৭ই মার্চের ভাষন রাজনীতির মহাকাব্য রচনার অমর গল্পগাঁথা "Speech is power, speech is to persuade, to convert, to compel" - Ralph Waldo Emerson ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল আইয়ুব খান তাকে প্রশমিত করার জন্য এর কুশীলবদের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে দেন। কিন্তু হীতে বিপরীত হয়। বাঙ্গালী আরও বেশী ফুসে ওঠে। ১৯৬৯ এর শুরুতে এসে আন্দোলন যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ৪ঠা জানুয়ারী সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা পেশ করে। এই ১১ দফার মধ্যে ছয় দফার দাবীগুলোও অন্তর্ভূক্ত ছিলো। ৭ ও ৮ ই জানুয়ারী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণতন্ত্র বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়। ক্রমশঃ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ২০শে জানুয়ারী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। সারা দেশে আগুন জ্বলে ওঠে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী কুর্মিটোলার ক্যান্টনমেন্টে সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত হন। ঘটনা প্রবাহ আরও জটিল আকার ধারণ করে।
১৮ই ফেব্রুয়ারী রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি চালালে ডঃ সামসুজ্জোহা নিহত হন। অবশেষে বাধ্য হয়ে ২১শে ফেব্রয়ারী আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামালা তুলে নিতে বাধ্য হন। শেখ মুজিবের সঙ্গে এর সকল আসামীকে মুক্তি দেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব কে এক বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানকার কমিটির পক্ষ থেকে তোফায়েল আহম্মেদ শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। উপয়ান্তর না দেখে আইয়ুব খান ১০-১৩ ই মার্চ এক গোল টেবিল বৈঠকের আহব্বান করেন। কিন্তু পরে তার আর শেষ রক্ষা হয়নি। ২৪শে মার্চ তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহ্ইয়া খানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।
এর পর এলো ১৯৭০ সালের নির্বাচন। যুগান্তকারী এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার শরিক দলগুলো সহ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ন্যাশনাল এসেম্বলির ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮০টিতে প্রতিদ্বন্ধিতার ফলে বিজয় লাভ করে। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। অপরদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ১৩৮ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮১টি আসনে জয়লাভ করে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস এসে উপস্থিত হয়।
১ তারিখে ইয়াহিয়া খানের ভাষন দেওয়ার কথা থাকলেও তারই পক্ষ থেকে কেউ একজন একটি ঘোষনা পড়ে শোনান । ঘোষনায় পরবর্তী তারিখ ঘোষনা পর্যন্ত ন্যাশনাল এসেম্বেলির বৈঠক স্থগিত করা হয়। জনতা রাস্তায় নেমে আসে। ২রা মার্চ সারাদেশে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই তৎকালীন ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানকারী ডাকসুর সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকি এবং আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বে একটি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র্যালী শেষে আ. স. ম আব্দুর রব বটতলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বর্তমান পতাকা ঐ পতাকার অনুরূপ। শুধু মাত্র তৎকালীন পতাকাটিতে সূর্যের মাঝখানে বাংলাদেশের যে মানচিত্র ছিলো তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
৩রা মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে আ. স. ম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ঘোষনা পড়ে শোনান। তাদের মনে হয়েছিল শেখ মুজিব হয়তো আলোচনায় আসবেন আর জনতার এই তুমুল উত্তেজনা চাপা পড়ে যেতে পারে। মুজিব অবশ্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে আগানোর কথা বললেন। ৪ঠা মার্চ শেখ মুজিব জনগণকে স্বাগতম জানালেন তার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য। তিনি যে সকল সরকারী, বেসরকারী কর্মচারীরা বেতন ভাতা পাননি তাদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য পরবর্তী দু দিন ২.৩০-৪.৩০ পর্যন্ত হরতাল চলাকালীন সময়ে অফিস খোলা রাখার জন্য বললেন। টানা হরতালে দেশব্যাপী বহুলোকের প্রাণহানী হয়। অবশেষে এলো সে মহেন্দ্রক্ষণ। শেখ মুজিব লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন দিলেন।
৭ই মার্চের ভাষনই বাঙ্গালীর স্বাধীনতার মূল দলিল। কি ছিল এই ভাষনে তা নিয়ে কথা বলার আগে বলতে হবে কি নেই এই ভাষনে। এই ভাষনের পরই ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে Newsweek Magazine বঙ্গবন্ধুকে Poet of Politics উপাধিতে ভূষিত করেন। শুধু শুধু এই উপাধি নয়। এই ভাষনে মুজিব স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন:
‘‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’’ “এবারের সংগ্রাম আমার মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই।” “আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল - প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু - আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো। আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। ভালো হবেনা। সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবেনা।” “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।” এরকম ভাষন কার পক্ষে দেয়া সম্ভব? উত্তর একটাই। এরকম ভাষন কেবল শেখ মুজিবের পক্ষেই দেয়া সম্ভব। শেখ মুজিব সম্পর্কে তাই ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে বলতে শোনা যায়ঃ
I have not seen the Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessing the Himalayas.
৭ই মার্চকে বুঝতে হলে তাই মুজিবকে বুঝতে হবে। পঞ্চান্ন বর্ষায় ভেজা মুজিবের পঞ্চান্ন বছরের জীবনে পঞ্চান্নটি বসন্তও যে ছিলো তা কিন্তু মিথ্যে নয়। ২০ বারেরও বেশী কারাবাসের জীবনে ১২ বছরেরও বেশী সময় কেটেছিলো কারাগারের অন্তরালে। টুঙ্গীপাড়ার ধূলো কাদা মাখা দীর্ঘকায় মানুষটি জীবনে হেরেছেন অনেকবার কিন্তু তাই বলে কখনও নত হননি। যে বাংলার জল, হাওয়া, কাঁদায় তার বেড়ে ওঠা সেই বাংলাকে তার চেয়ে বেশী ভালবাসতে আর কেউ পেরেছে কি না তা আমার জানা নেই। আর এ জন্যেই হয়তো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাঙ্গালীর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুজিবকে আমি দেখিনি। দেখার কথাও নয়। আমার শৈশবেই তিনি গত হন। পৃথিবীর কোন কিছুই বোঝার মাতো বয়স তখন আমার হয়নি। কিন্তু বড় হয়ে তাকে যতোটা জেনেছি বা জানতে ইচ্ছে করেছে অতোটা আর কারও ক্ষেত্রে হয়নি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কোন মানুষ তার দেশকে এতোটা ভালোবাসতে পারে। দেশপ্রেমের আরেক নাম শেখ মুজিব।
বাঙ্গালীর লাঞ্চনার অনেক ঘটনা আছে। রাজাকারের দায়ভার বহনের লাঞ্চনা, লুট-তরাজের রাজনীতির লাঞ্চনা, অবিচার, অনাচার, অনিয়মের লাঞ্চনা, ঘুষ-দুর্নীতির লাঞ্চনা, অশিক্ষা আর অপুষ্টির লাঞ্চনা সবচেয়ে বড় লাঞ্চনা আমরা জাতির পিতার হন্তারক। পিতার রক্তে রঞ্জিত আমাদের হস্ত, পদ, আপাদমস্তক। ইতিহাস নিয়ে, তার সাল তারিখ নিয়ে, জটিল আবর্ত নিয়ে অনেক ধুন্ধুমার কিচ্ছা কাহিনী, তুলকালাম ঘটনা, তুমূল লেখালেখি আর বক্তৃতার অভাব নেই।
আমিও মাঝে মাঝে চেষ্টা করি কলমের কারিকুরিতে মস্তিস্কের জটিল খেলায় অসামান্য কারিশমা দেখানোর। কিন্তু জীবনের সর্বত্র যে কারিকুরি চলে না তা বেশ বোঝা যায়। যখন আমরা আমাদের আবেগের জয়গাগুলোতে হাত দেই। সন্তানের প্রতি পিতার আদরের তাই যেন ব্যাকরণগত কোন সংজ্ঞা নেই। সে তার সন্তানকে কখনো মাথায় তোলে, ঘাড়ে বসায়, কখনো কোলে নেয়, আবার কখনো পায়ের উপর শুইয়ে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুম পাড়ানি গান শুনায়। এসব একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ আর অনুভূতির খেলা । মুজিবের প্রতি আমার ভালোবাসা এরকমই একটি খেলার নামান্তর। আমি মুজিব নামের পাগল। ভাষা তাই ভালোবাসার কাছে অসহায়, প্রকাশের অপর সংজ্ঞা।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কালো রাত্রিতে পিতার প্রস্থান হয়। কে কোন উদ্দেশ্যে সেদিন এমন বিয়োগান্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছিল তা নিয়ে বিগত ৪৫ বছরে কম জল্পনা, কল্পনা, গবেষনা হয়নি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যা দাঁড়িয়েছে তার অর্থ ঐ একটাই - আমরা পিতাকে হারিয়েছি। নিঃস্ব জাতির সামনে আজও অজস্্র অন্ধকার হিং¯্র থাবা মেলে ছুটে আসতে চায়। আমরা সবই বুঝি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। সে দিন সমস্ত নিুষ্ঠুরতা একাই তিনি তার বুকে ধারণ করেছিলেন। আজ আর এমন কেউই নেই যিনি মুজিব হওয়াতো দূরে থাক অন্ততঃ তার ছায়াটুকু হবে। ১৯৭১ সালের TIME Magazine -এর অগাস্ট সংখ্যায় মুজিবকে নিয়ে তাই লেখা হয়ঃ
A man of vitality and vehemence, Mujib became the political Gandhi of the Bengalis, symbolizing their hopes and voicing their grievances. Not even Pakistan's founder, Mohammed Ali Jinnah, drew the million-strong throngs that Mujib has attracted in Dacca. Nor, for that matter, has any subcontinent politician since Gandhi's day spent so much time behind bars for his political beliefs.
Journalist Cyril Dunn লেখেনঃ
In the thousand year history of Bengal, Sheikh Mujib is her only leader who has, in terms of blood, race, language, culture and birth, been a full blooded Bengali. His physical stature was immense. His voice was redolent of thunder. His charisma worked magic on people. The courage and charm that flowed from him made him a unique superman in these times.
মুজিব বার বার আসে না। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে যার জন্ম, মধুমতি আর বাইগার নদী অধ্যুষিত টুঙ্গিপাড়ার বাতাসে আজও তার শরীরের সুগন্ধ। পত্র পল্লবের মর্মরে আজও তার কন্ঠের ধ্বনি যেন বারে বারে কেঁদে কেঁদে বেজে ওঠে। বাংলার আকাশে বাতাসে আজও সে মেঘেদের কানাকানি। সকালের সূর্যের কাঁচা সোনা রোদের ঝিলিক। বিকালের রক্তিমাভ লাল আভার সর্বত্রই যেন মুজিবের ছোঁয়া। কোন মানুষ তার দেশ মা্িট আর মানুষের সাথে এতোটা মিশে যেতে পারে তা অনুভব না করলে বোঝা সম্ভব নয়। মুজিবকে যাদের চোখে পড়ে না তারা বাংলাকেও দেখেও না। আর যারা বাংলাকে দেখে না তারা কি বাঙ্গালী? ইতিহাস এখনই আমাদের কে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে - আমরা তাহলে কি? মানুষরূপী অন্য কিছু? ভাবতেও অবাক লাগে এতো কিছুর পরও আমাদের লজ্জা হয় না। পিতার রক্তে রঞ্জিত হাতে আমরা দু হাত ভরে লুটপাট চালাই। বড় বড় কথা বলি। বিবেক তখন কোথায় থাকে।
নানান মত, নামান পথে আজ আমরা বহুধা বিভক্ত। এত্তো পথ নিশ্চয়ই সঠিক গন্তব্যে যায়নি। সঠিক গন্তব্যের পথ একটাই। তা হলো ঐক্যের পথ, সাম্যের পথ, সম্প্রীতির পথ। মুজিব ছিলেন সেই পথের ধারক ও বাহক। শত্রুরা তাই তাকে ভয় পেতো। তারা জানত মুজিব সঠিক পথে আছে। জয় তারই হবে। কোলকাতার দাঙ্গার সময় তিনি সেখানে ছিলেন। তার পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে এলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হলো। মুজিবের রাজনৈতিক জীবন নতুন মোড় নিলো। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় জেলে ছিলেন। তবুও দেখা গেলো সক্রিয়। ভাষার দাবিতে ১৩ দিন অনশন করার পর ২৬শে ফেব্রুয়ারী তিনি জেল থেকে মুক্ত হন।
১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। ঐ বছরের ১৪ই নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টি আসনই ছিলো আওয়ামীলীগের। ১৫ই মে তিনি যুক্ত ফ্রন্ট সভার কৃষি ও বন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হন। কিন্তু ২১শে মে সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেয়। ২৩শে মে করাচী থেকে ঢাকায় ফেরার পরে বিমানবন্দরে আটক হন। আবারও আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আর এর সংগেই ১৭ই জুন পল্টন ময়দানে ঐতিহাসিক ২১ দফা দাবি পেশ করা হয় । এখানেই পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবী পেশ করা হয়। ২৬ শে আগষ্ট পাকিস্তানের প্রাদেশিক গন পরিষদের অধিবেশনে শেখ মুজিব বলেন:
"Sir [President of the Constituent Assembly], you will see that they want to palace the word "East Pakistan" instead of "East Bangal." We had demanded so may times that you should use Bengal instead of Pakistan. The word "Bengal" has a history, has a tradition of its own. You can change it only after the people have been concerned . So far as the question of one unit is concerned it can come in constitution. Why do you want it to be taken up just now? What about the state language, Bengali? We will be prepared to consider one-unit with all these things. So I appeal to my friends on that side to allow the people to give their verdict in any way, in the form referendum of in the form of plebiscite."
১৯৬১ সালে গঠন করেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পারিষদ। ১৯৬৪ সালে গঠন করেন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। মাঝ খানে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা দাবী পেশ করে। এতে পূর্বের সকল মামলা তুলে নিতে বলা হয়। ঐ বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক সভায় বঙ্গবন্ধু ভাষন দেন। ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি ঘোষনা করেন “একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে “বাংলা” শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। “বাংলা” শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষনা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে ’পূর্ব পাকিস্তানের’ বদলে বাংলা বলে ডাকা হবে।”
মূলতঃ এখান থেকেই বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। তার পর আসে ১৯৭০ এর নির্বাচন । নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামীলীগ দেশকে আস্তে আস্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ। তারপর ২৬শে মার্চ। সবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এসবই আসে মূলতঃ মুজিবের হাত ধরে। Annada Shankar Ray তাই লেখেনঃ As long as Padma, Meghna, Gouri, Jamuna flows on, Sheikh Mujibur Rahman, your accomplishment will also live on.
রাজনীতির অমর কবি শেখ মুজিবের লেখা কাব্য কোন একটা সাধারণ কাগজে ছাপানো সম্ভব নয়। তার লেখা মহাকাব্যের নাম বাংলাদেশ। তিনি যে মহাকাব্য রচনা করে গেছেন তা আর সব মহাকাব্যের মতো থেমে নেই । প্রতি দিনই নতুন নতুন ফুলে ফলে, ডাল পালায় বিকশিত হচ্ছে। মুজিব তাই প্রতিদিনই স্মরনীয় । আমাদের অন্তরও তাই বার বার বলে ওঠে - পিতা তোমায় সালাম। |
৭ই মার্চের ভাষন : রাজনীতির মহাকাব্য রচনার অমর গল্পগাঁথা "Speech is power, speech is to persuade, to convert, to compel" - Ralph Waldo Emerson ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল আইয়ুব খান তাকে প্রশমিত করার জন্য এর কুশীলবদের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে দেন। কিন্তু হীতে বিপরীত হয়। বাঙ্গালী আরও বেশী ফুসে ওঠে। ১৯৬৯ এর শুরুতে এসে আন্দোলন যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ৪ঠা জানুয়ারী সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা পেশ করে। এই ১১ দফার মধ্যে ছয় দফার দাবীগুলোও অন্তর্ভূক্ত ছিলো। ৭ ও ৮ ই জানুয়ারী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণতন্ত্র বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়। ক্রমশঃ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ২০শে জানুয়ারী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। সারা দেশে আগুন জ্বলে ওঠে। ১৫ই ফেব্রুয়ারী কুর্মিটোলার ক্যান্টনমেন্টে সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত হন। ঘটনা প্রবাহ আরও জটিল আকার ধারণ করে।
১৮ই ফেব্রুয়ারী রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি চালালে ডঃ সামসুজ্জোহা নিহত হন। অবশেষে বাধ্য হয়ে ২১শে ফেব্রয়ারী আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামালা তুলে নিতে বাধ্য হন। শেখ মুজিবের সঙ্গে এর সকল আসামীকে মুক্তি দেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব কে এক বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানকার কমিটির পক্ষ থেকে তোফায়েল আহম্মেদ শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। উপয়ান্তর না দেখে আইয়ুব খান ১০-১৩ ই মার্চ এক গোল টেবিল বৈঠকের আহব্বান করেন। কিন্তু পরে তার আর শেষ রক্ষা হয়নি। ২৪শে মার্চ তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহ্ইয়া খানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।
এর পর এলো ১৯৭০ সালের নির্বাচন। যুগান্তকারী এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার শরিক দলগুলো সহ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ন্যাশনাল এসেম্বলির ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮০টিতে প্রতিদ্বন্ধিতার ফলে বিজয় লাভ করে। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। অপরদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ১৩৮ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮১টি আসনে জয়লাভ করে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস এসে উপস্থিত হয়।
১ তারিখে ইয়াহিয়া খানের ভাষন দেওয়ার কথা থাকলেও তারই পক্ষ থেকে কেউ একজন একটি ঘোষনা পড়ে শোনান । ঘোষনায় পরবর্তী তারিখ ঘোষনা পর্যন্ত ন্যাশনাল এসেম্বেলির বৈঠক স্থগিত করা হয়। জনতা রাস্তায় নেমে আসে। ২রা মার্চ সারাদেশে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই তৎকালীন ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানকারী ডাকসুর সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকি এবং আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বে একটি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র্যালী শেষে আ. স. ম আব্দুর রব বটতলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বর্তমান পতাকা ঐ পতাকার অনুরূপ। শুধু মাত্র তৎকালীন পতাকাটিতে সূর্যের মাঝখানে বাংলাদেশের যে মানচিত্র ছিলো তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
৩রা মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে আ. স. ম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ঘোষনা পড়ে শোনান। তাদের মনে হয়েছিল শেখ মুজিব হয়তো আলোচনায় আসবেন আর জনতার এই তুমুল উত্তেজনা চাপা পড়ে যেতে পারে। মুজিব অবশ্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে আগানোর কথা বললেন। ৪ঠা মার্চ শেখ মুজিব জনগণকে স্বাগতম জানালেন তার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য। তিনি যে সকল সরকারী, বেসরকারী কর্মচারীরা বেতন ভাতা পাননি তাদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য পরবর্তী দু দিন ২.৩০-৪.৩০ পর্যন্ত হরতাল চলাকালীন সময়ে অফিস খোলা রাখার জন্য বললেন। টানা হরতালে দেশব্যাপী বহুলোকের প্রাণহানী হয়। অবশেষে এলো সে মহেন্দ্রক্ষণ। শেখ মুজিব লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন দিলেন।
৭ই মার্চের ভাষনই বাঙ্গালীর স্বাধীনতার মূল দলিল। কি ছিল এই ভাষনে তা নিয়ে কথা বলার আগে বলতে হবে কি নেই এই ভাষনে। এই ভাষনের পরই ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে Newsweek Magazine বঙ্গবন্ধুকে Poet of Politics উপাধিতে ভূষিত করেন। শুধু শুধু এই উপাধি নয়। এই ভাষনে মুজিব স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন:
‘‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’’ “এবারের সংগ্রাম আমার মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই।” “আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল - প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু - আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো। আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। ভালো হবেনা। সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবেনা।” “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।” এরকম ভাষন কার পক্ষে দেয়া সম্ভব? উত্তর একটাই। এরকম ভাষন কেবল শেখ মুজিবের পক্ষেই দেয়া সম্ভব। শেখ মুজিব সম্পর্কে তাই ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে বলতে শোনা যায়ঃ
I have not seen the Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessing the Himalayas.
৭ই মার্চকে বুঝতে হলে তাই মুজিবকে বুঝতে হবে। পঞ্চান্ন বর্ষায় ভেজা মুজিবের পঞ্চান্ন বছরের জীবনে পঞ্চান্নটি বসন্তও যে ছিলো তা কিন্তু মিথ্যে নয়। ২০ বারেরও বেশী কারাবাসের জীবনে ১২ বছরেরও বেশী সময় কেটেছিলো কারাগারের অন্তরালে। টুঙ্গীপাড়ার ধূলো কাদা মাখা দীর্ঘকায় মানুষটি জীবনে হেরেছেন অনেকবার কিন্তু তাই বলে কখনও নত হননি। যে বাংলার জল, হাওয়া, কাঁদায় তার বেড়ে ওঠা সেই বাংলাকে তার চেয়ে বেশী ভালবাসতে আর কেউ পেরেছে কি না তা আমার জানা নেই। আর এ জন্যেই হয়তো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাঙ্গালীর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুজিবকে আমি দেখিনি। দেখার কথাও নয়। আমার শৈশবেই তিনি গত হন। পৃথিবীর কোন কিছুই বোঝার মাতো বয়স তখন আমার হয়নি। কিন্তু বড় হয়ে তাকে যতোটা জেনেছি বা জানতে ইচ্ছে করেছে অতোটা আর কারও ক্ষেত্রে হয়নি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কোন মানুষ তার দেশকে এতোটা ভালোবাসতে পারে। দেশপ্রেমের আরেক নাম শেখ মুজিব।
বাঙ্গালীর লাঞ্চনার অনেক ঘটনা আছে। রাজাকারের দায়ভার বহনের লাঞ্চনা, লুট-তরাজের রাজনীতির লাঞ্চনা, অবিচার, অনাচার, অনিয়মের লাঞ্চনা, ঘুষ-দুর্নীতির লাঞ্চনা, অশিক্ষা আর অপুষ্টির লাঞ্চনা সবচেয়ে বড় লাঞ্চনা আমরা জাতির পিতার হন্তারক। পিতার রক্তে রঞ্জিত আমাদের হস্ত, পদ, আপাদমস্তক। ইতিহাস নিয়ে, তার সাল তারিখ নিয়ে, জটিল আবর্ত নিয়ে অনেক ধুন্ধুমার কিচ্ছা কাহিনী, তুলকালাম ঘটনা, তুমূল লেখালেখি আর বক্তৃতার অভাব নেই।
আমিও মাঝে মাঝে চেষ্টা করি কলমের কারিকুরিতে মস্তিস্কের জটিল খেলায় অসামান্য কারিশমা দেখানোর। কিন্তু জীবনের সর্বত্র যে কারিকুরি চলে না তা বেশ বোঝা যায়। যখন আমরা আমাদের আবেগের জয়গাগুলোতে হাত দেই। সন্তানের প্রতি পিতার আদরের তাই যেন ব্যাকরণগত কোন সংজ্ঞা নেই। সে তার সন্তানকে কখনো মাথায় তোলে, ঘাড়ে বসায়, কখনো কোলে নেয়, আবার কখনো পায়ের উপর শুইয়ে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুম পাড়ানি গান শুনায়। এসব একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ আর অনুভূতির খেলা । মুজিবের প্রতি আমার ভালোবাসা এরকমই একটি খেলার নামান্তর। আমি মুজিব নামের পাগল। ভাষা তাই ভালোবাসার কাছে অসহায়, প্রকাশের অপর সংজ্ঞা।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কালো রাত্রিতে পিতার প্রস্থান হয়। কে কোন উদ্দেশ্যে সেদিন এমন বিয়োগান্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছিল তা নিয়ে বিগত ৪৫ বছরে কম জল্পনা, কল্পনা, গবেষনা হয়নি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যা দাঁড়িয়েছে তার অর্থ ঐ একটাই - আমরা পিতাকে হারিয়েছি। নিঃস্ব জাতির সামনে আজও অজস্্র অন্ধকার হিং¯্র থাবা মেলে ছুটে আসতে চায়। আমরা সবই বুঝি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। সে দিন সমস্ত নিুষ্ঠুরতা একাই তিনি তার বুকে ধারণ করেছিলেন। আজ আর এমন কেউই নেই যিনি মুজিব হওয়াতো দূরে থাক অন্ততঃ তার ছায়াটুকু হবে। ১৯৭১ সালের TIME Magazine -এর অগাস্ট সংখ্যায় মুজিবকে নিয়ে তাই লেখা হয়ঃ
A man of vitality and vehemence, Mujib became the political Gandhi of the Bengalis, symbolizing their hopes and voicing their grievances. Not even Pakistan's founder, Mohammed Ali Jinnah, drew the million-strong throngs that Mujib has attracted in Dacca. Nor, for that matter, has any subcontinent politician since Gandhi's day spent so much time behind bars for his political beliefs.
Journalist Cyril Dunn লেখেনঃ
In the thousand year history of Bengal, Sheikh Mujib is her only leader who has, in terms of blood, race, language, culture and birth, been a full blooded Bengali. His physical stature was immense. His voice was redolent of thunder. His charisma worked magic on people. The courage and charm that flowed from him made him a unique superman in these times.
মুজিব বার বার আসে না। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে যার জন্ম, মধুমতি আর বাইগার নদী অধ্যুষিত টুঙ্গিপাড়ার বাতাসে আজও তার শরীরের সুগন্ধ। পত্র পল্লবের মর্মরে আজও তার কন্ঠের ধ্বনি যেন বারে বারে কেঁদে কেঁদে বেজে ওঠে। বাংলার আকাশে বাতাসে আজও সে মেঘেদের কানাকানি। সকালের সূর্যের কাঁচা সোনা রোদের ঝিলিক। বিকালের রক্তিমাভ লাল আভার সর্বত্রই যেন মুজিবের ছোঁয়া। কোন মানুষ তার দেশ মা্িট আর মানুষের সাথে এতোটা মিশে যেতে পারে তা অনুভব না করলে বোঝা সম্ভব নয়। মুজিবকে যাদের চোখে পড়ে না তারা বাংলাকেও দেখেও না। আর যারা বাংলাকে দেখে না তারা কি বাঙ্গালী? ইতিহাস এখনই আমাদের কে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে - আমরা তাহলে কি? মানুষরূপী অন্য কিছু? ভাবতেও অবাক লাগে এতো কিছুর পরও আমাদের লজ্জা হয় না। পিতার রক্তে রঞ্জিত হাতে আমরা দু হাত ভরে লুটপাট চালাই। বড় বড় কথা বলি। বিবেক তখন কোথায় থাকে।
নানান মত, নামান পথে আজ আমরা বহুধা বিভক্ত। এত্তো পথ নিশ্চয়ই সঠিক গন্তব্যে যায়নি। সঠিক গন্তব্যের পথ একটাই। তা হলো ঐক্যের পথ, সাম্যের পথ, সম্প্রীতির পথ। মুজিব ছিলেন সেই পথের ধারক ও বাহক। শত্রুরা তাই তাকে ভয় পেতো। তারা জানত মুজিব সঠিক পথে আছে। জয় তারই হবে। কোলকাতার দাঙ্গার সময় তিনি সেখানে ছিলেন। তার পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে এলেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হলো। মুজিবের রাজনৈতিক জীবন নতুন মোড় নিলো। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় জেলে ছিলেন। তবুও দেখা গেলো সক্রিয়। ভাষার দাবিতে ১৩ দিন অনশন করার পর ২৬শে ফেব্রুয়ারী তিনি জেল থেকে মুক্ত হন।
১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। ঐ বছরের ১৪ই নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টি আসনই ছিলো আওয়ামীলীগের। ১৫ই মে তিনি যুক্ত ফ্রন্ট সভার কৃষি ও বন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হন। কিন্তু ২১শে মে সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেয়। ২৩শে মে করাচী থেকে ঢাকায় ফেরার পরে বিমানবন্দরে আটক হন। আবারও আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আর এর সংগেই ১৭ই জুন পল্টন ময়দানে ঐতিহাসিক ২১ দফা দাবি পেশ করা হয় । এখানেই পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবী পেশ করা হয়। ২৬ শে আগষ্ট পাকিস্তানের প্রাদেশিক গন পরিষদের অধিবেশনে শেখ মুজিব বলেন:
"Sir [President of the Constituent Assembly], you will see that they want to palace the word "East Pakistan" instead of "East Bangal." We had demanded so may times that you should use Bengal instead of Pakistan. The word "Bengal" has a history, has a tradition of its own. You can change it only after the people have been concerned . So far as the question of one unit is concerned it can come in constitution. Why do you want it to be taken up just now? What about the state language, Bengali? We will be prepared to consider one-unit with all these things. So I appeal to my friends on that side to allow the people to give their verdict in any way, in the form referendum of in the form of plebiscite."
১৯৬১ সালে গঠন করেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পারিষদ। ১৯৬৪ সালে গঠন করেন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। মাঝ খানে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা দাবী পেশ করে। এতে পূর্বের সকল মামলা তুলে নিতে বলা হয়। ঐ বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক সভায় বঙ্গবন্ধু ভাষন দেন। ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি ঘোষনা করেন “একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে “বাংলা” শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। “বাংলা” শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আজ ঘোষনা করছি যে, এখন থেকে এই দেশকে ’পূর্ব পাকিস্তানের’ বদলে বাংলা বলে ডাকা হবে।”
মূলতঃ এখান থেকেই বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। তার পর আসে ১৯৭০ এর নির্বাচন । নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামীলীগ দেশকে আস্তে আস্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ। তারপর ২৬শে মার্চ। সবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এসবই আসে মূলতঃ মুজিবের হাত ধরে। Annada Shankar Ray তাই লেখেনঃ As long as Padma, Meghna, Gouri, Jamuna flows on, Sheikh Mujibur Rahman, your accomplishment will also live on.
রাজনীতির অমর কবি শেখ মুজিবের লেখা কাব্য কোন একটা সাধারণ কাগজে ছাপানো সম্ভব নয়। তার লেখা মহাকাব্যের নাম বাংলাদেশ। তিনি যে মহাকাব্য রচনা করে গেছেন তা আর সব মহাকাব্যের মতো থেমে নেই । প্রতি দিনই নতুন নতুন ফুলে ফলে, ডাল পালায় বিকশিত হচ্ছে। মুজিব তাই প্রতিদিনই স্মরনীয় । আমাদের অন্তরও তাই বার বার বলে ওঠে - পিতা তোমায় সালাম। |
Comments
Post a Comment