
পড়েছে।
সে চিৎকার করে
বলল - কিসের
মাহমুদ।
ব্ল্যাকি তার
বউ হবে। অবশ্য
কানা হাবিবের
আরো তিনটা
বউ আছে।
ব্ল্যাকির বাবা কান্না
জড়িত কণ্ঠে
মাহমুদের কাছে
ছুটে আসে। হাত
পা জড়িয়ে
অনুরোধ করে
তার মেয়েকে
বাঁচানোর।
মাহমদি না
আগালে কানা
হাবিব পিছু
হটবে না। কিন্তু
মাহমুদের বাবা
ছেলের জীবন
নিয়েই শংকিত। ব্ল্যাকিকে
বিয়ে করলে
কানা হাবিব
তার ছেলেকে
কিছুতেই ছেড়ে
দেবে না।
মাহমুদ ভীষণ উত্তেজিত
হয়ে ওঠে। কানা
হাবিবকে সে
চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে - ব্ল্যাকির দিকে
হাত বাড়ালে
তাকে সে
দেখে নেবে। কানা
হাবিব কিছু
বলে না। শুধু
মিষ্টি করে
হাসে।
তারপর চার
ফিট ছয়
ইঞ্চি উচ্চতার
মাহমুদকে তুলে
নিয়ে গিয়ে
ছয় ফিট
উচ্চতার কানা
হাবিব একটা
গাছের সাথে
ঝুলিয়ে দেয়
একেবারে বাজারের
ঠিক মাঝখানটায়। সবাইকে
বলে দেয়
কেউ যেন
মাহমুদকে গাছ
থেকে না
নামায়।
মাহমুদ এখন গাছের
ডালে ঝুলছে।
Comments
Post a Comment