মহব্বত এবারই এসএসসি
দিলো।
বাপহারা ছেলেটা
অনেক কষ্টে
শেষশেষ পরীক্ষা
দিতে সমর্থ
হয়।
মহব্বতের মা
রাবেয়া তার
শেষ সহায়
সম্বলটুকু বিক্রি করে ছেলের পরীক্ষার
বন্দোবস্ত করেন। অবশ্য সহায়
সম্বল বলতে
একটা দুই
বছরের ছাগল
আর কয়েকটা
হাঁস মুরগীর
পাশাপাশি বাড়ীর
কোনার গাছের
কিছু পেপে
আর লাউ। এই
সব বেঁচে
আর কতো
টাকা হয়?
তবুও মহ্ববত
এ যাত্রা
উৎরে
যায়।
ভালোভাবে পরীক্ষা
সমাপ্ত করতে
সক্ষম হয়। আশা
করা যায়
তার
ফলাফল ভালোই হবে।
মহব্বতের চাচা নসু
মিয়া এলাকায়
মোটামুটি গন্যমান্য। জমিজমা
যা আছে
মন্দ না। কিন্তু
তার কারিশমা
অন্য জায়গায়। গ্রামে
সে শালিসী
করে বেড়ায়। স্থানীয়
জোতদার করিম
খাঁ, আর
মনু মিয়াকে
নিয়ে তাদের
একটা ভয়ংকর
জোট আছে। জোটটা
পুরা গ্রাম
মাতিয়ে রাখে। এরা
যেমন নদীর
কূল ভাঙ্গে
আবার এরাই
তা গড়ে
দেয়।
এই গ্রামে
জ্বলজ্যান্ত ঈশ্বর আর ভগবান বলতে
যা বুঝায়
তা এই
তিনজনই।
নসু মিয়ার
খুব আশা
ছিলো রাবেয়া
এ যাত্রা
তার কাছে
হাতে পাতবে। ছেলে
পড়াশুনায় ভালো। তার
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি
নেবে না। ভালোভাবে
পরীক্ষা দেওয়ানোর
জন্য তার
কাছে আর্থিক
সাহায্য নিতে
ছুটে আসবে। কিন্তুু
ঘটনা আদৌ
তা ঘটেনি। রাবেয়া
ঘাপটি মেরে
ছিলো।
মাটি কামড়ে
পড়ে থাকা
যাকে বলে। নিজের
যা কিছু
ছিলো তার
মধ্য দিয়েই
চালাবার চেষ্টা
করেছে।
শেষশেষ এভাবেই
শেষ রক্ষা
হয়েছে।
নসু মিয়া
দারুন নাখোশ।
তার নাখোশ হওয়ার
কারন একাধিক। একে
তো মহব্বত
তার আপন
ভাইপো।
তার উপরে
ভলো ছাত্র। তাছাড়া
তার মেয়ে
রুমাও এবার
ক্লাস এইটে
উঠেছে।
পড়াশোনার পশাপাশি দেখতে
শুনতেও মন্দ
না।
দুজনকে মানাবেও
বেশ।
সর্বোপরি এলাকায় সবাই বলাবলি করছে
ভাইপোর পরীক্ষায়
তার ভূমিকা
কি।
চাচা হিসবে
তার দায়িত্বটাইতো
সবার আগে।
কিন্তু রাবেয়া অনড়। নসুর
লোলুপ দৃষ্টির
কথা তার
জানা আছে। দৃষ্টি
যে শুধু
রাবেয়ার শরীরের
দিকে তাই-ই নয়। ভাইয়ের
রেখে যাওয়া
সম্পত্তির দিকেও আছে। মহব্বতের
বুড়ো দাদা
বলতে গেলে
অচল আর
অক্ষম।
মাথা ঠিক
নেই।
বেশীর ভাগ
সময়ই বেহুঁশ
হয়ে পরে
থাকে।
নসুর উপরেই
সংসারের সব
দায়িত্ব।
রাবেয়ার স্বামী জহুর
হঠাৎ
করেই হারিয়ে
যায়।
চিটাগাং গিয়ে
আর ফেরেনি। লাশও
পাওয়া যায়নি। কি
হয়েছে কেউ
জানে না। রাবেয়া
তার ক্ষুদ্র
সামর্থ্য দিয়ে
যতোটুকু খোঁজাখুঁজি
করা সম্ভব
করেছে।
কিন্তুু কাজের
কাজ কিছুই
হয়নি।
উল্টো নিজেই
কয়েকবার ছেলেকে
নিয়ে বিপদে
পড়ার মতো
অবস্থা।
ছোট শিশু
সন্তান সহ
একজন সুন্দরী
মহিলাকে দয়া
করে হেফাজত
করার মতো
ভালো মানুষের
বড়ই অভাব। তারা
পারলে সন্তানটিকে
ফেলে তাকেই
খুবলে খায়। রাবেয়া
অগত্যা খোঁজাখুঁজি
বন্ধ করে। তারপর
প্রায় দশ
বছর কেটে
গেছে।
নসু মিয়া শুরু
থেকেই যন্ত্রনা
দিয়ে আসছিল। মাঝে
মাঝে গায়ে
হাত দিয়েও
কথা বলার
চেষ্টা করে। কিন্তু
রাবেয়ার দারুন
অবহেলা।
আর ভাইপোর
কটমটে চোখের
সামনেও খুব
একটা সুবিধা
করতে পারে
না।
শত হলেও
মহব্বত তারই
ভাইপো।
রাগে ক্ষোভে
তার চেয়ে
কম না। তার
শরীরে যে
রক্ত মহব্বতের
শরীরেও সেই
রক্ত।
এটা নসু
মিয়া বোঝে। বলতে
গেলে সে
ভাইপোকে ভয়ই
পায়।
নসু মিয়ার পক্ষে
নানান যুক্তি
আছে সম্পদ
বন্টন না
করার।
তার বাপ
এখনও জীবিত। সবাই
প্রস্তাব করেছিল
কিছু জায়গা
জমি রাবেয়াকে
বুঝিয়ে দেওয়ার
জন্য যাতে
তারা একটু
ভালোভাবে চলতে
পারে।
কিন্তুু নসু
মিয়ার সোজা
সাপ্টা কথা। খরচ
পাতি তো
তিনি চালাচেছনই। তাছাড়া
জায়গা জমি
ভাগ করে
দেওয়ার মতো
সময় এখনও
আসেনি।
তার বাপ
ফায়জুল্লাহ এখনও জীবিত।
নসু মিয়া বরাবরই
রাবেয়ার উপর
বিরক্ত।
স্বামী মারা
গেছে তো
কি হয়েছে। নসু
মিয়া তো
আছে।
সে-ই
তো সবদিকে
খেয়াল রাখার জন্যে
যথেষ্ট।
কিন্তুু রাবেয়া
সেটা রুঝলে
তো।
সুখে থাকতে
জায়গা জমির
ভাগ লাগে
নাকি।
নসু মিয়ার
ইচ্ছাটাই যথেষ্ট।
কিন্তুু রাবেয়ার আপত্তি। সে
গো ধরে
বসে আছে। নসু
মিয়ার দিকে
সে ফিরেও
তাকাবে না। গ্রামের
সব মেয়েরাই
যেখানে সুদর্শন
নসু মিয়ার
জন্যে পাগল
সেখানে রাবেয়ার
এতো ভাব
কেন।
তাছাড়া নসু
মিয়ার রোমান্টিকতার
ইতিহাস সুবিধিত। সবচেয়ে
বড় কথা
সে ঘরের
মানুষ।
কোথাও কোন
বাঁধা তো
দেখছি না। একটু
কাত হলেই
নসু মিয়া
তার পারে
তরী ভেড়াতে
পারে।
মহব্বতের পরীক্ষা শেষ। তার
হাতে এখন
অনেক সময়। এতোদিন
পরীক্ষার চাপে
ডান বাম
করার সুযোগ
ছিলো না। এখন
একটু অবকাশ
পাওয়া গেলো।
নসু মিয়া হঠাৎ করেই
কি মনে
করে যেন
ভাইপোকে ডাকে। মহব্বত
চাচার সামনে
গিয়ে দাঁড়ায়। জেদী
আর সাহসী
হলেও মহব্বতকে
ভদ্রই বলতে
হবে।
নসু মিয়ার
প্রতি তার
শ্রদ্ধার একটু
ঘাটতি থাকলেও
চাচা হিসেবে
যথাযোগ্য মর্যাদাই
সে দেয়। চাচার
সামনে মাথা
নিচু করে
দাঁড়ায়।
নসু মিয়া
তাকে বসতে
বলে।
খাটের এক
কোনায় আড়ষ্ট
হয়ে মহব্বত
বসে।
নসু মিয়া
সামান্য গলা
খাঁকারি দিয়ে
কথা বলতে
শুরু করে। পরীক্ষা
তো শেষ। হাতে
এখন সময়
আছে।
কি করবা
ভাবছো।
তেমন কিছু না। আসলে
এখনও তেমন
কিছু ভাবি
নাই।
মসজিদের ইমাম
সাহেব সাত
দিন লাগানোর
জন্য বলছে। আমিও
ভাবছি ঘুরে
আসি।
তা যাচ্ছ কবে?
আগামী সপ্তাহে জামাত
যাবে।
তাদের সঙ্গে
যাবো।
এই জামাতে
বেশির ভাগই
পরীক্ষা শেষ
করা ছেলেরা
যাচ্ছে।
শুনেছি মেয়েদেরও
একটা আলাদা
জামাত যাচ্ছে।
ভালো কথা।
আজকাল তাবলিগের
খুব ভলো
কাজ হচ্ছে।
তা ঠিক বলেছেন। আপনিও
চাইলে মাঝে
মাঝে মসজিদে
গিয়ে বসতে
পারেন।
আসরের পর
প্রতিদিন বয়ান
হয়।
প্রস্তাবটা মন্দ না। তবে
চেষ্টা করব। হুট
করে মনে
হয় হবে
না।
আমার দ্বারা
কোন কিছু
তাড়াহুড়া করে
হয় না। আমার
সময় লাগে।
তারপর দুজনেই কিছুক্ষণ
নীরব।
নসু মিয়াই
নীরবতা ভাঙ্গে। সামান্য
নড়ে চড়ে
বসে বলে,
তাবলীগে তো
আগামী সপ্তাহে
যাচ্ছো।
তার আগে
বরং রুমাকে
নিয়ে তোমার
আর ওর
নানাবাড়ীতে বেড়িয়ে আসো। দুটোইতো
পাশাপাশি।
পরীক্ষা শেষ
করলা।
মুরুব্বীর সাথে দেখা করো।
বেড়াও।
আনন্দ ফুর্তি
করো।
সারা বছর
পড়াশুনা করছো। এখন
মাথার একটু
বিশ্রাম দরকার। তাড়াছা
রুমাও অনেকদিন
নানা বাড়ী
যায় না।
প্রস্তাবটা মন্দ না। মাকে
বলে দেখি।
তোমার মা মনে
হয় রাজী
হবে না। বিশেষ
করে রুমার
ব্যাপারে।
কিন্তুু আমার
মনে হয়
আপত্তি করার
কিছু নেই। ও
তোমার ছোট বোনের
মতো।
তাছাড়া ভাই
বলতে তো
ওর তুমিই
একা।
ও যাবেই
বা কার
সাথে।
আমি তো
আপত্তি করার
কিছু দেখছি
না।
চাচা। মাকে
কিন্তুু এখনও
বলাই হয়নি। আগেই
আপত্তির কথা
আসছে কেন। আমার
তো মনে
হয় উনি
রাজী হবেন।
ঠিক ঠিক।
তুমি ভালোই
বলেছ।
তাকে তো
বলাই হয়নি। আগে
ভাগে ধারনা
করা ঠিক
না।
এটা আমার ভুল
হয়ে গেছে। আমি
দুঃখিত।
তুমি বরং
তোমার মাকে
ব্যাপারটা বলো।
আছা ঠিক আছে। এর
জন্য আপনাকে
দুঃখিত হতে
হবে না। আমি
তাহলে আসি
চাচা।
মহব্বত উঠে দাঁড়ায়। ভাইপোর
দিকে আপাদমস্তক
তাকায় নসু
মিয়া।
অনেকদনি পর
ভাইপোকে ভালোভাবে
দেখল।
তার বুকটা
ধক করে
ওঠে।
হুবহু তার
ভাইয়ের চেহারা।
লম্বা, সুদর্শনঅ সামনের দিকে সামান্য
একটু ঝুঁকে
থাকে।
তার কাছে
মনে হয়
যেন তার
ভাই-ই
তার সামনে
দাঁড়িয়ে আছে। তার
চোখ আর্দ্র
হয়ে আসে। মহব্বত
ধীর পায়ে
চাচার সামনে
থেকে বেড়িয়ে
যায়।
নসু মিয়া
তার অবস্থানে
স্থির হয়ে
বসে থাকে।
মায়ের সাথে কথা
বলার আগে
মহব্বত কথা
বলে রুমার
সাথে।
রুমা তো
হেসেই খুন। তার
হাসি যেন
কিছুতেই থামে
না।
ক্লাস এইটে
পড়লেও রুমা
ইতোমধ্যেই ভীষন দুষ্টু হয়ে উঠেছে। তার
ভাবসাব দেখে
মনে হচ্ছে
সে সবই
বোঝে।
যদিও অতোটা
পরিপক্কতা তার এখনও আসেনি।
অবশ্য সেই
বয়সও তার
এখনও হয়নি। চৌদ্দ
বছর এমন
কোন বয়স
না।
মহব্বত তার মায়ের
কাছে গিয়ে
কিছুটা ইতস্ততঃ
করে।
হুট করেই কিছু বলে না। খানিকটা
সময় নেয়। বুঝে
উঠতে পারে
না কি
ভাবে কথাটা
বলবে।
মহব্বতের মন
চইছে রুমাকে
নিয়ে বেড়িয়ে
আসতে।
এই কথাটা
মাকে সে
কিভাবে বলবে। শত
হলেও রুমা
এখন বড়
হচ্ছে।
রাবেয়া ঠিকই বুঝতে
পারে।
ছেলে তাকে
কিছু একটা
বলতে চাইছে। কিন্তু
কেন জানি
ইতস্ততঃ করছে। সে
আগ বাড়িয়ে
নিজেই বলে,
কিছু বলবি
নাকি?
না, তেমন কিছু
না।
তাহলে নিশ্চয়ই
সাধারন কিছু। এর
কমই বা
আর কি?
কথাটা কি?
একটু নানাবাড়ী যেতে
চেয়েছিলাম।
তা যাবি।
পরীক্ষা শেষ। এখনতো
বেড়াবি-ই। কলেজে
ভর্তি হলে
আবার পড়াশুনা
শুরু হয়ে
যাবে।
তখন সময়
পাবি না।
কিন্তুু রুমাও ওর
নানাবাড়ী যেতে
চাইছে।
চাচা বলছিলেন
রুমাকে সাথে
নিয়ে যেতে।
তাতে অসুবিধা কি। রুমা
তোর ছোট
বোন।
সাথে যেতেই
পারে।
তাছাড়া ওর
তুই ছাড়া
আর কে
আছে।
সব চেযে
বড় কথা
তোদের দুজনের
নানা বাড়ী
পাশাপাশি।
একসাথে যাওয়াই
ভালো।
তুই আগে
তোর নানা
বাড়ীতে যাবি। রুমাকে
সাথে নিয়ে
যাবি।
ওখানে দুদিন
বেড়িয়ে তার
পর ওর
নানাবাড়ীতে যাবি। ওখানে রুমা
যতদিন থাকতে
চায় থেকে
তার পর
ফিরবি।
তবে মনে
রাখিস আগামী
সপ্তাহে কিন্তুু
জামাতে যাওয়ার
জন্য ইমাম
সাহেবকে কথা
দিয়েছিস।
তাই ঠিক
সময় ফিরতে
হবে।
মহব্বত যারপরনাই খুশী
হয়।
তার ইচ্ছা
করে আনন্দে
মাকে জড়িয়ে
ধরতে।
কিন্তুু কেন
জানি সে
এ ধরনের
আবেগ প্রদর্শন
করতে পারে
না।
তার কোথায়
যেন বাঁধে। সে
দৌঁড়ে রুমার
কাছে যায়। রুমাকে
শুধু বলে,
মা রাজী। আমরা
কালই যাচ্ছি।
গ্রামের রাস্তা।
কিছুটা হেঁটে। কিছুটা
স্থানীয় যানবাহনে। ভ্যান,
রিক্সা সব
মিলিয়ে ছয়
মাইল।
দেখতে দেখতে
পথটা কখন
যে ফুরিয়ে
যায় মহব্বত
বুঝেই উঠতে
পারে না। রুমারও
একই অবস্থা। এটা
বয়সের ভালো
লাগা।
রিক্সার ঝাঁকুনি সামলাতে
মহব্বতের হাত
শক্ত করে
ধরে।
মহব্বত কিছুই
বলে না। তবে
আগ বাড়িয়ে
রুমার হাতও
ধরে না। মহব্বতের
চিরকাল এই
একটা বাঁধা। সে
হাত বাড়িয়ে
কিছু ছুঁতে
পারেনি।
তার সেই
সাহস নেই।
নসু মিয়া রাবেয়া
বেগমের সাথে
স্বাভাবিক না হলেও রুমার মা
মায়মুনা
ঠিকই স্বাভাবিক। দুজনের মধ্যে
দারুন মিল। রুমাও
মেয়ে হিসাবে
দারুন।
বাপের স্বভাবের
কানাকড়িও পায়নি। হয়েছে
ঠিক মায়ের
মতো।
প্রথম দেখায়
নজরে কাড়ে। মিষ্টি
করে কথা
বলে।
লম্বা, চওড়া
মেয়ে।
চৌদ্দ বছর
বয়সেই মনে
হয় সাবালিকা
হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে
বড় কথা
রাবেয়া আর
মায়মুনা একই
গ্রামের মেয়ে। এলাকার
একটা টান
তাদের ঠিকই
আছে।
দুজন দুজনকে
মেনেই চলে।
মহব্বতের নানা বাড়িতে
দুটো দিন
বেশ আনন্দেই
কাটে।
রুমাও খুব
মজা করে। এখানকার
ছেলে মেয়েদের
সাথে দারুন
মিশে যায়
সে।
মহব্বত নিজের
নানা বাড়ী
হওয়া সত্বেত্ত
অতোটা স্বাভাবিক
হতে পার
না যতোটা
রুমা পারে। রুমা
আসলেই একটা
অদ্ভুত মেয়ে। কাউকে
আপন করে
নিতে তার
বেশিক্ষণ লাগে
না।
মহব্বত এই প্রথম
রুমাকে এতোটা
গভীরভাবে লক্ষ্য
করে।
এতোদিনের হাল্কা
আবেগ এই
দুদিনে গভীর
ভালোবাসায় রূপ নেয়। মহব্বত
কেন জানি
তার বুকের
খাঁচার ভেতর
চিনচেনে একটা
ব্যাথা অনুভব
করে।
হায়রে কপাল। মাত্র
দুইদিনেই বুকে
ব্যাথা।
বাকী জীবনে
না জানি কি দুর্গতি আছে। মহব্বত
নিশ্চিত হার্টের
সমস্যা তার
নেই।
এখন রুমাই
তার হার্ট। সেই
হার্টের ব্যাথ।ি
তারা রুমার নানা
বাড়ীর উদ্দেশ্যে
যাত্রা করে। পথে
যেতে যেতে
মহব্বত বারবার
রুমার দিকে
তাকায়।
রুমার অবশ্য
সেদিকে খেয়াল
নেই।
তার দৃষ্টি
দিগন্ত বি¯ৃতÍ
মাঠের দিকে। মাঠের
মাঝ দিয়ে
রাস্তা।
অবশ্য সে
মহব্বতের হাত
ধরেই আছে। রিক্সায়
উঠলে সে
এমনিতেই মহব্বতের
হাত ধরে। এটার
অন্য কোন
মানে নেই। কিন্তু
মহব্বত ভাবছে
অন্য কথা। রুমাকে
কি কিছু
বলবে।
অবশ্য তাকে
কিছু বলার
মতো সময়
বা বয়স
কোনোটাই কি
ওর হয়েছে।
রুমাই নীরবতা ভাঙ্গল।
কিছু বলছো না
যে ভাইয়া
কি বলব।
এতো সুন্দর দৃশ্য। আমার
তো দারুন
লাগছে।
একটা কিছু
বলো।
আমারও ভালো লাগছে।
শুধু এটুকু।
কেন? আর কি
কিছু শুনতে চাস।
শুনতে তো চাই-ই।
তুমিই তো
বলছো না।
কি শুনতে চাস।
আমাকে কেমন লাগল।
তোকে আবার নতুন
করে লাগার
কি আছে। বরাবরের
মতো ভালোই। তোর
তো আর
নতুন দুটো
শিং গজায়
নি।
তামাশা করো না। আমি
সিরিয়াস।
সত্যি বলো
কেমন লাগলো। ভালো
লেগেছে।
মন থেকে বলবে।
ভালো লেগেছে।
শুধু ভালো।
আর কিছু
না?
আর কিছু মানে?
কিছু না।
তুমি বুঝতে
পারছো না।
আমাকে তোমার কিছুই
বলার নেই।
বলার তো অবশ্যই
কিছু একটা
আছে।
তাহলে বলছো না
কেন? আমি
কিছু শোনার
জন্য অস্থির
হয়ে আছি।
কি শুনতে চাস।
তুমি যা বলতে
চাও।
সত্যিই শুনবি?
হ্যাঁ
সামলাতে পারবি তো। তোর
যা বয়স। মাথা
ঘুরে না
যায়।
শেষে তোর
কিছু হয়ে
গেলে চাচা
আমাকে জানে
মেরে ফেলবে।
আমার কিছু হবে
না।
তুমি বলো। আমি
এখন বড়
হয়েছি।
ক্লাস এইটে
পড়ছি।
তাই নাকি?
হুঁ।
তা দেখাবি কতটুকু
বড় হয়েছিস।
মন চাইলে দেখো। তোমাকে
না করেছে
কে?
বাজে কথা রাখ। তোর
যা বয়স
তাতে এসব
কথা বলা
যাবে না। কেবল
গায় গতরে
বড় হওয়াকেই
বড় হওয়া
বলে না। মনের
দিকে দিয়ে
হতে হয়। তার
জন্যে বয়স
হওয়া দরকার। তুই
আরও বড়
হলে তখন
বলব।
মেয়ে মানুষের কাছে
বয়স যে
কোন বাঁধা
না সেটা
রুমাও আর
একবার প্রমান
করে।
ছোট রুমা
হঠাৎ
করেই পরিনত
একটা মানুষে
পরিনত হয়ে
যায়।
রিক্সাওয়ালাকে ধমক দিয়ে বলে, এই
রিক্সা, থামাও। মহব্বত
হঠাৎ
অবাক হয়ে
যায় রুমার
আচরণে।
সে থতমত
খেয়ে যায়। বুঝে
উঠতে পারে
না রুমার
এই কথার
মানে।
রিক্সাওয়ালা অবশ্য ততক্ষনে রিক্সা থামিয়ে
ফেলেছে।
রুমা রিক্সা থেকে
নেমে পড়ে। মহব্বতকেও
নামতে বলে। মহব্বত
বুঝে উঠতে
পারে না
কি বলবে। সে
কিছুটা ইতস্ততঃ
করে রিক্সা
থেকে নেমে
পড়ে।
রুমার গলায়
আদেশের সুর। মহব্বতের
মন্দ লাগছে
না।
চারিদিকে বিস্তৃত মাঠ। তার
মাঝখান দিয়ে
সরু রাস্তা। সেই
রাস্তা কাঁচা
পাকা মেশানো। মাঝে
মাঝে দু’চারটা
রিক্সা ভ্যান
চলে।
মোটামুটি নিরিবিলিই
বলা যায়।
রুমা রিক্সাওয়াকে বলে, চিন্তা নেই। ভাড়া
বাড়িয়ে দেব। রিক্সায়
বসে থাক। সময়
হলে যাব।
মহব্বত বুঝে উঠতে
পারে না
রুমা এরকম
করছে কেন?
সে ইতস্তত:
বোধ করছে। রুমা
মহব্বতের হাত
ধর টানতে
টানতে মাঠের
ভেতর নিয়ে
যাচ্ছে।
দু’জনে আল
ধরে আগাতে
থাকে।
তারপর একটা
উঁচু জায়গায়
এসে দু’জনে
পাশাপাশি বসে। একটা
স্বস্তিঃর নিশ্বাস ফেলে রুমা।
মহব্বত যেন
বরফের মত
জমে গেছে। রুমার
সাহস দেখে
অবাক হচ্ছে
সে।
রুমাই কথা বলে। আমাকে
কেমন লাগে
তোমার তুমি
কিন্তু বলোনি। বললাম
না।
ভালো লাগে। ভালোই
তো লাগে।
তো তো করো
না।
পরিষ্কার করে
বলো, ভালোবাসো
আমাকে?
তুই ভালোবাসা বুঝিস।
ভালবাসা বুঝবো না
কেন? মেয়েরা
খুব অল্প
বয়সে ভালোবাসা
বোঝে।
আগের দিনে
আমার চাইতে
কমবয়সী মেয়েদের
বিবাহ হতো।
বিয়ে আর ভালবাসা
এক জিনিস
না।
বিয়েটা আরও মারাত্মক। দায়ও
বেশি।
দায়িত্বও বেশি। তুমি
বুঝবে না। মেয়ে
হলে বুঝতে। আমার
মা আমাকে
সব কিছুর
জন্য তৈরি
করেছেন।
আমি এখন
জীবনের সব
কিছুর জনেই
তৈরি।
তবে একটা
বিষয় এখনই
না।
তার জন্যে
সময় লাগবে। আগের
দিনেও মেয়েদের
বিয়ে হতো
ঠিকই অল্প
বয়সে।
কিন্তুু বাসর
হতো অনেক
পরে।
আমি সব
জানি।
তুই দেখি পেকে
একদম ঝুনা
হয়ে গেছিস।
একটু টোকা দাও। দেখবে
ঝরে পড়ে
যাব।
তোকে ঝরে পড়তে
হবে না। তুই
গাছের সাথে
ঝুলে থাক।
আর তুমি বসে
বসে চোখের
জল, নাকের
জল, এমনকি
গোপনে গোপনে
মুখের জলও
ফেল।
বাজে কথা বলবি
না।
সত্যি করে বলো,
আমার জন্যে
তোমার মায়া
হয় না। তুমি
পেছনে পেছনে
তোমার চোখের
জল ফেলো
না।
আমাকে তোমার
কাছে পেতে
ইচ্ছে করে
না।
এসব কথা থাক। আমি
বলি কি,
চল্।
এখন যাওয়া
যাক।
রিক্সাওয়ালা কি ভাবছে।
কিচ্ছু ভাববে না। ওকে
কিছু বেশি
টাকা ধরিয়ে
দিলেই সব
ঠিক হয়ে
যাবে।
তোর মাথা আসলেই
খারাপ হয়ে
গেছে।
একটু খারাপ তো হয়েছেই। তোমাকে
কখনও এভাবে
একা পাইনি
তো।
বাড়ীতে বসে
কথা বলা
যায় না।
তাহলে এখানেই বল। কি
বলবি বল। তাড়াতাড়ি
বল।
এমন হড়বড় করছো
কেন? এটা
জীবন মরণের
প্রশ্ন।
আমি তোমাকে
ভালোবাসি।
তোমাকে না
পেলে আত্মহত্যা
করব।
এখন বলো
কি করবে। আমাকে
মারবে না
বাঁচাবে।
আমিও তোকে ভালবাসি।
সত্যি? নাকি বাঁচানোর
জন্যে বললে।
সত্যি। আমি
মিথ্যা বলি
না।
জানি। তুমি
খুব ভালো
ছেলে।
চলো যাওয়া
যাক।
দুজনে রিক্সায় উঠে
পড়ে।
রুমা এখনও
মহব্বতের হাত
ধরে আছে। রিক্সাওয়ালার
ঠোঁটে ঈঙ্গিতপূর্ণ
হাসি।
দেখতে দেখতে রিক্সা
এসে রুমার
নানা বাড়ির
সামনে থামে। নাতনীকে
পেয়ে তারা
ভীষন খুশি। সাথে
মহব্বত থাকায়
সেই আনন্দ
কয়েকগুন বেড়ে
যায়।
ভালো ছাত্র
হওয়ার কারণে
পুরো অঞ্চলে
মহব্বতের একটা
ভালো কদর
আছে।
তাছাড়া ছেলে
হিসেবেও মহব্বত
প্রথম দেখায়
নজর কাড়ার
মতো।
মহব্বতের নানা
তার নানীকে
ডেকে বলেছিল,
দুজনে বেশ
মানাবে।
রুমার নানা-নানীও সেই
কথাই বললো। কোন
রাখডাক ছাড়াই। রুমা
কৃত্রিম ধমক
দিয়ে বলল,
রাখতো নানী। সামনা
সামনি এসব
কথা বলতে
নেই।
তাছাড়া আমার
এখনও বিয়ের
বয়স হয়নি। এসব
নিয়ে পরে
ভাবা যাবে।
লজ্জায় মহব্বত কি
বলবে বুঝে
উঠতে পারছে
না।
তার চোখ
মুখ একদম
তরমুজের মতো
লাল হয়ে
ওঠে।
নানা বাড়ীতে রুমার
কেন জানি
ভালো লাগছিল
না।
তার চেয়ে
বরং মহব্বতের
নানা বাড়ীতেই
বেশি জমেছিল। যদিও
আদর
আপ্যায়নের কমতি নেই। নাতনীদের
আগমনে সবকিছুই
করছে ননা-নানী।
পুকুর থেকে
বড় মাছ
ধরা হয়েছে। খাসী
জবাই হয়েছে
মহববতের সম্মানে। তবুও
রুমার মন
ভরছে না। তার
কারণও অবশ্য
আছে।
তার ভেতরের
পৃথিবীটা আসলে
গত দুদিনে
অনেক বদলে
গেছে।
সে এক
লাফে তরুণী
থেকে যুবতী
হয়ে গেছে। ভালোবাসা
আসলে কার্বাইডের
মতো।
এক রাতে
কাঁচা আম
পাকিয়ে হলুদ
বানিয়ে ফেলে। উপকারিতা
অপকারিতা ভাববার
সময় থাকে
না।
প্রেমের লক্ষন যে
কি জিনিস
তা তিলে
তিলে অনুভব
করছে মহব্বত। এতোদিনও
রুমা তার
কাছাকাছি ছিলো। একে
তো চাচাতো
বোন।
তার উপরে
পাশাপশি ঘর। সারাক্ষনই
বলতে গেলে
একসাথে।
কিন্তু এমনতো
কখনও হয়নি। তাহলে
এখন এমন
হচেছ কেন।
এতো রান্না-বান্না
করা হয়েছে। এতা
আয়োজন।
কিন্তুু বলতে
গেলে তেমন
কিছুই খেতে
পারল না। সে
কোন কিছুরই
স্বাদ পাচ্ছে
না।
গন্ধ পাচ্ছে
না।
এভাবে নাক
চোখ বন্ধ
করে গেলা
যায়।
রুমারও একই অবস্থা। খাচ্ছে
তো খাচ্ছে
না।
নানী মৃধু
ধমক দিয়ে
বলল - কি
ব্যাপার! রান্না
ভালো হয়নি। তাহলে
খাচ্ছিস না
যে।
আরে বাবা খাচিছ
তো।
কই খাচ্ছিস।
মাছ মাংস
সব পড়ে
আছে।
তোদের জন্যেই
তো এতো
আয়োজন।
তোরা না
খেলে কেমন
লাগবে।
শত চেষ্টা করেও
খাবার যেন
কিছুতেই গলা
থেকে নামতে
চাইছে না। রাধার
কষ্ট তাহলে
এই ছিলো। রুমা
পারলে কৃষ্ণকে
খুন করে
ফেলতো।
রাধাকে এতোটা
কষ্ট দেওয়া
ঠিক হয়নি
কৃষ্ণর।
মহব্বতও কি
তাকে এমন
কষ্ট দেবে। নাকি
ভালোবেসে সুখী
করবে।
দুদিন বেড়ানোর পরই
রুমা অস্থির
হয়ে ওঠে
বাড়ী যাওয়ার জন্যে। মহব্বতেরও
তথৈবচ অবস্থা। কি
যে ভালে
লাগছে, কি
যে মন্দ
লাগছে বোঝা
দায়।
প্রেম আসলে
মানুষকে নো
ম্যানস ল্যান্ডে
ছুড়ে ফেলে
দেয়।
যেখানে কারও
কোন দেশ
নেই, জাতি
নেই, ভূত-ভবিষ্যত কিছু
নেই।
এই প্রেম
কেন যে
এতো জ্বালার!
নানা-নানীর অমতে
রুমা বাড়ীর
পথে রওয়ানা
হয়।
মহব্বতও তাকে
অনুসরণ করে। সবাই
সব কিছু
বুঝতে পারে। আসলে
রুমা কিছুতেই
তার আবেগ
আর ভালবাসা
লুকাতে পারছে
না।
বৈশাখে যখন
চারা গাছে
আমের কাঁচা
ফলন ধরে
তখন সামান্য
ঝড়েই তার
ডাল ভেঙ্গে
পড়ে।
রুমার অবস্থা
তার চেয়েও
খারাপ।
পলেস্তরা খসে
যাওয়া দেওয়ালের
ভেতরের ইটগুলো
যেমন নগ্নভাবে
চোখে পড়ে
তার ভালোবাসাও
তেমনি সবার
চোখে পড়ছে। এতে
দোষের কিছু
নেই।
কেউ যে
কিছু বলবে
তাও নয়। বরং
সবাই খুশী। কারণ
তারাও এটাই
চাইছে।
রুমার তবু
কেন জানি
নিজেকে দিশেহারা
মনে হচেছ। এ
হলো একধরনের
অমিমাংসিত অস্থিরতা। অনেক সময়
নদীতে যেমন
বাতাস ছাড়াই
তুফান থাকে। সব
রহস্যের জবাব
নেই।
তবে একটা জবাব
রুমার কাছে
আছে।
আছে মহ্ববতের
কাছেও।
তারা দুজনেই
ব্যাপারটা জানে, মানে এবং অনুভব
করে।
কিন্তুু এই
কথা বলার
মতো সময়
এখনও আসেনি। তাছাড়া
এরকম কিছু
এখনই সম্ভব
না।
দেখতে দেখতে বর্ষা
শুরু হয়ে
গেলো।
এ বছর
বর্ষার তীব্রতা
একটু বেশীই
বলতে হবে। অবশ্য
রুমাদের খুব
একটা অসুবিধা
হচ্ছে না। তাদের
বাড়ীর সামনের
রাস্তাটা গত
বছরই পাকা
হয়ে গেছে। নসু
মিয়ার অনুরোধে
চেয়ারম্যান সাহেব কাজটা অত্যন্ত আগ্রহের
সাথে তড়িৎ গতিতেই
করিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতা
থাকলে কাজে
আসে।
নিজেদের পাশাপাশি
মানুষেরও উপকার
করা যায়।
গ্রামের অবস্থা ভালো
যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই
অস্থিরতা বেড়ে
গেল।
ঢাকায় একজন
স্বনামধন্য আলেমের বিচার হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের
দায়ে।
দুর্ভাগ্যবশতঃ তার বাড়ী পাশের গ্রামেই। সেই
উত্তেজনা আলেম
সাহেবের গ্রাম
পেরিয়ে চারপাশের
গ্রামেও ছড়িয়ে
পড়েছে।
নসু মিয়া নিরপেক্ষ
থাকতে পারছেন
না।
তিনি না
চাইতেই জড়িয়ে
যাচ্ছেন ঘটনায়। এমনিতেই
সরকারী দল
সমর্থন করেন। তার
উপরে গ্রামে
তার একটা
দাপট আছে। তার
পক্ষে চুপ
করে থাকা
সম্ভব হচ্ছে
না।
জেলা শহরের নেতারা
তাদেরকে ডেকে
বসলেন।
সম্ভাব্য করনীয়
সম্পর্কে বললেন। যেভাবেই
হোক প্রতিপক্ষকে
সামলাতে হবে। বাংলার
মাটিতে যুদ্ধাপরাধীর
বিচার হবেই। নসু
মিয়া ক্ষিপ্ত। মেয়ে
বড় হয়েছে। তাকে
বিয়ে দিতে
হবে।
এ সময়
এরকম একটা
ঝামেলা।
বিচার করার
আর সময়
পেলো না। দেখে
দেখে তার
মেয়ের বিয়ের
আগে ভাগেই
ঝামেলাটা বাঁধল। এই
মেয়ে তার
জান।
একে পাত্রস্থ
না করা
পর্যন্ত তার
শান্তি নেই। যদিও
পাত্র রেডী
আছে।
কিন্তু বিয়ে
না পড়ানো
পর্যন্ত কোন
ভরসা নেই। সমাধান
না হওয়া
পর্যন্ত কোন
কাজের ব্যাপারেই
কিছু বলা
যায় না। হাতে
তোলা খাবার
মুখে না
দিয়েই অনেকেই
পৃথিবী থেকে
বিদায় নিয়েছে। নিঃশ্বাসের
বিশ্বাস নেই।
মহব্বত জেলা শহরের
কলেজে ভর্তি
হয়েছে।
ভর্তি করানোর
পুরো কৃতিত্ব
নসু মিয়ার। ভর্তি
করানো, হোস্টেলে
উঠানো, বইপত্র
কেনা থেকে
শুরু করে
থাকার ব্যবস্থা,
যাবতীয় কেনাকাটা,
সবই নসু
মিয়া নিজের
থেকেই করেছেন। রাবেয়া
কথা বলতে
চেয়েছিলেন।
কথা বলার
সুযোগ দেননি। মায়মুনাও
সমর্থন
দিয়েছে। রাবেয়া এযাত্রা আর
সুবিধা করতে
পারেননি।
ভাইপোর দায়িত্বতো
চাচারই।
রুমাও ভীষণ
খুশী।
মহব্বতকে বলে
দিয়েছে, তাকে
পেতে হলে
কলেজের মধ্যে
ফার্স্ট হতে
হবে।
মহব্বত মজা করে
বলেছিল, তাকে
সে চায়
নাকি?
এই কথাতেই তুলকালাম
কান্ড।
রুমার কান্না
আর অভিমানে
সারা বাড়ী
তোলপাড়।
সেই মান
ভাঙ্গাতে একটা
অশালীন কাজও
করতে হয়েছে। এর
আগে সে
কোনদিন কারো
ঠোঁট ছুঁয়ে
দেখেনি।
রুমার আবদারের
কাছে তাকে
হারতে হলো। রুমাও
সুযোগ বুঝে
তার পাওনা
আদায় করে
নিলো।
দেশের অবস্থা যাচ্ছে
তাই খারাপ
হয়ে যাচেছ। বিচারে
আলেম সাহেবের
বিরুদ্ধে রায়
হওয়ায় সর্বত্র
অস্থিরতা ছড়িয়ে
পড়েছে।
বিশেষ করে
দেশের কয়েকটি
জায়গায় ভয়াবহ
দাঙ্গা ছড়িয়ে
পড়েছে।
সাতক্ষীরায় অনেক লোকের হতাহতের খবর
পাওয়া গেল। আলেম
সাহেবের নিজের
এলাকার পরিস্থিতিও
ঘোলটে।
সবই তটস্থ
হয়ে আছে। এলাকায়
যারা ছিলো
তারা অস্থিরতায়
দিন পার
করছে।
যারা দূরে
আছে তাদের
আপনজনরাও তাদেরকে
আপাতত এলাকায়
ফিরতে না
করছে।
নসু মিয়া কি
যেন মনে
করে রাবেয়াকে
ডাকেন।
সাথে মায়মুনাকেও। রুমা
এসে পাশে
দাঁড়ালো।
নসু মিয়া
মেয়েকে কি
যেন বলে
বুঝিয়ে শুনিয়ে
দূরে পাঠিয়ে
দিলেন।
রুমা মহব্বতের
কাছে ছুটে
গেলো।
আজ শুক্রবার।
মহব্বতের কলেজ
বন্ধ।
সে তাই
হোস্টেল থেকে
বাড়ীতে এসেছে।
কথা শুনে সবাই
গম্ভীর
হয়ে গেলো। নসু মিয়ার
চোখে পানি। মায়মুনারও
চোখমুখ ভারী
হয়ে আসছে। এই
প্রথম রাবেয়ার
মানুষটার জন্য
মায়া হলো। মানুষটা
তার কাছে
কেঁদে কেঁদে
ক্ষমা চেয়েছে। নিজের
সব দোষ,
সব অপকর্ম
স্বীকার করেছে।
রাবেয়া বরাবরই ভালো
মনের মানুষ। তার
দুচোখ ভিজে
আসছে।
সে নসু
মিয়াকে ক্ষমা
করে দিলো। তবে
সে কথা
মুখে বললো
না।
শুধু বললো,
আপনি যা
ভালো মনে
করেন।
ভাইপো তো
আপনারই।
মৌলভী সাহেব রাজী
হচ্ছিলেন না। না
হওয়ারই কথা। পাত্র-পাত্রীর কারোরই
বয়স হয়নি। নসু
মিয়া বললেন,
কাগজ-কলমে
কিছু হবে
না।
শুধু গোপনে
কলেমা পড়িয়ে
দেবেন।
পাত্র-পাত্রী
আর আমরা
তিনজন মানে
আমি, রাবেয়া
আর মায়মুনা
থাকবো।
আপনি কাজ
সেরে ফেলবেন। কোন
ডকুমেন্ট থাকছে
না।
আমার মনে
হয় আমার
হাতে সময়
বেশী নেই।
নসু মিয়ার কথা
মতোই কাজ
হলো।
কলেমা পরিয়ে
বিয়ে হয়ে
গেল।
কিন্তুু নসু
মিয়া স্পষ্ট
করে বলে
দিলেন, ছেলের
একুশ আর
মেয়ের আঠারো
হওয়ার আগে
ভুলেও যদি
কাছে আসা-আসির মতো
কিছু একটা
হয়েছে শোনে
তাহলে কবর
থেকে উঠে
এসে দুটোকে
শায়েস্তা করবে। নসু
মিয়াকে যারা
ভয় পায়
তারা তার
লাশকে আরও
বেশি ভয়
পাবে এটাই
স্বাভাবিক।
নসু মিয়ার দুচোখে
জলের ধারা। মহব্বত
আর রুমাকে
দু’হাতে কাছে
টেনে নেয়। দুজনকে
বুকের মধ্যে
জড়িয়ে ধরে। জীবনে
নসু মিয়াকে
এতোটা আবেগপ্রবণ
হতে কেউ
এর আগে
কখনও দেখেনি।
জমি জমার কাগজ
পত্র নিয়ে
বসেছে মনু
মিয়া।
পারিবারের সদস্যরা সবাই উপস্থিত।
আমিন সাহেব
এসেছেন।
এসেছেন মৌলভী
সাহেবও।
সবকিছু সহি
সালামতে সম্পন্ন
হয়েছে।
সবার সম্মতিতেই
ভাগ বাটোয়ারা
সম্পন্ন হলো। মহব্বত
তাদের ভাগের
সব দলিল
চাচার হাতে
তুলে দিয়ে
বললেন, সবকিছু
তার কাছেই
থাক।
নসু মিয়া বললেন,
আমার হাতে
মনে হয়
খুব একটা
সময় নেই। তুমি
বড় হয়েছো। শুধু
তোমারটা না। আমাদেরটাও
বুঝে নাও। তোমার
বাপ-চাচা
বলতে দুজনই। আর
কোন অংশীদার
নেই।
তোমাকে এসবের
দায় নিতে
হবে।
আপনার কিছু হবে
না চাচা। আমি
আপনার পাশে
আছি।
আল্লাহ আমাদের
সহায় হবেন।
নসু মিয়া তবু
নাছোড়বান্দা। মেষশেষ মহব্বতকে দেখিয়ে
একটা
বড় আলমারিতে তালা মেরে রাখা
হয়।
নসু মিয়া
চাবিটা রাবেয়ার হাতে তুলে দেন। রাবেয়া
সেই চাবি
দেয় মায়মুনার
হাতে।
মায়মুনা চাবি
দিয়ে কি
করবে বুঝে
উঠতে পারে
না।
দলিল দস্তাবেজ
সে কিছু
বোঝে না। তাছাড়া
তার একমাত্র
মেয়ের জামাই
তো মহব্বতই। আলাদা
করে চাবি
রাখার কি
আছে।
শেষমেষ চাবি
একটা বোতলে
পুরে মেঝেতে
লুকিয়ে রাখলেন। শুধু
তারা তিনজনই
তা জানে।
দিন যায়।
পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে।
চারিদিকে শধু
দুঃসংবাদ।
সারা দেশে
দাঙ্গা ছড়িয়ে
পড়ার উপক্রম। আলেম
সাহেবের নিজের
এলাকায়ও বেশ
কয়েকবার সংঘর্ষ
হয়েছে।
উভয় পক্ষেরই
কিছু কিছু
লোক মারাত্মক
আহত হয়েছে। পাশাপশি
কেউ আগ্নেয়াস্ত্র
ব্যবহার করেছে। ব্যাপারটি
পুরো এলাকায়
দারুন আতংক
ছড়িয়েছে।
নসু মিয়াও টেনশনে
আছেন।
সেই সকালে
বেরিয়ে যান। রাতে
ফেরেন।
দুঃশ্চিন্তায় ঘুম, খাওয়া হারাম।
মহব্বতকে বাড়িতে
আসতে নিষেধ
করে দিয়েছেন। যতদিন
পরিস্থিতি শান্ত না হয় শহরেই
থাকতে হবে। রুমাও
শহরে ওর
এক খালার
বাসায় থাকছে
আপাতত।
পরিস্থিতি শান্ত হলে বাড়িতে ফিরবে। অবশ্য
এই সুবাদে
মহব্বতকে সে
কাছে পাচ্ছে।
সময় খুব দ্রুত
গড়িয়ে যাচ্ছে। চারদিকে
প্রচন্ড উত্তেজনা। থেমে
থেমে সংঘর্ষ
হচেছ।
নসু মিয়া
সবার আগে। সে
সাহসী মানুষ। দুঃসময়ে
স্বপক্ষ ত্যাগ
করার মতো
মানুষ সে
না।
ন্যায় অন্যায়
পরের কথা। আগে
পরিস্থিতি সামলাতে হবে। উপরের
নির্দেশ আছে।
মায়মুনা নসু মিয়াকে
কখনও এতোটা
পেরেশান হতে
দেখেনি।
এতোটা ভালো
আর যৌক্তিকও
হতে দেখেনি
এর আগে। খারাপ
মানুষ হিসাবে
যে নসু
মিয়ার বদনাম
এলাকায় সুবিদিত
সেই নসু
মিয়াই
আজ এলাকার হিরো। প্রতিটি
দাঙ্গায় সামনে
থেকে নেতৃত্ব
দিচ্ছে।
নিজের দলের
লোক তো
দুরে থাক
যারা নিরপেক্ষ
ছিলো তারাও
নসু মিয়ার
গুনে মুগ্ধ। যুক্তি
তর্কে নসু
মিয়া সবাইকে
এটাই জানিয়ে
দিয়েছে যে
সবকিচু হচ্ছে
সময়ের প্রয়োজনে। ঠিক
এভাবেই স্বাধীনতা
যুদ্ধ হয়েছিল। সবকিছু
ছিলো সময়ের
প্রয়োজনে।
সারাদিন গ্রামে গ্রামে
ঘুরে রাতে
বাসায় ফিরে
আসে নসু
মিয়া।
তার না
আসা পর্যন্ত
এক গ্লাস
পানিও পান
করে না
মায়মুনা।
রাবেয়া বার
বার এসে
খোঁজ নেয়
মানুষটা ফিরেছে
কি না। মানুষটা
শুকনো মুখে
জবাব দেয়,
এখনও ফেরেনি।
হঠাৎ করেই
খরব আসে
নসু মিয়া
মারা গেছে। না
প্রতিপক্ষের আঘাতে সে মরেনি।
উত্তেজনায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে
গেছে।
দাঁড়ানো অবস্থা
থেকে সরাসরি
বসে পড়েছে। তার
পর সব
শেষ।
মায়মুনা শুধু এটুকুই
বলল, মানুষটা
আজকাল সব
সময়ই একটা
কথা বলত,
মায়মুনা, আমার
মনে হয়
আমার সময়
ফুরিয়ে আসছে। তার
কথাই ঠিক
হলো।
Comments
Post a Comment