প্রতি
বছর ১৬ই ডিসেম্বর আসে। যথাযথ
মর্যাদায় পালনও হয়। সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে এই
মহোৎসব পালনের
ছবি কিংবা খবরাদি ছাপাও
হয়। আমরা
বরাবরের মতো আবেগাপ্লুত হই। পরদিন
সকাল সবকিছু ভুলে গিয়ে
আবার আগের মতো হয়ে
যাই। বিজয়
দিবস আমাদের জন্যে অনেক
বার্তা নিয়ে আসে। অনেক স্মৃতি নিয়ে
আসে। সেসব
আমাদের স্পর্শ করে না। আমরা
যারা বিখ্যাত তারা শুধু খুঁজে
বেড়াই আমাদের কতোটা গুরুত্ব
দেওয়া হলো। কতটুকু কাভারেজ পেলাম। যারা অখ্যাত তারা একদিনের
ছুটি ভোগ করি। কি অসাধারণ যোগসূত্র
উভয় শ্রেণীর। সবাই যার যার মতো
করে এর অর্থ খুঁজতে
চেষ্টা করি। অথচ কিছু দিবসের নিজস্ব
একটা বার্তা আছে। একটা মাহাত্ম্য আছে। আছে
একটা অন্য রকম মহিমা।
নগরের
রাস্তায় যে ছাগলটি একটু
পরেই জবাই হবে তার
মালিককেও চাঁদা দিতে হচ্ছে। আমাদের
জন্য জীবন দিতে আসা
প্রানীটিকেও তার শেষ বলিদানের
পূর্বে অন্তিম প্রয়াণ ফি
প্রদান করতে হয়। কি নিদারুন বৈপরীত্য।
শেখ হাসিনার কোন নিদের্শ নেই। তবু
প্রতি বছর প্রতিটি জাতীয়
উদযাপনে নিরীহ এলাকাবাসী চাঁদাবাজির
শিকার হয়। এই চাঁদার অতি সামান্য
অংশ মাত্র আনুষ্ঠানিকতায় ব্যয়
হয়। বাকীটা
যায় অবতারের পেটে। আমরা যা কিছু বলি
তার বেশির ভাগই করি
না। অসম্ভব
একটা হুজুক আমাদের পেয়ে
বসেছে। সত্য
কাজ করা আর সত্য
কথা বলা এখন সত্যিই
বড় বিপদের কাজ।
প্রত্যেক
ধনাঢ্য কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি
তার একটি মিডিয়া প্লাটফর্ম
তৈরি করেছে। সেই প্লাটফর্মে যে যার মতো
তারই গুনগান করছে। কেউ কারও কথা
শুনছে না। নতুন প্রজন্ম বিটিভির নাম জানে শুধু
ইত্যাদির মাধ্যমে। আমাদের মিডিয়ার একটা জাতীয় প্লাটফর্ম
থাকা উচিত। যেখান থেকে যা কিছু
বলা হবে তাই সবাই
শুনবে।
আবারও
বলছি শেখ হাসিনা চেষ্টা
করছেন। কিন্তু
লাভের লাভ কিছু হচ্ছে
না। উন্নয়ন
আর একটা জাতির নৈতিক
পরিবর্তন একই জিনিস নয়। উন্নয়ন
ক্ষমতার দুএক মেয়াদেই সম্ভব। এটা
অর্থনীতির ব্যাপার। কিন্তু সামাজিক ব্যাপারটা সংস্কৃতির ব্যাপার। হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমরা অন্ততঃ ছাগলের
ওপর চাঁদাবাজিটুকু থামাতে পারি। বড় বড় অর্জনের
কথা পরে আসুক।
দেশে একটা একচেটিয়া ভাব
কায়েম হয়েছে। এটা করতে হয়েছে কারন
এর বিকল্প নেই। তস্কর, লুচ্ছা, লাফাঙ্গাদের
হাতে তো আর দেশ
ছেড়ে দেওয়া যায় না। ছেড়ে
দিলে কি হবে তার
প্রমাণ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫,
২০০১ থেকে ২০০৫ এবং
মাঝখানে ১৫ই ফেব্রুয়ারীর বিতর্কিত
নির্বাচনে দেখা গেছে। যারা এরূপ করেছিল
তারা অনেকেই ইতোমধ্যে নির্বাসিত
হয়েছে। কিন্তু
এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া
না হলে একই দৃশ্যই
দেখা যাবে। নতুন কিছু হয়তো মেলা
ভার। আমরা
কিছু মাত্র কাল ক্ষেপন
করছি একটি মুভিকে বার
বার দেখার মধ্য দিয়ে।
আওয়ামী
লীগের সময়কালেই অনেক বড় বড়
আওয়ামী লীগের কাছে ছোট
ছোট আওয়ামী লীগ নিরাপদ
নয়। আবার সামর্থ্যবান বিএনপি
কিংবা জামায়াতও আওয়ামী লীগের সাথে
পয়সা কিংবা ক্ষমতার মাধ্যমে
হাত মিলিয়ে নিরীহ জনগনের
ক্ষতি করে যাচ্ছে। এক কথায় মার্ক্সের
শ্রেণী শক্ররা আজও ক্ষমতায়
বহাল। সমাজে
কি করে পরিবর্তন আসবে
বোঝা কষ্ট।
হাত বাড়ালেই যাবতীয় অপকর্মের উপাদান
সহজলভ্য। অস্ত্র,
ইয়াবা, কালো টাকা, চাঁদাবাজির
বস্তা ভরা অর্থ সবই
হাতের নাগালে। কেই বা আর কষ্ট
করে পড়াশুনা করে বা চাকরি
করে কিংবা ব্যবসা করে। দারুন
একটা দর্শন চলছে। সবাই যার যার
মতো পকেটে পুরে নিচ্ছে। এসব
কারোরই চোখে পড়ছে না। অথবা
হয়তো পড়ছে। কিন্তু কথা বললে বিপদ। পাছে
মানহানি হয়। হতেই তো পারে। কন্যাকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে
গিয়ে জীবন দিতে হচ্ছে
পিতাকে। সত্যিই
সেলুকাশ। কি
বিচিত্র এই দেশ।
মহামান্য
প্রধানমন্ত্রী একজনই। তিনি একাই চেষ্টা করে
যাচ্ছেন। গলা
ফাটাচ্ছেন। ভালো
কিছু করো, সোনার বাংলা
গড়ো। লাভের
লাভ কিছুই হচ্ছে না। তার
বিমানের নাট বল্টু ঢিলে
করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে তিনি আর
বেশী কথা বলতে না
পারেন। নীতি
কথা কার কাহাতক ভালো
লাগে । যত
আনন্দ তো নোংরামীতে।
এভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করা হচ্ছে। আপনি
থামুন। আমাদের
অপকর্ম করতে দিন। নইলে এর পর
পুরো বিমানের নাটবল্টু, জোড়া-জয়েন্ট খুলে
দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী
ভয় পাবার পাত্র নন। আমরা
ভুল জায়গায় বার বার
নক করছি। মনে রাখতে হবে তিনি
মুজিব কন্যা। মৃত্যু তার কাছে পায়ের
ভৃত্য।
সামাজিক
অবক্ষয় সময়ের ঘুঁনপোকা।
ধীরে ধীরে পুরো অবকাঠামো
খেয়ে ফেলবে। সামাজিক
দর্শনের দশটি উল্লেখযোগ্য প্যাটার্নের
মধ্যে আমার সবচেয়ে মনে
ধরে মার্ক্সের তত্ত্ব যেখানে বলা
হয়েছে ক্ষমতা, অর্থ আর বিত্তশালীরা
দমন পীড়নের মাধ্যমে, ভয়-ভীতির মাধ্যমেই সমাজকে
নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে
এই দর্শন শুধু বাংলাদেশ
নয় পুরো পৃথিবীতে কায়েম
হয়েছে। আমেরিকায়
সম্প্রতি ট্্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া এর সর্বশেষ
বহিঃপ্রকাশ। সমাজতন্ত্র
পৃথিবী থেকে উঠে গেলেও
যে কারণে সমাজতন্ত্রকে চিন্তা
করা হয়েছিল তা আজও
পুরোমাত্রায় বহাল। আমার মনে হয় ভিন্ন
আঙ্গিকে এই দর্শণ আরও
জরুরী ও প্রাসঙ্গিক হবে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের
পর ৪৪টি বিজয় দিবস
পালিত হয়েছে। এটি অর্থাৎ ২০১৬
সালের বিজয় দিবসটি ৪৫তম। আমরা
আরও একটি অর্থহীন বিজয়
দিবস দেখতে যাচ্ছি। এর চেয়ে কষ্ট
আর লজ্জার কিছু নেই।
সত্যি
কথা বলা আজ বড়ো সমস্যা। যে প্রতিবাদ করবে
সে আওয়ামী লীগের শত্রু। আবার
বিত্রনপি কিংবা জামাতের দলেও
নেই। সে
একটি বিচ্ছিন্ন প্রাণী। ডিসকভারী
চ্যানেলে যেমন দেখা যায়
বিচ্ছিন্ন গরু কিংবা মহিষকে
সিংহ কিংবা বাঘ এসে
খেয়ে ফেলে। তারও আগে বর্তমানে যা
করতে হবে তা হলো
নোংরামী করলে নোংরাদের সিংহ
এসে খেয়ে ফেলবে। ধন্যবাদ সবাইকে। বিজয় দিবস সফল হোক।
Comments
Post a Comment