জুদার (judea) পর্বতের উপর যে বিস্তৃত সমতল যা ডেড সি (dead sea) বা মরু সাগরের পশ্চিম পার্শ্বে আড়াআড়িভাবে উত্তর দক্ষিণ বরাবর বিস্তৃত এবং দৈর্ঘ্য মরু সাগরের চাইতে বেশ খানিকটা বেশীই বলতে হবে তারই মধ্যভাগের খানিকটা উপরের দিকে জেরুজালেমের (jerusalem) অবস্থান।
জেরুজালেমের খানিকটা নিচে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান বেথেলহেম (bethlehem)। জেরুজালেমের পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর (mediterranian) আর পূর্বে মরু সাগর (dead sea)। জেরুজালেমের যে অংশটা সিটি অফ ডেভিড (city of david) বা দাউদ নবীর নগরী হিসেবে পরিচিত সেখানে আর্কিওলজিস্টদের তথ্যানুযায়ী খ্রিঃ পূঃ ৪০০০ বছর আগে থেকেই লোক বসতির চিহ্ন পাওয়া যায় তবে সেই মানুষগুলো উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানো শিকারী মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়।
জেরুজালেম সম্পর্কে গোছানো যেটুকু জানা যায় তাহলো খ্রিঃ পূঃ ১৪০০ সময় কালের। এই সময়ে মিশরীয় শিলালিপি বা tablet- এ এর উল্লেখ পাওয়া যায় রুসালিম (rusalim) হিসেবে যার অর্থ করা হয়েছে সিটি অফ শালেম (city of shalem) আর এই shalem হলো তৎকালীন কেনান (canaan) দেশীয় এক দেবতার নাম।
তারপর যা জানা যায় তাহলো এখানে মোশির (Moses) সেনাপতি যশুয়ার (Joshua) বিজয়ের মাধ্যমে ইসরাইলীয়দের (israelites) আগমনের কথা। এটা সম্ভবতঃ খ্রিঃ পূঃ ১৩০০ সালের সময়কালের কথা। তবে তখন কেবলমাত্র ধীরে ধীরে নগর সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। আর এটা ছিলো লৌহ যুগের (iron age) শুরুর সময়কালটা।
এখানে বলে রাখা ভালো, আব্রাহামের সময়কাল হলো খ্রিঃ পূঃ ২০০০। তার প্রায় ছয়শ বছরের পরে এসেছিলেন মোশি। তাই এটা সম্ভবত ১৪০০ খ্রিঃ পূঃ সময়কাল। তিনি বেঁচে ছিলেন ১২০ বছর। আর তাই তার মৃত্যুর পর যশুয়ার যে অভিযান তাও তাই খ্রিঃ পূঃ ১৩০০ সালের দিকের কথা।
এই সময়কালের প্রায় তিনশ বছর পর অর্থাৎ আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ ১০০০ সময়কালে দাউদ (David) নবী (আঃ) জেরুজালেমের রাজা হন। আর তখন থেকেই এর সমৃদ্ধি আসতে থাকে। তার পুত্র সোলাইমান (Soloman) এখানে প্রথম টেম্পল (first temple) নির্মাণ করেন। এটা খ্রিঃ পূঃ ৯০০ সালের দিকের কথা। সম্ভবত খ্রিঃ পূঃ ৫৮৭ সময়কালে নিও ব্যাবিলনীয় সা¤্রাজ্যের রাজা নেবু চাঁদ নেজারের (Nebuchad Nezzar) দ্বারা এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। রাজা জেরুজালেমবাসীদের বন্দী করে নিয়ে যান।
অবশ্য এর কয়েক দশক পরে পারস্যের আকিমিনিদ (achaemenid) সা¤্রাজ্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট (cyrus the great) ব্যাবিলনীয় (babylonian) সা¤্রাজ্যকে পরাজিত করেন এবং ইহুদীদের (jews) মুক্ত করে জেরুজালেমে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। সেখানে তারা খ্রিঃ পূঃ ৫১৬ সময়কালে দ্বিতীয় টেম্পল (second temple) নির্মাণ করেন। অবশ্য এটাও ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান জেনারেল টিটুস (titus) কর্তৃক ধ্বংস হয়ে যায় যা আজও পুননির্মিত হয়নি।
জেরুজালেমে বর্তমানে মুসলমানদের তৈরী ডোম অব রক (dome of rock), আল আকসা (al aqsa) মসজিদ আর খ্রিস্টানদের church of holy sepulchre ছাড়া আর কোন উপাসনালয় নেই। ইহুদিরা তাই তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যেখানে তাদের দ্বিতীয় টেম্পল ছিলো বলে ধারণা করে অর্থাৎ পুরণো শহরের পশ্চিমের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ইবাদত করে। তাদের ধারণা মুসলমানদের Dome of Rock আর আল আকসার (al aqsa) নিচেই তাদের দ্বিতীয় টেম্পল চাপা পড়ে গেছে।
পারসিয়ানদেও পর জেরুজালেম আলেক্সান্ডারের হাতে চলে যায়। তার পরবর্তী সময়ে এটা তারই একজন সেনাপতি টলেমির (ptolemy) হাতে আসে। এরপর ১৫২ খ্রিঃ পূঃ সময়কালে এটা হাসমোনিয়ানদের (hasmonean) দখলে যায়। খ্রিঃ পূঃ ৬৯ সময়কালে এটা আবার রোমান স¤্রাট পম্পেই দ্যা গ্রেট (pompey the great) জয় করে নেন। এর পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এটা হাসমোনিয়ানদের সহযোগিতায় পার্সিয়ান সা¤্রাজ্যের অন্তর্গত হয় বটে, তবে তা শীঘ্রই রোমানদের হস্তগত হয়।
এই সময় রোমান ও পার্সিয়ানদের মধ্যবর্তী দ্ব›েদ্বর সুবাদে এটা এডোমাইট (edomite) রাজা হেরোডের (herod the great) হাতে পড়ে। রোম হেরোডকে রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। হেরোডের মৃত্যুর পর এটি আবারও রোমান সা¤্রাজ্যের অধীনে চলে যায় Ludaea হিসেবে। যদিও Herod-এর বংশধররা ৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী এলাকার শাসক ছিলো। হেরোডের বংশের শেষ শাসক ছিলো প্রথম সালোমে (salome I)। এই হেরোডের সময়কালটা ধর্মীয় কারণে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
হেরোডের শাসনকালটা ছিলো অত্যন্ত আলোচিত। ... to be continued ...
Comments
Post a Comment