Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

তক্তপোষ




আমার নাম রতন আমার বয়স ১৮ আমার কাছে ঘুম হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় আমি তাই সারাক্ষণ তক্তপোষে উঠে বসে থাকি অপেক্ষায় থাকি কখন ঘুম আসবে যেটুকু সময় জেগে থাকি আমার মুখ চলে মায়ের তবু আমাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই সারাক্ষণ ছেলেটার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেলো বলে আফসোস করতে থাকে আমার কাজ তাই সারাক্ষণ শুধু খাওয়া আর ঘুম মাকে আমার চিন্তামুক্ত রাখতে হবে
আমার অবস্থা এরকম হতো না যখন থেকে আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলো আমার ভাগ্য বদলে যেতে লাগলো এটাকে দুর্ভাগ্য বলা যায় কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না মা আমার ব্যাপারে ভীষণ স্পর্শকাতর আমার কোন কষ্ট হোক এটা মা একদম সহ্য করতে পারেন না মায়ের আহ্লাদে আর বাবার প্রশ্রয়ে আমি এখনই ছোটখাট একটা হাতিতে পরিণত হয়েছি ছিয়াশি কেজি ওজনের ছোট শরীরটা নিয়ে তাই আর নড়াচড়ার একদম ইচ্ছে জাগে না কখনও জেগে ঘুমাই কখনও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জাগি সব কিছু মিলিয়ে একটা অদ্ভূত আর বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা মাঝে মাঝে মনে হয় মাঠে নেমে পড়ি মা সহ্য করতে পারে না আমার ভাইয়েরও একই অবস্থা
আমার ৎমা বাড়িতে আসার পর থেকেই যাবতীয় অশান্তির শুরু তিনি আসার পরেই সবকিছু দুভাগ হয়ে গেলো আব্বার ভালবাসাটা প্রথম ভাগ করা হলো ঘরে একদিন তো ঘরে একদিন তারপর আস্তে আস্তে সব এখন আমরা শুধু পরস্পরের প্রতিপক্ষ আমার মা ইচ্ছে করেই আহলাদ করতে করতে আমার সর্বনাশ করেছে ৎভাইয়ের আদরের বহর দেখে তার গা জ্বালা করে তিনিও পাল্লা দিয়ে আমাকে আদর করতে শুরু করেন আমার যা সর্বনাশ হওয়ার হতে থাকে আমি সরাসরি মাটি থেকে এই তক্তপোষে উঠে পড়ি এখানেই আমার খাওয়া এখানেই আমার ঘুম
আমার বাবা আমার ছোট মাকে বাড়ীতে আনেন তাও কমসে কম দশ বছর তো হবেই সবাই বলে বিয়ে নাকি আগেই করেছিলেন আম্মার ভয়ে লুকিয়ে রাখেন তারপর সবক্ষেত্রে যা হয় সবকিছু জানাজানি হয়ে যায় মাও ঝেড়ে কাশেন নিয়ে আসতে বলেন দুরে রেখে এক্কা দোক্কা খেলার কি দরকার তার চেয়ে কাছে এনে বরং হোলি খেলা যাক আম্মারও নেশা চেপে বসে প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ করার সে তাই আব্বাকেও বিপক্ষ হিসেবে ধরে নেয় তার জোর ছিলো একটাই সে বাড়ীতে আগে এসেছে আমার বাবাও তার সেই দাবীকে কখনও ছোট করেননি মার সব কথার বিপরীতেই চুপ থেকেছেন বরাবর এদিক দিয়ে বিচার করলে আমার বাবাকে একজন ভালো মানুষই বলতে হবে
আমার মাথায় আসে না ধরনের একজন ভালো মানুষের দুটো বিয়ের কি দরকার সংসারে দিনভর অশান্তি আর ঝগড়াঝাটি ছাড়া আমার বাবাকে তো আর কিছু পেতে দেখিনি বলতে গেলে তাকে প্রতিদিনই দুই মায়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে শালিসি করতে হয় কাহাতক এই সব ভালো লাগে কিন্তু উনি দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন ভীষণ ধীর, স্থির, শান্ত এই লোকটাকে জন্মের পর মনে হয় ঠান্ডা পানিতে ভেজানো হয়েছিল নইলে একটা লোকের পক্ষে এতটা ধীর, স্থির, শান্ত হওয়া কীভাবে সম্ভব একিলিসের মতো একিলসকে তার মা মৃত্যু সঞ্জিবনী অনন্ত দরিয়ায় গোসল করিয়েছিলেন একিলিসের সারা শরীর তাই আঘাত প্রতিরোধী হয়েছিল এটা ছিল দেবতার বর কিন্তু একিলিসের মা একটা ভুল করেছিলেন যে জায়গাটায় তার মা তাকে ধরেছিল অর্থা তার গোড়ালিটা যে ভেজেনি এটা কিন্তু তার মা খেয়াল করেনি আর সেটাই ছিল তার শরীরের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা ট্রয়ের যুদ্ধে হেক্টরের ছোট ভাই আগামেমননের পূর্বের স্ত্রী হেলেনের স্বামী প্যারিস এখানে তীর বিদ্ধ করেই একিলিসকে মেরে তার জেষ্ঠ্য ভ্রাতা হেক্টরের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিলন এজন্যই দুর্বল কোন কিছুর কথা আসলেই তাকে একিলিসের হিলের সাথে তুলনা করা হয় এসব কথা গ্রীক পুরাণে লেখা আছে আমার বাবা আমাকে গ্রীক পুরাণ কিনে দিয়েছেন বেশ কিছুদিন হল আমি সেখান থেকে পড়ে পড়ে এসব শিখেছি
দুই পরিবারের কলহ-কোন্দল দিনে দিনে শুধু বেড়েই চলছে কিন্তু তাই বলে জীবন তো আর থেমে নেই আমার হাতির শরীর দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা আমি পারি বা না পারি আমার মা টিপে টিপে আরও গেলানোর চেষ্টা করছে খাবারটা আমার প্রয়োজন কিনা সেটা ভাববার অবকাশ নেই পাছে আমার খাওয়াটা আমার ৎভাইয়ের চেয়ে কম হয় এটাই তার মাথাব্যাথার কারণ একদিন তো সে এসে বলেই ফেলল আমার ৎভাই মানিক নাকি তিন কেজি চালের ভাত খায় কথা শুনে আমার এমন অনুভূতি হয় যে ভকভক করে বমি চলে আসে পেটে যা ছিলো তাও বেরিয়ে যায় মা ভীষণ কষ্ট পায় আফসোস করে বলতে থাকে একটায় তিন কেজি চালের ভাত একসাথে সাবাড় করছে আর এটাকে এতক্ষণ ধরে টিপে টিপে যাও একটু খাওয়ালাম তাও বমি করে ফেলে দিল আমার হয়েছে যত জ্বালা গলায় দড়ি দিয়ে মরতে পারলে ভাল হতো
বমির দমকে আমার দুচোখে তখন পানি নাকে লাল মুখে লালা আমার আর কান্নার দরকার হয় না মা আমার ধরেই নেন যে কষ্টে আমি কাঁদছি তিনি দ্বিগুণ ব্যাকুল হন আব্বা ছুটে আসেন কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে সেই বমির উপর পা পিছলে তিনি মাটিতে পড়ে যান তারপর প্রায় সপ্তাহখানেক কোমর ব্যাথায় ভুগে অবশেষে মালিশ টালিশ লাগিয়ে, কতগুলো ঔষধপথ্য গিলে শেষ পর্যন্ত সুস্থ হন আমার ভীষণ মন খারাপ লাগে আমার কারণে আব্বাকে এমন একটা দুর্ভোগে পড়তে হলো অবশ্য আমার কিছু করার ছিলো না হাতির বমির ধরণ এমনই হয় হয়তো
সময় আগাতে থাকে আমি নিজেকে নিয়ে শংকিত হতে থাকি এভাবে বাড়তে থাকলে না জানি কবে এই খাটের উপরেই মরে পড়ে থাকি মোটা মানুষের অনেক সমস্যা স্বাস্থ্যের কাছে বয়স হার মানে ১৮ বছরেই আমাকে ৮১ বছরের বুড়োর মতো হাসফাস করতে হয় আমার অবস্থা সঙ্গীন
হঠা করে সবকিছু বদলে যায় কিযে হয় জানি না একদিন রাতে মানিক আসে আমার কাছে এসে বলে ভাইয়া দুই পরিবারের ঝগড়ায় আমরা শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাব তার চেয়ে বরং চল আমরা বাঁচি রাস্তায় গিয়ে হাঁটি মাঠে গিয়ে খেলি দৌঁড়ে অনেক দুর যাই নদীতে সাঁতরাই চল ওঠ আমরা বেঁচে থাকি অথচ এই মানিকের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক ওর দিকে তাকানো, ওর ছায়া মারানোও আমার নিষেধ
আমার মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে ওর হাত ধরে তক্তপোষ থেকে নামি উঠান পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তায় আসি রাত তখন গভীর সবাই ঘুমিয়ে আমি আর মানিক আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠি আমাদের বাঁচতে হবে
কেউ কিছু জানে না যথাসময়ে ফিরে আসি বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকি সারাদিনের কর্মক্লান্ত মা সন্ধ্যার পরপরই ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যায় এসবের কিছুই তার জানা হয় না অবশ্য সে জানলে আমার আর যাওয়া হবে না
একদিন মানিককে জিজ্ঞাসা করি তোকে এসব কে বলেছে মানিক জবাব দেয় আমার মা সে তোমাকে এবং আমাকে অনেক ভালোবাসে সে কখনই চায় না আমরা অথর্ব হই অল্প বয়সে মারা পড়ি আমাদের বাঁচাতে চায় সে
আমি গোপনে ছোট মায়ের কাছে যাই মানিকও সাথে থাকে মা আমাকে অনেক আদর করে আমার দুচোখ বেয়ে ঝর্ণা ধারা নামে
ছোট মা কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি তোমার মায়ের সারা জীবনের সুখ নষ্ট করেছি কিন্তু এতে আমার কোন দোষ নেই আমি নিরূপায় ছিলাম তোমার বাবা আমাকে বিয়ে করে উদ্ধার করেছিলেন ওনার এই ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না অসহায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না
আমি ছোট মাকে ক্ষমা করে দেই কিন্তু হঠা করেই আতঙ্কে আমার হাত পা জমে ওঠে আমার মা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে সর্বনাশ!
আমি আস্তে উঠে আসি মুখ শুকিয়ে কাঠ জীবনে এত ভয় কোনদিন পাইনি বুকের পাটাতনের ওঠা নামা স্পষ্ট ধরা পরে
মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন তোর ছোট মা ঠিকই বলেছেন তোদেরকে বাঁচতে হবে
আজ থেকে দুই ভাই এক সাথে চলবি ছোট মার দুচোখ বেয়ে আনন্দের অশ্র নামে আমার খুব আফসোস হয় ইশ! আজ আব্বা বেঁচে থাকলে খুব খুশী হতেন

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak