হেরোড অ্যান্টিপাস, হেরোডিয়াস ও দ্বিতীয় সালোমের হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর প্রতি অবিচার
জুদির শাসক হেরোড দ্যা গ্রেট ক্ষমতায় ছিলেন খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৩৭ থেকে খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৪ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর পর তার সা¤্রাজ্য তার তিন পুত্র ও বোন প্রথম সালোমের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। Wikipedia র তথ্য অনুসারে উল্লেখ করা যেতে পারে,
Upon Herod's death, the Romans divided his kingdom among three of his sons and his sister: Archelaus became ethnarch of Judea, Samaria, and Idumea; Herod Antipas became tetrarch of Galilee and Peraea; Philip became tetrarch of territories north and east of the Jordan; and Salome I was given a toparchy including the cities of Jabneh, Ashdod, and Phasaelis.
হেরোড অ্যান্টিপাস তার ভ্রাতা দ্বিতীয় হেরোড-এর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে তার সুন্দরী স্ত্রী হেরোডিয়াস এর প্রেমে পড়েন। এরপর তিনি তাকে যেনতেন ভাবে বিবাহও করে ফেলেন। অবশ্য এই হেরোডিয়াসও ছিলো তারই ভ্রাতা চতুর্থ অ্যারিস্টুবুলুস এর কন্যা। এই হেরোডিয়াস এবং দ্বিতীয় হেরোড এর ঘরের এক অতীব সুন্দরী কন্যা ছিলো দ্বিতীয় সালোমে যে একাধারে হেরোড এ্যান্টিপাস-এর ভাইঝি আবার অন্যদিকে তার স্ত্রীর আগের পক্ষের মেয়ে হওয়ায় তারও সৎ মেয়ে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হেরোডিয়াস এবং দ্বিতীয় সালোমে উভয়েই ছিলো হোরোড অ্যান্টিপাস এর ভাইঝি। একসময় হেরোড এ্যান্টিপাস এই সুন্দরী দ্বিতীয় সালোমের প্রেমেও মজেন।
ইতোপূর্বে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) যিনি খ্রিস্টানদের কাছে জন দ্যা ব্যাপ্টিস্ট নামে পরিচিত এবং যার জীবদ্দশার সময়কাল ছিলো খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকের শেষ ভাগ থেকে সম্ভবতঃ প্রথম খ্রিস্টাব্দের ২৮ থেকে ৩৬ পর্যন্ত তিনি হেরোড দ্যা এন্টিপাসের সাথে তার ভাইঝি এবং ভ্রাতৃবধু হেরোডিয়াস এর বিয়েকে বেআইনী বলে প্রতিবাদ করেছিলেন কারণ তার মতে এটা সঠিক রীতি নীতি মেনে করা হয়নি। দ্বিতীয় সালোমের সমর্থন ছিলো তার মা এবং তার চাচার মধ্যের এই বৈবাহিক সম্পর্কে। তাই তিনি হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন।
দ্বিতীয় সালোমে যখন দেখল তার প্রতি তার চাচা তথা বর্তমান সৎ পিতার একটা কুদৃষ্টি আছে তখন সে সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলো। হেরোড এন্টিপাসকে সে জানিয়ে দিলো যদি সে তাকে পেতে চায় তবে তাকে একটা শর্ত পূরণ করতে হবে। হেরোডের জন্মদিনের উৎসবে সে সবার সামনে নাচবে কিন্তু তার নৃত্য চলাকালে সে একটি মূল্যবান পাত্রের উপর হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর খন্ডিত রক্তাক্ত মস্তক আশা করে। এই ষড়যন্ত্রেও পেছনে মূলত হেরোডিয়াসের হাত ছিলো।
হেরোড এন্টিপাস রাজি হলেন। যথাসময়ে দ্বিতীয় সালোমের ইচ্ছানুযায়ী হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) কে হত্যা করে তার কর্তিত রক্তাক্ত মস্তক এক সুন্দর প্লেটে হেরোডের জন্মদিনের উৎসবে হাজির করা হলো। সুন্দরী দ্বিতীয় সালোমে সেই মস্তক সামনে নিয়ে উদ্দাম নৃত্য পরিবেশন করেন। সম্ভবত ২৮ থেকে ৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে এই নারকীয় ঘটনা ঘটেছিলো।
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন হযরত জাকারিয়া (আঃ) ও তার স্ত্রী এলিজাবেথের সন্তান যিনি মাতা মেরীর আত্মীয় ছিলেন। হযরত জাকারিয়া (আঃ) মাতা মরিয়মেরও অভিভাবক ছিলেন। আল্লাহ্র কাছে বিশেষ প্রার্থনার ফলম্বরূপ অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়সে তিনি হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর মুখ দেখেন। তখন তার বয়স ৯২ বছর আর তার স্ত্রী এলিজাবেথের বয়স ৬০ বছর। জাকারিয়া (আঃ) আল্লাহ্র ঘর অর্থাৎ ২য় টেম্পল এর দেখাশোনার জন্য এই সন্তান কামনা করেছিলেন। কারণ তিনি এই পবিত্র গৃহ দেখাশুনা করতেন আর এ নিয়ে চিন্তিতও ছিলেন যে তার মৃত্যুর পর কে এসব দেখাশুনা করবে?
বলা হয় আল্লাহ্ হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর মাধ্যমে হযরত মুসা (আঃ) এর বাণীকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি ঈসা (আঃ) কে তার অধীনে দীক্ষিত করান। তার মৃত্যুর পর হযরত ঈসা (আঃ) পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র বাণী প্রচার করেন। তিনি ৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সম্ভবত ৩৩ থেকে ৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আল্লাহ্ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন।
জেরুজালেমের ইতিহাস দুঃখজনক, করুণ এবং মর্মস্পশী ঘটনার সাথে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। আর তার একটাই সত্য যে এই নগরীর অতীত ইতিহাসকে যতই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হোক না কেন এর পরিক্রমা মূলত ধর্মীয় ঘটনাবলির সাথে সম্পর্কিত।
Comments
Post a Comment