Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

৭৫ থেকে ৯০ ঃ পাকিস্তানাইজেশনের গভীর যড়যন্ত্র



১৯৮১ সালের ৩১শে মে জিয়াউর রহমান চিটাগাং সার্কিট হাউসে গভীর রাতে এক সামরিক ক্যু তে নিহত হন। হত্যাকান্ডে কারা জড়িত ছিলো তা আজও পরিস্কার না হলেও দোষ চাপানো হয় মেজর জেনারেল মঞ্জুরের ঘাড়ে। অবশ্য তিনি তখনও তার কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু এরকম অনেকেই আছেন যারা আজও বিশ্বাস করেন মঞ্জুরের সুন্দরী স্ত্রীর নিদারুন বুদ্ধিমত্তাই সমস্ত ঘটনার নেপথ্যে। কিন্তুু এসবের সত্যতা আজও প্রমানিত হয়নি।
জিয়া সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৪শে আগষ্ট অর্থা শেখ মুজিব হত্যার ৯ দিন পরেই । ঘটনাটা কাকতালীয় নয়। কারণ তকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধন কে, এম শফিউল্লাহকে তকালীন প্রেসিডেন্ট খোন্দাকর মোশতাক আহমেদ যথেষ্ট অনুগত মনে করেননি। তাই তিনি তার সমমনা জিয়াউর রহমানকে সমারিক বাহিনীর পদে বসান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফ কর্তৃক সংঘটিত ক্যু-তে খোন্দকার শোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশের প্রথম বিচারপতি এ এস এম সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন। এই মনোনয়ন ছিলো খালেদ মোশারফের। কিন্তু ৭ই নভেম্বরের কাউন্টার ক্যু-তে খালেদ মোশাররফের মৃত্যু হলেও জিয়াউর রহমান আবারও সামরিক বাহিনীর পদে ফিরে আসেন। জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফের এই নিয়োগ বহাল রাখেন এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তারিখে নিজে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এই সায়েমই রাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন। এই সময় জিয়া নিজেই এককভাবে সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি এরশাদকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে ঘোষনা করেন। যদিও এরশাদ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় মোশতাক জিয়াকে আর জিয়া এরশাদকে আনলেন। বাকী যারা ছিলো তারা খেলার পুতুল। ইতিহাসের মূল গতিধারায় এদের কোন ভূমিকা ছিলো না। এরা ছিলো শুধু পদ পূরণের জন্যে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলার রাজনীতিতে এরকম পদ পূরনের লোকের পদচারনা এবং কালচার চোখে পড়ে। কারণ আর কিছুই নয়। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের সময়কাল পর্যন্ত এরকম অনেক লোকই বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন। নব্বইয়ের গন-আন্দোলনের পর এই কালচারে কিছুটা হলেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের আলোচনা মূলতঃ এই বিষয়ে নয়। আমি মূলতঃ দেখাতে চাই ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ এই সময়কালে বাংলাদেশকে পাকিস্তানাইজেশন করা হয়েছিলো এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিটি ঘটনা প্রবাহই এর সমর্থন করে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করা যেতে পারে। খোন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি বিল চালু করলেন যা মুজিব হত্যার বিচার আচারের প্রতিবন্ধকতা হলো। সেই সাথে সাথে খুনীদের প্রমোশনও দেওয়া হলো। যেমন সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর থেকে লেঃ কর্নেল হলেন।
তরা নবেম্বর মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হলে খালেদ শোশাররফ ক্ষমতা দখল করেন। ৭ই নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হলে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই সব কুশীলবদের পরবর্তী জীবনের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করলেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করেই খুনীদের চাকুরিচ্যুত করেন এবং বিতাড়িত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কুশীলবদের একজনের নাম সৈয়দ ফারুক রহমান। আমরা তার কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করেন এবং ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্টা করেন। এই ব্যানারেই তিনি ১৯৮৬ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি পদে লড়াই করেন। এখানে উল্লেখ্য ৮০ এর দশকে তাকে সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কথিত আছে তিনি ভারতের আসাম ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উলফার সাথে জড়িত।
আমাদের অনেক আলোচনার প্রয়োজন নেই। যেটুকু আলোচনা করা হয়েছে সেটুকুই এটা প্রমানে যথেষ্ট যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যার মূল উদ্দেশ্যে ছিলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানইজেশন করা। ষড়যন্ত্রকারীরা যে কিছুটা হলেও সফল হযেছিল তা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি স্পষ্ট। তবে একটা কথা সত্য সেই ষড়যন্ত্র কিন্তুু এখনও শেষ হযে যায়নি। মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বার বার প্রাণ নাশের চেষ্টা এরই ধারাবাহিকতা। তাছাড়া বিএনপি জামায়াত জোটের যাবতীয় কার্যকলাপ এই দাবীকেই সমর্থন করে। অতএব সাধু সাবধান। অঘটন যখন তখনও ঘটতে পারে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়। ১৯৯৮ সালে আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি আনে। অবশেষে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২৮শে জানুযারী ২০১০ সালে তার ফাঁসী কার্যকর করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে সৈয়দ ফারুক রহমান বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak