Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

বাঙালি মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক বিকাশ - ওমর খালেদ রুমি

 ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে যখন কংগ্রেস গঠিত হয় তখন সেটি ছিলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে মূলতঃ একটি বৈঠকের সাথে তুলনা করা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষিত সচেতন জনগোষ্ঠীর একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে একত্রিত হতো এই উপলক্ষে যে তাদের একত্রিত হওয়া দরকার আর কিছু না হোক অন্তত যা ঘটছে তা নিয়ে আলোচনার জন্যে হলেও। এই শুরুতে কংগ্রেস বিপ্লবী তো নয়ই এমনকি কোন রাজনৈতিক সংগঠনও ছিলো না। এটি ছিলো ইংরেজ শাসনাধীনে আমাদের উপমহাদেশের অংশের ভদ্র জনদের একটি অনিয়মিত দরবার যেখানে মস্তিষ্কের ভিতর চিন্তার বুদ্বুদ্ উঠে কিছু স্থানীয় সফল মানুষেরা একত্রিত হতো। এদের মধ্যে বৃটিশ ভদ্রলোক এ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম যিনি ব্রিটিশ হলেও মূলত নিজেকে একজন ভারতীয় মনে করতেন। দাদাভাই নওরোজী দিনশা আদুলজি ওয়াচার মতো জাঁদরেল লোকেরা ছিলো যাদেরকে মূলতঃ কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা বলেই ধরা হয়

অতএব বোঝা যাচ্ছে কংগ্রেসে কাদের স্থান ছিলো অথবা পরবর্তীতে কাদের জায়গা হয়েছিলো। বলাই যায় এটা ছিলো ভারতীয় অভিজাতদের একটা ক্লাব বা ফোরাম। একমাত্র উল্লেখযোগ্য মুসলমান ছিলেন বদরুদ্দিন তৈয়বজী। তাহলে একথা তো বলতেই পারি তখনকার দিনে সচেতনতা জিনিসটা মধ্যবিত্ত বা নি¤œবিত্ত কিংবা যারা আসলেই গরীব এদের মধ্যে তেমন একটা ছিলো না। থাকবেই বা কেমন করে? দীর্ঘ দিনের ইংরেজ শাসনে এবং শোষণে গরীবের তো তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঘটনা যাই হোক আশার আলো এটুকুই যে এসব মহারথীরা একত্রে জড়ো হয়েছেন এজন্যে যে তারা ভারতের বৃহত্তর নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য নিয়ে কথা বলবেন। তাই বলতেই পারি উদ্দেশ্য খুব একটা মহৎ না হলেও একেবারে মন্দ না। এমনটা বললাম এজন্যে যে প্রায়শই পৃথিবী জুড়ে এমনতিইে দেখা যায় যে গরীবদের নিয়ে কথা বলতে বলতে ধনীরা আরও স্বনামখ্যাত সমৃদ্ধ হয়ে যায়। তা যে নাম যশে হোক আর অর্থ বিত্তে হোক। সামাজিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সবই তাদের দখলে চলে আসে। তবে তাদের পণ্য বা প্রোডাক্ট কিন্তু ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র অন্নহীন বস্ত্রহীন কখনও নগ্ন আর কখনো উলঙ্গ মানুষেরা

যা হোক যাত্রা করার পর কংগ্রেসও সামনে আগাতে লাগলো। ধীরে ধীরে বাড়লো তার আয়তন কর্ম-পরিধি। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ আসতে আসতে সংগঠনটি পৌঁছে গেলো তার ২০ বছরের ভরা যৌবনে। এসব দেখে মুসলমান অভিজাতরা বুঝতে পারলো টিকে থাকতে হলে তাদেরও একটা সংগঠন চাই। কারণ আর কিছু নয়। প্রায় দেড়শ বছর ধরে ইংরেজদের দুঃশাসনের চাপে এমনতিইে মুসলমানদের অবস্থা চিড়ে চ্যাপ্টা। তার উপরে এখন যুক্ত হয়েছে কংগ্রেসী চাপ। ভাবনায় কাজ হলো। ১৯০৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকায় নবাব পরিবারের আপ্যায়নে সর্ব ভারতীয় মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিমূলক ব্যক্তিত্বরা একত্রিত হলেন শাহবাগে নবাবদের বাগান বাড়ীতে। গঠিত হলো সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ। বাহ্! কি দারুণ! অ্যাটাক-কাউন্টার অ্যাটাক। সবাই হয়ে গেলো মুসলমানদের এই হঠাৎ সেয়ানা হয়ে ওঠাতে। নিন্দুকেরা বললো মুসলমানরা নয় পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে স্বয়ং ভাইসরয় জেনারেল। তাকে প্ররোচিত করেছেন ভিকার উল মূলক। ঘটতেই পারে এমনটা। তাতে দোষেরই বা কি? কংগ্রেসও তো বানিয়েছিলো ব্রিটিশরা। অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম। কই তখন তো কথা হয়নি। মুসলমানদের বেলায় যত দোষ। ইংরেজরা খুশী হলো। হিন্দু কংগ্রেসের বিপরীতে একটা মোক্ষম শক্তি দাঁড় করানো গেছে। এবার ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে। হলোও তাই। প্রথম প্রথম সংগঠন দুটো মোটামুটি মিলেমিশে চললেও ধীরে ধীরে পথ আলাদা হয়ে যেতে থাকলো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। দুটো আলাদা সম্প্রদায় যাদের ইংরেজদের অধীনে একটা ভিন্নরকম অতীত আছে (কারো সুখের আবার কারোর দুঃখের) তারা এক পথে চাইলেও তো হাঁটতে পারবে না। তাই পথ আলাদা হয়ে গেলো

একটু আগেই বলেছিলাম ঢাকার নওয়াবদের আপ্যায়নে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। তাহলে এখানে কারা থাকবে সেটা বোঝাই যায়। আগা খান, ইস্পাহানি এরা। ধীরে ধীরে এখানে এসে নিঃস্বদের একজন চৌকষ প্রতিনিধি যিনি নিঃস্ব হলেও এতোটাই কেতা দূরস্ত যে খোদ ইংরেজরাও তার কাছে মাঝে মাঝে লজ্জা পায় তিনি এসে ভিড়লেন। নাম তার জিন্নাহ্। বাপ ফেরিওয়ালা ছিলেন করাচির রাস্তায়। অল্প বয়সে বালবিবাহ করে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্যারিস্টারি পড়তে। কিশোরী বধূর সাথে রাত যাপনের সুযোগ হয়নি তার। দেশে ফেরার আগে মারা গেলেও শ্বশুর মশাই জামাতার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। তাই মেয়ে পৃথিবীতে না থাকলেও জামাইকে ব্যারিস্টার বানিয়ে আনলেন। একটা ভালো কাজই করেছিলেন বেচারা। নইলে মুসলমানদের দুর্ভোগ ছিলো। আস্তে আস্তে আরও অনেক মোহাজেরও ভিড়ে গেলো। সব মিলিয়ে জমে উঠলো। পাকিস্তান তারা কায়েম করিয়ে ছাড়লো। দরকারও ছিলো। প্রসাব করে পানি নেয় না এমন হিন্দুদের অধীনে আর কতদিন! ভারত আর পাকিস্তান জন্মালো। ভারতীয় অংশে মুসলিম লীগ অটোমেটিক্যালি হাওয়া হয়ে গেলো। পাকিস্তান অংশেও অবস্থা তথৈবচ হতে লাগলো দিন দিন

জিন্নাহ মারা গেলেন পাকিস্তান জন্মানোর এক বছরের মধ্যেই। মুসলিম লীগও কিউ, এল, এম ইত্যদিতে ভাগ হয়ে গেলো। যে মাথায় পচন ধরা যাকে বলে। তবুও মধ্যবিত্তরা অতোটা ভরসা পাচ্ছিলো না যে তারা বড়লোকদের সিঁড়িটা বেয়ে কিভাবে উপরে উঠে আসবে। তাই আলাদা একটা শক্ত সিঁড়ি তৈরি করলো। নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ। কিছু দিনের মধ্যে নাম থেকে মুসলিম শব্দটা বাদ দিয়ে একটা অসাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়া হলো। ততদিনে অবশ্য বাঙালি মানে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের মধ্যে সেকিউলারিজম ধারণা বেশ পোক্ত জায়গা লাভ করেছে। কেউ কেউ কমিউনিজমেও ঝুঁকছে। একটা কথা তো বলতেই পারি অন্ততঃ ভারতীয় রমণীরা শিক্ষা-দীক্ষায় আধুনিকতায় সেই ইংরেজ আমলেও ব্রিটিশ রমনীদের চাইতে অনেকাংশে এগিয়ে ছিলো

সে যাই হোক। মুসলিম লীগের অভিজাত সম্প্রদায় দিনে দিনে প্রলেতারিয়েতের হাতে মার খেতে লাগলো। প্রথম আঘাতটা করেছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। তিনি করটিয়ার নবাব পরিবারের সদস্যকে হারিয়ে চমক দেখালেন। আর যায় কোথায়? শুরু হয়ে গেলো জায়ান্ট কিলিং। একে একে নবাব-জমিদার সব হারতে শুরু করলো। পাকিস্তান আমলের প্রথম দশ রছরেই মুসলীম লীগ জাদুঘরে জায়গা পেয়ে গেলো। রইলো শুধু পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ আর পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুবের সামরিক শাসন। শেষ লড়াইটা এদের মধ্যেই হয়েছিলো। এখানেও আবার সেই প্রলেতারিয়েত বনাম সামরিক বাহিনী। ইয়াহিয়ার সময়কালটাতে এসে প্রলেতারিয়েতরা ম্যাচ জিতে প্রমাণ করে দিলো জয় নিপীড়িতেরই হয়

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak