বাংলা (bangla) নাম নিয়ে বড় কোনো কথা দিয়ে শুরু করতে চাই না। তবে শুরুতেই এই কথা বলে নিতে চাই ব-দ্বীপে বসবাসরত মানুষগুলো বরাবরই একটু খেয়ালি টাইপের অর্থাৎ স্বাধীনচেতা। এটা এখানকার জল হাওয়া কাদার বৈশিষ্ট্য যা মানুষকেও এর প্রকৃতির মতো খামখেয়ালি করে তোলে। এর নদীগুলোর উত্তাল উত্তুঙ্গ ঢেউগুলো যেমন মাথা নিচু করতে জানে না এর মানুষগুলোও এই সব উথাল পাতাল নদীর ¯্রােতে নৌকা ভাসিয়ে এক একজন হয়ে ওঠে অজেয়। সম্পদের গর্ব না করতে পারলেও আমি বাঙালির হৃদয়ের দৈন্য কখনও দেখিনি। বাঙালি তাই বরাবরের এক রোখা, সাহসী, সজাগ, সচেতন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন ইংরেজ হটাও এর সশ¯্র আন্দোলন শুরু হলো তাও কিন্তু হলো এই বাংলা দিয়েই। এখানেই তো ক্ষুদিরাম, বাঘা যতিন (bagha jatin), মাস্টার দা (master da surya sen), প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (pritilata waddedar), ইলা মিত্র (ila mitra) - আরও কতো নাম।
বাংলার পাদদেশে সমুদ্র তার পা ধুয়ে দেয় সারাক্ষণ। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত (world's longest sea beach) তাই এর দখলেই। বাকী সবটাই বলতে গেলে বর্তমান ভারত (india) দিয়ে ঘেরা। কিছুটা সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে বার্মা Burma) বা মিয়ানমার (myanmar)।
বাংলার গৌরব আর গর্বের পাশাপাশি দুর্দশারও অন্তঃ ছিলো না কখনও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, শিল্পের অনগ্রসরতা, নিজস্ব কোন্দল, স্বার্থপরতা, সংকীর্নতার সুযোগ নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী এখানে খুঁটি গেড়ে বসেছিলো তুর্কী (turkiye), আফগান (afghan), পর্তুগীজ (portuguese), ওলন্দাজ বা ডাচ (netherland or Holland), ফরাসি (french), দিনেমার বা ডেনমার্কের লোকেরা Dinemar or denmark) কিংবা ইংরেজ (british)। অবশ্য শেষ মেষ কেউই একে বাগে রাখতে পারেনি। সর্বশেষ পাকিস্তানিরাও (pakistan) চেষ্টা করেছিলো। কাজ হয়নি। ২৩ বছরের মাথায় বিদায় নিতে হয়েছে।
বাংলাকে নিয়েই কেন বারবার ষড়যন্ত্র হয়। ওদিকে বাংলার যে অংশটুকু ভারতের ভেতরে অর্থাৎ যেটুকুর নাম পশ্চিমবঙ্গ তার অবস্থাও বেহাল। ভারতের কেন্দ্রের অপ রাজনীতির শিকার, অবহেলিত। তোপের মুখে একজন আটপৌড়ে শাড়ি আর দুই ফিতার স্যান্ডেল পরা মহিলা (mamta didi) অতি কষ্টে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কোনো মতে টিকিয়ে রেখেছেন। নইলে প্রতিটি নির্বাচন আসে তো মনে হয় এই বুঝি পশ্চিম বঙ্গ (west bengal) হাতছাড়া হয়ে গেলো তৃণমূলের (trinamool congress) হাত থেকে। এই বুঝি কেউ না কেউ কেন্দ্র হতে এসে ছোবল মেরে নিয়ে গেলো বাংলাকে।
আর এদিকটায় যে অংশ স্বাধীন পূর্ববাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশ (bangladesh) তাকেওতো বিশ্ব মোড়লের (the usa) চোখ রাঙানির মুখে প্রতিনিয়ত হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে। ভেতরের মানুষ মিশেছে বাইরের শকুনের সাথে। হাড়গিলার নজর পড়েছে বাংলার কোমল মাংসের উপর। পুরো পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করছে একটা বুড়ো শকুন। বাংলাকে বাঁচানোর এর অর্থনীতিকে বাঁচানোর এর উন্নয়নের ধারাকে বাঁচানোর এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
১৯৭১ এ তো আর একটু হলেই ফসকে গিয়েছিলো স্বাধীনতার স্বপ্ন। বিশ্ব মোড়ল তো উঠে পড়ে লেগেছিলো যাকে বলে আদা জল খেয়ে লাগা। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কূটনীতিক কিসিঞ্জারকেও (henry kisinger) ব্যর্থ হতে হলো বাংলাদেশ ইস্যুতে। তিনি অবশ্য একটা কথা বলে পিঠ বাঁচালেন, This is my personal defeat. তাতে কি আর সব ধুয়ে মুছে যায়। আজীবনের জন্যে এদেশের প্রতি রোপন করে রেখে গেলেন মার্কিন বিদ্বেষের বীজ। আর স্বদেশে ব্যর্থ স্বাধীনতা বিরোধীরাও সেই বিষমন্ত্র লুফে নিলো। তাদেরকে বানালো ষড়যন্ত্রের দোসর।
১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট সুবিধা করতে পারলো তারা। তারপর অন্ধকার যুগের প্রায় পনেরটি বছর কাটলো সামরিক শাসনের যাতাকলে। আজ যারা গণতন্ত্রের কথা বলে তখন তাদের সেই সব মুখগুলো কোথায় ছিলো? তারপর যদিও সুযোগ এলো কিন্তু লাভ হলো না। একই অন্ধকারের এপিঠ ওপিঠ হলো মাত্র। কাটলো আরও পাঁচটি বছর। ১৯৯৬-এ এসে দেশটা আলোর মুখ দেখলো। অরাজকতা বা মাৎস্যান্যায় পেরিয়ে বিচারের রাজনীতিতে ফিরলো দেশ। কিন্তু এসবের অনেক কিছুই অনেকের ভালো লাগে না। এতে যে অনেক অসুবিধা।
তন্ত্র-মন্ত্র গেলাতে হবে না। রাজনীতির আড়ালে সন্ত্রাসবাদীদের লালন পালন। অবাক লাগে ঐ সময়টার কথা চিন্তা করলে। একটার পর একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। হাতুড়ী নামে পর্যন্ত একটা সংগঠন বেরিয়েছিলো। আর জেএমবি (jmb), বাংলা ভাইয়ের (bangla bhai) কথা নয় বাদই দিলাম। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে?
উল্লাস বা উচ্ছাসের কিছু নেই। তারা কিন্তু মোটেই বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শুধু ঘাপটি মেরে আছে সময়ের অপেক্ষায়। উর্বর ক্ষেত্র পেলেই গজাবে আগাছার মতো। ভিপি নূর (v p nur), একজন সুদখোর (dr. yunus), লন্ডনে অবস্থানরত যুবরাজ (tareq zia)- আরও কতো নাম - অপেক্ষায় আছে ক্ষেত্র তৈরি করার। আমেরিকা বসে আছে বিষবৃক্ষের গোড়ায় পানি ঢালতে। এদেশ বাঁচুক আর মরুক তাতে কার কি আসে যায়? নিজের সুবিধা হলেই হলো।
আমরা জানি না কি ঘটবে? তবে একথা সত্য স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা কঠিন। তাইতো পাহারা দিতে হবে সার্বক্ষনিকভাবে। ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। জেগে থাকতে হবে।
Comments
Post a Comment