Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

কিতাব মুন্সীর গরু ও দু দুটো বিয়ের গল্প

কিতাব মুন্সীর মেয়েদের রূপ বর্ণনার কোন উদ্দেশ্যই আমার এই গল্পে নেই। তবে ঘটনা চক্রে তেমন কিছু যদি এসেই যায় তার জন্যে প্রিয় পাঠকের কাছে আমি শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার এই অহেতুক ভয়ের কারণ আর কিছুই নয়। তার গরু আর দু দুটো সুন্দরী মেয়ে যেন একই সূত্রে গাঁথা। সেই গল্প বলাই মূলত এই গল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু ঝামেলা তো একটু আধটু হতেই পারে। যদি গল্প তার স্বাভাবিক পথ হারিয়ে অন্যদিকে বাঁক নেয়।


তখন কৃষিকাজের ভরা মৌসুম। আমাদের হঠাৎ করেই একটা গরুর ভীষণ দরকার হয়ে পড়ল। কোথাও গরু পাওয়া যাচ্ছিল না। বাবার পেরেশানী দেখে আমাদের ভীষণ মন খারাপ। হালচাষ বন্ধ। দুই ভাই মিলে কখনো বাবার চোখের দিকে কখনো বা মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু উপায় কি? কোথাও তো হালের বলদ পাওয়া যাচ্ছে না।
হঠাৎ খবর পাওয়া গেল কিতাব মুন্সীর একটা অতিরিক্ত গরু আছে। এই মৌসুমে সেটা এখনো মাঠে নামার সুযোগ পায়নি। কারণ আর কিছু নয়। তার চলতি গরুগুলোর যথেষ্ট শক্তি সামর্থ্য আছে। আর তাদের স্বাস্থ্যহানি যেমন হয়নি তেমনি তারা খুড়া রোগেও পড়েনি। আব্বা ছুটল কিতাব মুন্সীর বাড়িতে। আমরা দুভাই ঘরের দাওয়ায় বসে আল্লাহকে ডাকছি। মনে মনে বলছি, আল্লাহ তুমি কিতাব মুন্সীর দিলে রহম পয়দা করে দাও। সে যেন বাবাকে গরু দিতে রাজী হয়ে যায়। ধারে না দিলে বাবা আস্ত গরুটা কিনে ফেলতেও রাজী। শত হোক হালের মৌসুম। বলদ ছাড়া চাষীর দাম কি?
আল্লাহ আমাদের মোনাজাত কবুল করেছিলেন। কিতাব মুন্সীর দিলে তিনি একটু বেশিই রহম পয়দা করে দিয়েছিলেন। সে কাহিনী পরে বলব। আগে গরুর ঝামেলাটা মিটুক।
বাবা হাসিমুখে বাড়িতে ফিরলেন। আমরা দরজা থেকে লাফিয়ে নামলাম। তিনি মুখে সামান্য হাসি মেশানো কণ্ঠে বললেন, গরু পাওয়া গেছে। কিতাব মুন্সীর গরু। এমনিই দিয়েছে। দেখে শুনে রাখলেই চলবে। আমরা খুশিতে দুই ভাই আটখান আটখান মোট ষোল খান হলাম। বলদ ছাড়া চাষীর দাম কি?
কিতাব মুন্সীর বাড়িতে খাস পর্দা। তাই কোনদিন তার অন্দর মহলে ঢোকা হয়নি। এই প্রথম গরু আনতে গিয়ে সেই সুযোগ মিলল। দুই ভাই ভিতরে গিয়ে বসলাম। খই ভাজা, কোড়ানো নারকেল, ঝোলা গুড় এলো। সাথে ধবধবে পরিচ্ছন্ন গেলাসে পানি। পেট ভরে খেলাম।
গরু নিয়ে দুই ভাই বের হবো। এমন সময় দেখলাম দু’ দুটো মেয়ে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে। তারা পর্দানসীন মেয়ে। শুধুমাত্র মুখটুকু দেখা যাচ্ছে। আমরা দুই ভাই পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। তারপর মিষ্টি করে হাসলাম। তারাও অত্যন্ত মোলায়েম ভাবে হাসল। তারপর তাদের মধ্যে থেকে একজন বলল, গরুর গায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে। এই গরু আমরা লালন-পালন করি। আমাদের কোন ভাই নেই। বাবা বুড়ো হয়েছেন। গরুগুলোকে আমাদেরই দেখতে হয়। আমরা কখনো গরুকে মারি না। শত জ্বালাতন করলেও না। আর ভালোমতো খাবার দাবার দিবেন। বর্ষাকাল। মাঠে কিন্তু খাবার নেই বাড়িতেই খাওয়াতে হবে।
গরুর যতœ বিষয়ক ছোটখাট বক্তৃতা। মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। মনে হলো গরুটাও শুনল তার জন্যে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। যাহোক সেদিনের মতো কথা আর এগুলো না। গরু নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। মনের মধ্যে কিতাব মুন্সীর পর্দানসীনা সুন্দরী মেয়েদের মুখ আদালতের সীল মোহরের মতো স্থায়ীভাবে বসে গেল। হাল চাষে মন নেই। সারাক্ষণ শুধু কানের কাছেই কথাগুলো বাজে। মেয়েদের কণ্ঠ এতো সুন্দর হয়। না জানি স্বর্গের হুর পরী তাহলে কতো সুন্দর হবে।
টুকটাক পারস্পরিক আলাপচারিতার মাধ্যমে যা বোঝা গেল তাতে এটুকু নিশ্চিত হলাম যে দুই ভাইয়েরই একই অবস্থা। কিন্তু এখন হালের মৌসুম। এসব নিয়ে ভাববার সময় কই। মৌসুম গেলে দেখা যাবে খন। আপাততঃ কানের কাছে মধুর কণ্ঠই বাজুক।


হালের মৌসুম এখন শেষ। হালের চাপে গরুর স্বাস্থ্য কিনা খারাপ হবে উল্টো আরও মোটাতাজা হয়েছে। অবশ্য যতœ আত্তি ভালোই হয়েছে । শত হলেও পরীদের গরু। আমরা দুই ভাই মজা করে তাদের পরী ডাকতাম। অবশ্য নামও তো জানা ছিল না।
একদিন বিকেলে বাবা ডেকে বললেন, হালের মৌসুম শেষ। তোরা দুই ভাই মিলে গরুটাকে ফেরত দিয়ে আয়। মুন্সীকে আমার ছালাম দিস। বড়ো ভালো মানুষ। বাবার কথামতো আমরাও তাই করলাম। আর একবার দেখা মিলল পরীদের। গরুর স্বাস্থ্য দেখে ভীষণ খুশি। ফিসফিস করে একজন অন্যজনকে বলল, গরুরই এতো যতœ না জানি বউয়ের কত যতœ করবে। ভালো ঘরের ছেলে।
আমরা দুই ভাই না হেসে পারলাম না। আমি একটু মজা করে বলেই ফেললাম, ভালো ঘরের মেয়ে পেলে যতেœর কমতি হবে না। আমার কথা শুনে ওরাও না হেসে থাকতে পারল না। অন্যজন বলল, একেবারে মুখের উপর প্রস্তাব। আমার ভাই আর চুপ করে থাকতে পারল না। সে বলল, প্রস্তাব কোথায়। মতামত। যে কেউ তার তার মতামত দিতেই পারে। আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, থাক। ভালোবাসায় ঝগড়াঝাটি না থাকাই ভালো। তারা আপত্তি করলেন। এর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় দেখলেন। আমি বললাম, এখনো হয়নি, তবে হবে। শীঘ্রই। তাদের একজন মুখ বাঁকিয়ে বলল, কচু। তারপর দৌঁড়ে পালাল।


কিতাব মুন্সীর মেয়েদের রূপ-যৌবনের কথা এখন আর না বললেই নয়। কারণ ঘটনা রাতারাতি চরমে চলে এসেছে। তাই আর আমার পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। পাতলা ফিনফিনে শরীরে মনে হয় যেন আরবী রমণী। উচ্ছল রক্তবর্ণ মুখশ্রীর মধ্যে নিজের চেহারা দেখা যায় আয়নার মতো। সমস্ত অবয়বে ভূ-মধ্য সাগরের কুয়াশার আবহ। তার মধ্যেই বেড়ে ওঠা দুটো যমজ বোন যেন কচি দুটো গুবাক তরু। অবশ্য কিতাব মুন্সীর মেয়েরা আমার নির্বোধ বর্ণনার চেয়ে আরও অনেক বেশি সুন্দর। সুন্দরের বর্ণনা ভাষায় সম্ভব নয়। তাকে দুচোখ দিয়ে দেখতে হয় না। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধী করতে হয়। কিতাব মুন্সীর মেয়েরা আমাদের দুই ভাইয়ের দিল জিতে নিয়েছিল।


অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। বাবা নিজেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মুন্সী নিজেই সম্মতি দিয়েছিলেন। মেয়েদের মতামত অবশ্য পরে নেয়া হয়েছিল। মুন্সী জানতেন মেয়েদের তিনিই পাত্রস্থ করতে পারবেন। কারণ তারা কখনো পুরুষ সংস্পর্শে আসেনি।
দুই ভাইয়ের ঘরেই কিতাব মুন্সীর মেয়েদের ঘরের নাতী-নাতনী। পুরো বাড়ি আজ কিতাব মুন্সীর দখলে। তবে তাতে দোষের কিছু নেই। হঠাৎ করে বউয়ের দিকে তাকালেই কিতাব মুন্সীর গরুটার কথা মনে পড়ে। সত্যিই গরুটা ভীষণ ভালো ছিল। অন্তত আমাদের জন্যে সৌভাগ্যই বয়ে এনেছিল।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের...

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখ...

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomer...