১৯৭১ সালের যুদ্ধ আমাদের এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছিলো যখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো কারা এ দেশের সত্যিকারের আপনজন আর কারা পর। সত্যি কথা বলতে কি এরকম একটা পরিস্থিতির প্রয়োজন ছিলো। নইলে কোনদিনই এই দুটো সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা সম্ভব হতো না। যুদ্ধ আমাদের মাঝে এই সীমা রেখা টেনে দিয়েছিলো।
ভাবতে অবাক লাগে সেদিন যারা অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলো বিগত ৪৫ বছর ধরে তারাই বেশীরভাগ সময় রাজত্ব করেছে। হয়তো আগামিতেও করবে।
যদি সেদিন তারা চিহ্নিত না হতো তাহলে এই সব লোকগুলো আমাদের ভিতরেই এমন ভাবে মিলেমিশে থাকতো যাদের কখনোই সনাক্ত করা যেতো না। ছদ্মবেশী এইসব মানুষগুলো আজীবন এই দেশে শিকড় কেটে আগায় পানি ঢালতো। কিন্তু বোঝার কোন উপায় ছিলো না। অবশ্য বুঝেও বা কী লাভ হলো। ৪৫টি বছর একটা ঘোরলাগা সময় পার করলাম আমরা। আর চিহ্নিত সেইসব লোকগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘোলাজলে মাছ শিকার করলো।
যুদ্ধের মধ্যে ধ্বংস অনিবার্য সত্য হিসেবে বরাবরই ছিলো । তবুও ঐ ধ্বংসাতœক যুদ্ধই অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের জবাব এনে দিয়েছে। জাতি অন্তত তার আপনজনদের চিনতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিভ্রান্ত সময় পার হলেও আজ আলোর দেখা মিলছে। সেদিন সেই যুদ্ধ সংগঠিত না হলে এটা হয়তো কোনদিনও সম্ভব ছিলো না।
আমরা বারাবরি কলহ প্রবণ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব কলহ কোন তাৎপর্য বহন করে না। কারন একটাই। বাঙ্গালী জাতি হিসাবে বরাবরই ভঙ্গুর প্রকৃতির। আবেগতাড়িত। অর্থহীন স্বপ্ন দেখা আমাদের বৈশিষ্ট্য। অযৌক্তিক প্রত্যাশা আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। আমাদের বেশির ভাগ লোকই শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ । বিশ্বের যে কোন অঞ্চলের তুলনায় এই হার এই অঞ্চলে তীব্র । তবুও আমরা নির্বিকার। কারন আমরা জানিও না যে আমরা সংকটের মধ্যে আছি। সামান্যতে উত্তেজিত। সামান্যতেই নির্বাপিত। বড় অদ্ভুত লাগে।
১৯৭১ সালে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয়েছিলো। ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ৯ বছরও লাগতে পারতো। দীর্ঘ মেয়াদি একটা গণযুদ্ধ হতে পারতো। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, ভারতের সহযোগিতা, পাকিস্তানের দুই প্রন্তের দূরত্ব, পাকিস্তানি সৈন্যদের আমাদের এলাকায় অনভ্যস্ততা, সর্বোপরি ২৫ মার্চের কালো রাতের গণহত্যা, ক্রমাগত নিরপরাধ মানুষদের হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো বিকৃত বিষয়গুলো আমাদের যুদ্ধ জয়কে অতিমাত্রায় ত্বরান্বিত করেছিলো।
বেশির ভাগ লোকের ধারনার বাইরে ছিলো বিষয়টা। বিশেষ করে ডিসেম্বরের ৪ তারিখের পর থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই সামান্য সময়টুকুতে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে যে সর্বাতœক আক্রমন চালিয়েছিলো তা পাকিস্তানের পরাজয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিলো। তারা চাইলেও আর পরাজয় এড়ানোর উপায় ছিলো না।
পাকিস্তানিদের সেই চিরাচরিত স্বার্থপরতা তাদের যুদ্ধে পারজয়ের অন্যতম কারন ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যদি সর্বাত্মক সহযোগিতা সময়মত করা হতো তাহলে হয়তো এখানে অবস্থানরত তাদের বাহিনী আরও কিছুদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ইতিহাস বলে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় তারা পরাজয় মেনে নিয়েছিলো।
জেনারেল মিয়াজী তার অসহায় অবস্থায় বুঝতে পেরে ছিলো। তিনি ৯০ হাজার সৈন্যদের স্ত্রীকে অযথা বিধবা করতে চাননি। কারন যেখানে তিনি নিশ্চিত পূর্ব পাকিস্তান বিষয়টি পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে তখনি একটি পরিত্যক্ত বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে সেখানে াতান অযথা কেন ঝুঁকি নেবেন। ইতিহাসে এসবের সাক্ষী রয়ে গেছে।
যুদ্ধের পঠভুমি লেখা হয় মৃত্যু, ত্যাগ আর বীরত্বের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ এর যুদ্ধে এর সব উপাদানই ছিলো আজও ভেবে পাইনা এই অদ্ভূত সময় পার করা মানুষগুলো বিজয় অর্জনের পর আমূল বদলে গেলো। স্বার্থপরতার হানাহানিতে এমন ভাবে লিপ্ত হলো যে সেই সুযোগে সুবিধাবাদীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ছিনিয়ে নিলো বিজয়ের মাহাত্ম্য। তারপর একে একে সবকিছু বদলে দিতে লাগলো। যাদুকরী সব কথার ফুলঝুড়িতে তারা এটাই প্রমাণ করে ছাড়লো যে তারাই এদেশের প্রকৃত বন্ধু।
চোখ থাকতেও অন্ধ, হীনমনা, ঔপনিবেশিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট দাসের জাত আমরা। আমাদের আচরণ এর চেয়ে ভালো কি হবে।
দেশের জন্যে যুদ্ধ করাকে আমরা যেভাবে একটা সুসংগঠিত কাজ মনে করেছিলাম দেশ গড়ার কাজকে আমরা ঠিক সেভাবে নিতে পারিনি। আমরা মনে করেছিলাম শুধু যুদ্ধের ময়দানেই আমাদেরকে সংগঠিত হয়ে লড়াই করলে চলবে। কারন সেখানে চিহ্নিত বিদেশী শত্রুরা রয়েছে।
অথচ ভুলটা ছিল এখানেই। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ যতটা না ক্ষতি করতে পেরেছিলো তার চেয়ে বেশী ক্ষতি সংগঠিত হয়েছিলো পরবর্তীতে শান্তির সময়ে। আমরা দারুণভাবে পরাজিত হয়েছিলাম আমাদের ঘরের শত্রুর কাছে।
ইতিহাসে এরকম অনেক ঘটনার সাক্ষী আছে। কিন্তু আমরা সেখান থেকে কোন শিক্ষা নেইনি । ভুল পথে পা বাড়িয়েছি।
কেউ যে ভুলের উর্দ্ধে নয় তাও ভুলে গিয়েছিলাম। পরিণতি খুব একটা ভালো হয়নি। সময় আর পরিস্থিতি কাউকে ক্ষমা করে না । তা সে যতো বড় মানুষই হোক না কেন। ভুলের স্্েরাতে অনেক অর্জন আর সাফল্য খরকুটোর মতো ভেসে চলে যায় ।
কেউ কেউ বলে ভালবাসা দিয়ে সবকিছু সম্ভব। দেশ চালানোর জন্যে একমাত্র কৌশলই কাজ করে। ভালবাসাকে বুকের মধ্যে রাখতে হয়।
১৯৭২-৭৫ সাল। আমাদের জন্যে খুব বেশি বড় সময় না হলেও শুরু করার জন্যে তা যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু আমরা সেই শুরুটা করতেই পারিনি।
জ্বর সারাবার জন্য ক্ইুনাইন লাগে। কুইনাইন যে তেতো তা শিশু মাত্রই জানে। আমরা সেই সত্যটা অস্বীকার করেছিলাম।
আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য ধর্মের বর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান। আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও মুসলমান। এই পদ্ধতি কতটা কাজ করবে তা ভাববার অবকাশ আছে। আওয়ামী লীগকে যদি মোকাবেলা করতেই হয় তাহলে তা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। তার চেয়ে ভাল রাজনীতি করে দেখাতে হবে। তার চেয়ে ভাল উন্নয়ন করে দেখাতে হবে। প্রতিশ্র“তি পূরণ করে দেখাতে হবে। একজন ধর্মযাজককে সবার আগে প্রমাণ করতে হবে যে সে একজন ভালো মানুষ। অন্যথায় তার বাণী কেউ নেবে না। বিভ্রান্ত প্রজন্মের সামনে আজ আরও বেশি বিভ্রান্ত রাজনৈতিক দল এবং তার মতবাদ। গণতন্ত্রের সামনে তাই গাঢ় অন্ধকার। ভালো প্রতিপক্ষ ছাড়া গণতন্ত্রের স্বপ্ন এবং পথচলা দুটোই অর্থহীন।
জিয়াউর রহমান কিন্তু প্রচলিত ব্যবস্থার খুব একটা পরিবর্তন করেননি। সমাজতন্ত্রীদের কথা তিনি কানে তোলেননি। জামায়াতে ইসলামীর দর্শনও তিনি নেননি। বরং সমাজতন্ত্রীদের চাইতে জামায়াত ইসলামকে বেশি অপছন্দ করতেন। এসব সত্য আজ চাপা দেওয়া হচ্ছে। জামায়েতকে বিএনপির সাথে জুড়ে দিয়ে একটা জগাখিচুড়ি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। রাজনীতি জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়। বরং রাষ্ট্র এবং তার দর্শন সম্পর্কে মানুষের ধারনাকে পরিষ্কার করার জন্যে।
বেশীরভাগ ধর্মভীরু লোকই বসে আছে এরা তাদের জন্যে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আসবে। ইহকালে কল্যান ও পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারা জানে না ইসলাম কোন হাইব্রিড গাছের ফসল না। এটা একটা একক এবং মৌলিক বৃক্ষের ফল। ইসলামী আন্দোলন এবং আজকের রাজনৈতিক দর্শন সম্পুর্ন বিপরীতমুখী।
আমরা সবাই জানি কিভাবে ইসলামী শাসন কায়েম হতে পারে। কোরআন এবং হাদীসে এসব কথা সবই লেখা আছে। কুরআন স্বব্যাখ্যায়িত ধর্মগ্রন্থ। এর ব্যাখ্যার জন্যে যদু মদুর কাছে যাওয়ার দরকার হয়না। কিন্তু আমাদের সমস্যা অন্যত্র। আমাদের বুকে সেই বল নেই। সেই সৎ সাহস নেই ধর্মের পক্ষে কথা বলার।
কারন একটাই। প্রথম যে শর্ত মুুসলমান হিসেবে আমাদের লেবাস তা-ই ঠিক নেই। আমরা দাড়ি রাখতে অস্বস্তি বোধ করি। মাথায় টুপি পরি না অসুন্দর আর আনস্মার্ট লাগার ভয়ে। আমাদের পক্ষে আর সামনে এগোনো সম্ভব না। যে মানুষ তার ইসলামী দর্শনের প্রথম ধাপ অর্থাৎ মুসলমান হিসেবে তার লেবাসকেই ঠিক করতে পারলো না তার মতো ছদ্মবেশী, বর্ণচোরার পক্ষে ইসলামী মুজাহিদ হওয়া কতোটুকু সম্ভব। সেই প্রশ্নের উত্তর একজন খ্রিষ্টান, ইহুদি কিংবা নাস্তিকও ভালো জানে। অথচ আমরা এটা নিয়ে তামাশা করছি। ছেলেখেলা মনে করছি।
আওয়ামী লীগের সমালোচকের অভাব নেই। প্রায় ৭০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে দলটি এদেশের মানুষের প্রয়োজনে যতটুকু পাশাপাশি দাঁড়াতে পেরেছে তার সিকিভাগও কি অন্যরা কেউ পেরেছে। এ দেশের মাটিতে যে কোন কিছু বাস্তবায়ন করা একমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব। তা সে সমাজতন্ত্রই হোক, গণতন্ত্রই হোক, উন্নয়নই হোক কিংবা ইসলামী শাসন ব্যাবস্থাই হোক।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের গায়ে ধর্ম বিদ্বেষীর তক্মা লাগিয়ে ফায়দা অর্জনের দিন শেষ। আওয়ামী লীগ কোন ধর্ম বিদ্বেষী সংগঠন নয়। বরং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি দল। এখন তাকে দিয়েই ইসলামকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা বোঝার বিষয়।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। ১৯৪৭ সালের পূর্বে ভারত ভেঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান নামে যে দুটো রাষ্ট্র তৈরির ধারনা কাজ করছিল আমাদের উপমহাদেশের আলেমদের কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ তা কখনো সমর্থন করেনি। এই জন্যেই তারা মুসলীম লীগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলো। তেমনি ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সকল ধর্মের সমান গুরুত্বও তাদেরই মতবাদ । অথচ আজ এসবের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে অতিক্রম করতে হলে তার চেয়ে ভালো কিছু করেই তা করতে হবে।
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। আমরা প্রায়শই অনেককে ঈমানের বুলি আওড়াতে দেখি। এসব লোকগুলোই সর্বক্ষেত্রে দেশ ও জনগনের সব ধরনের হক নষ্ট করেছে। মুখে ভাল ভাল বুলি আওড়িয়ে মানুষকে খুব বেশী দিন ধোকা দেওয়া যায় না। কাজের মাধ্যমেই সেই পরিচয় দিতে হবে।
দেশ ও তার মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থে কিছু ত্যাগ করা কঠিন। আপন জীবন, সম্পদ আর স্বার্থ ত্যাগ করে যারা দেশ ও জাতিকে মুক্ত করেছিল তাদেরকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
অতীত ভুলে যাওয়া কোন জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। ইতিহাস বিস্মৃত জাতি খুব বেশী দূর যেতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা অনেকেই বলে ইতিহাস চর্চা কী আমাকে অন্য বস্ত্র দেবে। এতটুকু বলতে পারি ইতিহাস কাউকে অন্ন বস্ত্র না দিতে পারলেও ইতিহাস আমার আপনার জন্য অন্ন বস্ত্রের যে ব্যবস্থা করেছে তাকে ভুলে গেলে তাও হারাতে হবে। ৫৬ হাজার এই বর্গমাইলের এই স্বাধীন ভূখন্ড আপনা আপনি অর্জিত হয়নি । তার জন্যে রক্ত দিতে হয়েছে।
সমস্যা এখনো তার গোড়াতেই রয়ে গেছে। ভাশুরের নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা কেউই তা মুখে আনতে চাইছি না। বিরুদ্ধবাদীরা আজও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ফলশ্র“তিতে বাংলাদেশের জন্মকে মেনে নিতে পারে না। তাহলে অন্যান্য আলোচনায় লাভ কি। আলোচনার শুরুতেই গলদ।
আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে না নেওয়া পর্যন্ত যেখানে একজন লোক মুসলমান হতে পারছে না সেখানে তাকে হাজারো ইসলামী আহকাম শেখানো কি কোন কাজে দেবে। বাড়তি আলোচনা। শুধু শুধু কালক্ষেপন মাত্র।
বিরুদ্ধবাদীদের অনেকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। এটা মোটেও ভাল কথা নয়। আবার আওয়ামী লীগও যদি এই বিরোধীতাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে তাহলে তারাও ভুল করবে। মনে রাখতে হবে ইঁদুরের সাথে খেলা করতে করতে হাতির পা-ও গর্তে পড়তে পারে। তাতে ইঁদুর যতই ভুল করুক আর নাচানাচি করুক। প্রত্যেককেই তার নিজের ভুলের মাশুল আলাদা আলাদা গুনে গুনে দিতে হয়। কেউ কারো দায়ভার নেয় না। (চলবে)
ভাবতে অবাক লাগে সেদিন যারা অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলো বিগত ৪৫ বছর ধরে তারাই বেশীরভাগ সময় রাজত্ব করেছে। হয়তো আগামিতেও করবে।
যদি সেদিন তারা চিহ্নিত না হতো তাহলে এই সব লোকগুলো আমাদের ভিতরেই এমন ভাবে মিলেমিশে থাকতো যাদের কখনোই সনাক্ত করা যেতো না। ছদ্মবেশী এইসব মানুষগুলো আজীবন এই দেশে শিকড় কেটে আগায় পানি ঢালতো। কিন্তু বোঝার কোন উপায় ছিলো না। অবশ্য বুঝেও বা কী লাভ হলো। ৪৫টি বছর একটা ঘোরলাগা সময় পার করলাম আমরা। আর চিহ্নিত সেইসব লোকগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘোলাজলে মাছ শিকার করলো।
যুদ্ধের মধ্যে ধ্বংস অনিবার্য সত্য হিসেবে বরাবরই ছিলো । তবুও ঐ ধ্বংসাতœক যুদ্ধই অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের জবাব এনে দিয়েছে। জাতি অন্তত তার আপনজনদের চিনতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিভ্রান্ত সময় পার হলেও আজ আলোর দেখা মিলছে। সেদিন সেই যুদ্ধ সংগঠিত না হলে এটা হয়তো কোনদিনও সম্ভব ছিলো না।
আমরা বারাবরি কলহ প্রবণ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব কলহ কোন তাৎপর্য বহন করে না। কারন একটাই। বাঙ্গালী জাতি হিসাবে বরাবরই ভঙ্গুর প্রকৃতির। আবেগতাড়িত। অর্থহীন স্বপ্ন দেখা আমাদের বৈশিষ্ট্য। অযৌক্তিক প্রত্যাশা আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। আমাদের বেশির ভাগ লোকই শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ । বিশ্বের যে কোন অঞ্চলের তুলনায় এই হার এই অঞ্চলে তীব্র । তবুও আমরা নির্বিকার। কারন আমরা জানিও না যে আমরা সংকটের মধ্যে আছি। সামান্যতে উত্তেজিত। সামান্যতেই নির্বাপিত। বড় অদ্ভুত লাগে।
১৯৭১ সালে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয়েছিলো। ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ৯ বছরও লাগতে পারতো। দীর্ঘ মেয়াদি একটা গণযুদ্ধ হতে পারতো। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, ভারতের সহযোগিতা, পাকিস্তানের দুই প্রন্তের দূরত্ব, পাকিস্তানি সৈন্যদের আমাদের এলাকায় অনভ্যস্ততা, সর্বোপরি ২৫ মার্চের কালো রাতের গণহত্যা, ক্রমাগত নিরপরাধ মানুষদের হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো বিকৃত বিষয়গুলো আমাদের যুদ্ধ জয়কে অতিমাত্রায় ত্বরান্বিত করেছিলো।
বেশির ভাগ লোকের ধারনার বাইরে ছিলো বিষয়টা। বিশেষ করে ডিসেম্বরের ৪ তারিখের পর থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই সামান্য সময়টুকুতে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে যে সর্বাতœক আক্রমন চালিয়েছিলো তা পাকিস্তানের পরাজয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিলো। তারা চাইলেও আর পরাজয় এড়ানোর উপায় ছিলো না।
পাকিস্তানিদের সেই চিরাচরিত স্বার্থপরতা তাদের যুদ্ধে পারজয়ের অন্যতম কারন ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যদি সর্বাত্মক সহযোগিতা সময়মত করা হতো তাহলে হয়তো এখানে অবস্থানরত তাদের বাহিনী আরও কিছুদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ইতিহাস বলে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় তারা পরাজয় মেনে নিয়েছিলো।
জেনারেল মিয়াজী তার অসহায় অবস্থায় বুঝতে পেরে ছিলো। তিনি ৯০ হাজার সৈন্যদের স্ত্রীকে অযথা বিধবা করতে চাননি। কারন যেখানে তিনি নিশ্চিত পূর্ব পাকিস্তান বিষয়টি পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে তখনি একটি পরিত্যক্ত বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে সেখানে াতান অযথা কেন ঝুঁকি নেবেন। ইতিহাসে এসবের সাক্ষী রয়ে গেছে।
যুদ্ধের পঠভুমি লেখা হয় মৃত্যু, ত্যাগ আর বীরত্বের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ এর যুদ্ধে এর সব উপাদানই ছিলো আজও ভেবে পাইনা এই অদ্ভূত সময় পার করা মানুষগুলো বিজয় অর্জনের পর আমূল বদলে গেলো। স্বার্থপরতার হানাহানিতে এমন ভাবে লিপ্ত হলো যে সেই সুযোগে সুবিধাবাদীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ছিনিয়ে নিলো বিজয়ের মাহাত্ম্য। তারপর একে একে সবকিছু বদলে দিতে লাগলো। যাদুকরী সব কথার ফুলঝুড়িতে তারা এটাই প্রমাণ করে ছাড়লো যে তারাই এদেশের প্রকৃত বন্ধু।
চোখ থাকতেও অন্ধ, হীনমনা, ঔপনিবেশিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট দাসের জাত আমরা। আমাদের আচরণ এর চেয়ে ভালো কি হবে।
দেশের জন্যে যুদ্ধ করাকে আমরা যেভাবে একটা সুসংগঠিত কাজ মনে করেছিলাম দেশ গড়ার কাজকে আমরা ঠিক সেভাবে নিতে পারিনি। আমরা মনে করেছিলাম শুধু যুদ্ধের ময়দানেই আমাদেরকে সংগঠিত হয়ে লড়াই করলে চলবে। কারন সেখানে চিহ্নিত বিদেশী শত্রুরা রয়েছে।
অথচ ভুলটা ছিল এখানেই। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ যতটা না ক্ষতি করতে পেরেছিলো তার চেয়ে বেশী ক্ষতি সংগঠিত হয়েছিলো পরবর্তীতে শান্তির সময়ে। আমরা দারুণভাবে পরাজিত হয়েছিলাম আমাদের ঘরের শত্রুর কাছে।
ইতিহাসে এরকম অনেক ঘটনার সাক্ষী আছে। কিন্তু আমরা সেখান থেকে কোন শিক্ষা নেইনি । ভুল পথে পা বাড়িয়েছি।
কেউ যে ভুলের উর্দ্ধে নয় তাও ভুলে গিয়েছিলাম। পরিণতি খুব একটা ভালো হয়নি। সময় আর পরিস্থিতি কাউকে ক্ষমা করে না । তা সে যতো বড় মানুষই হোক না কেন। ভুলের স্্েরাতে অনেক অর্জন আর সাফল্য খরকুটোর মতো ভেসে চলে যায় ।
কেউ কেউ বলে ভালবাসা দিয়ে সবকিছু সম্ভব। দেশ চালানোর জন্যে একমাত্র কৌশলই কাজ করে। ভালবাসাকে বুকের মধ্যে রাখতে হয়।
১৯৭২-৭৫ সাল। আমাদের জন্যে খুব বেশি বড় সময় না হলেও শুরু করার জন্যে তা যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু আমরা সেই শুরুটা করতেই পারিনি।
জ্বর সারাবার জন্য ক্ইুনাইন লাগে। কুইনাইন যে তেতো তা শিশু মাত্রই জানে। আমরা সেই সত্যটা অস্বীকার করেছিলাম।
আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য ধর্মের বর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান। আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও মুসলমান। এই পদ্ধতি কতটা কাজ করবে তা ভাববার অবকাশ আছে। আওয়ামী লীগকে যদি মোকাবেলা করতেই হয় তাহলে তা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। তার চেয়ে ভাল রাজনীতি করে দেখাতে হবে। তার চেয়ে ভাল উন্নয়ন করে দেখাতে হবে। প্রতিশ্র“তি পূরণ করে দেখাতে হবে। একজন ধর্মযাজককে সবার আগে প্রমাণ করতে হবে যে সে একজন ভালো মানুষ। অন্যথায় তার বাণী কেউ নেবে না। বিভ্রান্ত প্রজন্মের সামনে আজ আরও বেশি বিভ্রান্ত রাজনৈতিক দল এবং তার মতবাদ। গণতন্ত্রের সামনে তাই গাঢ় অন্ধকার। ভালো প্রতিপক্ষ ছাড়া গণতন্ত্রের স্বপ্ন এবং পথচলা দুটোই অর্থহীন।
জিয়াউর রহমান কিন্তু প্রচলিত ব্যবস্থার খুব একটা পরিবর্তন করেননি। সমাজতন্ত্রীদের কথা তিনি কানে তোলেননি। জামায়াতে ইসলামীর দর্শনও তিনি নেননি। বরং সমাজতন্ত্রীদের চাইতে জামায়াত ইসলামকে বেশি অপছন্দ করতেন। এসব সত্য আজ চাপা দেওয়া হচ্ছে। জামায়েতকে বিএনপির সাথে জুড়ে দিয়ে একটা জগাখিচুড়ি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। রাজনীতি জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়। বরং রাষ্ট্র এবং তার দর্শন সম্পর্কে মানুষের ধারনাকে পরিষ্কার করার জন্যে।
বেশীরভাগ ধর্মভীরু লোকই বসে আছে এরা তাদের জন্যে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আসবে। ইহকালে কল্যান ও পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারা জানে না ইসলাম কোন হাইব্রিড গাছের ফসল না। এটা একটা একক এবং মৌলিক বৃক্ষের ফল। ইসলামী আন্দোলন এবং আজকের রাজনৈতিক দর্শন সম্পুর্ন বিপরীতমুখী।
আমরা সবাই জানি কিভাবে ইসলামী শাসন কায়েম হতে পারে। কোরআন এবং হাদীসে এসব কথা সবই লেখা আছে। কুরআন স্বব্যাখ্যায়িত ধর্মগ্রন্থ। এর ব্যাখ্যার জন্যে যদু মদুর কাছে যাওয়ার দরকার হয়না। কিন্তু আমাদের সমস্যা অন্যত্র। আমাদের বুকে সেই বল নেই। সেই সৎ সাহস নেই ধর্মের পক্ষে কথা বলার।
কারন একটাই। প্রথম যে শর্ত মুুসলমান হিসেবে আমাদের লেবাস তা-ই ঠিক নেই। আমরা দাড়ি রাখতে অস্বস্তি বোধ করি। মাথায় টুপি পরি না অসুন্দর আর আনস্মার্ট লাগার ভয়ে। আমাদের পক্ষে আর সামনে এগোনো সম্ভব না। যে মানুষ তার ইসলামী দর্শনের প্রথম ধাপ অর্থাৎ মুসলমান হিসেবে তার লেবাসকেই ঠিক করতে পারলো না তার মতো ছদ্মবেশী, বর্ণচোরার পক্ষে ইসলামী মুজাহিদ হওয়া কতোটুকু সম্ভব। সেই প্রশ্নের উত্তর একজন খ্রিষ্টান, ইহুদি কিংবা নাস্তিকও ভালো জানে। অথচ আমরা এটা নিয়ে তামাশা করছি। ছেলেখেলা মনে করছি।
আওয়ামী লীগের সমালোচকের অভাব নেই। প্রায় ৭০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে দলটি এদেশের মানুষের প্রয়োজনে যতটুকু পাশাপাশি দাঁড়াতে পেরেছে তার সিকিভাগও কি অন্যরা কেউ পেরেছে। এ দেশের মাটিতে যে কোন কিছু বাস্তবায়ন করা একমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব। তা সে সমাজতন্ত্রই হোক, গণতন্ত্রই হোক, উন্নয়নই হোক কিংবা ইসলামী শাসন ব্যাবস্থাই হোক।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের গায়ে ধর্ম বিদ্বেষীর তক্মা লাগিয়ে ফায়দা অর্জনের দিন শেষ। আওয়ামী লীগ কোন ধর্ম বিদ্বেষী সংগঠন নয়। বরং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি দল। এখন তাকে দিয়েই ইসলামকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা বোঝার বিষয়।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। ১৯৪৭ সালের পূর্বে ভারত ভেঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান নামে যে দুটো রাষ্ট্র তৈরির ধারনা কাজ করছিল আমাদের উপমহাদেশের আলেমদের কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ তা কখনো সমর্থন করেনি। এই জন্যেই তারা মুসলীম লীগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলো। তেমনি ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সকল ধর্মের সমান গুরুত্বও তাদেরই মতবাদ । অথচ আজ এসবের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে অতিক্রম করতে হলে তার চেয়ে ভালো কিছু করেই তা করতে হবে।
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। আমরা প্রায়শই অনেককে ঈমানের বুলি আওড়াতে দেখি। এসব লোকগুলোই সর্বক্ষেত্রে দেশ ও জনগনের সব ধরনের হক নষ্ট করেছে। মুখে ভাল ভাল বুলি আওড়িয়ে মানুষকে খুব বেশী দিন ধোকা দেওয়া যায় না। কাজের মাধ্যমেই সেই পরিচয় দিতে হবে।
দেশ ও তার মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থে কিছু ত্যাগ করা কঠিন। আপন জীবন, সম্পদ আর স্বার্থ ত্যাগ করে যারা দেশ ও জাতিকে মুক্ত করেছিল তাদেরকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
অতীত ভুলে যাওয়া কোন জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। ইতিহাস বিস্মৃত জাতি খুব বেশী দূর যেতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা অনেকেই বলে ইতিহাস চর্চা কী আমাকে অন্য বস্ত্র দেবে। এতটুকু বলতে পারি ইতিহাস কাউকে অন্ন বস্ত্র না দিতে পারলেও ইতিহাস আমার আপনার জন্য অন্ন বস্ত্রের যে ব্যবস্থা করেছে তাকে ভুলে গেলে তাও হারাতে হবে। ৫৬ হাজার এই বর্গমাইলের এই স্বাধীন ভূখন্ড আপনা আপনি অর্জিত হয়নি । তার জন্যে রক্ত দিতে হয়েছে।
সমস্যা এখনো তার গোড়াতেই রয়ে গেছে। ভাশুরের নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা কেউই তা মুখে আনতে চাইছি না। বিরুদ্ধবাদীরা আজও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ফলশ্র“তিতে বাংলাদেশের জন্মকে মেনে নিতে পারে না। তাহলে অন্যান্য আলোচনায় লাভ কি। আলোচনার শুরুতেই গলদ।
আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে না নেওয়া পর্যন্ত যেখানে একজন লোক মুসলমান হতে পারছে না সেখানে তাকে হাজারো ইসলামী আহকাম শেখানো কি কোন কাজে দেবে। বাড়তি আলোচনা। শুধু শুধু কালক্ষেপন মাত্র।
বিরুদ্ধবাদীদের অনেকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। এটা মোটেও ভাল কথা নয়। আবার আওয়ামী লীগও যদি এই বিরোধীতাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে তাহলে তারাও ভুল করবে। মনে রাখতে হবে ইঁদুরের সাথে খেলা করতে করতে হাতির পা-ও গর্তে পড়তে পারে। তাতে ইঁদুর যতই ভুল করুক আর নাচানাচি করুক। প্রত্যেককেই তার নিজের ভুলের মাশুল আলাদা আলাদা গুনে গুনে দিতে হয়। কেউ কারো দায়ভার নেয় না। (চলবে)
Comments
Post a Comment