Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

একজন বিকাশ ও অন্য সাতজন

গ্রামের এই স্কুলটিতে আমার হঠাৎ করেই আসা। কেন যে আসা আমি নিজেই তা জানি। আর জানাটাও সহজ। শহরে আমি নাকি বখে গিয়েছিলাম। ক্লাস সেভেনের ছাত্ররাও যে বখে যেতে পারে সেটা আমাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। ভালো স্কুলের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। কিন্তু পড়াশুনায় একদম মন নেই। হাতে সিগারেট। সাথে বন্ধু-বান্ধব পার্কে গিয়ে মেয়েদের সাথে ইয়ার্কি ফাজলামো। বিকালটা খেলার মাঠে। রাতটা টিভি রুমে। বাসায় ফিরে আশে-পাশের মেয়েদের দিকে নজর। ইদানীং মহিলারাও দৃষ্টি কাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই লেজে গোবরে। যাহোক অবশেষে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের সিদ্ধান্ত। আমার পর, অভিভাবকদের। উপায় একটাই জায়গা বদল। সোজা গ্রাম। যাকে বলে অজো পাড়াগা। যেখানে এসবের কিছুটি নেই। এ যাত্রায় ভালো না হয়ে আর কোন উপায় দেখছি না।
আমার হাইস্কুলে আমি ভর্তি হলাম ক্লাস এইটে। গ্রামের স্কুল। প্রকৃতির নিবিড় কোলে এর অবস্থান। কবির ভাষায় ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়। শহর থেকে হঠাৎ করে গ্রামে এসেছি। তবু কেন জানি মন্দ লাগছে না। হয়তো নতুনত্বের স্বাদ। সবচেয়ে বড় কথা আমার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য। যে কোন পরিবেশে আমি খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি। এখানে এসেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। দেখতে দেখতে মানিয়ে গেল।


ক্লাসে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ছিলো। তাদের মধ্যে কেবল মাত্র একজনই আমার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হলো। তার নাম বিকাশ। সে দেখতেও যেমন, তার ব্যক্তিত্বও তেমনি নজর কাড়া। পোশাক আশাকেও ক্রেতাদুরস্ত। গ্রামের ভিতর এমন ছেলে সাধারণত চোখে পড়ে না। আর যাহোক তাকে আর দশটি ছেলে মেয়ের সাথে অতো সহজে মেলানো যায় না। সবার মাঝে থেকেও সে আলাদা। সবার চোখেও সে আলাদা। কেউ তাকে মানে। কেউ কেউ মানতে চায় না। উভয়ের কাছেই সে গুরুত্বপূর্ণ হতেই হবে। বিকাশ বলে কথা।
শহর থেকে আসা ভালো একটা স্কুলের ভালো ছাত্র হওয়া সত্বেও বিকাশ যে আমাকে খুব একটা পাত্তা দিলো তা কিন্তু নয়। বরং অন্যরা যেখানে হুমাড়ি খেয়ে পড়ল, সেখানে সে তার জায়গায় খানিকটা অনড়ই রইল। অবশ্য স্বাভাবিক কথাবার্তা বা আলাপচারিতা যে হলো না তা নয় কিন্তু। একেই বলে ব্যক্তিত্ব। আমার বিকাশকে পছন্দ হলো।


বিকাশের মধ্যে অনেক কিছুই ছিল। তবে তার সাহসের কথা জেনে অবাক হলাম। হঠাৎ খবর এলো বিকাশ একা কাবাডি খেলবে সাত জনের সাথে। সে বাজী ধরে বসেছে। বাজী ধরা বড় কথা নয়। তার বিশ্বাস সে জিতবে। আমি ভীষণ অবাক হলাম। একা সাত জনের বিরুদ্ধে। বিকাশের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু না। তার দৃঢ়তা দেখে বুঝলাম। এটা সম্ভব। সে পারবে।


নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শুরু হলো। বিকাশকে ভীষণ উৎফুল্ল লাগছিলো। সে একাই খেলে চলল। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম। বিকাশ জিতল। জীবন ও যৌবনের উভয় বাজী। আমরা সেই আনন্দে খেলাম। অনেক মজা হলো। প্রিয় পাঠক, বিকাশ আসলে সামান্য একটুর জন্যে হেরে গিয়েছিল। তবুও সে যা করেছিলো তা ছিল রাতারাতি বিস্ময়কর। আমরা সবাই তাকেই জয়ী ঘোষনা করলাম। যারা তার বিরোদ্ধে খেলছিলো তারাও তাকে জয়ী ঘোষণা করেছিল। একা যে ছয় জনকে আউট করে দিয়েছিলো। মাত্র একজন ছিলো। কিন্তু ভুল বশত একটা মুভমেন্টের সময় পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় প্রতিপক্ষের খেলোয়ারটি তাকে সহজেই ধরে ফেলে। বিকাশ তবু প্রায় দাগ ছুঁতে পেরেছিলো। কেউ কেউ বলল সে দম ফেলেছিল। কেউ কেউ বলল না। অমীমাংসিত খেলায় বিকাশকেই আমরা জয়ী করেছিলাম। কারণ জয় তার প্রাপ্য ছিল। জীবনে সব বিকাশদের জয় হোক, এই কামনাই করি। আর মনে মনে বলি, এক জীবনে আমরা সবাই যেন এক একটা বিকাশ হতে পারি। এই গল্প তাই বিকাশের জন্যেই নিবেদিত।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak