পৃথিবীতে ধর্ম সব সময়ই ছিলো। এখনও আছে। আগামীতেও থাকবে। কিন্তু যে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন তার উচিত সেই ধর্মের বিধানগুলো মেনে চলা। এমনটা হলে সমস্যা থাকতো বলে মনে হয় না। একজন মুসলমান হিসেবে আমার মন তো বলেই পৃথিবীর সব মানুষ আমার মহান ধর্ম ইসলামে আসুক। এর সুন্দর বিধান মেনে চলুক। কিন্তু আমার মন চাইলেই তো আর রাতারাতি তা হয়ে যাবে না। হবে তা-ই যা সৃষ্টিকর্তা চাইবেন। আর ইসলাম আসার পর ইসলাম ধর্মের মতে অন্যান্য ধর্মগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হলেও সেগুলোর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের কোন সুযোগ তো নাই-ই বরং যে সব ধর্ম আল্লাহ্র কোন না কোন নবী বা রাসুল প্রচার করেছেন তার উপর ইমান না আনলে একজন মুসলমান তো মুসলমানই থাকবে না।
হযরত ঈসা (আঃ) এর প্রচারিত ইহুদি ধর্ম ও হযরত মুসা (আঃ) এর প্রচারিত খ্রিস্টান ধর্ম সময়ের আবর্তনে কিছুটা বিকৃত হলেও তা যে সৌন্দর্য বহন করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এগুলোও অতীতের কোন একটা সময়ে কোন একটা জাতি, সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র মনোনীত কোন পুরুষের মাধ্যমে পাঠানো আল্লাহ্র বার্তা। যেহেতু এখন “কমপ্লিট কোড অফ লাইফ” আল কুরআন এসে পড়েছে তাই পুরনো ভার্সনের আর কি-ই বা প্রয়োজন। কিন্তু যারা এখনও সেই পুরনো ভার্সনকে আঁকড়ে ধরে আছে আর নতুন ভার্সন গ্রহণে দ্বিধা করছে তারাও যদি তাদের ঐ বিধানকে অনুসরণ করে অন্ততঃ একজন উত্তম মানুষ হওয়া সম্ভব। পরকালের ফয়সালা স্বয়ং আল্লাহ্র হাতে। তিনি কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা তো শুধু তিনি নিজেই জানেন।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এজন্যে তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। অথবা তার পাঠানো বিধান অনুযায়ী না চলার কারণে যদি আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাউকেও জাহান্নামীও মনে হয় কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা চাইলেই তাকে ক্ষমা করতে পারেন আর প্রবেশ করাতে পারেন পরম সুখের সেই উদ্যানে।
অতএব যে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি প্রত্যেকেরই উচিত তার ধর্মমতকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। আমি আমার স্বপ্নজালে যতটুকু জানি কোন ধর্মের খারাপ কাজকে উৎসাহিত করা হয়নি।
এবার আসছি এই যে মহামারী এর প্রসঙ্গে। পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর মিছিল চলছে। যে মড়ক লেগেছে তা তো থামছেই না বরং দিনে দিনে শক্তিশালী হচ্ছে। এটা কি কোন বার্তা দিচ্ছে না। বলা হয়ে থাকে পৃথিবী ধন দৌলত ঐশ্বর্য জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে একেবারে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। পুঁজিবাদের পৃথিবীতে পুঁজির মালিকরাই এসব অর্থ বিত্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অংশীদার। বলা হয়ে থাকে এগুলো তাদের কষ্টের অর্জন। কিন্তু অপরাধটা হয় তখনই যখন পৃথিবীতে মহাদেশে মহাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা নিঃস্বদেরকে দিনে দিনে আরও নিঃস্ব করছে আর ধনীদেরকে করেছে আরও ধনী। মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়ে যখন সমাজতন্ত্র এলো তাকে মানবতার মুক্তির একটা উপায় হিসেবে না দেখে বরং তাকে পুঁজিবাদের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো।
ছাত্রলীগের চাপের মুখে একসময়ের শক্তিশালী ও জনপ্রিয় সংগঠন ছাত্র-ইউনিয়ন যেভাবে অতীতে লুপ্ত হয়ে যাওয়া ডাইনোসরে পরিণত হয়েছিলো তেমনি বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের শক্তি আর ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে গিয়ে সমাজতন্ত্রও যাদুঘরে স্থান নিলো। মুক্তির বাণী তাই নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
এদিকে বিজয়ের আনন্দে ও প্রাপ্তির সুখে উল্লসিত পুঁজিবাদী সমাজের ভোগবাদী মানুষগুলো বহুগুন উৎসাহ নিয়ে তাদের ভোগবাদী জীবনের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একদিকে পৃথিবীতে অজ¯্র শিল্প কারখানা নির্মাণ করে তারা পরিবেশ দূষণের মাত্রাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এলো যে তা নগরগুলো তো বটেই গ্রামগুলোকেও আক্রমন করলো। বন-জঙ্গল কমে যাওয়ার পাশাপাশি একে একে ধ্বংস হয়ে গেলো জলাশয়গুলো। ইট-কাঠ-পাথরের নগর আর নগরীগুলো গাছপালা আর পানিশূন্য হয়ে দিনে দিনে পরিণত হতে লাগলো গ্যাস চেম্বারে। যতদিন পর্যন্ত পরিবেশ এই ভার নিতে পারছিলো আমরা বেঁচে বর্তে ছিলাম কোনমতে। এ নিয়ে তাই মাথা ঘামানোর অতোটা প্রয়োজন পড়েনি। যদিও গ্রেটা টুনবার্গের এর মতো ছোট্ট একটা মেয়ে এসবের প্রতিবাদে জৈব জ্বালানী চালিত একটা ছোট্ট জাহাজে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলো কিন্তু এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অনেক দিকপাল হাসি ঠাট্টা করতেও ছাড়েননি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে গ্রেটা কি বার্গার, হটডগ, পিজা খান না? হায়রে কপাল! এও প্রশ্ন! তাও কাউকে অপমান করার জন্যে।
গ্রেটা পিজা খায় কিনা আমার জানা নেই তবে গোটা বিশ্ব যে আজ মহামারীর কবলে পড়ে নাকানি চুবানি খাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিবেশ দূষনের মত পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাদেরকে বেশ ভালোভাবেই করতে হচ্ছে।
সারা বিশ্বে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সৃষ্টির শুরু থেকে মনে হয় বর্তমান সময়েই সর্বাধিক। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ভালো কিছু আশা করা কঠিন। এ জুলুম এমন এক জুলুম যা মহামারীর চাইতেও মারাত্মক। সুদূর আফ্রিকা থেকে লাতিন আমেরিকা আর এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে মানুষের যে হাহাকার আর চেপে রাখা কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস তাও তো সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছায়। মনে রাখতে হবে তিনি সব দেখেন। পুরো বিশ্বকে বাঁচাতে হলে যে অন্যায় ইতোমধ্যে হয়ে গেছে তার জন্যে ক্ষমা তো চাইতেই হবে পাশাপাশি তাকে ঠিকও করতে হবে। আমাদের আর কি-ই বা করার আছে - একথা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এখনই সময় তাবৎ সম্পদশালী মানুষের এগিয়ে আসার, যারা অন্নহীন, যারা বস্ত্রহীন তাদের হাতে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি দুটো কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার। বিশ্বব্যাপী যতো ধূলিমলিন শিশু তাদের অনাহারী মুখ নিয়ে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে আসমানের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের মুখটাকে আমাদের দিকে ফেরানো।
পৃথিবী ব্যাপী সা¤্রাজ্যবাদ বিস্তারে যে সব যুদ্ধ ছলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। মনে রাখতে হবে আল্লাহ্র গজব কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্রেও যেতে সক্ষম। এটা কিন্তু বন্দুক, কামান, মেশিনগান এসব ভয় পায় না বরং যারা এসব চালায় তাদেরকেই মুহুর্তে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
সমতার পৃথিবী আজ আর কোন স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা। তাই এখনই সময় সজাগ হওয়ার। মানব সভ্যতা ধ্বংসের আগেই সচেতন হই। নিজেদের বদলাই। পৃথিবী বদলাবে। যদি মানবতাকে জাগিয়ে তোলা যায় সভ্যতাকেও বাঁচানো যাবে। তাছাড়া এটাতো সবারই জানা কল্যাণমূলক কাজ সব ধরনের বালা মুসিবতকে দূরে সরিয়ে দেয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।
Comments
Post a Comment