কেন আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করা উচিত OMAR KHALED RUMI
PUBLISHED BEFORE GENERAL ELECTION OF BANGLADESH - 2018
আমরা সবাই জানি ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন তৎকালীণ পশ্চিম পাকিস্তানের অসন্তুষ্ট মুসলীম লীগ কর্মীদের সমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে যার পুরো পাকিস্তানের ইউনিটটি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ নামে পরিচিত লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এই দলটিই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম গ্রহণ করে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের কোটি মানুষের প্রাণের সংগঠনে পরিনত হয়।
রাজনীতির গতিপথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পুরনো। অভিজ্ঞ এবং অনেক চড়াই উৎরাই পার করা একটি দল। প্রতিষ্ঠালগ্নে এর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো জাঁদরেল নেতা আর এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কালজয়ী নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কিংবদন্তী।
স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসের খাতায় আওয়ামী লীগের পাল্লা তাই সবসময়ই ভারী। রাজনীতির মাঠ কখনওই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। তৎকালীন সময়েও জাঁদরেল সব রাজনীতিবিদরা মাঠে ছিলেন। ছিলেন শেরেবাংলা এ, কে, ফজলুল হকের মতো দিগ¦ীজয়ী নেতাও। তাছাড়াও ছিলেন আরও অনেকে। বিশেষ করে মুসলীম লীগের দাপটের সামনে দাঁড়ানোই মুশকিল ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার নিজস্বতার বলেই একটা অন্যরকম স্বকীয়তা অর্জন করতে পেরেছিলো। পরবর্তীতে এটাই বাংলার রাজনীতির প্রেক্ষাপট রচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। আর এসবের পেছনে সবচেয়ে বড় কুশীলব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তার মেধা আর মননশীলতা দিয়ে সর্বোপরি তার একক ব্যক্তিত্ব দ্বারাই আওয়ামী লীগকে একটা প্রকৃত রাজনৈতিক দলের অবয়ব দিতে পেরেছিলেন। তার মধ্যে সততা আর পেশাদারিত্বের পুরোপুরি ছাপ ছিল।
মুজিব পেরেছিলেন কারণ দাবীর ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনমনীয়। অথচ এসব দাবী আদায়ের ব্যাপারে তিনি কখনো সংকীর্ণতার পথ গ্রহণ করেননি। উদারতা পরিহার করেননি। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তার ভাবনা জুড়ে উভয় পাকিস্তানের কল্যানই মেশানো ছিলো। আর এটাই অন্য সবার কাছ থেকে তাকে পৃথক করেছিলো। ইতিহাসের পাতায় তাকে তাই কখনো কখনো কখনো জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলার চাইতেও বড় নেতা ধরা হয়। মূলতঃ এদের সবার চেয়ে তাকে অনেক জটিলতার মধ্য দিয়ে আগাতে হয়েছিল। এই মুজিবের হাত ধরে যে দলটির বিকাশ তার মহত্ত্ব যে কোথায় লুকোনো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনীতির মাঠে তাই আওয়ামী লীগকেই সবচেয়ে উদার সংগঠন হিসেবে দেখা যায়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুজিবের নৌকার যখন জয় হলো তখনও কেউ ভাবতেই পারেনি ইতিহাসে তার পাতায় কি কাহিনী লিখতে যাচ্ছে। বিজয়েও মুজিব কিন্তু অস্থির হলেন না। বরং তাকে যখন বঞ্চিত করা হলো তিনি ব্যাপারটিকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে বাংলার মানুষের হাতে ছেড়ে দিলেন। আর এই মহান সিদ্ধান্তই তাকে ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব এনে দিলো। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল এমন কি মুজিবের অনুপস্থিতিতেই। দেশ স্বাধীন হলো। ইতিহাসের পাতা নতুন করে লেখা হলো।
১৯৭১ সালটা কেটে গেলো যুদ্ধে যুদ্ধে। কিন্তু ১৯৭২ সালে এসে আমরা সেই মুজিবকেই পেলাম রাষ্ট্র পরিচালনার মহান দায়িত্বে। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল। অনেককেই অনেক কিছু বলতে শোনা যায়। কিন্তু প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে এইচ টি ইমামের লেখায়। তার বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-১৯৭৫ বইয়ে তৎকালীন সময়ের প্রকৃত চিত্রগুলোই ফুটে উঠেছে। চেষ্টা আর আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। কিন্তু ঘরের শত্রু বিভীষনরা সব শেষ করে দিলো। সবকিছুর পরও মুজিব প্রতিটি বিষয়ে কর্মপন্থা আর দিকনিদের্শনা এবং সেই সাথে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে রেখে গেলেন। ভালো হলো জাতির জন্য। কিন্তু বাঙ্গালী বুঝতে পারলো না মুজিব মূলতঃ কি চেয়েছিলেন। আজ ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখার লোকের বড় অভাব। কিন্তু যারা সমালোচনা করে তাদের অন্ততঃ একটু হলেও পিছনে ফিরে দেখা উচিত। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মুজিবের পায়ের ছাপ পড়েনি। এমন কোন বিষয় নেই যা তার বিবেচনায় ছিলো না। মুজিব যা পারেননি তা হলো স্বার্থপর মানুষের অন্যায় চাহিদা মেটাতে। আর এর জন্যেই তাকে চরম মূল্য দিতে হলো। তার রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হলো। জাতির পিতার রক্তে আমাদের হাত রক্তাক্ত হলো। এর চেয়ে লজ্জার আর কি থাকতে পারে।
ভেবেছিলো মুজিবের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারা যে কত বড় ভুল করেছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে মানুষের মৃত্যু হয়, তার চেতনার নয়। সেই চেতনায় উদ্দীপ্ত সময়ের দীপ্তি কালে কালে পৌঁছে গেলো গন্তব্যে।
১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিলো। তবুও তার ভূমিকা সে রাখলো। রাজনীতির মাঠে প্রমান করে দিল যে কোন অবস্থানে থেকেই সঠিক ভূমিকাটা পালন করা যায়। ফলও পেলো দলটি। ১৯৯৬ সালে ঠিকই ক্ষমতায় এলো দলটি। যদিও এরই মধ্যে ২১টি বছর পেরিয়ে গেছে তবুও দলটি ভুলে গেলো না তার করণীয়। উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সংস্কার, সেই সাথে রাজনৈতিক সংস্কার, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা, কৃষিখাত, রাস্তাঘাট সহ বিদ্যুতে স্বাবলম্বীতা অর্জনের পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরেও উল্লেখযোগ্য অবদান ছিলো দলটির। কিন্তু রাজনীতির মাঠে মূল্যায়ন সব সময় সঠিক ভাবে হয়না। তার প্রমান আবারও মিললো। প্রতিক্রিয়াশীলদের জয় হলো। আসলে হঠাৎ করেই কোন কিছু মুছে ফেলা যায় না।
সব কিছু প্রমান হতে সময় লাগে। সঠিক রাজনীতি প্রমানিত হতেও সময় লাগে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। ২০০৭ সালে এসে অবশেষে সবকিছু প্রমানিত হলো। বদলে গেলো হিসাব। প্রমানিত হয়ে গেলো কারা আসল কারা নকল। আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেলো। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ একক ভাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিলো। জনগনের হৃদয়ে শক্ত আসন পেলো।
২০০৭ সাল থেকে ২০১৮। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। পুরো পৃথিবীকে চমকে দিয়ে একটা দেশ ও জাতি মাত্র দশ বছরের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ালো। এমন কোন প্রকল্প নেই যা আওয়ামী লীগ হাতে নেয়নি। রাস্তাঘাট নির্মান থেকে শুরু করে মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ সবই বাস্তবতার মুখ দেখলো। নিন্দুকদের মুখ দেখানোর কোন উপায় থাকলো না। সমালোচনা করা তো দূরে থাক তারা এখন নিজেদের ঘর সামলানোতেই ব্যস্ত।
রাজনীতির যখন এই হাল তখনই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন। এখন প্রশ্ন একটাই কি সিদ্ধান্ত নেবে গোটা জাতি, উন্নয়নের নাকি ধ্বংসের। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে দরিদ্র দেশগুলোর তালিকায় থাকা সেই বাংলাদেশই আজ মধ্যম আয়ের দেশ। পুরো জাতি আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেশী বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া অতোটা সহজ নয়। সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে হাঁটা তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার উদার আর দূরদশী রাজনীতির কারণে।
তাই সময় এসেছে ভাববার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। বাংলার ভাগ্য শেখ হাসিনার হাতেই সুরক্ষিত।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার হাতে মানায় বেশ।
Comments
Post a Comment