Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

সুলেইমান শাহ বনাম চেঙ্গিস খান : কালের বিচারে কে জয়ী? Suleimsan Shah Vs Genghiz Khan

ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থাৎ ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খান যখন “বুরখান খালদুন” পর্বতের পাদদেশে সকল মোঙ্গল গোত্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে পুরো পৃথিবীকে তার প্রতিহিংসার আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করার কথা ভাবছিলেন ঠিক তখনই আর একজন মোঙ্গল তাড়িত তুর্কী বীর সুলেইমান শাহ আনাতোলিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে তার ছোট্ট কাই গোত্রটিকে নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
দুজনের জীবনেই সংগ্রাম ছিল। কিন্তু পার্থক্য ছিলো দর্শনে। চেঙ্গিস খান জীবনে এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন যা তাকে মানবরূপী পশুতে পরিণত করেছিলো। তার ধর্ম টেংরিজম তাকে এর চেয়ে ভালো কিছু শেখাতে পারেনি। অপরদিকে আল্লাহ্র সৈনিক সুলেইমান শাহ মাত্র দুহাজার জনগোষ্ঠীর এমন একটি গোত্রের অধিপতি যাদের নিজেদের কোন আবাসভূমি না থাকা সত্তে¡ও ইসলামের বলে বলীয়ান হয়ে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিবাদী। তার সন্তানদেরও তিনি সেইভাবে গড়ে তুলেছিলেন। গুণদুগদু বে, সুংগুরতেকিন বে, আরতুগ্রæল গাজী এবং দুনদার শাহকে তিনি চেষ্টা করেছেন অন্যায়ের বিরূদ্ধে মরণপণ লড়াই করতে শিখতে। অপরদিকে চেঙ্গিস খান তার সন্তান জোচি, ওগেদেই, চাগাতাই, তলুইকে শিখিয়েছিলেন নৃশংসতা।
১২২৫ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন সুলেইমান শাহ। ১২২৭ সালে চেঙ্গিস খানও বিদায় নিলেন। চেঙ্গিস খান যখন বিদায় নেন তখন তিনি ১ কোটি বর্গকিলোমিটারেরও বেশি আয়তনের এক বিরাট সাম্রাজ্যের অধিপতি যা তার ছেলেদের মধ্যে বিভাজিত। জোচির অধীনে ছিলো গোল্ডেন হোর্ডে, চাগাতাই এর অধীনে চাগাতাই খানাটে, তলুই এর অধীনে ইলখানাটে আর ওগেদেই এর অধীনে তার সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু “গ্রেট মোঙ্গল এম্পায়ার”।
আর এদিকে সুলেইমান শাহের মৃত্যুর পর তার ছেলে অরতুগ্রæল গাজী তখনও তার গোত্রের জন্য একটি জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেলজুক সুলতান আলাউদ্দীন কায়কোবাদকে মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করে তার মন জয় করে বাইজান্টাইন সীমান্তের কাছাকাছি সোগুত নামক একটি জেলায় বসবাসের অনুমতি লাভ করেন।
মোঙ্গলদের উৎপাত আগেও ছিলো। ১২৪৩ সালে কোসেদাগের যুদ্ধে সেলজুকরা পরাজিত হলে সেলুজক সাম্রাজ্য মোঙ্গলদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। বলা বাহুল্য এর অনেক আগেই অর্থাৎ ১২১৯-১২২১ সালের মধ্যে মধ্য এশিয়া অভিযানের শুরুতেই মোঙ্গলরা তৎকালীন দুনিয়ার অন্যতম রাজশক্তি মুসলিম খাওয়ারিজমান সাম্রাজ্যকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলো। ১২৩১ সালে শেষ খাওয়ারিজমান শাহ জালাল আদ দ্বীন মিংবার্ণুর মৃত্যু হলে খায়োরিজমানদের শেষ প্রতিরোধটুকুও শেষ হয়ে যায়।
যে প্রসঙ্গে ছিলাম। মোঙ্গলরা ক্রমশঃই সামনের দিকে আগাতে থাকে। এ পথে তারা তেমন কোন শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখি না হলেও তুর্কী কাই গোত্রের প্রধান আর্তুগ্রæল গাজীর কাছ থেকে শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। অবশ্য আর্তুগ্রæল গাজী এই সময়ের মধ্যে কারাকাইজার দুর্গ এবং নাইট টেম্পলারদের দূর্গ দখল করে নিয়ে কিছুটা হলেও নিজের পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছিলেন। যদিও বিশাল মোঙ্গল বাহিনীর সামনে এটাকে কোন অবস্থানই বলা যায় না।
এ সময়ের মধ্যে কিছু নাটকীয় ঘটনাও ঘটে। চেঙ্গিস খানের পুত্র জোচির পুত্র বার্কে খান ১২৫১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বার্কে খানের এক ভাইপো নোগাইও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১২৫৮ সালে ইলখানাটের দায়িত্বে থাকা চেঙ্গিসের নাতি হালাকু খান যিনি চেঙ্গিস খানের পুত্র তলুইয়ের পুত্র বাগদাদ আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিলে মুসলিম বার্কে খান ভীষণ মর্মাহত হয়। তিনি নোগাইকে নিয়ে হালাকুকে প্রতিহত করার জন্য অগ্রসর হন। এ পথে তিনি তুর্কীদের সহযোগিতা বিশেষ করে আর্তুগ্রæল গাজীর সহযোগিতা লাভ করেন।
মোঙ্গলরাও বসে ছিল না। তারা বাইজান্টাইনদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে আফ্রিকার মামলুক সাম্রাজ্যের দিকে আগানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বিধি বাম। ১২৬০ সালে আইন জালুতের যুদ্ধে মোঙ্গলরা পরাজিত হলে আফ্রিকার উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা থেমে যায়। তাদের ইচ্ছে ছিলো উত্তর আফ্রিকা হয়ে তারা ইউরোপের দিকে অগ্রসর হবে। এদিকে বারকে খান নোগাইকে নিয়ে হালাকু খানকে প্রতিহত করতে আসার কারণে সে যাত্রা তার পক্ষেও ইউরোপে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।
১২৬১-১২৬৬ সালের মধ্যে বাটু খান, হালাকু খান, আরিক বোকে, বার্কে খান সবার মৃত্যু হলে মোঙ্গলদের বিধ্বংসী অগ্রযাত্রা সে যাত্রা থেমে যায়। “গ্রেট মোঙ্গল এম্পায়ারের” কর্তৃত্বে তখণ কুবলাই খান। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১২৬০ থেকে ১২৯৪ সাল পর্যন্ত। ১২৯৪ সালে মৃত্যুর সময় তার সাম্রাজ্যের আয়তন ছিলো ২ কোটি ৪০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার যা অর্জিত হয়েছিলো চেঙ্গিস খান, ওগেদেই খান, গিউক খান, মঙ্গকে খান এবং কুবলাই খান কর্তৃক আর এতে সময় লেগেছিলো প্রায় ১০০ বছর।
এদিকে ১২৮১ সালে আর্তুগ্রæল গাজী যখন মারা যান তখন তার ২২ বছর বয়সী ছেলে ওসমান গাজী পিতার তরবারী হাতে তুলে নেন। অনেক লড়াই সংগ্রাম শেষে তিনি ১২৯৮ সালে একটা মোটামুটি শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হন। তিনি বেঁচে ছিলেন ১৩২৬ সাল পর্যন্ত। অবশ্য মারা যাওয়ার সময়ও যে তিনি খুব বেশী বড় কোন সাম্রাজ্য রেখে যেতে পেরেছিলেন তা কিন্তু নয়। তিনি কুলু কাইজার দুর্গ দখল করে তার অবস্থানকে কিছুটা হলেও শক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তার মৃত্যুর পর তার ছেলে ওরহান দায়িত্ব নেন। ওরহানের সময়কালে তিনি বেশ কিছু সাফল্য লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর বুসরা দখল করে তাকে রাজধানী ঘোষনা করেন। ওরহানকে এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আর এভাবেই রচিত হয়েছিলো উসমানীয় খেলাফতের ভিত্তিমূল যাদের ৩৭ জন সুলতান পরবর্তী ৬২৫ বছর তাদের সাম্রাজ্যকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য হিসেবে টিকিয়ে রেখেছিলো। ওদিকে ১৩৩৫ সালে “গ্রেট মোঙ্গল এম্পায়ার” এর শেষ শাসক তোঘোন তিমুর এর মৃত্যু হলে মোঙ্গল সাম্রাজ্য কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak