বালুচরা কেন আজও স্বাধীন হতে পারলো না
OMAR KHALED RUMI
৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বেলুচিস্তানের জনসংখ্যা মাত্র ১,২৩,৪৪,৪০৮ জন। আরব সাগরের তীর ঘেষে ৯৬৫ কিলোমিটার উপকুলীয় তটরেখার বলতে গেলে পুরোটাই ভঙ্গুর। এটি পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রদেশ যা পাকিস্তানের আয়তনের ৪৮ শতাংশ দ্বারা গঠিত। পর্বতময় পুরো এলাকাটি শুষ্ক ও রুক্ষ্ম আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত। গাছপালা বলতে মরুভূমিতে জন্মানো গুল্ম জাতীয় কিছু উদ্ভিদ। প্রদেশের রাজধানী এবং প্রধান শহর হলো কোয়েটা। অধিবাসীদের মধ্যে ৫২% বালুচ আর ৩৬% পশতুন। বাকী ১২% এর মধ্যে রয়েছে ব্রাহুইস, হাজারা, সিন্ধি, পাঞ্জাবী, উজবেক ও তুর্কমেন।
১৯৬৬ সালে কালাত রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৭৫৮ সালে এটা আফগানদের অধীনতা স্বীকার করে নেয়। ১৯৩৯ সালে বৃটিশরা এটা অধিকার করে নেয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এটা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ তো গেলো বালুচিস্তান নিয়ে সাধারণ কিছু কথা। কিন্তু আমি মূলতঃ বালুচরদের নিয়ে যে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম তা হলো তারা যে পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো তা ছিলো শর্তসাপেক্ষ। বলা হয়েছিলো মাত্র দুটি বিষয় অর্থাৎ নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র কেন্দ্রের হাতে রেখে বাকি সব ক্ষমতাই প্রদেশের কাছে ন্যস্ত করা হবে ঠিক যেভাবে ফেডারেল পদ্ধতিতে করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান আজও তার সেই শর্ত পূরণ করেনি। পারিনামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বালুচরা তাদের দাবী আদায়ে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। এটাকে একটি সুপরিকল্পিত স্বাধীনতা আন্দোলন বলা না গেলেও মোটামুটি একটা শক্ত প্রতিবাদ তো বলাই যায়।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় প্রথম বিতর্কের উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৮-৫৯ সালে আবার তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে আবারও ঝামেলা দেখা দেয়। এরপর আবার সংঘাত বাঁধে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে শুরু হওয়া সংঘাত এখনও চলছে। মোদ্দাকথা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম চালিয়ে আসলেও বালুচরা কিন্তু আজও স্বায়ত্তশাসন কিংবা স্বাধীনতার মুখ দেখতে পারেনি। তার চেয়ে বরং বাংলাদেশ নয় মাসের যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছে। আমি শুধু একথাই বলতে চাইছি ১৯৭১ সালে আমরাও যদি মরণপন লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন না করতাম তাহলে আজও হয়তো বালুচদের মতো আমাদের কাঠখড় পোড়াতে হতো।
Comments
Post a Comment