১৯৮১ সালের ৩১শে মে জিয়াউর রহমান
চিটাগাং সার্কিট হাউসে গভীর রাতে এক সামরিক ক্যু তে নিহত হন। হত্যাকান্ডে কারা জড়িত
ছিলো তা আজও পরিস্কার না হলেও দোষ চাপানো হয় মেজর জেনারেল মঞ্জুরের ঘাড়ে। অবশ্য তিনি
তখনও তার কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু এরকম অনেকেই আছেন যারা আজও বিশ্বাস করেন মঞ্জুরের
সুন্দরী স্ত্রীর নিদারুন বুদ্ধিমত্তাই সমস্ত ঘটনার নেপথ্যে। কিন্তুু এসবের সত্যতা আজও
প্রমানিত হয়নি।
জিয়া সামরিক বাহিনীর প্রধানের
দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৪শে আগষ্ট অর্থাৎ শেখ মুজিব হত্যার ৯ দিন পরেই
। ঘটনাটা কাকতালীয় নয়। কারণ তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধন কে, এম শফিউল্লাহকে তৎকালীন
প্রেসিডেন্ট খোন্দাকর মোশতাক আহমেদ যথেষ্ট অনুগত মনে করেননি। তাই তিনি তার সমমনা জিয়াউর
রহমানকে সমারিক বাহিনীর পদে বসান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফ
কর্তৃক সংঘটিত ক্যু-তে খোন্দকার শোশতাক ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশের প্রথম বিচারপতি
এ এস এম সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন। এই মনোনয়ন ছিলো খালেদ মোশারফের। কিন্তু
৭ই নভেম্বরের কাউন্টার ক্যু-তে খালেদ মোশাররফের মৃত্যু হলেও জিয়াউর রহমান আবারও সামরিক
বাহিনীর পদে ফিরে আসেন। জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফের এই নিয়োগ বহাল রাখেন এবং ১৯৭৭
সালের ২১ এপ্রিল তারিখে নিজে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এই সায়েমই
রাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন। এই সময় জিয়া নিজেই এককভাবে সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রপতির
দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি এরশাদকে সামরিক বাহিনীর
প্রধান হিসেবে ঘোষনা করেন। যদিও এরশাদ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারী
মাসে। এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় মোশতাক জিয়াকে আর জিয়া এরশাদকে আনলেন। বাকী যারা
ছিলো তারা খেলার পুতুল। ইতিহাসের মূল গতিধারায় এদের কোন ভূমিকা ছিলো না। এরা ছিলো শুধু
পদ পূরণের জন্যে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলার রাজনীতিতে এরকম পদ পূরনের
লোকের পদচারনা এবং কালচার চোখে পড়ে। কারণ আর কিছুই নয়। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের সময়কাল
পর্যন্ত এরকম অনেক লোকই বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন। নব্বইয়ের গন-আন্দোলনের পর এই কালচারে
কিছুটা হলেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের আলোচনা মূলতঃ এই বিষয়ে
নয়। আমি মূলতঃ দেখাতে চাই ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ এই সময়কালে বাংলাদেশকে পাকিস্তানাইজেশন করা
হয়েছিলো এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিটি ঘটনা প্রবাহই
এর সমর্থন করে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করা যেতে পারে।
খোন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি বিল চালু করলেন যা মুজিব হত্যার বিচার আচারের প্রতিবন্ধকতা
হলো। সেই সাথে সাথে খুনীদের প্রমোশনও দেওয়া হলো। যেমন সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর থেকে
লেঃ কর্নেল হলেন।
তরা নবেম্বর মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত
হলে খালেদ শোশাররফ ক্ষমতা দখল করেন। ৭ই নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হলে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়
আসেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে প্রতিষ্ঠিত
করেন। এই সব কুশীলবদের পরবর্তী জীবনের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করলেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করেই খুনীদের চাকুরিচ্যুত করেন এবং বিতাড়িত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কুশীলবদের
একজনের নাম সৈয়দ ফারুক রহমান। আমরা তার কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ১৯৮১ সালে জিয়াউর
রহমানের মৃত্যুর পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করেন এবং ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্টা
করেন। এই ব্যানারেই তিনি ১৯৮৬ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি পদে লড়াই করেন। এখানে
উল্লেখ্য ৮০ এর দশকে তাকে সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কথিত আছে তিনি
ভারতের আসাম ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উলফার সাথে জড়িত।
আমাদের অনেক আলোচনার প্রয়োজন
নেই। যেটুকু আলোচনা করা হয়েছে সেটুকুই এটা প্রমানে যথেষ্ট যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যার মূল উদ্দেশ্যে ছিলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানইজেশন করা।
ষড়যন্ত্রকারীরা যে কিছুটা হলেও সফল হযেছিল তা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহের মধ্য
দিয়ে পুরোপুরি স্পষ্ট। তবে একটা কথা সত্য সেই ষড়যন্ত্র কিন্তুু এখনও শেষ হযে যায়নি।
মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বার বার প্রাণ নাশের চেষ্টা এরই ধারাবাহিকতা। তাছাড়া বিএনপি জামায়াত
জোটের যাবতীয় কার্যকলাপ এই দাবীকেই সমর্থন করে। অতএব সাধু সাবধান। অঘটন যখন তখনও ঘটতে
পারে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়
এলে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়। ১৯৯৮ সালে আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং বিচার প্রক্রিয়ায়
ধীর গতি আনে। অবশেষে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এলে ২৮শে জানুযারী ২০১০ সালে
তার ফাঁসী কার্যকর করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে সৈয়দ ফারুক রহমান বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত
খুনী।
Comments
Post a Comment