নাগর আলীর যোগ্যতা
এটুকই যে
প্রায় পয়তাল্লিশ
বছর ধরে
তিনি একই
বাড়িতে একই
ব্যক্তির সাথে
কাজ করছেন। এটা
আসলেই অবাক
করার মতো
ব্যাপার।
এছাড়া অবশ্য
আর কোন
যোগ্যতা তার
নেই।
সংসার জীবনে
নাগর আলী
অবশ্য সফল। ছেলেরা
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার
হয়েছে।
মেয়েরা বিয়ের
পর বিদেশে
চলে গিয়েছে। সবই
অবশ্য চৌধুরী
সাহেবের কল্যাণে। নাগর
আলী চৌধুরী
সাহেবের ব্যাক্তিগত
সহকারী।
পয়তাল্লিশ বছর আগে
কোন এক
সকালে হাঁটতে
বেরিয়ে নাগর
আলীকে খুঁজে
পান চৌধুরী
সাহেব।
হাতছাড়া করেননি। নাগর
আলীও রয়ে
যান।
দেখতে দেখতে
৪ দশকেরও
বেশী সময়। নাগর
আলী এখন
চৌধুরী সাহেবের
সবচেয়ে প্রিয়
বন্ধু।
নাগর আলীর সত্তর
আর চৌধুরী
সাহেবের আশি। জুটিটা
মন্দ না। দুজনের
মধ্যে অনেকগুলো
বিষয়ে মিল। এই
যেমন ডায়াবেটিস,
প্রেসার ইত্যাদি
ইত্যাদি।
তবু বেশ
চলে যাচ্ছে।
নাগর আলীর পক্ষে
অনেক কিছুই
সম্ভব ছিল
না।
কিন্তু চৌধুরী
সাহেব সেটাকে
সম্ভব করে
দিয়েছেন।
মেয়েদের পড়াশুনা
থেকে শুরু
করে কাপড়,
চোপড়, চিকিৎসা, সবই
তিনি বহন
করেন।
বড় ছেলে
তাই ডাক্তার
হয়েছে দেখতে
দেখতে।
ছোট ছেলে
হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার। বড়
মেয়েটা একটা
চমৎকার
ছেলেকে বিয়ে
করে চলে
গেছে সুইজারল্যান্ড। জামাই
ছেলেটা সেখানে
বড় চাকুরী
করে।
তার পরেরটা
আমেরিকায়।
নাগর আলীর নাম
লিখতে কলম
ভাঙ্গে তিনটা। তবু
সে প্রতিষ্ঠিত
ছেলেমেয়েদের বাপ। ছেলেমেয়েদের অভিভাবকের
কথা উঠলে
নাগর আলী
চৌধুরী সাহেবকে
দেখিয়ে দেয়। চৌধুরী
সাহেব প্রথম
প্রথম বিব্রত
হতেন।
এখন আর
হন না। গা
সহা হয়ে
গেছে।
নাগর আলী
সবসময় বলেন
শুধু জন্ম
দিলেই বাবা
হওয়া যায়
না।
চৌধুরী সাহেব
তাদের প্রকৃত
অভিভাবক।
অবশ্য ছেলেমেয়েরা
তাদের পিতাকে
দারুন সমীহ
করে।
এটা তাদের
বদান্যতা।
ছেলেমেয়েগুলো আসলেই মানুষ হয়েছে।
চৌধুরী সাহেবের সার্বক্ষণিক
সঙ্গী এই
নাগর আলী। সামান্য
সময় সামনে
না থাকলে
তার মাথা
খারাপ হয়ে
যায়।
মাঝে মাঝে
গালিগালাজও করেন। এটা তার
অভ্যাস।
নাগর আলী
জানে এসব
কথার কথা। চৌধুরী
সাহেবের কলিজার
টুকরা সে। তাকে
ছাড়া সেও
কিছু বোঝে
না।
গালি গালাজটা
মজা করার
জন্যে।
তার কাছে
নাগর আলী
মানে একটা
আস্ত ব্যাকরণ। নাগর
আলীর হাতের
ছোঁয়া ছাড়া
তিনি কিছু
খাবেনও না। নাগর
আলী আসলেই
তার কলিজায়
ঢুকে বসে
আছেন।
যাকে ভালোবাসেন
তাকেই তো
বকবেন।
এটাই তো
স্বাভাবিক।
নাগর আলী আর
চৌধুরী সাহেব
তাই একটা
অদ্ভুত কেমিষ্ট্রির
মধ্য দিয়ে
পুরো জীবনটা
পার করলেন। কেউ
কাউকে ছাড়া
কিছু বোঝেন
না।
বিস্তর ব্যবধান
তাদের সম্পর্ককে
কখনও নাজুক
করতে পারেনি। ভাঙ্গতে
পারেনি কোন
দেয়াল।
এমনকি নাগর
আলীর ছেলেমেয়েরা
নিদারুন প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার পরও
চৌধুরী সাহেবের
কাছে আগের
মতোই রয়ে
গেছেন।
ভালোমানুষদের এই একটা গুণ।
তারা সহজে
বদলায় না
। নাগর আলী এখনও চৌধুরী
সাহেবের সহকারী। ঠিক
পয়তাল্লিশ বছর আগে যেমন ছিলেন। মৃত্যুর
আগ পর্যন্ত
হয়তো থাকবেন।
নাগর আলী এবং
চৌধুরী সাহেবের
বেশীর ভাগ
সময়ই কাটে
অতীতের স্মৃতিচারণ
করে।
বেশীর ভাগ
ক্ষেত্রেই চৌধুরী সাহেব বলেন।
নাগর আলী
শোনেন।
স্রোতা হিসেবে
নাগর আলী
এক নম্বর। সারাদিন
শুনলেও তার
ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে না। এ
ধরনের মানুষ
পাওয়া বিরল। সুযোগ
পেলেই সবাই
হড়বড় করে
বলতে শুরু
করে দেয়। কিন্তু
নাগর আলী
ব্যতিক্রম।
তিনদিন একটানা
শোনার পরও
তার ধৈর্য্য
হারাবে না। বলার
চেষ্টাও করবে
না।
নাগর আলী
অনন্য এক
ব্যক্তিত্ব।
বয়স্ক মানুষদের জ্বালা
অনেক।
শরীরে হাজারো
সমস্যা।
মন আর
শরীর এক
রেখায় যেতে
চায় না।
Comments
Post a Comment